মিস্টি সোনার কেক
ডাঃ কিংশুক দাস
2019-02-01 11:01:36
মোটা মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে পৃথিবী জুড়ে। আর শুধু শহরে নয়, গ্রাম ও পিছিয়ে নেই। অথচ সবাই বলছে শরীরের ওজন কমান, কঠোর পরিশ্রম করুন। তাহলে কী খাব কতটা খাব? ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড একেবারেই বাদ দিতে হবে।আর ক্যালোরি মেপে খেতে হবে।দৌড়ঝাঁপ, শরীরচর্চাকে প্রতিদিনের নিত্য সঙ্গী করতে হবে, না হলেই ঘোর বিপদ।এমনকী ভুলতে হবে কেক, পেস্ট্রি আর ফ্রায়েড ফুড কে।আচ্ছা বলুন তো, এতো সুস্বাদু একটা খাবার এই ‘কেক’ কে কি আমরা সত্যিই ভুলতে পারব ।আর খাবনা,তাহয়!
চলুন একটু কেকের উৎপত্তি জেনে নিই। ওট, বার্লি, নুন ও জল দিয়ে বানানো এক শক্ত রুটি থেকে কেকের উৎপত্তি। আরো স্বাদ বাড়াতে এতে ডিম আর মধু মেশাতে শুরু করলে রোমানরা মধ্যযুগে বাদাম, ড্রাইফ্রুট, আদা, সুয়েট দিয়ে কেক তৈরি করল। আর এই সময়ই ‘কেক’ নামকরণ করা হয় খুব সম্ভবত ‘KAKA’ শব্দ থেকে। ষোড়শও সপ্তদশ শতাব্দীতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি শুরু হওয়ার ফলে কেক তৈরির উপকরণ বিভিন্ন ধরনের হতে লাগল। যার ফলে কেক আরও সুস্বাদু হয়ে উঠল। এখনও চলছে কেক কে নিয়ে গবেষণা, আরও সুস্বাদু করা যায় কীভাবে।
এবার জানুন এই কেকের কী গুণাগুণ
যে কোনো ধরনের আনন্দ উৎসব, যেমন জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী, বিয়ে, গৃহপ্রবেশ, চাকরিতে যোগদান থেকে অবসর—সবেতেই কেকের গুরুত্ব ক্রমাগতই বেড়ে চলেছে। মানুষের মধ্যে কেক সেতু বন্ধনের কাজ করে। গড়ে তোলে বন্ধুত্ব।কেক হল জয়ের, উচ্ছ্বাসের প্রতীক।
অন্যদিকে কেকের গুরুত্ব অসীম।শুনলে অবাক হবেন, দুঃখ-হতাশা কাটাতে কেকের জুড়ি মেলাভার। কেকের মধ্যে থাকা মিষ্টি আমাদের মস্তিষ্কের সেরোটোনিন লেভেল কে বাড়িয়ে হতাশা কমিয়ে দেয়।খাবারের জগতে কেক নিজের জায়গা করে নিয়েছে নিজের গুণাগুণে।
আরও একটা মজার ঘটনা জানিয়ে রাখি। কেক খেয়ে রোগা হওয়া সম্ভব। লেখাটা পড়ছেন আর অবাক হচ্ছেন? না সত্যি। গবেষণার সারমর্ম হল ব্রেকফাস্টে যদি ৬০০ ক্যালোরির মধ্যে কার্বোহাইড্রেট খাবার বা কেক খাওয়া যায় তাহলে ওজন তো বাড়ে না উল্টো বেশ কয়েক মাসের মধ্যে ওজন কমতেও পারে। এর কারণ হল সকাল সকাল কেক বা মিষ্টি খেলে সারা দিনে ফের মিষ্টি খাবার ইচ্ছাটাই চলে যাবে। বিজ্ঞান বলছে আমাদের শরীরে মেটাবলিজম সবচেয়ে বেশি হয় সকালে ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে। আর এই কারণে এই সময়ে কার্বোহাইড্রেটও তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়।
আর বেকিং যিনি করছেন তার মধ্যেও একটা সেন্স অফ অ্যাচিভমেন্ট আসে। অর্থাৎ কেক বানিয়ে কনফিডেন্স বাড়ে।
কেকের খাদ্যগুণ অনেক।যেমন ক্যারোট কেকে থাকে ভিটামিন-‘এ’। কফিওয়ালনাট কেকে থাকে ওমেগা-থ্রিফ্যাটি অ্যাসিড। চকোলেট কেকে থাকে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট। তবে সব চেয়ে ভালো কেক হল ওট কেক। যাতে থাকে হাই ফাইবার। তাই গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকে খুব কম অর্থাৎ রক্তে সুগার বাড়েনা। সাবধান—এই খাদ্যগুণ শুনে আজই কেক খাওয়ার ইচ্ছা প্রকট হোক তা কিন্তু বলছিনা।
সব ভালোরই তো খারাপ দিক আছে
বড় আকারের কেকের কথা বলছিনা কারণ ওগুলো খেলে আরো সমস্যা হবে। ছোট কাপ কেক কে দেখে নিই এক ঝলকে। ৩০-৩৫ গ্রাম সুগার থাকে এক একটি কাপ কেকে। যা কিনা সুগারের লেভেল কে বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট, তাইনা? আর একটা কাপ কেকে ফ্যাট থাকে ১৫ গ্রামের বেশি, ক্যালোরি থাকে ৫০০-এর বেশি। আরও ভয়ঙ্কর হল কাপ কেকের ফ্লস্টিংকে থাকে ট্রান্সফ্যাট। ভিটামিন ও মিনারেল খুব কম থাকে এই কাপ কেকে।সুতরাং এই কাপ কেকে শুধু ক্যালোরিই মেলে। এতে খাদ্যের অন্য কোনো গুণাগুণ থাকেনা। তাহলে বুঝতেই পারছেন একটা ছোট কাপ কেকে এই অবস্থা! সুতরাং বড় কেক কি ভয়ঙ্কর!খেলে কী হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়।
তাহলে কেক কী খাবনা
না। কেক তো খেতেই হবে। বিশেষ করে শীতের মরশুমে। তবে হ্যাঁ একটু বুদ্ধি করে। প্রতিদিন না খেয়ে বাছা বাছা অনুষ্ঠানে খাব।বন্ধুত্ব বাড়াতে কেক কে আঁকড়ে ধরি, সরিয়ে ফেলি দ্বন্দ্ব মনো মালিন্য।
তাই বড় কেকটা একা না খেয়ে সবাই মিলে ছোট ছোট করে ভাগ করে খাই। আর তার জন্যও তো তৈরি হয়েছে কাপ কেক।
একটু বুদ্ধি করে কেক তৈরির উপকরণ গুলো বুঝে নিন।সবচেয়ে ভালো হবে অর্গানিক সুগার, গমের আটা, ডিম,অলিভ অয়েল যদি কেক তৈরি করা হয়।তাহলে সেটা ব্যয় সাপেক্ষ, কিন্তু কেক হয় সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর। রিফাইন্ড আটা আর তার সঙ্গে ত্যাগ করতে হবে হাইড্রোজেনেটেড ভেজিটেবিল অয়েল, অস্বাস্থ্যকর ফুড দিয়ে তৈরি কেক।
আর যদি আমিষ ছেড়ে নিরামিষ কেক বানাতে চান তাহলে তো সোনায় সোহাগা। কেক তৈরি হবে ড্রাইফ্রুট, আপেল, কলা, গাজর, কুমড়ো দিয়ে। চকলেট কেক নাই বা বানালেন। একটু উপকরণের পরিবর্তন এনে কেক কে বানিয়ে তুলুন ব্যালেন্সড কেক।
কেক কে কখনোই দুপুরের বা রাতের খাবারের সমতুল্য করে ধরবেন না। এটা কখনোই কমপ্লিট ফুড নয়।এটা সবসময় মাথায় রাখবেন।
আর শেষে বলি কখনোই কেক কে দূরে সরিয়ে রাখবেন না।কেকই হল উৎসব আনন্দ, ইতিহাস উদযাপনের প্রতীক।আর পারমিতা-মিষ্টিসোনা—শম্পা এদেরকে তো উৎসাহ দিতেই হবে।এরাই তো নতুন স্বাদের কেক তৈরি করে খাওয়াবেন।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন