নাক ডাকা থেকে চূড়ান্ত ঘুমের সমস্যা
ডাঃ মনোজেন্দ্র নারায়ণ ভট্টাচার্য ( কনসালটেন্ট ই.এন.টি, হেড অ্যান্ড নেক সার্জন, পিয়ারলেস হাসপাতাল এবং বি.কে.রায় রিসার্চ সেন্টার )
2019-01-31 15:37:23
আপনি কি ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন? যখন পুরোপুরি ঘুমোননি সবার কথা শুনতে পাচ্ছেন তখনও কি মাঝে মাঝেই নাক ডেকে উঠছে? কিংবা হঠাৎ করে দমবন্ধ হয়ে এসে ঘুম ভেঙে যায়? তাহলে কিন্তু এখনই সাবধান হোন।নয় তো অনেক বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।কারণ এসবই স্লিপ ডিসঅর্ডারের লক্ষণ।
স্লিপডিসঅর্ডার বলতে কী বোঝায়
যখন ঘুম স্বাভাবিক নিয়মে হয়না তখনই বলা হয় যে স্লিপডিসঅর্ডারের সমস্যা আছে।এর শুরু সাধারণ নাক ডাকা থেকে, এরপর ফুসফুসে অক্সিজেন পৌঁছনোর পরিমাণ এতটাই কমে যায় যে জেগে থাকলেও এই সমস্যা পুরোপুরি যায় না। একে বলা হয় ওবেসিটি বা হাইপোভেন্টিলেশন সিনড্রোম।
এমন সমস্যা কেন
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর জন্য দায়ী আপার এয়ারওয়েজ অর্থাৎ নাক থেকে ভয়েসবক্স বা ল্যারিংস-এর মধ্যে কোনও অবস্ট্রাকশন বা প্রতিবন্ধকতা থাকা।কখনও কখনও শ্বাসক্রিয়ার ওপর মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণের জন্য এমন সমস্যা হয়। যদিও এমন ঘটনা তুলনায় খুব কমই চোখে পড়ে।
ঘুমের মধ্যে আপার এয়ারওয়েজে বাধা পেয়ে প্রথম দিকে কম অক্সিজেন লাঙসে পৌঁছয়। এই অবস্থাকে বলে হিপপনিয়া।এরপর অক্সিজেনের পরিমাণ আরও কমে গেলে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাকে বলে অ্যাপনিয়া। তখন খানিকক্ষণের জন্য শ্বাস একদম বন্ধ হয়ে যায়, রক্তে অক্সিজেনর পরিমাণ যায় কমে। ঘুমের মধ্যে এক আধ বার নয়, বহুবার এমন হতে পারে।
অ্যাপনিয়া এবং স্লিপঅ্যাপনিয়া
অ্যাপনিয়া বলতে বোঝায় শ্বাসের অভাব। আর স্লিপ বা ঘুমের মধ্যে শ্বাসের অভাব হলে বলা হয় স্লিপঅ্যাপনিয়া।
স্লিপঅ্যাপনিয়াকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা
স্লিপঅ্যাপনিয়াকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিশ্চয় আছে। সমস্যা সাধারণ মনে হলেও অবহেলা করার উপায় নেই। শিশু থেকে বৃদ্ধ যে কারোরই হোক না কেন, সচেতন হতে হবে প্রথমেই। কারণ এর থেকে দেখা দিতে পারে নানান শারীরিক সমস্যা। যেমন, হাই ব্লাডপ্রেসার, ডায়াবেটিস, হরমোনের গন্ডগোল, ডিপ্রেসন, হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, দিনের বেলা ঘুমঘুম ভাবের জন্য পড়াশোনা বা অফিসের কাজ ঠিক ভাবে করতে না পারা, এমনকী পথ দুর্ঘটনাও হতে পারে এইকারণে। শিশুদের ক্ষেত্রে স্লিপঅ্যাপনিয়ার কারণে কানে শোনার সমস্যা হতে পারে। জনসংখ্যার ৩০% স্লিপঅ্যাপনিয়ায় ভুগছে। আর এই সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। যদিও উন্নত গবেষণা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে এই সমস্যা থেকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা সম্ভব হচ্ছে।
রোগ নির্ণয়
ঘুমোনোর সঙ্গীর উপস্থিতিতে প্রথমেই বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া হয় তার ঘুমের ধরন। এর ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হয়। করা হয় স্লিপ স্টাডিও।
- স্লিপ স্টাডি: ঘুমের মধ্যে করা এক যন্ত্রণাহীন পরীক্ষা। রোগী বাড়িতে যখন ঘুমোয় সেই সময়ই এই পরীক্ষা হয়। ঘুমের মধ্যে দেখা হয় তার অক্সিজেন নেওয়ার পরিমাণ কতটা বাড়ে-কমে, হৃদযন্ত্রের অবস্থা কেমন, কী ধরনের শব্দ বের হচ্ছে নাক ডাকার সময়, ইজিচেঞ্জ অর্থাৎ মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের অবস্থা কেমন থাকছে এসবের ওপর ভিত্তি করে রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি নির্দিষ্ট করা হয়।
চিকিৎসা পদ্ধতি
ঘুমের প্যাটার্ন, প্রয়োজনীয় পরীক্ষার রিপোর্ট ইত্যাদি দেখে চিকিৎসা শুরু হয়। লাইফ স্টাইলে পরিবর্তন আনা যেমন, উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ঠিক রাখা, ঘুমের আগে অ্যালকোহল না খাওয়া, ধূমপান বন্ধ করা, কিছু বিশেষ গ্রুপের ওষুধ বন্ধ করার সঙ্গে প্রয়োজনমতো সার্জিকাল বা নন-সার্জিকাল চিকিৎসার দরকার হয়।নন-সার্জিকাল ট্রিটমেন্টের মধ্যে আছে খাওয়ার ওষুধ, ম্যান্ডিবুলার পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার মেশিনের ব্যবহার।
যে প্রতিবন্ধকতার জন্য রোগী শ্বাস ঠিকমতো নিতে পারেনা সার্জিকাল পদ্ধতিতে সেই পথ খুলে দেওয়া হয়। এমন কিছু বিশেষ ধরনের যন্ত্রপাতি আছে যার সাহায্যে খুব তাড়াতাড়ি, নিরাপদ ভাবে এই অপারেশন করা যায়। ব্যক্তি বিশেষে যে যে অপারেশন দরকার হতে পারে সেগুলো হল—
- এন্ডোস্কোপিক রিমুভাল অফ ইন্ট্রা-নেজাল মাস।
- সেপটোপ্লাস্টি / টারবিনোপ্লাস্টি।
- অ্যাডিনোটনসিলার রিমুভাল
- লেজার অ্যাসিস্টেড ইউভুলো প্যালাটো প্লাস্টি।
- হাইপো ফ্যারিঞ্জিয়াল মাস রিমুভাল।
- লেজার / কোয়াবলেশনডিবালকিং অফটাং বেস।
- ল্যারিঞ্জিয়াল ইনলেট প্রসিডিওর।
- জপ্রস্ট্রুশন টেকনিক।
- এছাড়াও আছে বেশ কিছু পদ্ধতি।
অনেকেরই এই চিন্তা থাকে সমস্যাতো আছে, কিন্তু যাব কোথায়? নাক ডাকা বা ঘুমের সমস্যা হলে যেতে হবে যেকোনো হাসপাতালের ই.এন.টি অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগে। তারাই এধরনের যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন