×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

ব্যথা নিবারণী ডাইক্লোফেনাকে হার্টের ক্ষতি

ডাঃ নীতিশসি. মুন্সী (এক্স-মেডিক্যাল অফিসার, অসম রাইফেলস)
2019-02-01 11:17:16

আজকাল ডাইক্লোফেনাক প্রস্তুতকারী মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিগুলি বড় বড় ডাক্তারদের নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে ডাইক্লোফেনাক হৃদযন্ত্রের পক্ষে অতিশয় নিরাপদ। এজন্য নামী দামি ডাক্তারদের ফ্ল্যাট, গাড়ি, বাড়ি ও ফরেন ট্যুর অবধি দিতেও কার্পণ্য করছে না কোনো কোনো ক্ষেত্রে।

অনেক অনেকদিন আগেকার কথা। তখন ডাক্তারবাবুরা অ্যাসপিরিনই দিতেন জ্বর, গা-হাত-পা-মাথার যন্ত্রণা। তারও বহু পরে বের হল প্যারাসিটামল। কিন্তু ততদিনে মাথা-গা-হাত-পায়ের ব্যথা নিয়ে অ্যাসপিরিন খেয়ে খেয়ে অনেক রোগীরই পাকস্থলির অবস্থা জেরবার হয়েছে। প্যারাসিটামলে দেখা গেল ব্যথা কমছে বটে, কিন্তু দিনে তিন-চারটে প্যারাসিটামল দিতেই হচ্ছে।

তাই চিকিৎসকরা খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন এমন একটি বেদনানাশক যা কিনা অল্প সময়েই ব্যথা নিবারণ করবে ও শরীরের মধ্যে অনেক সময় কার্যকরী থাকবে।

অবশেষে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা পেয়ে গেলেন একটি যৌগ—ডাইক্লোফেনাল। এটি মানব শরীরে প্রায় বারো ঘন্টা কার্যকর থাকে। এখন যত আবিষ্কার তার পিছনে মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির নব্বই শতাংশেরই হাত। সেই মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি বড় বড় ডাক্তারদের পার্টি দেয়, ডাক্তাররা ফরেন ঘুরে আসেন সেই মাল্টি ন্যাশনালের পয়সায়। অবশেষে ডাইক্লোফেনাক সর্বাধিক বিক্রিত ঘোষিত হল আমাদের ভারতে।

অস্ট্রেলিয়াতে থেরাপিউটিক গুডস অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলে স্বাশাসিত এক সংস্থা আছে। বড় বগ কোম্পানি বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়াতে ওষুধ কোম্পানির খুঁটিনাটি দেখাই এর কাজ। সেই অস্ট্রেলিয়ান থেরাপিউটিক গুডস অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্টেশন বেশি কটি যন্ত্রণানাশক নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে এবং দেখেছে যে বহু মানুষের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদযন্ত্রের অচলাবস্থা, হৃদযন্ত্রের স্ট্রোক, হৃদযন্ত্র স্তব্ধ হওয়ার পেছনে এই ডাইক্লোফেনাক। লিভারের বিরাট গন্ডগোলে অবশ্য ন্যাপ্রোস্কিন ও আইবুপ্রুফেনও যোগ হয়েছে। (WHO Drug Information, Vol. 28, No. 4, 2014, p. 453)

প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বে যেমন ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াতে ডাক্তারের বিনা প্রেসক্রিপশনে ওষুধই অমিল। আর যেটুকু পাওয়া যায় সেটুকু ওষুধের দোকানে কাউন্টারে সেলস বয় মারফত। এইসব ওষুধকে ওটিসি (ওভার দি কাউন্টার) বলে। এবং এই ওটিসি ওষুধগুলি ক্রমাগত খেয়ে যাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ বিপদ হতে পারে। সেই অস্ট্রেলিয়ান থেরাপিউটিক গুডস অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এই যন্ত্রণানিবারক ওষুধগুলি কী ভয়ঙ্কর সে সম্পর্কে অস্ট্রেলিয় ডাক্তারদের সতর্ক করেছে। এই অধ্যায়ে বলা হেয়েছে হার্টের বিন্দুমাত্র অসুবিধা ও অস্বস্তি হলেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে।

ওপরের ডাক্তারদের বারবার এই বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, ডাইক্লোফেনাকে হৃদযন্ত্রের গোলমাল হতেই পারে। এর সঙ্গে অবশ্য ন্যাপ্রোক্সিন, আই ব্রুপ্রুফেন, সেলোকক্সির ইটারোক্সিব, ইন্ডোমেথাসিন মেলোক্সিকাম ও নাইরক্সিকাম-এও হৃদযন্ত্রের ভয়য্কর গোলমালের আশঙ্কা করা হয়েছে।

কানাডা ‘হেলথ কানাড’ নামে স্বশাসিত সংস্থা আছে। সেই সংস্থাটি ডাক্তর ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জানিয়েছে দিনে ১৫০ গ্রাম ডেইক্লোফেনাকে হার্টের অপূরণীয় ক্ষতি ও স্ট্রোক হতেই পারে। এই ক্ষতি ডাইক্লোফেনাকের ডোজ বাড়ালেই এবং চিকিৎসার মেয়াদ বাড়ালেই বহুগুণ বাড়বে।

ভোলটারেন র‌্যাপিড বলে বিদেশে একটি ওষুধ প্রস্ত্তুতকারক সংস্থা আছে। সেই কোম্পানিটি ২০০ মিলিগ্রামের একটা ডাইক্লোফেনাক দিত মহিলাদের ভয়ঙ্কর ঋতস্রাবের ব্যথায়। কিন্তু ডাইক্লোফেনাকের আদতে ডোজই হচ্ছে ১০০ মিলিগ্রাম। আর ডাইক্লোফেনাক ওই জন্য ব্যবহারেরই নয়। আমরা জানি অস্থিমজ্জায় রক্ত তৈরি হয়। ক্রমাগত ডাইক্লোফেনাকের বড়ি খেলে অস্থিমজ্জা ক্রমে ক্রমে শুকিয়েই যায়। একে বলে বোন ম্যারো অ্যাপ্লাসিয়া। ফলে শরীরে রক্তের ভাগ কমে আসে। একে বলে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া। এবং এর থেকে অস্থিমজ্জায় ক্যানসার হওয়া বিচিত্র কিছু নয়।

এই রক্তের ক্যানসার সারাবার একটিই উপায় আছে। তা হচ্ছে রোগীর হাড়ে স্টেম সেল ঢুকিয়ে দেওয়া। সে যা খরচ তা টাটা-বিড়লারাই পারে।

আর আমাদের দেশের তো শতকরা আশি শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। তাই ওদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে যার যা খুশি চলতেই পারে।

আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ক্রমশ ঢোল পিটিয়েই যাচ্ছে যে তৃতীয় বিশ্ব তথা ভারতই হার্ট অ্যাটাকের খনি হবে।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন