×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

সাইকোপ্যাথের আকাঙ্খা

ডাঃ অমরনাথ মল্লিক
2019-02-01 11:44:36

কয়েকদিন আগে খবরের কাগজ, টিভিতে একটা খবর খুবই নাড়া দিয়ে গেল। বাঁকুড়ার আকাঙ্খা নামে একটি মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। সে তার প্রেমিকের সঙ্গে ভোপালে লিভ টুগেদার করত। হয়তো বিয়েও হয়েছিল। তার প্রেমিক উদয়ন আকাঙ্খার বাবা-মা’কে জানিয়ে ছিল আকাঙ্খা আমেরিকাতে আছে। খবরটি ছিল ভুয়ো। আসলে তার প্রেমিক উদয়ন তাকে খুন করে তার দেহ ঘরের মধ্যে কবর দিয়ে দেয়। গলা টিপে হত্যা করে ঘরের মেঝেতে গর্ত করে, ট্রাঙ্কে পুরে পুতে দেয়। পুলিশ পাথর ও মাটি সরিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে। উদয়নকে পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় যে, ২০১১ সালে রায়পুরে সে তার মা ও বাবাকেও একই কায়দায় গলা টিপে হত্যা করে বাড়ির বাগানে মাটির ভেতর পুতে দেয়। সম্প্রতি রায়পুরে পুলিশ উদয়নের বাবা-মায়ের কঙ্কাল উদ্ধার করেছে।

কে এই উদয়ন, কেনই বা এমন নৃশংসভাবে সে তিনটি খুন করল?

যতদূর জানা গেছে উদয়ন বাবা-মায়ের একটি মাত্র সন্তান। তার বাবা-মা দু’জনেই চাকরি করতেন। সে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র ছিল কিন্তু পাশ করতে পারেনি। বাড়িতে বলত কলেজ যাচ্ছে। প্রচুর টাকা-পয়সার চাহিদাও ছিল। যতদূর মনে হয় সে নেশাও করত। ফেসবুকে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে সে আকাঙ্খার সঙ্গে পরিচয় জমায় ও পরে প্রেম হয়। এরপর আকাঙ্খা ভোপালে গিয়ে উদয়নের সঙ্গে বসবাস শুরু করে। উদয়ন পুলিশকে জানিয়েছে, আকাঙ্খা পূর্বতন প্রেমিকের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তাদের মধ্যে মনোমালিন্য প্রায় লেগে ছিল। এবং প্রতিহিংসা বশে সে আকাঙ্খাকে গলা টিপে খুন করে। এরপর একটা ট্রাঙ্কে মৃতদেহ রেখে ঘরের মাটি খুঁড়ে পুতে দেয় ও পরে তার ওপরে একটি পাথরের বেদি তৈরি করে ফেলে। এই সময় সে আকাঙ্খার ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ প্রভৃতি চালু রাখে যার জন্য আকাঙ্খার বাবা-মা বুঝতে পারেন নি যে মেয়ে খুন হয়েছে!

উদয়ন যে ভাবে প্ল্যান করে, অত্যন্ত বুদ্ধির সঙ্গে তিনটি হত্যা করেছে তাতে তাকে পাকা খুনি বলে মনে হয়। সে তার বাবা-মায়ের মৃত্যুর ঘটনাও প্রায় ছ’বছর লুকিয়ে রাখে। মিথ্যা ডেথ সার্টিফিকেট জোগাড় করে সে বাবা-মায়ের সম্প্রত্তিও হাতিয়ে নেয়। অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাত্রার সে অভ্যস্ত ছিল।

উদয়ন সম্বন্ধে যতটুকু জানা গেছে তাতে সে সুস্থ মস্তিষ্কের খুনি বলে মনে হয় না। তার হিংস্রতা, বাবা, মা ও প্রেমিকার প্রতি হৃদয়হীন, প্রতিহিংসাপূর্ণ আচরণ ও প্রবৃত্তির গতি-প্রকৃতি দেখে তাকে ‘সাইকোপ্যাথ’ বা ‘সোসিওপ্যাথ’ বলে মনে হয়। এ এক ভয়ংকর রকমের পার্সোনালিটির আসংলগ্নতা। সাইকোপ্যাথিক পার্সোনালিটি বা অ্যান্টি সোস্যাল পার্সোনালিটির মানুষেরা এই ধরনের হিংস্র আচরণ ও হত্যা করে থাকে।

ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন বৈকল্যের মধ্যে অন্যতম অ্যান্টি সোস্যাল পার্সোনালিটি বা সাইকোপ্যাথিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার। এই ধরনের ব্যক্তিত্বের মানুষেরা সাধারণক বুদ্ধিমান হলেও সামাজিক রীতিনীতি মানতে চায় না। প্রবৃত্তির চাহিদা তাদের উত্ত্যক্ত করে তোলে। মা-বাবা বা পরিবারের বয়স্ক মানুষদের সম্মান, শ্রদ্ধা করতে চায় না, স্কুল-কলেজের নিয়ম-রীতি মানে না। বন্ধু-বান্ধব কম থাকে। সাধারণত মারামারি, হিংস্রতায় জড়িয়ে পড়ে। ঠান্ডা মাথায় প্ল্যান করে নানারকম দুস্কৃতমূলক কাজকর্ম করে থাকে। প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণে কোনো কাজ করতে পিছপা হয় না। এরা খুব সহজে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

উদয়নকে কেন সাইকোপ্যাথ বলে মনে করা হচ্ছে তা তার আচরণ ও হত্যার ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, যেমন—

  • নিজের আর্থিক চাহিদা পূরণের জন্য, নেশা ও ফূর্তি করার জন্য দিনের পর দিন বাবা-মা’ কে মিথ্যা কথা বলেছে। কলেজে না গেলেও কলেজ যাচ্ছে বলে অর্থ দাবি করেছে।দু’হাতে টাকা-পয়সা উড়িয়েছে।
  • অর্থের চাহিদা পূরণ না হলে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করেছে। এমনকী ঠান্ডা মাথায় মাকে গলা টিপে খুন করেছে। এই ঘটনা পর বাবা বাড়িতে এলে তাকে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে চা দিয়েছে, বাবা নেশাচ্ছন্ন হলে তাকেও গলা টিপে খুন করেছে। এরপর দ্বিধাহীন মনে প্ল্যান করে মৃতদেহ নিজের বাড়ির বাগানে মাটি খুঁড়ে পুতে দিয়েছে।

সাধারণত খুন করার পর অপরাধী ঘটনার জন্য কিছুটা নার্ভাস হয়ে যায়, ভুলকরেও খুনের বা অপরাধের চিহ্ন রেখে যায়। এক্ষেত্রে উদয়ন একজন পেশাদার খুনির মতো ঠান্ডা মাথায় দুটো মৃতদেহ মাটি খুঁড়ে পুঁতে দিয়েছে এবং তার আচার-আচরণ দেখে কেউ সন্দেহ করেনি।

  • উদয়ন বাবা-মা’ কে খুন করার পরও মায়ের পেনশনের টাকা তুলেছে। পরে জাল ডেথ সার্টিফিকেট যোগাড় করে সম্পত্তি বিক্রি করেছে।
  • আকাঙ্খার সঙ্গে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে প্রেম ও বসবাস করেছে।

সাইকোপ্যাথদের মধ্যে যেহেতু কোনো অনুশোচনা বা কৃতকর্মের জন্যে উদ্বেগ, ভয় থাকেনা, তাদের দেখে কারো মনে সন্দেহ হয়না। অবলীলাক্রমে তারা মিথ্যা বলতে ও অভিনয় করতে পারে যা দেখে তাদের মনের ইচ্ছে বোঝা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। হিমশীতল মনে পরপর তিনটি  খুন করেও উদয়নকে  সহজে অপরাধী বলে চিহ্নিত করা খুব কঠিন ছিল। পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তদন্ত করে ও উদয়নের জবান বন্দীতে কিছু অসংলগ্নতা লক্ষ করে, পরবর্তী সময়ে জেরার মাধ্যমে ঘটনার পূর্ণবিবরণ পায়। অতি দক্ষ ও অপরাধ বিজ্ঞানে অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসারদের চোখে শেষ পর্যন্ত এই সাইকোপ্যাথরা ধরা পড়ে যায়।আকাঙ্খার মতো একটি সরল, শিক্ষিত মেয়ে উদয়নের চালাকি ও প্রতরণার ফাঁদে পা দিয়ে জীবন বিসর্জন দিয়েছে। এর থেকে শোচনীয় ও দুঃখজনক ঘটনা আর কি হতে পারে?

সবশেষে একটি কথা, উদয়ন পার্সোনালিটির সমস্যা হয়তো আক্রান্ত, কিন্তু তাকে মানসিক অসুস্থ বলা যায়না। পার্সোনালিটির সমস্যা আর মানসিক ভারসাম্যহীনতা বা অসুস্থতা একনয়। কোনো অপরাধমূলক কাজকর্মের জন্যে সাইকোপ্যাথেরা মানসিক অসুস্থতার দোহাই ‍দিয়ে আইনের হাত থেকে ছাড়া পায়না।সুতরাং উদয়নকে তার ষড়যন্ত্রকরা, হত্যাকরার জন্য দায়ী হতে হবে।তার অর্থ, লোভ, নিষ্ঠুরতার আকাঙ্খা দেশের আইনে ছাড় পাবেনা।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন