নাসিকার গর্জন যোগে করুন বর্জন
ডাঃদিবা সুন্দর দাস
2019-01-31 16:16:16
নাসিকা অর্থ নাক। গর্জন অর্থ শব্দ অর্থাৎ নাকের শব্দ বা নাকডাকার শব্দ। ঘুমের মধ্যে নাকডাকা, হাসিরনয়, দুশ্চিন্তার কারণও বটে। আর পাঁচজনের সঙ্গে শুয়ে নাক ডাকলে সকলের বিরক্তির কারণ ঘটে। বিশেষ করে দাম্পত্য জীবনে নাকডাকা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর অশান্তি, ঝগড়া হতে পারে। ঘুমের মধ্যে নাকডাকা আসলে একটা অসুখ। চিকিৎসা শাস্ত্রে এর নাম স্লিপঅ্যপনিয়া। স্লিপ অর্থ ঘুম আর অ্যাপনিয়া মানে শ্বাস নেওয়ার ব্যাঘাত বা ঘাটতি। শ্বাস-প্রশ্বাসের অভাব জনিত কারণে ঘুমের ব্যাঘাতকেই বলে স্লিপঅ্যপনিয়া। বা বলা যায় ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা। স্লিপঅ্যাপনিয়া রোগীদের অধিকাংশ প্রচন্ড জোরে নাক ডাকেন। এমনকী পাশের ঘর থেকেও শব্দ শোনা যায়। আসলে ঘুমের সময় গলার কাছাকাছি ফ্যারিংস সঙ্কুচিত (ফ্যারিঞ্জিয়াল কলাপ্স) হয়ে পড়লে শ্বাস নালী দিয়ে বায়ু যাতায়াত করার সময় ফ্যারিংসে বাধা প্রাপ্ত হয়। এইভাবে ঘুমের সময় শ্বাস বায়ুর চলাচল ব্যাহত হওয়াকেই স্লিপঅ্যপনিয়া বলে। স্লিপঅ্যপনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর ঘুমের সময় নাকডাকা অন্যতম লক্ষণ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে সব ধরনের নাকডাকাই স্লিপঅ্যাপনিয়া নয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্লিপঅ্যপনিয়ার প্রকৃত কারণ তেমন কিছু আবিষ্কার হয়নি। এমনকী ডায়বেটিস, হাইপারটেনশন প্রভৃতি ক্রনিক রোগের নির্দিষ্ট কোনো প্রাথমিক কারণ খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে রোগী যদি মাইক্রোনপ্যাথিয়া ও রেট্রোনপ্যাথিয়া সমস্যায় ভোগেন বা তাদের চোয়ালের ম্যান্ডিবুল পেছনে সরে যায়, তবে ফ্যারিঞ্জিয়াল স্পেস কমে গিয়ে ঘুমের সময় ফ্যারিংস সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। ফলে শ্বাসবায়ু যাতায়াতের পথে ফ্যারিংস বাধা প্রাপ্ত হয়। এবং রোগী স্লিপঅ্যপনিয়া আক্রান্ত হন।
এছাড়া নাক ও গলার ছিদ্র সরু হলে, নাকের পার্টিশন বাঁকা অর্থাৎডি.এন.এস হলে, টাগরার কাছে ইউভিউলা যদি বড় হয় তাছাড়া অতিরিক্ত ওজন, ফেস ডিফরমিটি, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি হলেও স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে।
স্লিপ অ্যাপনিয়ায় উচ্চস্বরে নাক ডাকার পাশাপাশি প্রায়ই গ্যাস-অম্বলে ভোগা, অ্যাসিডিটি বা অ্যাসিড ক্রমশ ওপরের দিকে উঠে আসতে থাকা (ডাক্তারি পরিভাষায় গ্যাস্ট্রো ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ বা জি.ই.আর.ডি বলা হয়), দিনের বেলায় ঘুম ঘুম ভাব, ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হওয়া, স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া, রক্তে কার্বন-ডাই-অক্সাইড জমে থাকার কারণে মাথা ব্যথা করা. স্লো বা শ্লথ বা লেজিভাব, পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌন সংসর্গে অনিচ্ছা বা অক্ষমতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। ঘুমের সময় হাত-পা ছোড়ার সমস্যাও দেখা দেয়।
স্লিপ অ্যাপনিয়া সাধরিণত তিন ধরনের হয়। অবস্ট্রাকটিভ, সেন্ট্রাল এবং মিক্সড।
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ও.এস.এ)-র নাক,মুখ হয়ে ফুসফুসে পর্যন্ত বিস্তৃত যে শ্বাসপথ তার কোথাও কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে বাতাস চলাচলে বাধাপ্রাপ্ত হলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। নাকও ডাকে বিচিত্র সুরে। আমাদের গলার ভেতরে যে ফ্যারিংস বা গলবিল থাকে সেটা স্বাভাবিক অবস্থায় বেশ সুডৌল থাকে। ঘুমনোর সময় আকার-আয়তনে ছোট হয়ে যায়। চিত হয়ে শুয়ে ঘুমোলে তালু, ফ্যারিংস, জিভের মাংসপেশি শিথিল হয়ে যেতে পারে। ফলে বাতাস চলাচলে বাধা পড়ে। ধাক্কা খায়। তখন নরম তালু বা সফট প্যালেটে কম্পন হয়।
সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়ার অন্যতম কারণ মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের যে অংশ ঘুম ও শ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলো বিগড়ে যাওয়া।
মিক্সড স্লিপ অ্যাপনিয়া কোনো কোনো রোগীর একসঙ্গে দু’ধরনের বিপত্তিই থাকতে পারে।
এই রোগের নানা ধরনের চিকিৎসা থাকলেও ব্রিদ্রিং এক্সারসাইজ, ঘাড়, গলা, মুখ ও জিভের ব্যায়াম, বিভিন্ন প্রকার আসন সহ প্রাণায়াম বিশেষ উপকার দেয়। শ্বসনতন্ত্রের নাসাপথ, ফ্যারিংস, ল্যারিংস অঞ্চলে শ্বাসপথ প্রশস্ত রাখে। অর্গানগুলোর স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সাহাযৗ করে। দেহই যদি ঠিক না থাকে কত ওষুধ খাবেন? ওষুধ খেতে খেতে ইমিউন হয়ে গেলে তখন ওষুধে আর কাজ হয়না।একাধিক ওষুধ খেলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়না। এবং পরবর্তীকালে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মখীন হতে হয়না।
ঘাড় ও মুখের এক্সারসাইজের মধ্যে যেগুলো ফলপ্রসূ সেগুলো হল ডিপব্রিদিং উইথ চেষ্টা এক্সপ্যানশন, কুইক ইনহেলেশন ও এক্সহেলেশন অফ ব্রিদিং, নেক এক্সারসাইজ-সামনে, পেছনে, পাশাপশি, ফোল্ডিংএবংরোটিংইত্যাদি।কনট্রাকশন অফ নেক, জিভের ব্যায়াম গুলো হল আউটস্ট্রেচিং ও টাংআউটস্ট্রেচিং অফ জ ইত্যাদি ফলপ্রদ।আসনের মধ্যে অর্ধমৎস্যেন্দ্রাসন, মৎস্যাসন, সর্বাঙ্গাসন, বৃষাসন, সিংহাসন, জালন্ধরসহসূর্য ভেদ প্রাণায়াম, খেচরী, প্রাণায়াম বিশেষ ফলপ্রদ।
ষট কর্মক্রিয়ারনাসাপান, এছাড়া নুন জলে গার্গেল হিতকর। সঙ্গে মষ্টিযোগ করলে প্রভূত ফল পাওয়া যায়। যেমন তুলসীপাতা, বাসকপাতা, বজ, কাবাবচিনি, যষ্টিমধু শ্বাসযন্ত্রের কার্যকারিতায় সহায়ক হয়।
যোগ ও মুষ্টিযোসহ যোগে নাসিকার গর্জন যে সহজে বর্জন করা যায়—একথা অনস্বীকার্য।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন