×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

ভ্রূণহত্যা একটি অমানুষিক কাজ

ডাঃ উজ্জল কুমার আচার্য
2019-02-01 12:29:14

একদিকে আমরা মাতৃ আরাধান করি, অন্যদিকে মহিলাদের কম মানুষ ভাবি।পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের কমগুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয়।রামায়ন মহাভারতের যুগ থেকেই এই ব্যাপারটা প্রকট।স্বাধীনতা পরবর্তী পর্যায়ে মেয়েদের মর্যাদা, স্বাধীনতা বেড়েছে—কিন্তু কতটা?

নারী পুরুষের পার্থক্য শুরু হয় বাড়ি থেকে, পরিবারের কাছ থেকে।জন্মের সময় ছেলে হলে উলুধ্বনি, হাসি আনন্দে সকলকে জানানোর প্রচলন আজও আছে বহু জায়গায়।অন্যদিকে মেয়ের জন্ম  সংবাদ গোপন  রাখা হয়, কোনো রকম  আনন্দ উৎসবতো হয়ইনা, বরং দুঃখের কারণ হয় কোথাও কোথাও।

ভারতবর্ষের সামাজিক রীতি অনুযায়ী কন্যা সন্তানের বিয়েতে পাত্র পক্ষকে প্রচুর পণ দিতে হয়, তাই কন্যাসন্তান পরিবারে অর্থনৈতিক বোঝা ছাড়া কিছুই নয়।

নারী নির্যাতন তথা অত্যাচার লিঙ্গ বৈষম্যের এক  বড় উদাহরণ। কম বয়সে বিয়ে দেওয়া, পড়াশুনো না করানো, পণ প্রথা, ডিভোর্স, বিধবাদের অমর্যাদা, কন্যাভ্রূণ হত্যা, কন্যা সন্তান হত্যা, পুনঃবিবাহ প্রথা নারী পুরুষের বৈষম্যের অবস্থাটা বোঝায়।

ভারতবর্ষের জ্বলন্ত সামাজিক সমস্যা কন্যাভ্রূণ হত্যা। কন্যাসন্তানের জন্ম যেন পরিবারের অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণের জন্য, যেন বাড়ির একটি বোঝা যা অন্যের সম্পত্তি।প্রত্রসন্তানের অন্য মানত, পূজা, আচ্চা করলেও কন্যা সন্তান কামনা করেনা কেউ।

পুরুষের মতো নারীর সমান অধিকার, সমান মর্যাদার কথা আমরা বললেও তাতে ফল হচ্ছে কতটা।তাহলে কেন কন্যাভ্রূণ হত্যা বা কন্যাসন্তান হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে।সংখ্যাটাতো কমছেনা বরং দিনকে দিন বাড়ছে।নারী-পুরুষের অনুপাত দিনকে দিন পরিবর্তিত হচ্ছে।বেশি দেখা যাচ্ছে পঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লিতে।এইসমস্ত রাজ্যে প্রাইভেট  লিঙ্গ নির্ধারণ ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা হয় এবং  লিঙ্গনির্ধারণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে  সত্তরের দশকের শেষের দিকে।

ঘটনাটা উদ্বেগ  জনক  ভাবে দেখা যাচ্ছে গ্রামের চাইতে শহরে। অশিক্ষিত চাইতে শিক্ষিতের মধ্যে এর প্রচলন বেশি হয়ে উঠছে।কোনোসন্দেহ নেই এই ঘটনা চলতেই থাকলে সমাজ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে এবং তা গুরুত্বর্পর্ণ সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।যৌন অপরাধীর  সংখ্যা বাড়বে।ভাগা ভাগি করে মহিলা ব্যবহার হবে এবং নিরাপত্তাহীনতা একচরম উদ্বেগের হয়ে দাঁড়াবে মহিলাদের কাছে।

অ্যমনিওসেনটেনিস১৯৭৫সালে ভ্রূণের বিকলাঙ্গতা নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।কিন্তু খুব দ্রুত এটি লিঙ্গ নির্ধারণের হাতিয়ার হয়ে ওঠে।

বাচ্চার পজিশন, ম্যাচিওরিটি জানার জন্য, প্লাসেন্টার অবস্থান জানার জন্য, বাচ্চার সংখ্যা জানার জন্য ইউ.এসি.জি ব্যবহার করা হয়।কিন্তু খুব দ্রূত বহু জায়গায় এটি লিঙ্গনির্ধারণের হাতিয়ার হয়ে ওঠে ক্রমশ।

এই দুটি যন্ত্র বা পদ্ধতি এখন জনপ্রিয় এক দ্রুত বৃদ্ধির ব্যবসা হয়ে উঠেছে।বর্বর এবং অমানুষিক কাজ হল কন্যা সন্তা সহত্যা ।বিশ্বে প্রতি হাজার পুরুষ পিছু নারীর সংখ্যা ১০৫০।কিন্তু ভারতে এইসংখ্যাটা ৮৫০।

এটা সত্যি যে আমাদেরদেশ অন্যদের তুলনায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং লিঙ্গ বৈষম্যে অনেকের চেয়ে পিছিয়ে।ভারত সরকার ১৯৯৪ সালে পি.এন.ডি.টি আইন পাশ করে জন্মের আগে ভ্রূণের লিঙ্গনির্ধারণ নিষিদ্ধ করে এবং আইনতদন্ডনীয় অপরাধ ঘোষণা করে।

এই মুহূর্তে গর্ভস্থ সন্তানের লিঙ্গ নির্ধালণ এবং জানানো বেআইনি। যদিও খুব নগণ্য ভাবে এর ব্যবহার তদারকি করা হচ্ছে।মানুষের শুক্রাণুতে সমান পরিমাণ X এবং Y ক্রোমোজোম  থাকে। X এবং Y  ক্রোমোজোমের  নিষেকের বা গর্ভধারণের ক্ষমতা সমান।সুতরাং সমনা পরিমাণে স্ত্রী এবং পুরুষ ভ্রূণ তৈরি হবার কথা।কাজেই স্ত্রী-পুরুষের সংখ্যার তারতম্য বোঝায় এখনও লিঙ্গ নির্ধারিত হচ্ছে এবং ধ্বংস করা হচ্ছে।

আলট্রাসোনোগ্রাফিতে ১২ সপ্তাহ বা তার পরে তিন-চতুর্থাংশ ভ্রূণের লিঙ্গ সঠিকভাবে বলা সম্ভব। ৫০% পুরুষ এবং ১০০% স্ত্রী-লিঙ্গ নির্ধারণ সঠিক হয় এসময়। কিন্তু ১৩ সপ্তাহের পরে১০০% সঠিকফল পাওয়া সম্ভব।

একটি স্টাডিতে দেখা গেছে ১৯৯০ থেকে ১০ মিলিয়ন কন্যাভ্রূণ হত্যা হচ্ছে বছর এবং ৫লক্ষ কন্যাসন্তান হত্যা করা হচ্ছে।আরেক স্টাডিতে দেখা যাচ্ছে, ১লক্ষগর্ভপাত করা হয় শুধুমাত্র ভ্রূণটি কন্যা হয়েছে বলে।২০১১ সালে ১৫ হাজার নারী পাচারও  বিক্রি হয়েছে।২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গে দেখা যায় প্রতি ১০৫ জন ছেলের অনুপাতে মেয়ের সংখ্যা ১০০।

নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত হয়ে কিছু ডাক্তারবাবু, রেডিওলজিস্ট, সোনোলজিস্ট এবং জেনেটিসিস্ট লিঙ্গ নির্ধারণের মতো এক অনৈতিক এবং বেআইনি খেলায় মেতে রয়েছেন।তাদের লাভের সঙ্গে অনেকের ক্ষতি হচ্ছে।আামাদের দেশের,  আমাদের প্রফেশনের এবং মেয়ে সন্তানদের।কাজেই যাদের দ্বারা লিঙ্গ নির্ধারণ সমূলে উৎপাটিত হওয়ার কথা, তারাই এর সংখ্যা বাড়াচ্ছেন।আজ মেডিকেল প্রফেশনালদেরই এর জবাবদিহি করতে হবে।কোনো কোনো ডাক্তারবাবু চক্ষুলজ্জা এবং লোকলজ্জা ভুলে তাদের ক্লিনিকের কাছে পোস্টার দিচ্ছেন।আজ ৫০০ টাকা ব্যয়করে ভবিষ্যতে ৫ লক্ষ টাকা বাঁচান।

পুত্র সন্তান মা-বাবার কাছে আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা ও উপার্জনশীল হবার কারণে মা-বাবার কাছে ভরসা হয়ে দাঁড়ায়।বংশের বাতি দেবার কারণে যেমন অনেকেই কামনা করেন পুত্রসন্তান কে।অন্যক্ষেত্রে কন্যাসন্তান পণ প্রথার কারণে পরিবারের বোঝা ছাড়া কিছুই নয়।কমবেশি অনেকেই এইধারণাই পোষণা করেন।

একজন গর্ভবতী মহিলা নিজের ইচ্ছেতে লিঙ্গনির্ধারণ না চাইতে পারেন, কিন্তু সামাজিক এবং পরিবারগত চাপে তাকে একাজে সম্মতি দিতে হয় অনেক সময়।গর্ভপাতের ফলে নানা রকম সমস্যায় পড়তে হয় মহিলাটি কে।সাধারণত চার-পাঁচ মাসে এধরনের গর্ভপাত করার ফলে প্রাণহানির আশাঙ্কাও থাকে।

অনেকে মনে করেন কম মেয়ে বেশি চাহিদা অবস্থার উন্নতি এটাতো সম্ভবইনা, বরং অত্যাচার, ধর্ষণ, পাচার বাড়বে।দু-তিনটি মেয়ে থাকলে লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায় কিন্তু এধারণাও সঠিক নয়।পণপ্রথা মূল কারণ খুঁজে তার চিকিৎসা করা উচিত।

মেয়েদের অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই করার চাইতে তাদের নির্মূল করাই শ্রেয়—এমন হাস্যকর ধারণাও অনেকে পোষণ করেন। অনেকটা গরিবী না হটিয়ে গরিব লোকেদের হটাওয়ের মতো।

পিসি এবং পি.এন.ডি.টিঅ্যাক্ট

এই আইনে বলা আছে—লিঙ্গ নির্ধারণ নিষিদ্ধ এবং লিঙ্গ জানানোও নিষিদ্ধ। ইউ.এস.জি সেন্টার এবং জেনেটিক সেন্টার রেজিস্টার্ড হতে হবে।লিঙ্গ নির্ধারণ বেআইনি এবং এখানে সেটা করা হয়না—এ রকম নোটিশ লাগাতে হবে।ডাক্তার বা ক্লিনিক সেরকম বিজ্ঞপ্তি না দিলে জরিমানা হবে।

জরিমানা কী হতে পারে

জেল ৩ বছর থেকে ৫ বছর এবং ১০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

কে বা কারা শাস্তি পেতে পারেন

যিনি আইন অমান্য করেছেন অর্থাৎ লিঙ্গ নির্ধারণ  করেছেন তিনি।সেই সেন্টারের দায়িত্বে যারা—মালিক, ডিরেক্টার, ম্যানেজার, যে ব্যক্তি এই সেন্টারে নিয়ে আসার জন্য মিডিয়ার কাজ করেছেন, স্বামী, পরিবারের অন্য কেউ।গর্ভবতী মহিলাকে বাদ দেওয়া হয়, যদি না সে নিজে থেকে এ ব্যাপারে উৎসাহী হয়।

সেন্টারে কর্মরতদের কী করা উচিত নয়

  • লিঙ্গ নির্ধারণ করবেন না।লিঙ্গ  নির্ধারণে সাহায্য করবেননা এবং নির্ধারণকারীর সঙ্গে থাকবেন না।
  • লিঙ্গ নির্ধারণ উপযুক্ত কোয়ালিফিকেশন ছাড়া কোনো  কর্মী কে   নিযুক্ত করবেন না।
  • রেজিস্টার্ড জায়গা ছাড়া কোনো কাজ করবেন না।
  • রেডিস্টার্ড মেশিন ছাড়া কোনো কাজ করবেন না।
  • নাম এবং যোগ্যতা পরীক্ষাকারীর অ্যাপ্রনে লেখা থাকবে।
  • স্বাক্ষরে নাম এবং যোগ্যতা লেখা থাকে।
  • কন্যাভ্রূণ হত্যা সম্পর্কিত   কোনো আচরণ করবেন না।

জেনেটিসিস্ট, সোনোলজিস্ট ও রেডিওলজিস্টরা কী করবেন

  • লিঙ্গ নির্ধারণের যেকোনো অনুরোধ কে সরাসরি না বলবেন।
  • জেনেটিক সেন্টার, ইউ.এস.জি সেন্টার রেজিস্টার্ড করুন।
  • মহিলা বা দম্পতি অথবা পরিবারের কাউন্সেলিংকরুন।
  • অসৎ চিকিৎসক এবং চিকিৎসা কর্মীদের সম্পর্কে জনগণকে  অবহিত করুন।
  • নিয়মিত এসব বিষয়ে জনগণকে অবহিত করার জন্য আর্টিকেল প্রকাশ করুন।

দেশে প্রতিহাজারে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা যেখানে ৯৩৩জন, সেক্ষেত্রে এ রাজ্যে সংখ্যাটি অনেক ভালো ৯৪৭।সরকারি নজরদারি সেন্টার গুলোতে আরও বাড়াতে হবে।স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়তে হবে।নারী-পুরুষ সমাজে সমান একথা বেশি মাত্রায় বোঝাতে হবে নাটক, থিয়েটার, সিনেমা বা বিজ্ঞাপনের  মাধ্যমে। ‘কন্যাশ্রী’, বেটিবাঁচাও প্রকল্পগুলির মতো আরও প্রকল্প  জনসমক্ষে আনতে হবে।লিঙ্গনির্ধারণকারী এবং প্ররোচনাকারীর কঠোর দৃষ্টান্ত  মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।পণ প্রথা উচ্ছেদ করতে হবে।সকলের ঐকান্তিক সহযোগিতায় আমরা আমাদের সমাজ, রাজ্য তথা দেশকে রক্ষা করতে পারি আর হত্যার  হাত থেকে রক্ষা করতে পারি সুন্দর মেয়েদের, বোনদের, স্ত্রী এবং সবচেয়ে বড়  মমতাময়ী মায়েদের।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন