×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

সন্দেহবাতিক রোগ ক্যানসারের মতোই ভয়ষ্কর

বি.কে. রোশনী
2019-01-28 11:36:55

সন্দেহ শুধুমাত্র একটি শব্দ নয়, এর সঙ্গে আরও কিছু মানসিক সমস্যা জড়িয়ে আছে যার থেকে দেখা দেয় পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা। দীর্ঘদিন এই ধরনের সন্দেহ, অবিশ্বাস ইত্যাদি যদি চলতে থাকে তাহলে দেখা দেয় ক্রোধ, হিংসা ও আত্মহত্যার প্রবণতা বা অত্যাচার করার প্রবণতা।

অনেকে প্রাথমিক অবস্থায় সন্দেহ নামক মানসিক সমস্যাকে ততটা গুরুত্ব দিয়ে চান না। ভাবেন এ তো মানুষের স্বভাব। কিন্তু দেখা গেছে, কিছুদিন যদি এ সন্দেহ নামক মানসিক ব্যাধি চলতে থাকে তাহলে তার থেকে এমন সব ক্রিয়া বা বিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়, যা ব্যক্তির এই ধরনের সমস্যা তিনি ঠিকমতো আহার করতে পারেন না, রাত্রে ঘুম হয় না, কোথাও যেতে বললে যেতে চান না। নিজের বাড়িতে বা কর্মস্থলে সবসময় আতঙ্কে থাকেন এবং অন্যদের প্রতি খারাপ ব্যবহার করতে থাকেন। সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি মুহূর্তে নিজেকে অসুস্থ বোধ করেন। নিজেই নিজের চিকিৎসা করতে গিয়ে সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলেন।

গবেষণার জানা গেছে যে, মনকে সঠিকভাবে ইতিবাচক পথে ব্যবহার না করতে পারায় এই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। সন্দেহ একপ্রকার মানসিক ব্যাধি, এই ব্যাধি কমবেশি অনেকেরই মধ্যে দেখা যায়। ইদানিং নানা কারণে এই সমস্যা বাড়ছে। যতই মনের সমস্যা বাড়ছে, ততই শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

গবেষণায় আরও জানা গেছে, শিশু ও কিশোর-কিশোরীরাও এই রোগের শিকার হচ্ছে। অতৃপ্ত কামনা-বাসনা থেকেও সন্দেহ দেখা দিচ্ছে। বিবাহ বিচ্ছেদ থেকে আত্মহনন, অত্যাচার থেকে নেশা করা, সব ক্ষেত্রেই সন্দেহ কাজ করছে।

সাধারণত এই সন্দেহ থেকে যে সব রোগ দেখা দেয় তার বহিঃপ্রকাশ প্রথমে অতটা মারাত্মক না হলেও, পরে খুবই জটিল হয়ে দাঁড়ায় যা চিকিৎসা ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয়।

যেমন অনিদ্রা, মাথা ব্যথা, হজমের সমস্যা, রক্তচাপের সমস্যা, শরীরে ব্যথা, চুলকানি, কোলাইটিস, হাত-পা ঘামতে থাকা, মধুমেহ রোগের বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য, পুরনো রোগের বৃদ্ধি, দুর্বলতা, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি দেখা যায়।

সন্দেহ কেন, কীভাবে সৃষ্টি হয় তা নিয়ে অনেকের অনেক মত। তবে এ যে মানসিক সমস্যা তা নিয়ে দ্বিমত নেই। সাধারণত যেসব কারণ থেকে সন্দেহ দেখা দেয় সেসব কারণগুলির কিছু কিছু এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে, যাতে সহজেই এর থেকে উত্তরণের পথ পাওয়া যায়। সমস্যা জানতে পারলে সমাধানের পথে অগ্রসর হতে পারা যায়।

  • ক্ষতিকর আশষ্কা থেকে সন্দেহ : শেয়ারে টাকা লগ্নি, অনিশ্চিত চাকরি, ব্যবসায় মন্দা, চিটফান্ডে টাকা জমানো, চিকিৎসা করা হচ্ছে অথচ সারছে না, কাউকে মোটা অঙ্কের টাকা ধার দেওয়া, মেয়ের বিয়ে বা ছেলের বিয়ে—ইত্যাদি ক্ষেত্রে ক্ষতির আশষ্কা থেকে সন্দেহ দেখা যায়। সর্বক্ষেত্রে এই ক্ষতির আশষ্কা কাজ করতে থাকে। যা সন্দেহবাতিকে পরিণত হয়ে যায়। তখন ক্রোধ ও হাইপারটেনশনের রোগী হতে হয়। শুরু হয় পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা।
  • ভুল বোঝাবুঝি থেকে সন্দেহ : ভুল বোঝাবুঝি থেকে এমন এক ফোবিয়া সৃষ্টি হয় যার নিট ফল হল জল খেতেও ভয় হয়। সব কিছুতেই সন্দেহ। এমনকী স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, প্রেমের সম্পর্ক, প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক সব ক্ষেত্রে এই ভুল বোঝাবুঝি মারাত্মক আকার নিয়ে থাকে। যদিও পরবর্তী ক্ষেত্রে অনেক সময় সন্দেহ অমূলক বলে প্রমাণিত হয়, তবুও সন্দেহ এমন ব্যাধি যা একবার শুরু হলে সহজে শেষ হতে চায় না। ফলে এর থেকে নানা অত্যাচার, হত্যা, আত্মহত্যা সংঘটিত হয়ে থাকে। যা অতীব পরিতাপের বিষয়।
  • শারীরিক সমস্যা থেকে সন্দেহ: অনেকের এমন বাতিক যে কোনো কারণ ছাড়াই অসুস্থ বোধ করেন। বিভিন্ন রকম ওষুধ খান। কল্পনা করেন নানা অসুখের—বিশেষ করে হেলথ ম্যাগাজিন, পত্রিকা, নানা বিজ্ঞাপনের কারণে। আবার পারিবারিক কোনো রোগের ইতিহাস (মধুমেহ, হাঁপানি, ক্যানসার ইত্যাদি) জানা থাকলে তার থেকে নিজেরও হতে পারে এই কল্পনা করে সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়। রোগ নিয়ে, শরীর নিয়ে নিজেরও হতে পারে এই কল্পনা করে সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়। রোগ নিয়ে, শরীর নিয়ে, রূপ নিয়ে অহেতুক সন্দেহ তো এক প্রকার মানসিক সমস্যা। চুল পড়তে আরম্ভ করলেও সন্দেহ শূরু হয়ে যায়। এই বুঝি বাবার মতো টাক পড়ে যাচ্ছে।

তারপর এই ওষুধ খান বা ব্যবহার করুন তাহলে বা তেমন হবে এইসব (অল্পবয়সের যারা তারা এমনটা বেশি ভাবেন) ভাবতে ভাবতে নানান মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে অবসাদ ও হতাশায় ভুগতে থাকেন। সামান্য থেকে সবকিছূ অসমান্য হয়ে যায়।

  • ঠকে যাওয়ার সন্দেহ : আমরা অনেকেই এই ধরনের সমস্যায়র সম্মুখীন হয়ে যাচ্ছি। ঠকতে ঠকতে এমন জায়গায় এসে যাই যে, সব কিছুতেই ঠকার সন্দেহ উৎপন্ন হয়। তারপর বিড়ম্বনায় ভুগতে থাকি।
  • কখনো কখনো বিরূপ সমালোচনা, কারোর হাসি, কারোর  হাসি, কারোর গম্ভীরভাব, কারো জোগস, কারোর উপেক্ষা করা এসব থেকে মনে মনে যে সব কথার মালা তৈরি করে তা শুধুমাত্র সন্দেহ থেকে। পরবর্তী ক্ষেত্রে ভালো কথাকেও মন্দ মনে হয়। কারোর ভালো ব্যবহারেও স্বার্থ আছে মনে হয়। কেউ একটু আদর করলে, শ্রদ্ধা করলে তখন তার উল্টো কথা ভাবনায় আসে। ভালোবাসার মানুষ এমনকী সন্তানের ক্ষেত্রেও এই ধরনের ভাবনা চলতে থাকে। যার থেকে শূরু হয় ঈর্ষা, ঘৃণা ও ক্রোধ। এই ধরনের যত বিষাক্ত চিন্তা চলতে থাকবে ততই মনে অস্থিরতা দেখা দেবে। এই অস্থিরতা থেকেই শুরু হয় অবসাদ।
  • অলীক কল্পনার বশীভূত হয়ে সন্দেহ : যেমন ভূতের ভয়, জবিজন্তু-পোকামাকড়ের ভয়, ভবিষ্যতে কী হবে এই ভেবে ভয়, জল-আগুন-চোর-ডাকাতের ভয়, ট্রেন-জাহাজ-নৌকায়-প্লেনে চড়ার ভয়, মৃত্যু ভয়, রোগের ভয়, হেরে যাবার ভয়, প্রেমে ব্যর্থতার ভয়, গাড়িতে উঠে ভয়—এমন বহু সন্দেহজনক ভয় আমাদের নিত্যদিন কষ্ট দিয়ে থাকে। শুধূমাত্র কল্পনায় এই সব ভেবে ভেবে অহেতুক মানসিক বিপর্যয় ডেকে আনা হয়। যা সহজে যেতে চায় না।

অতএব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সন্দেহ নামক মানসিক ব্যাধি থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া দরকার। এই জন্য সবচেয়ে সরল ও সহজ পথ হল নিয়মিত মেডিটেশন করা। যদি তাতেও না কমে তাহলে মনোচিকিৎসকের সাহায্য নিতে দেরি করা ঠিক হবে না। শরীরের রোগের থেকে মনের রোগ অতীব ভয়ষ্কর এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সেজন্য শুরুতে সাবধান হওয়া দরকার। এই প্রসঙ্গে কিছু সাজেশন এখানে দেওয়া হল যা সবার জন্য। সন্দেহ নামক মানসিক যন্ত্রণা হোক আর না হোক, সবাই পালন করে দেখতে পারেন। উপকৃত হতে পারবেন।

  • ব্যর্থ, বিষাক্ত, নেতিবাচক ও অশুভ চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার জন্য মনকে ব্যস্ত রাখতে হবে।
  • যেসব উপসর্গ থেকে সন্দেহ সৃষ্টি হয় তা যাচাই করে দেখা দরকার। তারপর নিজেকে নিজে চেঞ্জ করে নেওয়া দরকার।
  • সন্দেহকে আটকানোর জন্য নিজেই নিজের পাহারাদার হোন।
  • কিছু আসন, প্রাণায়াম করুন।
  • যখনই সন্দেহ দেখা দেবে, তখন কিছুটা ঘুরে আসুন। গানের সাথে একটু নেচে নিন।
  • যেখান থেকে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখবেন, সেখান থেকে নিজেকে সরিয়ে নিন।
  • সবসময় ক্ষতি হবে এমনটাও ভাবা ঠিক নয়। ভেবে চিন্তে কাজ করুন। তারপর যা হওয়ার হবে। এরপর ফুল স্টপ লাগিয়ে দিন।
  • শরীর নিয়ে অহেতুক না ভেবে, শরীর সুস্থ থাকার জন্য যা যা করা দরকার করতে হবে। ভুল ভাবনা, বিজ্ঞাপনের কথা, অন্যের উদাহরণ নিয়ে মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করবেন না।
  • হাসি-খুশিতে থাকার ব্যবস্থা করুন। খেলাধুলা আনন্দ, উৎসাহ বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • অহেতুক ভুল বুঝবেন না। ভুল ভুলকে বাড়ায়। যদি কোনো ভুল হয় ক্ষমা করুন, ভুলে যান। যদি না হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে মনকে পরিবর্তন করে নিন। যে শিক্ষা পেলেন তাকে ফলোআপ করুন।
  • যতটা সম্ভব বাস্তবকে মেনে নিন। যা হওয়ার তাই হবে। আমাদের কাজ শুধু সচেতন থাকা। এর জন্য মনকে একাত্ম করে যে সমস্যা আসবে তাকে ফোকাস করুন। দেখবেন সমস্যার মধ্যেই সমাধানের সূত্র লুকিয়ে আছে। কাজে লাগান, সফল হবেনই।
  • অনেক সময় অন্যে সন্দেহের বীজ বপন করে দেয়, পরে মহীরূহ হয়ে যায়। নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ভাবুন, তারপর গ্রহণ করুন।
  • বাচ্চাদের ভয়, মিথ্যা ইত্যাদির দ্বারা শাসন করবেন না। তাহলে পরে যখন সব বুঝবে তখন সত্যি বললেও সন্দেহ প্রকাশ করবে, সন্দেহবাতিক হয়ে যাবে।
  • জীবনে ব্রেক আসতে পারে কিন্তু তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিন। ব্রেক হল একটা শিক্ষা, একটু সময় পাওয়া যা আবার নতুনভাবে শুরু করার প্রেরণা দিয়ে থাকে।
  • রোজ সকালে ও রাত্রে পনেরো-কুড়ি মিনিট মেডিটেশন বা ধ্যান করতে হবে। মনের এই ব্যায়াম মনকে শক্তিশালী করবে। সন্দেহ নামক মানসিক সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে। আনন্দে, শান্তিতে থাকা যাবে।

যদি এরপরও সন্দেহ নামক সমস্যা বাড়তে থাকে তাহলে অবহেলা না করে, ধামাচাপা না দিয়ে বা কেয়ারলেস না হয়ে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন।

সুস্থ শরীরে সুস্থ মন, এর নামই জীবন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন