×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

সুইসাইড: কিছুপ্রশ্ন

ডাঃ দেবঞ্জন পান
2019-02-01 11:48:49

অবনী বাড়ি নেই।

বাধা ছিল অনেক….দরজার শিকলে লেখা ছিল নিষেধের না। দুয়ার চেপে ধরা পরাঙ্মুখ সবুজ নালী ঘাস বলেছিল, ‘যেতে নাহি দিব’ তবু, শেষ রক্ষা হলনা।

অবনী বাড়ি ফিরলনা।

কোনো এক অগস্ত্য সূর্যের সাথে হারিয়ে গেল অদৃশ্য দিক চক্রবালে।

কিন্তু কেন?

অবনীর আত্মহনন রেখে গেল এক রাশ উম্মুখ জিজ্ঞাসা—একি কোনও নিখুঁত অভিমান সংশয়দীর্ণ একপুরুষের? নাকি কোনও নিপুণ পলায়ন সমস্যা জর্জর এক মানুষের? গভীর তীব্র অবসাদনা হঠাৎ আবেগের হঠকারী সিদ্ধান্ত?

….প্রশ্নতো অনেক। কিন্তু সঠিক উত্তরটাই বাকি?

যেকোনো আত্মহত্যার সাথে লেগে থাকে এমনই হাজার প্রশ্ন। আত্মহননের ঠিক আগের মনন ও অনুভিূতির কক্ষ সঠিক ভাবে জানা না গেলেও এটা মোটামুটি তর্কাতীত ভাবে স্বীকৃত যে অন্তত ৯০ শতাংশ আত্মহত্যার নেপথ্য কারিগর কোনো না কোনো মানসিক সমস্যা, তার মধ্যে আছে মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেসন, বাইপোলার রোগ, মদ বা অন্যান্য নেশার আসক্তি,সিজোফ্রেনিয়া, ব্যক্তিত্বের সমস্যা বা পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার, ইটিংডিসঅর্ডার বিশেষত মহিলাদের মধ্যে, অকারণ চিন্তার রোগ বা টেনশনের সমস্যা(অ্যাংজাইটিডিসঅর্ডার)।

এসবের মধ্যে মানসিক অবসাদের সমস্যা আজকাল বহুল আলোচনার সুবাদে অতিপরিচিত। তীব্র মনখারাপ, সবকিছুতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলা, খিদে, ঘুম, যৌনইচ্ছার অভাব, মনঃসংযোগের অসুবিধা, উদ্যমহীনতা, অপরাধবোধ আর সবশেষে পৃথিবীর সব রঙ মুছে গিয়ে আত্মহননের আকৃতি—এইসব নিয়ে ‘মনখারাপের’ সংসার।

পাশাপাশি বাইপোলারের ক্ষেত্রে মেজাজের ঘনঘন ওঠাপড়া, তুরীয় আনন্দের আকাশ থেকে অতলান্ত বিষাদের গহ্বরে মনের ঘোরাফেরা, আর সেইসূত্রে বেঁচে থাকতে না চাওয়ার ইচ্ছা---আত্মহত্যার যথেষ্ট ঝুঁকি থেকে যায়‘বাইপোলারে’ও।

নেশার সমস্যায় আত্মহত্যার ঝুঁকি অন্যরকম।আনন্দে হোক কি গভীর মনস্তাপে, নেশা যেভাবেই শুরু হোক না কেন, ক্রমান্বয়ে নেশার এক অনিবার্য পর্যায় হল অবসাদ, তার হাত ধরেই এসে পড়ে আত্মহননের ইচ্ছা।আবার সিজোফ্রেনিয়া এক সমস্যা যেখানে অলীক কল্পনা, অবাস্তব সন্দেহ, আর বিভ্রান্তির মায়াজাল ছড়ানো মনের গভীর গোপন কন্দরে সে এক স্বেচ্ছানির্বাসনের মিথ্যে জগৎ, সেখানে ভাবনার ভ্রম আর শ্রাবণের বিভ্রান্তি রোদছায়ার মতো খেলা করে যায় মনের আনাচে কানাচে।কে জানে কখন সে বিভ্রম অলীক ইঙ্গিত বয়ে কানে কানে নির্দেশ আনে আত্মহননের…কে জানে!

আর উৎকন্ঠার সর্বব্যাপী উপস্থিতি তো অনস্বীকার্য। আধুনিক সমস্যা সঙ্কুল পৃথিবীতে চিন্তাজীবনের পরতে পরতে।এরই মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত উৎকন্ঠার সমস্যায় যারা আক্রান্ত, অকারণ অনাবশ্যক অস্থিরতা তাদের মধ্যে ডেকে আনতে পারে আত্মহত্যার বিপদ।

কিন্তু অবসাদ বা ডিপ্রেসনের সমস্যা বাদ দিয়ে বোধ হয় সবচেয়ে জটিল যে সমস্যা সুইসাইডের সঙ্গে জড়িত তার নাম বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার। এ এক সম্পূর্ণ বুদ্ধি বিবেচনাহীন সমস্যা যেখানে শুধুই হঠাৎআবেগ, অস্থিরমন, অস্থিরসম্পর্ক, অপরিণামদর্শী রাগ আর অবুঝ ব্যক্তিত্বের সংকট।আত্মহত্যার ঝুঁকি এক্ষেত্রে খুবই বেশি, প্রায় ৮ শতাংশ।

কিন্তু আত্মহননের অভিপ্রায় কি কিছু চিহ্ন রেখে যায়?

কেউ জানিনা আমরা, কার মনে ঈশাণ কোণে উঁকি মানে সেই ইচ্ছার মেঘ। জানিনা তার পেছনে লুকানো কোন মন খারাপের মেঘপিয়নের চিঠি।তবু, চিহ্ন থেকে যায়।কিছু আলতো, সন্তর্পর্ণ, অসতর্ক পদ চিহ্ন।যেমন—

  • হতাশা বা নৈরাশ্যের অভিব্যক্তি।
  • তীব্র অপরাধ বোধ বা লজ্জা।
  • ব্যক্তিত্বের মধ্যে হঠাৎনাটকীয় পরিবর্তন অথবা কেমন অনির্দিষ্ট অযৌক্তিক আচার আচরণ।
  • ঘুম বা খাওয়ার অভ্যাস হঠাৎ আমূল পরিবর্তন।
  • কাজের জায়গায় বা স্কুল কলেজে হঠাৎ করে আশানুরূপ ফল দেখাতে না পারা।
  • আগামী দিন বা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সম্পূর্ণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
  • কোনো না কোনো কথায় বা লেখায় আত্মহননের অভিপ্রায় প্রকাশ করা
  • ব্যক্তিগত সম্পত্তির বা সম্পর্কের দায়ভার অন্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া।

সুইসাইড : কিছু তথ্যের কচ কচানি

সব মানসিক সমস্যারই পরিণতি আত্মহত্যা, সেটা ভেবে নেওয়া ঠিক নয় কখনোই। কিন্তু সুইসাইড করে মৃত্যুর পথ ডেকে এনেছেন যারা তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত।

আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য

  • ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সের পরিসীমায় মৃত্যুর কারণ হিসাবে সুইসাইড প্রথম তিনটি কারণের মধ্যে একটি। এটা বিশ্বব্যাপী এক সমীক্ষার তথ্য।
  • ডিপ্রেসন বা মানসিক অবসাদে আক্রান্ত যারা তাদের মধ্যে ২ থেকে ১৫ শতাংশের মৃত্যু ঘটে সুইসাইডের হাত ধরে।
  • বাইপোলার সমস্যায় ভোগা মানুষদের মধ্যে সুইসাইডের হার ৩ থেকে ২০ শতাংশ।
  • সিজোপ্রেনিয়াতে সেই হার ৬ থেকে ১৫ শতাংশ।

কিন্তু তথ্য আর কতটুকু বলে! আসল কথা, অবনীরা হারিয়ে যায় এভাবে। বিপন্ন বিস্ময়ে তার প্রিয়জন আবিষ্কার করে সে নেই। একদিন হঠাৎ। বে-পথু হাওয়ায় উড়ে যায় অনিকেত প্রেম, অপূর্ণ সব স্বপ্নের শিমুল তুলো। পড়ে থাকে কিছু রিক্ত স্মৃতি। প্রবল ঝড়ের পরে যেমন পড়ে থাকে কিছু খড় কুটো, ছিন্নপাতা। তারপরেও দিন চলে যেমন চলার,  অনুদ্বিগ্ন আবেগে আবহমানের নির্দিষ্ট নিয়মে। শুধু সময়ের অবুঝ ঠোঁটে লেগে থাকে কিছু উৎসক প্রশ্ন—খুব কি জরুরি ছিল যাওয়া? কেন বোঝা গেলনা না-ফেরার ইশারার ইঙ্গত? আর শুধু স্বজন-বান্ধবই বা কেন, কোনো এক আত্মহননের ঘটনা আমাদের টেনে এনে দাঁড় করার কিছু অমোঘ জিজ্ঞাসার সামনে।

…আত্মহত্যা এক সামাজিক সমস্যা—এই বাস্তবতা কে অস্বীকার না করেও আমরাও ভাবতে বাধ্য হই---মনোবিজ্ঞানের নিরিখে কতটুকুই বা বোঝা গিয়েছে ‘সুইসাইডে’র বিজ্ঞান? মুখের অভিব্যক্তি তে লেখা ছিল যে আসন্ন ঝড়ের সংকেত, কেন কোনো সতর্ক সমীক্ষায় উঠে আসেনি তার সংগত পূর্বাভাস? আত্মহত্যা এমনই…হয়তো অনিবার্যই ছিল, তবু….

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন