ট্যারেন্টুলাকে ভয় নেই
ডাঃ বলরাম জানা
2019-01-28 11:44:18
ট্যারেন্টুলা বা মাকড়সা মানে ঘা ঘিনঘিন করা ভয়ের ব্যাপার। রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজগুলো মাকড়সার জাল বুনে বুনে তৈরি। আবার সেই মাকড়সা তেড়ে আসছে, মেরে ফেলছে মানুষকে এমন গল্প ছড়ালে তো রক্ষে নেই। কাজকর্ম শিকেয়, রাজ্য উঠবে লাটে। শুধু মাকড়সা মারো আর গপ্পো ছড়াও। যা ঘটছে মেদিনীপুরে দু’-একটি গ্রামে। হালের ট্যারেন্টুলাও এক উপাদেয় গল্প কাহিনী।
মাকড়সার শরীরে দুটো অংশ, মুখ ও বুক একসঙ্গে পেট। এছাড়াও আটটা পা। কোনো ডানা নেই। আটটা চোখ। পেটের শেষ দিকে একটি গ্রন্থি থেকে প্রোটিন সমৃদ্ধস্পাইডার লিম্ফের নিঃসরণ ঘটিয়ে এর জাল বোনে। জাল বেয়ে এপাশ, ওপাশ, ওপর ও নীচ বেয়ে চলে, শিকারদের ফাঁদে ফেলে খায়।
মাকড়সাদের উৎস খুঁজতে গেলে একটু পেছনে যেতে হবে। পৃথিবী জুড়ে যে মাকড়সা আদিমকাল থেকে রাজত্ব করত তা হল মাইগ্যালোমরফি, আর হালের নতুন প্রজন্মের মাকড়সা হল এরিনোমরফি। এছাড়াও একটি প্রজাতি হল লিফিস্টিডি যেটা খুবই বিরল। তবে সব মাকড়সারই মুখের দু’পাশে থাকে দুটো উপাঙ্গ পেডিপলিম, যেটা খাদ্য নির্বাচন ও গ্রহণ করতে সাহায্য করে।
ট্যারান্টুলা
ট্যারেন্টুলা আদি মাকড়সা মাইগ্যালোমরফি গোত্রের। সারা পৃথিবীতে এরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। উত্তর আমেরিকার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে, সোনায়াম, চিহুয়াহুয়ান, মোজাডে মরুভূমি (আরিজোনা), টেক্সাস, কালিফোর্নিয়া অঞ্চলে পাওয়া যায়। শুষ্ক গরম অঞ্চলে থাকে। এগুলো ছোট দু’ইঞ্চির মতো লম্বা আর পা ছড়ালে চার ইঞ্চির। মুর অঞ্চলের ট্যারেন্টুলা তিন ইঞ্চির বেশি লম্বা। তিরিশ বছর অবধি বাঁচে। ছোটছোট পোকামাকড় ও পাখি খায় এরা।
বেশির ভাগ ট্যারেন্টুলা কালো, বাদামী বা বিভিন্ন রঙের বাহারে তৈরি। মেক্সিকান রেড গেল ট্যারেন্টুলার লাল রঙের পা। আবার দক্ষিণ আমেরিকার গোলিয়ান ট্যারেন্টুলার আকৃতি পাঁচ ইঞ্চি মতো আর পা ছড়ালে বারো ইঞ্চি। আফ্রিকা মহাদেশে, অস্ট্রোলিয়াতেও থাকে ট্যারেন্টুলা।
সব ট্যারেন্টুলার গায়ে, পায়ে থাকে অসংখ্যা লোম। আর আছে রঙের বৈচিত্র। হালকা শ্লেট রঙ, লাল, ব্রাউন কিংবা বৈচিত্র। হালকা শ্লেট রঙ, লাল, ব্রাউন কিংবা মেটে বা ঘন কালো। আর পেটের ঠিক মাঝখানে থাকে একটা চুলহীন টাক অঞ্চল।
যখন ট্যারেন্টুলা শত্রুর সামনে এসে পড়ে তখন সে ঘন ঘন পা ঘষে শরীরের ওপর থেকে দেহের লোমগুলো যাতে শত্রুর চোখে পড়ে। তাতে শত্রুর চোখে প্রদাহ শুরু হয়। শত্রু জব্দ হয়। আবার এরা এদের চোয়াল ঘষে ঘষে হিসহিস শব্দ করে। ট্যারেন্টুলা আসলে খুবই কুঁড়ে। গর্তের ভেতর, ফাঁকাফোকরে থাকে। সন্ধের পর এরা শিকার বের হয়। এরা গর্ত খুঁড়তে পারে। পাহাড়, পাথর, গাছের কোটরে বাসা বাঁধে। তবে খটখটে শুকনো জলহীন জায়গা এদের পছন্দ। মাটি পছন্দ হলে এরা গর্ত খোঁড়ে আর জাল বোনে যাতে ধুলোবালি না যায়।
ট্যারেন্টুলা শিকার করে রাতে। শিকার করার জন্য কিন্তু জাল বোনে না। দ্রুত দৌড়ে গিয়ে শিকার ধরে। যেমন গঙ্গাফড়িং, ছোট ছোট মাকড়সা, গিরগিটির বাচ্চা প্রভৃতি। ট্যারেন্টুলা তার বিষ দাঁত (ফ্যাড) শত্রুর শরীরে ঢুকিয়ে দিয়ে বিষ ঢাল। পালক আর পা দিয়ে শক্রকে চেপে ধরে। ছোট বলের মতো করে নেয় আর হজমি রঙ দিয়ে সেটাকে শুকিয়ে রাখে, পরে খাবে বলে। ট্যারেন্টুলার শত্রুও অনেক। যেমন সাপ, গিরগিটি, পাখি, বোলতা প্রভৃতি।
ট্যারেন্টুলা যদিও দেখতে ভয়ষ্কর তবে এরা কামড় কিন্তু খুব বেশি দেখা যায় না। কেননা এরা মানুষ বিবর্জিত জায়গায় থাকে। সত্যি কথা বলতে কি ট্যারেন্টুলা মানুষের ক্ষতি করে না। অনেকেই বাড়িতে একে পোষে। মানুষকে কামড়ালে বিষের প্রভাবে ক্ষতস্থান ফোলে, চুলকোতে থাকে বা জ্বাল করে। খুব অল্প সময় জ্বালা করে। কাঠ পিঁপড়ে বা লাল পিঁপড়ে কামড়ালে যেমন হয় তেমন। ক্ষতস্থানে ধুয়ে ওষুধ লাগালে উপকার হয়। অ্যান্টিহিস্টামিন, অ্যান্টিবায়োটিক এমনকী স্টেরয়েড লাগে। তবে হোমিওপ্যাথি মতে ট্যারেন্টুলা থেকে তৈরি ট্যারেন্টুলা ৩০ বা ২০০ এবং ইগনেসিয়া মাদার ব্যবহারে উপকার হয়।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন