×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

রক্তাল্পতা মহিলাদের এক বড় সমস্যা

ডাঃ সবুজ সেনগুপ্ত (স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ; মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, চার্নক হসপিটাল)
2019-02-01 11:41:47

রক্তাল্পতা বা অ্যনিমিয়া কিন্তু কোনো অসুখ নয়---অসুখের লক্ষণ। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের শরীরে প্রায় পাঁচ লিটার রক্ত থাকে। এতে থাকে প্লাজমা বলে একটি তরল পদার্থ, আর তার মধ্যে থাকে তিনরকম কোষ বা সেল—লোহিত কণিকা (আর.বি.সি), শ্বেত কণিকা (ডব্লু.বি.সি), অনুচক্রিকা (প্লেটলেট)।

এই লোহিত কণিকা বা রেড ব্লাড করপাসল- এর জন্যই রক্তের রং লাল হয়। এই লোহিত কণিকার মধ্যেই থাকে হিমোগ্লোবিন নামে একটি লোহাযুক্ত প্রোটিন। হিমোগ্লাবিন অক্সিজেনকে শরীরের নানান কোষে কোষে পৌছে দেয় এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড কোষ থেকে বের করে দেয়। সেজন্য রক্তে লোহিত কণিকা বা হিমোগ্লোবিন কমে গেলে দেখা দেয় ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাঁফ ধরা, একটুতেই হাঁপিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এটাকেই বলা হয় অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা।

রক্তাল্পতা যদিও ছেলে বা মেয়ে উভয়েরই হতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা একটি বিশেষ জরুরি ব্যাপার বলেই এত কথা বলা।

কেন জরুরি? কারণ প্রতি মাসে ঋতুস্রাবে স্বাভাবিক ভাবেই ২৫ থেকে ৮০ মিলিমিটার রক্ত শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। আর যদি স্বাভাবিকের চাইতে বেশি রক্তস্রাব হয় তাহলে সেটার পরিপূরণ না হলেই কিশোরীটি রক্তাল্পতার কবলে পড়বে।

রক্তাল্পতা নিয়ে কোনো কিশোরী চিকিৎসকের কাছে গেলে তার চেহারা দেখেই চিকিৎসকের সন্দেহ জাগে। কারণ কিশোরীটি তার বয়সের স্বাভাবিক উজ্জলতা হারিয়ে ফেলে। জিভ, ঠোঁট, নখ, আঙুলের ডগার চামড়া ফ্যাকাসে দেখায়। যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা খুব কম থাকে তবে পায়ের পাতা এবং মুখ-চোখ ফুলে যায়। এছাড়াও হার্ট বড় হয়ে যায়, লিভার বা পিলেও বড় হতে পারে।

এই অতিরিক্ত ঋতুস্রাব ছাড়াও আরও কয়েখটি কারণে রক্তশূণ্যতা হতে পারে। যেমন একটি হচ্ছে হুকওয়অর্মের জন্য। এটি এক ধরনের কৃমি যা পায়ের পাতার মধ্যে দিয়ে শরীরে ঢুকে যায় এবং রক্ত চুষে খায়। অর্শ বা পেপটিক আলাসারের জন্য রক্তশূণ্যতা হতে পারে।

এই যে কারণগুলো বলা হল এগুলো সবই শরীর থেকে রক্ত বেশি বেশি করে বের হওয়ার জন্য দায়ী।

এবার দেখব উল্টোটা অর্থাৎ কী কী কারণে শরীরে রক্ত তৈরি হতে বাধা পায়।

  • রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে এমন উপাদানে যদি ঘাটতি থাকে। হিমোগ্লোবিনের দুটি অংশ—হিম হল লোহা বা আয়রন হলেই রক্তাল্পতা হতে পারে।
  • উপাদানে ঘাটতি নেই কিন্তু শরীর যদি তা নিতে না পারে যেমন ম্যাল অ্যাবজর্বশন, তাহলেও যথাযথ পুষ্টি না হবার জন্য রক্তাল্পতা হয়।
  • রক্ত যেখানে তৈরি হয় সেই বোনম্যারো বা অস্থিমজ্জায় কোনো কারণে রক্ত তৈরি না হলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তশূন্যতা হবে। উদাহরণ লিউকেমিয়া বা অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া। অনেক ক্ষেত্রে ওষুধের জন্যও এটা হতে পারে।

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ায় অস্থিমজ্জা বা বোনম্যারোয় হিমোগ্লোবিন ঠিকমতো তৈরি হয় না। ওষুধের জন্য অনেক সময় এরকম হতে পারে। রেডিও অ্যাক্টিভিটিও কখনো কখনো এই অসুখ ডেকে আনে।

সব কিশোরী মেয়ের হিমোগ্লোবিন ইলেট্রোফোরোসিস করে তার থ্যালাসেমিয়া আছে না নেই জেনে নেওয়া উচিত। থ্যালাসেমিয়ার বাহক বা ক্যারিয়ার হলে পরবর্তীকালে জীবনসঙ্গী বেছে নেবার সময় তাকে সাবধান হতে হবে। কারণ জীবনসঙ্গীটি হওয়া চাই সম্পূর্ণ স্বাভাবিক (থ্যালাসেমিয়া মুক্ত—বাহক নয়)। বার বার রক্ত দিয়ে থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসা করতে হয় এবং শরীরে জমে যাওয়া বাড়তি লোহা বের করার জন্য দামি এবং যন্ত্রণাদায়ক ইঞ্জেকশন নিতে হয়।

সেজন্য সব কিশোরী মেয়েরই কমপ্লিট হিমোগ্লোবিন করিয়ে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা জেনে নিয়ে নিশ্চত হওয়া উচিত। যদি রক্তাল্পতা থাকে (মাত্রা ১০-এর কম হলে) তবে তার কারণ খোঁজা উচিত। যদি সেটা অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের জন্য হয় তবে স্ত্রীরোগি বিশেষজ্ঞ তার কারণ খুঁজে বের করবেন। হতে পারে জরায়ুর ফাইব্রোমায়ো বা ডিসফাংশনাল ইউটেরাইন ব্লিডিং (যেখানে কোনো কারণ পাওয়া যায় না)। কারণ খুজে পাবার পর তার যথাযথ চিকিৎসা করে এই অত্যধিক ঋতুস্যাবকে কমিয়ে দেওয়া, হুক ওয়ার্ম ডিটেকশন হলে কৃমির ওষুধ দিয়ে সেটার সঠিক চিকিৎসা করা ইত্যাদি জরুরি।

এই রক্তাল্পতায় খাবারের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যেসব খাবারে লোহারে পরিমাণ বেশি তা খাওয়া দরকার। অনেক ক্ষেত্রে রক্তাল্পতায় চিকিৎসক আয়রনের বড়ি দেন খেতে, যাতে হিমোগ্লোবিনের ‘হিম’ অংশটির ঘাটতি না হয়। আর গ্লোবিনের জন্য খেতে হবে প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন ডিম, দুধ, মাছ ও মাংস এবং মুসুর ডাল।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন