পরিমাণ মতো জল না খেলে বুদ্ধির বাগান শুকিয়ে যাবে
ডাঃ মধুসুদন ভৌমিক
2019-02-01 12:26:15
অ্যাভোকাডো দক্ষিণ মেক্সিকোর একটি গাছ। এর ফলকেও অ্যাভোকাডো বলে। এটি চেরি ফলের মতো একটি শাঁশালো ফল। ফলের ভেতর থাকে পেল্লাই একটা বীজ। গাছে সুন্দর ফুল ফোটে। বস্তুটি কে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ স্বাস্থ্যকর খাদ্যগুলোর একটি ভাবা হয়।
চর্বি কণা বেশি থাকার কারণে লোকে অ্যাভোকাডোকে এড়িয়ে চলেন। মজার ব্যাপার এইযে এই সবুজ ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। রক্তের সুগারের মাত্রা ঠিক রাখতে অ্যাভোকাডো সাহায্য করে ও ত্বক কে চকচকে রাখে। ফলটিতে যথেষ্ট পরিমাণে পটাশিয়াম ও ফোলিয়েট থাকে। অ্যাভোকাডো মস্তিষ্কের ভেতর রক্ত জমে যাওয়া প্রতিরোধ করে। ব্রেনস্ট্রোক হতে দেয় না।অ্যাভোকাডোর ভিটামিন-কে মস্তিষ্কে রক্তপাত প্রতিরোধ করে।ফলটিতে ভিটামিন-ই সহ অনেক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। অ্যাভোকাডো ব্রেনকোষের ক্ষয় ক্ষতি মেরামত করে। মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়ায়। এতে চিন্তা শক্তি বাড়ে, মনঃসংযোগ বাড়ে।
চা পানেও বুদ্ধি বাড়ে
গ্রিনটি: চা থেকে চাওয়ার যেন শেষ নেই।প্রফেসর ক্রিসটপ বেগলিনজার এবং সুইজারল্যান্ডের স্টেফানবর্গাট তাদের গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন যে ডিমেনশিয়া নামক ভুলো মনরোগে গ্রিনটি খুবই ফলপ্রসূ।গ্রিণটি-র নির্যাস দিয়ে বানানো নরম পানীয় নিয়মিত দৈনিক এক কাপ পান করলে মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্ট্যাল কর্টেক্স নামক বুদ্ধি অঞ্চলের সঙ্গে বাকি অংশের স্নায়ু সংযোগ দৃঢ় হয়। বুদ্ধির গোড়ায় রক্তের যোগান বাড়ে। মনে আমেজ আসে। কাজে মন বসে। অলসতা দূর হয়। আবার নতুন উদ্যম নিয়ে কাজে লেগে পড়া যায়। এম.আর.আই পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে মস্তিষ্কের বুদ্ধি অঞ্চলে রক্ত চলাচল বাড়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। গ্রিনটি ওয়াকিং মেমোরি বাড়ায়। এছাড়াও চা পানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। গ্রিনটি স্ট্রোক ও প্রস্টেট ক্যানসার রোধে কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে।
জল
জলই জীবন।সকলেই জানেন কিন্তু মানেন না অনেকেই।পুকুর-নদীতে ডুব দিয়ে, বহু তলে সাওয়ার ছেড়ে কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে সহজেই ত্বক ভিজিয়ে নেওয়া যায়। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে। ঝলমলে তক তকে ত্বক দেহের রূপটাই বদলে দেয়। মস্তিষ্ক দেহের ন্যায় কেন্দ্র। একে নির্দেশকেন্দ্র বললেও ভূল হবেনা। কিন্তু মাথার খুলি খুলে বুদ্ধির গোড়ায় জল ঢালবেন কীভাবে? ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করার জন্য রোজ কোটি কোটি টাকার ময়েশ্চারাইজার ক্রিম, বডিলোশন, ফেসওয়াস বিক্রি হয় কিন্তু ব্রেনের বুদ্ধি বাগানের আদ্র্রতা নিয়ে ক’জন ভাবেন! মস্তিষ্কের আদ্র্রতার সামান্য ঘাটতি চোখে মুখে, মননে মারাত্মক ছাপ ফেলে।একটু ডিহাইড্রেশন ভুগতে থাকা লোককে একনজরেই ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত দেখায়। ব্রেনর সে ভাসতে থাকা স্নায়ুসংযোগ রক্ষাকারি রাসায়নিক পদার্থের ঘনত্বের হেরফের হয়ে যায়।আদ্র্রতার ঘাটতি শুধু দেহকে শুকনো করেনা, মনকেও নাড়া দেয়।লোকে ভুলভাল বকতে শুরু করে।জ্ঞান হারানো পর্যন্ত অসম্ভব নয়। নিজের বিছানায় শুয়ে থেকেও প্রশ্ন করে—আমি কোথায়!
কাজেই মেমরি ও মনঃসংযোগ ঠিক রাখতে জলকে ব্রেনফুডের তালিকার পয়লা নম্বরে রাখতে হবে।বুদ্ধির গোড়ায় জল ঢালার জন্য মস্তিষ্ক ফুটো করার দরকার নেই।দিনে ছয় থেকে আট গ্লাস জল পান করলেই মগজ সপুষ্ট থাকে। নিয়মিত বুদ্ধি বাগানে জল ঢালুন।প্রচেষ্টা জলে যাবেনা। নতুন নতুন বুদ্ধি কোষ গজাবে। নিত্য নতুন ফন্দি ফেঁদে আখের গুছোতে সুবিধে হবে।শুধু আমি নয়, বিজ্ঞানও আমার তালে তাল মেলাচ্ছে।
বুদ্ধি বাগান সবুজ রাখতে টাইরোসিন চাই
স্বাস্থ্য বিধি মেনে সঠিক খাদ্য খেয়ে মস্তিষ্কের মেঝে ঝাঁ চকচকে রাখলেন, ছাদ ছিদ্র শূন্য করলেন, স্নায়ুদের পরিপাটি রাখলেন, মস্তিষ্কের শ্বসন, সংবহনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর সুন্দর করলেন। এরপরও কিন্তু আপনি বোকা বনে যেতে পারেন। এক নিউরোন টপকে অন্যনিউরোনে তথ্য পাচারের জন্য, মস্তিষ্কের অলিতে গলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বুদ্ধির দপ্তর গুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য স্নায়ু পিয়ন তথা নিউরোট্রান্সমিটারদের প্রয়োজন। দেহের অন্দর মহলে এই নিউরোট্রান্সমিটারদের অনেক স্পেয়ার পার্টস তৈরি হলেও ট্রিপটোপানপ্রোটিনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশটি কিন্তু খাদ্যবস্তুর মাধ্যমেই আপনাকে মস্তিষ্কে আমদানি করতে হবে। ভাতে ট্রিপটোপানের অভাব আছে। ডালে প্রচুর ট্রিপটোপান আছে কাজেই ডাল মেখে ভাত খেলেই পেটে ট্রিপটোপান ঢুকবে। ট্রিপটোপানকে পেতে দুগ্ধজাত দ্রব্য খান, সয়াবিন খান, ডিম খান।সামুদ্রিক মাছেদের সাহায্য নিন।অনেক ট্রিপটোপান পাবেন বুদ্ধিবাড়বে। একাগ্রতা বাড়বে। চিন্তাশক্তি বাড়বে।আমি একা নই, বিজ্ঞানওস্বীকার করে।
অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ইনটেলিজেন্সি বাড়ে
বিশ্বের মনুষ্য সমাজে মীরজাফরদের অভাব নেই। দিনের পর দিন সংখ্যাটা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এক মীরজাফর নিজেকে সাধু সাজিয়ে লাখো কোটি মীরজাফর ধরার ফন্দি আঁটছে। যদি প্রশ্ন করা যায়, ব্রক্ষান্ডের বেস্ট মীরজাফরের নাম কী? উত্তরে ঈশ্বরের নামটা বসিয়ে দিলে কেমন হয়? উনি জন্ম দিয়েই মেরে ফেলার কারসাজি শুরু করে দেন। মানুষের সংসারে সাপ, সিংহ, বাঘ, কুমীরদের ঢুকিয়ে দেন।দেহে ঢুকিয়ে দেন আর্সেনিক, অর্গানো ফসফরাস।কচি দেহে যৌবন আনেন।কুঁড়ি থেকে ফুল ফোটে।ফল ধরে শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে। ডগমগ করে। স্রষ্টা সৃষ্টির রূপ চাক্ষুষ করে ঈর্ষা বোধ করেন।দেওয়া জিনিস ফেরত নেওয়া শুরু করেন।চুল পাকে, চামড়া ঝোলে,দাঁত নড়ে, দেহ অস্থি-চর্মসার হয়। জীবনের উষা লগ্নে জীবনে ফিট করে রাখেন জীবন ঘড়ি। বারোটা বাজলেই জীবন শেষ।সব কিছুর মূলে কিন্তু দেহ যন্ত্র নষ্টকারি ফ্রি-রাডিক্যালদের হাতে থাকে।বিজ্ঞান বসে নেই।খুঁজে খুঁজে ফ্রি-রাডিক্যাল ধ্বংস করে জীবনের বিড়ম্বনা আটকানোর উপায় তারা বের করে ফেলেছেন।দেশ-বিদেশ জুড়ে এখন একটাই নাম—অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।এরা কোনো দেহাংশ জ্বলে পুড়ে খাক হতে দেয়না। ফ্রি-রাডিক্যাল নামক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ কে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিনষ্ট করে দেয়।বাঁশ না থাকলে বাঁশি বাজবেনা।শেষ বাঁশি যতক্ষণ না বাজে জীবনের ময়দান থেকে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। গাঁটের কুড়ি খরচ করে এই খুচরোর আকালের যুগে হাপিত্যেশ করতে হবেনা।নীচে দশটি খাদ্য বস বস্তুর নাম দেওয়া হল। খাবেন কিন্তু্। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টদের সরাসরি পেট বন্দি করে ফেলুন।বৃদ্ধি যন্ত্র সামলে রাখুন। ব্লুবেরি,ব্রকোলি, বিট, গাজর, লালবাঁধাকপি, পালংশাক, অ্যাভোকাডো, নারকেলতেল, চা, টম্যাটো।একটা ফ্রি দেওয়া হল।এবার বাঁচুন প্রাণভরে।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন