×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

ত্বরিৎ-চিকিৎসা—কত ত্বরিতে

ডাঃঅঞ্জন ভট্টাচার্য (অ্যাপেলো গ্লেনিগ্যালস হসপিটাল)
2019-02-01 12:00:02

বিজ্ঞানের  অগ্রগতি আজ পৌঁছে দিচ্ছে অবিশ্বাস্য সব সমাধান মানুষের  ঘরে ঘরে।সুলভে! বিজ্ঞানের এমনই এক  ধারার নাম শিশু বিকাশ বিজ্ঞান বা ডেভেলপমেন্টলপেডিয়াট্রিক্স এবং সেই ধারার এক অভূতপূর্ব অগ্রগতির নাম হল ত্বারিৎ-চিকিৎসা বা আর্লিইন্টারভেনশন।

বিগত দশক জুড়ে ভুরি ভুরি প্রমাণ চিকিৎসাবিজ্ঞানে আসতে শুরু করেছে, যেখানে এই আর্লিইন্টারভেনশন যে এক বৈজ্ঞানিক সত্যতার যথাযথ প্রমাণ ক্রমাগত পাওয়া যাচ্ছে। ভারতবর্ষে, এই এক  দশক আগেও  যেসব শারীরিক বা  মানসিক রোগকে শিশুবিজ্ঞানে দূরারোগ্য বলে ভাবা হত, আজ তার শুধু সুচিকিৎসা  অত্যন্ত সুলভে। সুলভে সুচিকিৎসা উপলব্ধ যে পদ্ধতিটি করছে, তাকে বলা হয় ত্বরিৎ-চিকিৎসা বা আর্লিইন্টারভেনশন।

তাহলে প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন রোগে শিশুদের ত্বরিৎচিকিৎসার সুলভ সুফলের প্রমাণ  বিজ্ঞানে দিতে পেরেছে।

  • অটিজম বা অটিজমস্পেক্ট্রাম ডিসঅর্ডার।
  • সি.পি বা সেরিব্রাল পলসি অথবা শারীরিক বিকলাঙ্গতা।
  • পড়াশুনোর সমস্যা বা লানিংডিস অর্ডার।
  • স্থূলবুদ্ধি বা বুদ্ধিহীনতা বা জড়বুদ্ধি।
  • মনঃসংযোগ অক্ষমতা বা দুষ্টামি (এ.ডি.এইচ.ডি –অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার—অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার)।

কী করে ত্বরিৎচিকিৎসায় অটিজম, শারীরিক বিকলাঙ্গ, স্থূলবুদ্ধি, লেখাপড়ায় অনীহা ও সমস্যা বা দুষ্টুমিও মনঃসংযোগে অক্ষমতা সুলভে সুচিকিৎসায় ভালোকরে ফেলা যায় তা বুঝতে গেলে বুঝতে হবে মস্তিষ্কের নিউরালপ্লাস্টিসিটি অথবা পরিবর্তন ও নিরাময়যোগ্যের বিজ্ঞানটি কি।

আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে ১৯৪৯ সালে, অর্থাৎ ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার দুইবছরের মধ্যেই ডি.ও. হেব্ব (DO Bebb)সাহেব মস্তিষ্কের এই পরিবর্তন ও নিরাময়ের ধারণা প্রথম করেছিলেন। বলে ছিলেন যে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকলাপ ব্যাহত হয় যেসব রোগে, সেগুলোর প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই এক একটা সময় থাকে যখন তাদের নিরাময়যোগ্য সর্বোত্তম হয়। অর্থাৎ, এই সমইয় সীমার মধ্যেই সুচিকিৎসায় সুফল ফলার সুযোগ সবচেয়ে বেশি।ফলত সুলভ তবে সুলভ মানে নিখরচায় অবশ্যই নয়। এরপরে সময় যত গড়াতে থাকে, মস্তিষ্কের স্নায়ু গুলো ততই কম নিরাময়যোগ্য হতে থাকে। পরবর্তীকালে কোনার্ড সাহেব দেখিয়েছিলেন যে শিশু বয়সেই মস্তিষ্কের এই নিরাময়যোগ্যতা সর্বোত্তম থাকে।এটা কে বলা হয় কোনার্ড’স প্রিন্সিপল! অতিসম্প্রতি (২০১৩) অবশ্য এম.কোল্ব এবং তাঁর সতীর্থরা এর বেশ কিছু ব্যতিক্রমও প্রমাণ করেছেন যার প্রমাণ আমরা হাতে হাতে পেয়েছি চক্ষু এবং মস্তিষ্কের যোগাযোগকারী  কিছু রোগের ক্ষেত্রে কলকাতাতে বসেও।

এক একটি রোগের মস্তিষ্কের নিরাময়-যোগ্যতা এক এক রকমের। যেমন এ.এস.ডি বা অটিজমের ক্ষেত্রে যেমন বলা হয় এই নিরাময় যোগ্যতা সর্বোত্তম দেড় বছর থেকে তিন বছর বয়ষ অবধি এবং যত আগে তত ভালো ও সুলভতর।

কিন্তু লেখাপড়ার সমস্যার ক্ষেত্রে এই চিকিৎসার জানালাটি খোলা থাকে ৬ বছর বয়স অবধি। তারপর ধীরে ধীরে কঠিনতর, সময় সাপেক্ষ এবং অতএব ব্যয় সাপেক্ষ হতে শুরু করে। ওদিকে বিপদ ঘনঘোর শারীরিক বৈকলাঙ্গতার ক্ষেত্রে  সি.পি বা সেরিব্রাল পলসির ভালো হওয়ার সুযোগটি পেরিয়ে যেতে থাকে শিশুর প্রথম জন্মদিন পেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে! অথচ বিপদের কথা হল এক বছরের বয়সের আগে অনেক আধা পরিশীলিত শিশুবিশেষজ্ঞও এমনকী বুঝতে নাও পারতে পারেন যে শিশুর বিকলাঙ্গতা আসতে চলেছে।বাবা-মাতো দূরঅস্ত!

এসব নিয়ে সম্প্রতি কলকাতায় এক ওয়ার্কশপ হয়ে গেল যেখানে ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রদেশের চিকিৎসকরাই বেশিছিলেন। শিক্ষয়িত্রী ছিলেন অস্ট্রিয়ার গ্রাজ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ক্রিস্টা আইনস্পাইলার, যিনি জগৎ বিখ্যাত এই শিক্ষা প্রদানকারীর ভূমিকায়। তিনি শেখালেন অমূল্য প্রেশাল (Pretchel)পদ্ধতি, যার সহজ নাম জি.এম বা জেনারেল মুভমেন্ট কোর্স।এই পদ্ধতির সাহায্যে তিন মাস বয়সের মধ্যেই, জন্মের পর পরই যাতে ৯৮%  নিশ্চয়তার সাথে আমরা ধরে ফেলতে পারি কোন শিশুটির সি.পি. হতে চলেছে আর কোন শিশুটির সি.পি জনিত বিকলাঙ্গের সম্ভাবনা নেই।ভাবুন একবার! বিজ্ঞান কোথায় পৌঁছে দিচ্ছে আজ আপনাকে আমাকে।

মাস তিনেক মাত্র বয়সের মধ্যেই যদি আমরা৯৮% নিশ্চিতভাবে ধরে ফেলতে পারি কোন শিশু বিকলাঙ্গ হবে আর কোন শিশুর হবেনা। আর তারপর যদি সঠিক জায়গায় শিশুটির সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ফেলা যায়, তবে আর বিকলাঙ্গকে ভয় কিসের?

সুতরাং আজ যদি কোনও শিশু পশ্চিমবঙ্গ বা তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় কোথাও জন্মায় বিকলাঙ্গতার কোনও রিস্ক জনিত কোনও কারণ নিয়ে, তাদের বা তাদের শিশুবিশেষজ্ঞদের আর ভয় পাওয়ার কোনো কারণ থাকছেনা। তাদের হাতের কাছেই রয়েছে বিদেশেরতুল্য চাইল্ড ডেভেলপমেন্টাল সেন্টার এই কলকাতাতেই।

বিপদ শুরু দেরি করাতে! সুতরাং কখনও কোথাও কোনও সন্দেহমাত্র যদি হয়, অপেক্ষা করবেন না।আশু ত্বরিৎচিকিৎসার প্রয়োজন আছে কিনা যাচাই করেনিন তৎক্ষণাৎ। যেই মনে হবে সেই।বিগত একদশকে বিজ্ঞান দেখিয়ে দিয়েছে অকারণ ভয় পেয়ে বসে থাকার কত মাশুল গুণতে হয়েছে কত শিশু ও তাদের পরিবারকে।

আসুন দেখি কী কী সেই লক্ষণ যেগুলি হলেই আপনার যাচাই করে নেওয়াই বিজ্ঞানসম্মত ও শ্রেয় বলে প্রমাণিত

  • প্রিম্যাচিওর, প্রিটার্ম বা সময়ের ও তারিখের এক মাস আগে (৩৬ সপ্তাহ বা তার আগে) জন্মানো শিশু।
  • জন্মেই যে কাঁদেনি বা জোরালো কেঁদে ওঠেনি বা যাকে কাঁদতে কোনো প্রচেষ্টা করতে হয়েছে।
  • যে শিশু অক্সিজেন লেগেছে জন্মের প্রথম এক দু’সপ্তাহের মধ্যে।
  • যে শিশুকে স্পেশাল কেয়ার দিতে হয়েছে বা ‍SNCU-তে নিয়ে যেতে হয়েছে।
  • যে শিশু জন্মের পরে জনডিস নিয়ে ভুগেছে, ফোটো থেরাপি দিতে হয়েছে বা বিলিরুবিন ১৫ এর বেশি ছিল বা টেস্ট করা হয়ে ওঠেনি।
  • যে শিশু কাঁদে কম।
  • মুখের ‍দিকে তাকায় কম।
  • শুনছে কিনা সন্দেহ হচ্ছে।
  • দেখছে কিনা সন্দেহ হচ্ছে।
  • চোখটা যেন কেমন কেমন বা বড্ড ঘুরপাক খায়।
  • ঘাড়শক্ত হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে।
  • বুকে দুধ থাকা সত্ত্বেও ঠিক টেনে খায়না।
  • কেমন যেন ল্যাত প্যাত করে।
  • যেন বড্ড তাড়াতাড়ি উপুড় হয়ে গেল।
  • এখনও কেন উপুড় হতে শিখলনা?
  • কেমন যেন শক্ত শক্ত ঠেকে।
  • অত্যধিক কান্নাকাটি করে, শান্ত হয়না সহজে।
  • শব্দ হলে অত্যধিক চমকে ওঠে।
  • বড্ড যেন ছটফটে, ভালো করে কোলেই রাখা যায়না।
  • এক দিকটা বেশি চলছে শরীরের।
  • ছেঁচড়ে হামাগুড়ি দেয়, স্বাভাবিক ভাবে দেয়না।
  • দাঁড়াতেপারে, কিন্তু বসতে পারেনা।
  • পায়ের ওপর পা উঠিয়ে থাকে, ছাড়ালে ও ছাড়েনা।
  • মাঝে মাঝে কেমন বেভুলো হয়ে যায়।
  • ন’মাস বয়সেই দেখা যায় নামতা বলছে (খুব আগেই কথা বলা)।
  • এছাড়া তো দেরিতে বসা, হাঁটা, কথা বলা আছেই।
  • মুখের  দিকে তাকাতে শিখলনা।
  • মুখের দিকে তাকিয়ে হাসতে শিখলনা।
  • জন্মের পরেই টেস্টে (নিউবর্নস্ক্রিনিং) কিছু একটা রোগ ধরা পড়েছে।
  • জন্মের পরে পরেই অপারেশন লেগেছে, বিশেষ  করে হার্টে বা হৃদযন্ত্রের অপারেশন বা চোখের অপারেশন।
  • অনেক দিন শিশু বিভাগে ভর্তি ছিল।
  • আগে দিব্যি ছিল, এখন যেন কেমন লাগছে।
  • মুখ থেকে বড্ড বেশি লালা গড়ায়।

উপুরে কিছু উদাহরণ মাত্র দেওয়া হল।বিশেষ করে এক বছর বয়সের আগে।

শুধু মনে রাখবেন, শিশুবিকাশ বিজ্ঞানের ধারাটাই আমাদের  দেশে শৈশবস্তরে আছে। ফলে অনেক ডাক্তারের পক্ষেই ধাঁধা খাওয়া সম্ভব।তাই নিজের যদি সন্দেহ মাত্র  হয়, সব থেকে নিরাপদ হয় যদি এই  বিষয়েপারদর্শী কেউ একজন দ্রূত দেখেন। মনেরাখবেন ত্বরিৎ-বিজ্ঞান (আর্লিইন্টারভেনশন) তখনই ব্যবহার করা সম্ভব যখন ত্বরিৎ (আলিডিটেকশন) সঠিক ডাক্তারের কাছে রোগী পৌঁছচ্ছে।পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে বাবা-মা, বাড়ির লোকও থাকতে পারেন, শিশুবিশেষজ্ঞও থাকতে পারেন। যত আগে আসবেন তত আশু মুশকিল আসান করা সোজা।অতএব, সারাতে খরচও পড়বে কম। মনের  ভুল  বলে দূরে সরিয়ে রাখবেন না।বিপদ বাড়লে সারাতে খরচ সরিয়ে  রাখবেন  না।বিপদ বাড়লে  সারাতে খরচ বেশি।আধুনিক বিজ্ঞান বারে বারে বলছে ‘শুভস্য শীঘ্রম’।

আমেরিকার ডাভিস ইউনির্ভাসিটিতেও সম্প্রতি দেখিয়েছেন (২০১৪) যে যদি ছ’মাস বয়সের নীচে কোনো শিশুর অটিজমের কোনও লক্ষণ দেখা যায়, সুচারু ত্বরিৎবিজ্ঞান ব্যবহার করলে অটিজমের সমস্ত লক্ষণ স্কুলে ঢোকার  বয়সের আগেই নির্মূল করে দেওয়া যায়।

কিছু লোকজন হয়তো বলে থাকবেন যে দু’বছর কি তিনবছরের আগে অটিজম সনাক্ত করা যায়না।তারা প্রাগঐতিহাসিক বিজ্ঞান বলছেন। ADOS টুলটির দ্বারা 0-2 Module  ব্যবহার করে বহু যুগ ধরেই গোল্ডস্ট্যান্ডার্ড সনাক্তকরণ সম্ভবছিল।বর্তমানে তো আবার ADOS(2) Infant Module 0-1 বলে সেই বিজ্ঞান আর অনেক প্রসারিত হয়েছে।সুতরাং যাঁরাএগুলো জানেন না, বা হয়তো এই সব লেখা পড়েই শিখবেন, তাঁদের কাছে বিনীত অনুরোধ যে জনগণ কে বিভ্রান্ত করবেন না।

মনে রাখবেন, বিশ্বমানের যত্ন নিয়েই আমরা আপনার শিশুটিকে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি রূপকথার জগতে, যেটা বিগত দশক অবধি অধরা ছিল বিশ্বের কাছে। সেই বিশ্বকেই আমরা আমাদের বিজ্ঞানের ধারার বাংলার কাছে নিয়ে এসেছি। এবার আপনারা আসুন ত্বরিৎবিজ্ঞানের সহজ ও সুলভ সুযোগ নিতে।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন