×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

নাক ডাকা জীবন হানির গর্জন নয় তো

ডাঃ ডি. কর
2019-01-31 15:43:20

নাক থাকলেই যে ডাকতে হবে এবং নাক ডাকার শব্দে সবাইকে নাকানি-চোবানি খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ষাট বছরের ঊর্ধ্বে প্রায় শতকরা ষাট ভাগ লোক নাক ডাকে। এদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। নাকডাকার শব্দের বিভিন্নতা ও তার ধরন নিয়ে আমাদের মধ্যে তামাশার কোনো অন্ত না থাকলেও এরমধ্যে কিছু গুরুতর রোগের কারণ লুকিয়ে থাকতে পারে। নাক ডাকা নিয়ে রোগীর কোনো সমস্যা হয়না, কারণ সেতো ঘুমিয়ে থাকে। সমস্যা হয় পাশে যে বা যারা শুয়ে থাকে তাদের। সেই কারণে নাক ডাকার ব্যামো রোগীদের কাছে ভীষণভাবে অবহেলিত। নাক ডাকা কোনো রোগ নয়, তবে অনেক রোগের লক্ষণ হতে পারে। তাই আজকের প্রবন্ধে পাঠক গণ কে নাকডাকা সম্বন্ধে অবহিত করার চেষ্টা করছি মাত্র।

ঘুমের মধ্যে নাক দিয়ে নিশ্বাস নেবার সময় বায়ু বাধা পেলে শ্বাসযন্ত্রের মধ্যে কম্পন তৈরি হয় যার ফলে উৎপন্ন শব্দকে বলা হয় নাকডাকা। অনেক সময় এই শব্দ মৃদু হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তীব্র, বিকট ও অসহনীয় হয়। নাকডাকা মানেই বুঝতে হবে নিশ্বাসে বায়ু চলাচলে বাধা পাচ্ছে। এতে রোগীর নিজের ও তার আশপাশের লোকের ঘুমের ব্যাঘাত হয়। দীর্ঘদিনের নাক ডাকার প্রভাবে রোগীর মধ্যে সবসময় ঝিমুনি ভাব থাকে, মনোসংযোগ করতে পারেনা, খিটখিট হয় ও যৌনমিলনের ইচ্ছে কমে যায়।

নাকডাকা নিয়ে যতই রঙ্গ-তামাশা করুন বা অবহেলা করুন না কেন, মনে রাখবেন নাকডাকা কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের ও স্ট্রোকের রিস্ক বাড়ায়। দীর্ঘদিন ধরে রাতে ঘুমের মধ্যে শ্বাসযন্ত্রে বায়ু চলাচলে বাধা পেলে ব্লাডপ্রেসার বাড়ে, হার্টের ওপর চাপবাড়ে, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপঅ্যাপনিয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপঅ্যাপনিয়া থেকে হার্টঅ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়তে থাকে।

জোরে নাক ডাকার শব্দের কম্পন ক্যারোটিড আর্টারির মধ্যে দিয়ে বাহিত হয়। ফলে ক্যারোটিড আর্টারিতে রক্ত চলাচল বিঘ্নিত হয় ও রক্তকোষে ইরিটেশন হয়। অ্যাথেরোস্ক্লেরোটিক প্লাক তৈরি হয় ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ফলে নাক ডাকা কে বেশি লঘু করে দেখলে বড়সড় বিপদের সম্ভাবনা বাড়েবে।

নাক ডাকার কারণ

  • নাক ডাকার মূল কারণ হল আলজিভ ও সফট পেলেটের রিলাক্সেশন। এই শিথিলতার কারণে বায়ুপ্রবাহ আংশিক ভাবে বাধা প্রাপ্ত হয়। বাতাস জোর করে ভিতরে ঢুকতে গেলে কম্পন সৃষ্টি হয় ও নাকে শব্দ হয়।
  • ঘুমের মধ্যে চোয়ালের অবস্থান সঠিক না হলে নাকে শব্দ হবে।
  • স্থূলতা বা ওবেসিটি থেকে গলার আশে পাশে ফ্যাট বেশি জমে, ফলে নাক ডাকে।
  • নাকের হাড় বাঁকা থাকলে বা অ্যাডেনয়েড বড় থাকলে অবস্ট্রাকশন থেকে নাক ডাকা হয়।
  • চিত হয়ে শুলে ঘুমের মধ্যে জিভ অনেক সময় একটু ভিতরে ঢুকে আসে, ফলে নিশ্বাস বাধা পায় ও নাক ডাকার শব্দ হয়।
  • বেশি পরিমাণে মদ খেয়ে ও সিগারেট খেয়ে বা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমোলেও নাক ডাকে।
  • নাকের পলিপ বা অন্য কোনো টিউমারের জন্যও নাক ডাকে।
  • সর্দি বা অ্যালার্জিক রাইনাইটিস থেকেও নাকডাকে।

পরীক্ষা

নাক ডাকার কারণ খুঁজতে কিছু পরীক্ষা করতে হয়, যেমন প্যারান্যাসাল সাইনাসের এক্স-রে, সি.টি.স্ক্যান, এম.আর.আই, নার্কোস্কোটি ইত্যাদি।

নাক ডাকার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

নাক ডাকার কারণেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা না হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায়।যেমন অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, পলিপ বা অন্য কোনো নন-ক্যানসারাস টিউমার থাকলে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। অনেকের সর্দি কাশির ধাত থাকে অর্থাৎ ঘন ঘন সর্দি-কাশি হয়, ফলে নাকের মিউকাস মেমব্রেন মোটা হয়ে যায়। ছোট ছোট মাংস পিন্ড তৈরি হয় যাকে ন্যাসাল পলিপ বলে।এরা নিশ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা তৈরি করে ও নাক ডাকে। হোমিওপ্যাথির কনস্টিটিউশনাল চিকিৎসা সর্দি-কাশির ধাত, নাকের পলিপ, সাইনাসের সমস্যা ভালো হয় ও নাকডাকা কমে যায়।অনেকের অ্যাডেনয়েড গ্লান্ড বড় থাকে, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় অ্যাডেনয়েড ছোট করা যায়, অপারেশন করতে হয়না।সেই সঙ্গে নাকডাকা কমে।

নাকের হাড় অল্প পরিমাণে বাঁকা থাকলে, বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে, হোমিওপ্যাথিক ওষুধে ঠিক হয়ে যায় ও নাক ডাকা কমে যায়। নাকের হাড় বাঁকা বা ডি.এন.এস খুব সাধারণ সমস্যা। আঘাত জনিত কারণে বা অন্যকোনো কারণে প্রায় প্রত্যেকেরই নাকের হাড় সামান্য বেকে থাকে। এর জন্য কোনো সমস্যা হয়না। কিন্তু নিশ্বাস বাধা প্রাপ্ত হলে চিকিংসা করাতে হয়। নাকের হাড় বেশি বাকা থাকলে হোমিওপ্যাথিক ওষুধে কাজ হয়না, অপারেশন করতে হতে পারে।

পলিপ বা অন্যকোনো বিনাইন টিউমার থাকলে অ্যান্টি সাইকোটিক মেডিসিন দিলে টিউমার বা পলিপ ছোট হয়ে যাবে।

নাকডাকার থেকে মুক্তি পেতে লাইফস্টাইলে পরিবর্তন করতে হবে। ওবেসিটি বা স্থূলতা কমাতে ডায়েট কনট্রোল করতে হবে, সাথে ব্যায়াম, যোগা করতে হবে।মদ, সিগারেট, বিড়ি, ঘুমের ওষুধ খাবার প্রবণতা কমাতে হবে।বিশেষকরে ঘুমের আগে মদ, সিগারেট, বিড়ি খাওয়া যাবেনা।

চিত হয়ে না শুয়ে কোনো একপাশ ফিরে শুতে হবে, শোবার আগে মনে শান্তি বা আনন্দ রাখতে হবে।

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপঅ্যাপনিয়ার জন্য ওপিয়ামওল্যাকেসিস উচ্চশক্তিতে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে আলজিভ ও সফট প্যালেটের মাসকুলার টোন বাড়ানোর ওষুধ ও নাকের মিউকাস মেমব্রেনের কনজেশন কমানোর ওষুধ দিতে হয়। ব্লাডপ্রেসার চেক করতে হবে। হাইব্লাডপ্রেসার থাকলে তার ওষুধ খেতে হবে ও নুন খাবার প্রবণতা কম করতে হবে। বছরে অন্তত একবার রক্তের লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করে ব্লাড কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড ও অন্যান্য ফ্যাটের পরিমাণ জানতে হবে।রক্তে ফ্যাটের পরিমাণ জানতে হবে। রক্তে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি হলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে। তাই নাকডাকার সাথে রক্তে ফ্যাটের পরিমাণ কমাতে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খেতে হবে ও তৈলাক্ত খাবার বর্জন করতে হবে। তাহলে নাকডাকা কমে যাবে, সেই সঙ্গে হার্টঅ্যাটাক ও স্ট্রোকের প্রবণতা কমবে।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, নাকডাকা কোনো রোগ নয়, রোগের লক্ষণ মাত্র। নাকডাকার কারণ সন্ধান করে রোগনির্ণয় করে চিকিৎসা করলে নাকডাকা সেরে যাবে ও রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। না হলে নাকডাকা জীবন হানিকর রোগের গর্জন হতে পারে। ফলে নাকডাকা নিয়ে বেশি নাকানি-চোবানি না খেয়ে সমস্যার শুরু থেকেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করালে খুব সহজে নাকডাকা থেকে আপনি ও আপনার ঘুমের সাথীরা মুক্তি পাবেন।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন