জ্বরের প্রকাশ কত দিনে
ডাঃ রমেশ চন্দ্র বেরা
2019-02-01 12:13:41
মুখ ভার করে চুপ কেন বলুন? ফিভার হয়েছে বুঝব কেমন করে? থার্মোমিটারে জ্বর উঠছেনা, বিলো নাইনটি এইট পয়েন্ট ফোর ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড-এর নীচে, অ্যাক্সিলারি মানে বগলে মিটার রেখে পাঁচ মিনিট দেখলাম, উঠছেনা।তখন কী করব? মিটার বগলে দিয়ে না উঠলে কিন্তু জ্বর কে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা।কী করবেন? ওরাল টেম্টারেচার দেখতে পারেন, সাবধান, কাঁচ পারদনব যেন না ভাঙে।এক মিনিট রেখে তাপমাত্রা দেখুন, নর্মাল নিরানব্বই পয়েন্ট ফোর,তার ওপরে আছে কিনা, থাকলে আপনি জ্বরের রোগী।মহিলাদের ঋতু চক্রের সময় নাইনটি এইট পয়েন্ট ফোর নর্মাল, তাই নর্মাল তাপমাত্রা বগলে মেপে ওই মাত্রাকে সর্বোচ্চ স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া হয়েছে।বাস্তবে আমাদের বগলের তাপমত্রা সাতানব্বই-আটানব্বই-এর মধ্যে থাকে।শরীর খারাপ লাগলে গা ব্যথা, গা ম্যাজম্যাজ, মাথাভার, শরীরের পেশিতে ব্যথা এগুলো জ্বর নয়, জ্বরের পূর্বলক্ষণ হতে পারে। ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় প্রোডোমাল স্টেজ বা রোগপূর্ব অধ্যায়। পেশিব্যথা মায়ালজিয়া, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, গা ভারী ইত্যাদি।দু’-চার দিনে আপনিই ঠিক হয়ে যায়।কিন্তু শরীরটা ভালোবোধ হয়না,দশ-পনেরো দিন পরে কিংবা আরও আগে জ্বর পুনরায় প্রকাশিত হয়।মাথাব্যথা, গা ব্যথা, পেশিব্যথা ইত্যাদি সব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ।জ্বর ৯৯-১০০-১০২-১০২ডিগ্রি বাড়তে থাকে।সিঁড়ির ধাপের মতো যখন বাড়তে বাড়তে ১০০-১০১-১০২-১০৩ ডিগ্রি হল তখন আমাদের টনক নড়ে, শয্যাগ্রহণে বাধ্য করে।যেন সিঁড়ির ধাপে শুধু উঠতে আছে, নামবার নাম নেই। দুপুরবেলা বেশি হতে পারে, আপ-ডাউন অল্প হয়ে থাকে, কখনও স্বাভাবিক ৯৮-এর নীচে নামেনা, বরংদু-চার দিনে১০৪-এ উঠেপড়ে। এরূপ জ্বর বা অবিরাম জ্বর সঙ্গে থাকে কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য। মলবন্ধ, ক্ষুধাহীনতা,দুর্বলতা এক প্রকারের আচ্ছন্নতা, ঝিমুনি গ্রাস করে, অষ্টাঙ্গ অসহায় হয়ে পড়ে।প্রোডামাল স্টেজ থেকে জ্বরের প্রকাশ হওয়া অবধি সময়কাল কে জ্বরের ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলা হয়ে থাকে।কোনো কোনো জ্বরের ইনকিউবেশন পিরিয়ড থাকেনা।
- ভাইরাস ঘটিত জ্বরের ইনুকিউবেশন পিরিয়ড
ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু : এক থেকে চার দিন।
কমন কোল্ডস ভাইরাস জ্বর বা ঠান্ডা লাগা: এক থেকে চার দিন।
মিজলস বা হাম: দশ দিন।
রুবেলা: আঠারো দিন(গড়ে)
চিকেনপক্স বা পানিবসন্ত : চোদ্দদিন (বা সাত থেকে একুশ দিন)।
ডেঙ্গুজ্বর: আট থেকে দশ দিন।
এনকেফালাইটিস বা জাপানীজ এনকেফালাইটিস: পাঁচ থেকে পনেরো দিন।
মাম্পস বা কর্ণমূলি জ্বর : চোদ্দ থেকে একুশ দিন।
ভাইরাল কনজাংটিভাটিস বা চোখ লাল: জ্বরের খবর সাধরনত নেই।
ভাইরাল জনডিস বা হেপাটাইটিস জ্বর: অনির্দিষ্ট সময়।
জলাতঙ্ক বা র্যাবিস : দশ দিন থেকে একবছর (সর্বাধিক)।
- ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত জ্বর
টাইফয়েড বা অবিরাম জ্বর, এন্টারিক ফিভার বা আঁতজ্বর: (সালমোনেলা) দশ থেকে চোদ্দ দিন।বেশি-কম হতে পারে।
নিউমোনিয়া জ্বর (নিউমোকক্কাল): আন্ত্রিক (সিগেলা): এক দিন থেকে সাত দিন।
মেনিনজাইটিস (মেনিঙ্গোকক্কাল): দু’থেকে দশ দিন।
ডিপথেরিয়া: দুই থেকে ছ’দিন বা তারও বেশি হতে পারে।
- জীবাণু ঘটিত জ্বর
ম্যালেরিয়া: দশ দিন বা তারও বেশি।
কালাজ্বর (লিসম্যানডনোভ্যানি): এক থেকে চার মাস।সর্বনিম্ন দশ দিন।
আমাশায় জ্বর (এন্টামিবাহিস্টোলাইটিক): দু’সপ্তাহ থেকে চার সপ্তাহ।
ফাইলেরিয়া: আট মাস থেকে ষোলো মাস।পূর্ণিমা-অমাবস্যায় জ্বর ওঠা-নামা করতে পারে।
ছত্রাক ঘটিত জ্বর : জ্বর যখন-তখন হয়, নির্দিষ্ট সময় থাকেনা।
- অন্যান্য জ্বর
ক্যানসার বা কর্কট রোগ: জ্বর শুরু হলে ছাড়েনা। কোনো টাইম মানে না।
পাইরেক্সিয়া অফ আননোন অরিজিন-কারণহীন জ্বর।
জ্বরের কারণ পাওয়া যায়না যখন, তাকে পি.ইউ.ও (পাইরক্সিয়া অফ আননোন অরিজিন) বলা হয়। কোনো সঠিক ইনকিউবেশন পিরিয়ড নেই। জ্বর হলে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট পাঁচশো মিলিগ্রাম আটঘন্টা থেকে চারঘন্টা অন্তর প্রয়োজন মতো খাবেন। খাবেন ও.আর.এস।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন