×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

নাক ডাকা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়তে পারে শিশু

ডাঃ শান্তনু পাঁজা
2019-01-31 15:23:50

অবস্ট্রাকটিভ-স্লিপঅ্যাপানয়া ঘুমের একধরনের সমস্যা। এরকম হলে ঘুমের মধ্যে বারবার শ্বাসবন্ধ হয়, আবার চালু হয়। স্লিপঅ্যাপনিয়া হতে পারে নানা রকম। তবে সব চেয়ে বেশি হয় অবস্ট্রাকটিভ স্লিপঅ্যাপনিয়া। এই সমস্যা দেখা দেয় ঘুমের মধ্যে গলার মাসল যখন শ্বাসপথ একবার খোলে আর বন্ধ করে তখন। এর প্রধান উপসর্গ হিসাবে থাকে নাক ডাকা।

শ্বাসপথ পুরোপুরি বা অল্পবিস্তর বন্ধ হলে শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়, রক্তে অক্সিজেন কমে যায়।এই অবস্থা ১০-১২ সেকেন্ড স্থায়ী হতে পারে। এই সময় মস্তিষ্ক আবার শ্বাস চালু করার ব্যবস্থা করে। এই জেগে যাওয়া এতটাই কম সময়ের যে বেশির ভাগ মানুষ এসম্পর্কে সচেতন থাকেনা।রাতে ৩০ বার পর্যন্ত এরকম হয়ে ঘুমের ক্ষতি করতে পারে।

লক্ষণ গুলি কী

প্রধান লক্ষণ জোরে জোরে নাক ডাকা। এর সঙ্গে দিনে বা রাতে যা যা সমস্যা হতে পারে তা হল—

  • দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব, সঙ্গে কোনও কিচুতে মনোনিবেশ করতে না পারা।
  • ঘুম থেকে ওঠার পর একটু বুকে ব্যথা অনুভব করা।
  • সকালে মাথা ব্যথা করা।
  • মুড পাল্টে যাওয়া—ডিপ্রেসন, অ্যাংজাইটি অথবা খিটখিটে হয়ে যাওয়া।
  • ইনসমনিয়া—ঠিকমতো ঘুম না হওয়া এবং মাঝে-মধ্যে ঘুমভাঙা।
  • হাইপারটেনশন।
  • শ্বাস ঠিকমতো না নিতে পারার জন্য রাতে-মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া।

ঘুমের মধ্যে নাক ডাকলেই যে অবস্ট্রাকটিভস্লিপঅ্যাপনিয়া আছে তা ধরে নেওয়ার কোনও যুক্তি নেই। তবে এই সমস্যা থাকলে নাক খুব জোরে ডাকে এবং শ্বাস বন্ধ হলে হঠাৎ করে চুপ হয়ে যায়। শিশু এবং বয়স্কদের লক্ষণের মধ্যে পার্থক্য আছে। বয়স্কদের দিনের বেলা ঘুম বেশি পায়, কাজ করতে করতেও অল্পসময়ের জন্য বসে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে।

অন্যদিকে এই সমস্যা থাকলে শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত অস্থিরতা, অপুষ্টি এবং পড়াশুনোয় পিছিয়ে পড়তে দেখা যায়। শিশুদের বৃদ্ধির হারও কমে যায়।

শিশুদের বৃদ্ধির হার কমতে পারে দুটি কারণে। প্রথমত, শ্বাস নেওয়ার সমস্যার জন্য অনেক বেশি ক্যালোরি ক্ষয় হয়। দ্বিতীয়ত, নাক এবং শ্বাস পথের প্রতিবন্ধকতার জন্য খাবার খেতেই অসুবিধা হয়।

এই লক্ষণ দীর্ঘদিন ধরে থাকলেও অনেকে এটা যে সমস্যা তা বুঝতেই পারেনা। ওজন কমিয়ে, জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে, অপারেশনের মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করা যেতে পারে। নাকডাকার লক্ষণ দেখা দিতে পারে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, কনজেশন, গলার ইনফেকশন থেকেও।

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণ

শিশুদের টনসিল বা অ্যাডিনয়েডস বড় হয়ে যাওয়া এইধরনের অসুস্থতার জন্য সবচেয়ে দায়ী। কখনও কখনও তাই টনসিল অপারেশন করলেই এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যদিও বড়দের ক্ষেত্রে এর জন্য দায়ী বিভিন্ন রকম কারণ। যেমন—

  • বয়স।
  • ওবেসিটি বা মেদ বাহুল্য। যার ফলে শ্বাসপথের আশপাশে নরম টিস্যুর সংখ্যা বেড়ে যায়।
  • নাকের গঠনগত সমস্যা যা শ্বাসনালীকে রুদ্ধ করে দেয়।
  • মাসল টোন খারাপ হয়ে যাওয়া। মদখাওয়া, নিউরোলজিক্যাল কোনও অসুখ বা শরীরের ধরা না পড়া অন্যকোনও সমস্যার কারণে এটা হতে পারে।

মহিলাদের তুলনায় অবস্ট্রাকটিভ স্লিপঅ্যাপনিয়া ছেলেদেরই বেশি হয়। মধ্যবয়সী পুরুষদের শারীরিক কিছু পরিবর্তন যেমন এর জন্য দায়ী, তেমনি কিছুটা বংশগত কারণেও এমন হয়। বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায় এই ধরনের রোগীর পরিবারে বাবা, ঠাকুরদা কিংবা অন্যকারও এই সমস্যা ছিল বা আছে। এছাড়া ধূমপান, মদেরনেশা, বেশি করে খাওয়ার জন্যও এই সমস্যা হয়ে থাকে।

চিকিৎসকের কাছে কখন যেতে হবে

রোগী নিজে বা পরিবারের অন্যকেউ যদি লক্ষ করেন যে নাক ডাকার শব্দে তার নিজের এবং আশপাশের লোকদের ঘুমভেঙে যাচ্ছে।

দমবন্ধ হওয়ার কারণে জেগে যাচ্ছে।

মাঝে মাঝেই শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম-ঘুম ভাব। কাজ করতে করতে কিংবা টিভি দেখার সময় এমনকী গাড়ি চালাতে গিয়েও ঘুমিয়ে পড়ছে।

কীভাবে পরীক্ষা

অনেক গুলো পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়। প্রথমে রোগীর এবং তার পরিবার সম্পর্কে জানা, তার শারীরিক অবস্থা কেমন, দিনের বেলা রোজকার কাজ কর্ম কীভাবে করে ইত্যাদি বিষয়। এরপর শারীরিক পরীক্ষা করে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে দেখা হয় গলার পিছন দিকে কোনও অস্বাভাবিকতা আছে কিনা, তার ব্লাডপ্রেসার কেমন, ঘাড় এবং কোমরের মাপ কত।

এরপর অবস্ট্রাকটিভ স্লিপঅ্যাপনিয়া ঠিকঠাক ভাবে জানতে যে পরীক্ষা দুটো করা হয় তা হল পলিসমনোগ্রাফি, আরহোমস্লিপস্টাডি।

পলিসমনোগ্রাফি : এটা ঘুমের মধ্যে করা হয়।এক্ষেত্রে রোগীর শরীরে যন্ত্রপাতি আটকে দেন, যা জানান দেয় তার হার্ট, লাঙস, মস্তিষ্কের অবস্থা, শ্বাস নেওয়ার ধরন, বাহু এবং পা নড়া-চড়া কেমন। এমনকী রক্তের অক্সিজেন লেভেলও জানা যায় এর সাহায্যে। সারা রাত ধরে কিংবা স্প্লিটনাইট স্টাডি অর্থাৎ ঘুমের বিভিন্ন পর্যায়ে এটা করা যায়।

স্প্লিটনাইটস্লিপ স্টাডিতে ঘুমের প্রথম  পর্যায়ে মনিটরিং করা  হয়। যদি দেখা যায় অবস্ট্রাকটিভস্লিপঅ্যাপনিয়া আছে তাহলে দ্বিতীয় পর্যায়ে ক্রমাগত শ্বাসনালীতে প্রেসার দেওয়া হয়। এই পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার সাহায্য করে অবস্ট্রাকটিভস্লিপঅ্যাপনিয়া নির্ণয় ছাড়াও এর সাহায্যে অন্যান্য কোনও স্লিপডিসঅর্ডার যেমন, পিরিয়ডিক লিম্ব মুভমেন্ট বা নরকোলেপ্সি আছে কিনা জানা যায়।

হোম স্লিপঅ্যাপনিয়া টেস্টিং:

কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক রোগীর বাড়িতে পলিসমনোগ্রাফি করানোর ব্যবস্থা করতে পারেন। এর সাহায্যে জানা যায় এয়ারফ্লোটা, শ্বাস নেওয়ার ধরন, ব্লাড অক্সিজেন লেভেল, লিম্ব মুভমেন্ট ইত্যাদি।প্রয়োজনে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হয় এসব জায়গায় কোনও সমস্যা আছে কিনা জানার জন্য।

চিকিৎসা

প্রথমেই জোর দেওয়া হয় লাইফস্টাইল পরিবর্তনের ওপর।মদ খাওয়ার পরিমাণ কমানো, ওজন কমানো, ধূমপান বন্ধ করা, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ না খাওয়া ইত্যাদি। যদিও লাইফস্টাইল পাল্টালেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি নাও মিলতে পারে। তখন অন্যভাবে চিকিৎসা করতে হয়।যেমন—

সিপিএপি

লাইফস্টাইল পরিবর্তনে জোর দেওয়া হয় পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসারের ওপর এটা কম থেকে মাঝারি মাপের নাক ডাকা কমাতে ভালোই সাহায্য করে। মুখে একটা টিউব ফিট করা মাস্ক পরিয়ে দেওয়া হয়।সেই মাস্ক-টিউবের অপর প্রান্ত থাকে একটা মেশিনের সঙ্গে লাগানো। ওই মেশিন থেকে শ্বাস পথে অক্সিজেন সরবরাহ করা হতে থাকে এক ভাবে। এতে শ্বাসনালী খুলে যায়। এটা খুবই কার্যকরী পদ্ধতি হলেও অনেকের এতে সমস্যা হয়। যতই অল্প হোক এর যে আওয়াজ তা সহ্য করতে পারেনা, অস্বচ্ছন্দ বোধ করে।

স্লিপ অ্যাপনিয়া ওরাল অ্যাপ্লায়েন্স: স্প্লিন্ট বা অন্য ওরাল অ্যাপ্লায়েন্স ব্যবহার করা হয় অবস্ট্রাক স্লিপঅ্যাপনিয়ার চিকিৎসায়। সিপিএপি-র তুলনায় কম জটিল বলে রোগী এটাকেই পছন্দ করে অনেক সময়।এই যন্ত্র মুখের ভিতর থাকে, যা হাওয়া চলাচলে সুবিধা করে দেয় এবং দাঁত, মাড়ি রক্ষা করে।

স্লিপঅ্যাপনিয়া সার্জারি :

শারীরিক কিছু ক্রটির কারণে হলে অপারেশনে সাফল্য মেলে। অপারেশন নির্ভর করে কোন জায়গা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তার ওপর। প্রয়োজনে যেসব অপারেশন করতে হয় তাহল—

  • টনসিলেকটোমি বা অ্যাডিনয়েকটমি।
  • নাকের অপারেশন।টারবিনেকটমি বা ক্রটিপূর্ণ সেপ্টাম কে সোজা করা।
  • রোগীর মুখের তালু বা আল-জিভের অপারশেন।
  • জিভের নীচের দিকের অপারেশন।
  • চিবুকের অপারেশন।
  • খুব বেশি মোটাদের ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি।

নিউরোস্টিমুলেশন:

যারা সিপিএপি মেশিনের ব্যবহার সহ্য করতে পারেনা তাদের এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়। এক্ষেত্রে বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে ইলেকট্রিক কারেন্ট ব্যবহার করে মাসলটোন বাড়ানো হয় যাতে জিভ কোনও রকম শ্বাসপথে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে।

চিকিৎসা না করালে কী কী সমস্যা

দীর্ঘদিন এই সমস্যা চিকিৎসা না করিয়ে ফেলে রাখলে অনেক জটিল স্থায়ী অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন, হার্টেরঅসুখ, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, দিনের বেলা ক্লান্তিবোধ করা, চোখ এবং দৃষ্টির সমস্যা হওয়া, এমনকী মুড এবং মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

স্লিপঅ্যাপনিয়ার রোগীদের শতকরা ৩০ জনের হার্ট অ্যাটাক এবং হার্টের সমস্যাজনিত কারণে মৃত্যুর চান্স থাকে খুব বেশি। এছাড়া হার্টের ডান দিকে ক্রমাগত চাপ পড়ার কারণে হতে পারে করপালমোনেল।এটি কনজেসটিভহার্টফেলিওরের খুবই জটিল এবং মারাত্মক একটা ধরন।কাজেই নাক ডাকার সমস্যাকে কখনোই অবহেলা করা চলবেনা।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন