×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

বিয়ের আগে ভাবুন হবু দম্পতিরা

ডাঃ সুকুমার বারিক
2019-02-01 12:33:29

সামনেই আবার এক বিয়ের মরশুম।পাত্র-পাত্রীর বাড়িতে প্রস্তুতির শেষ নেই, ব্যস্ততার শেষ নেই।হাজারো কাজ।শতেক ব্যবস্থা।দু’পক্ষেই কত আয়োজন।কোথায় অনুষ্ঠান হবে খোঁজা শুরু, চলছে শুভক্ষণের জন্য খোঁজ।মাস মিলল, তিথি মিলল, দিনক্ষণ মিলল, সময় মিলল।আহা!

পাত্র বা পাত্রী খোঁজার যা ঝক্কি! ঝকমারিও কম নয়।ছেলে বা মেয়ে যদি তাদের নিজেদের পছন্দ মতো খুঁজে নেয় এবং যদি উভয়র পক্ষের কর্তাব্যক্তিরা তা মেনে নেন, তাহলে তো বহু ঝামেলার অবসান।কিন্তু সেটা যদি কোনো কারণে না হয়? তাহলে তো পুরোনো দিনের মতো অথবা চিরাচরিত সেই খোঁজা খুঁজি।চারদিকে খোঁজখোঁজ।ঘটকগিরির পেশা হয়তো একটু ব্যাকফুটে।তবে আজও বিদ্যমান।ঘটকদের ঘটকালি নিয়ে গল্পের শেষ নেই।তবে ফুলিয়ে- ফাঁপিয়ে এদিকের কথা ওদিকে বলে, চারহাত এককরার কারিগররা ওস্তাদই বলতে হয়।গ্রামাঞ্চচলে ছাতা বগলে খাঁ খাঁ দুপুরে ঘটকমশাইদের বিচরণ আজও প্রত্যক্ষ করা যায়।

খবরের কাগজে পাত্রচাই-পাত্রীচাই বিভাগতো সমাজের বেশ কিছু বিষয়কেই সামনে আনে।এই বিজ্ঞাপনগুলো প্রকৃত অর্থেই সমাজের দর্পণ।বেঁটে,মোটা, শ্যামলা, টাকওয়ালা মাষ্টার মশাইয়ের কিন্তু প্রকৃত সুন্দরী, ফর্সা, সুনয়না, সুগায়িকা, অল্পভাষী, শিক্ষিতা, গৃহকর্মেনিপুণা, চাকরিরতা দীর্ঘাঙ্গী পাত্রী চাই।আসলে আরও কিছু চাওয়ার ছিল বোধ হয়।মাষ্টার মশাই হয়তো ভুলে গেছেন।

জাত পাত প্রসঙ্গ এখানো আছে কি? প্রশ্নটা ছুঁড়তেই হৈ হৈ উঠল।আজও এই প্রসঙ্গ বেশ জোরদারভাবে প্রাঙ্গিক।গত অগ্রহায়নেই তিনজনের বিয়ের নেমন্তন্ন পাওয়া গিয়েছিল।এই প্রশ্নাটাই ওদের সামনে তুলেছিলাম।প্রথমজন বললেন, উনি কুলীনকায়স্থ সুতরাং বিয়ের খোঁজ খবরে একমাত্র কুলীনকায়স্থরাই স্থান পেয়েছেন।সুতরাং বিয়ে হচ্ছে কুলীনকায়স্থঘরেই।

দ্বিতীয়জন জানালেন, তিনি বেঙ্গলি মেট্রিমোনিয়াল থেকেই পছন্দ করেছেন।প্রাথমিক পছন্দের সময় প্রোফাইলে কিন্তু তিনি মাহিষ্য এবং মাহিষ্য পছন্দ জানিয়েই ছিলেন।বিয়েহচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মাহিষ্যের সঙ্গেই।

তৃতীয়জনের দেখে শুনেই বিয়ে হচ্ছে।পাত্রডাক্তার এবং মাহিষ্য, পাত্রী ব্রাহ্মণ, স্কুলশিক্ষিকা। উভয়পক্ষের পছন্দেই বিয়ের আয়োজন।খুশি হয়েছিলাম।ভুল ভাঙল যখন পাত্র বললেন, ‘পাত্রীপক্ষের অনেক আত্মীয় নাকি আসবেন না বিয়েতে কারণ পাত্র অব্রাহ্মণ!’

আমরা কোথায়?

একবার পাত্র-পাত্রী পছন্দ হওয়ার পর কোথায় অনুষ্ঠান হবে, কী রান্না হবে, নিমন্ত্রিতদের লিস্ট কী হবে, গহনাগাঁটি, কাপড়-চোপড় ইত্যাদির খোঁজখবর ও ব্যবস্থা শুরু হয়।শহরের দিকে তো বটেই,শহরতলীতেও বিয়ের জন্য বা অনুষ্ঠানের জন্য বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়।এইরকম বাড়ির সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ায় সামিয়ানা খাটিয়ে প্যান্ডেল করার সংখ্যা ক্রমশ কমছে।সর্বোপরি হ্যাপাও অনেক কম।আজকাল ভালো অনুষ্ঠান বাড়ি বুকিং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একবছর আগে থেকেই করতে হয়।নতুবা পাওয়া দুস্কর।আজকাল তারকা খচিত হোটেলও এই ব্যবস্থায় সামিল হচ্ছে।কনফারেন্স ম্যানেজ করার মতো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টও বাজারে এসেছে।ফেলোকড়ি, মাখোতেল দিনকড়ি, সব ব্যবস্থা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের।দই থেকে দুর্বাঘাস, শাড়ি থেকে গাড়ি, ডেকচি থেকে ডেকরেটার সব-ই তাদের। আপনি শুধু পয়সা দিয়ে খালাস। খরচা আছে চিন্তা কম। এক্কেবারে দুর্ভাবনা যে থাকেনা তা নয়।সবকিছু মনের মতো হবে তো? একটু খুঁতখুঁতে ভাব থেকেই যায়।

বিয়ে বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া।এনিয়ে মজার মজার গল্পের শেষ নেই।এর বিবর্তন নিয়েও আলোচনা, লেখালেখি, রঙ্গ-ব্যঙ্গ হয়েই চলেছে।দল বেঁধে বাজার করে  আনা, সারা রাত্রি জেগে আনাজ কাটা, দলবেঁধে রান্নার মূল রাঁধুনি কে সাহায্য করা।সর্বোপরি খাওয়ানোর সময় খেতে দেওয়া আর পাত পেড়ে খাওয়ার আনন্দ ছিল।খেতে দেওয়ার আনন্দও কম ছিলনা।বাড়ির লোকেদের পরিবেশন করা আজ প্রায় অবলুপ্ত।খাওয়ার রসিক জনের হাক ডাক আজও কখনও কখনও দেখা যায়।মাত্র চল্লিশ বছর আগেও অভ্যাগতদের ‘আর একটু মাংস নিন’, ‘আর দুটো মাছ নিন’, ‘আর কয়েকটা রসগোল্লা নিন’ বেশ শুনতে পাওয়া যেত।কমপিটিশন করে ত্রিশটা মাছের টুকরো, পরিমাণ মতো পাঁঠার মাংস খাওয়ার পরে চল্লিশ-পঞ্চাশটা রসগোল্লা খাওয়ার লোক প্রতি বিয়ে বাড়িতেই বেশ কয়েকজন পাওয়া যেত।আজকাল খেতে পারার লোক হয়তো ততটা কমে যায়নি।খাওয়ানোর লোক কিন্তু আর তেমন বড় একটা দেখতে পাওয়া যায়না।আসলে যারা এমন মস ভরিয়ে খাওয়াতে পারতেন তারাই তো এককালে ছিলেন বিশেষ খাদ্যরসিক।কেউ কেউ তাদের পেটুকও বলত।সে-সব কথা তারা গায়ে মাখতেনই না।খেতে পারার ক্ষমতাটাতেই ছিল তাদের গর্ব।সত্যিই তো সেক্ষমতা এক অসাধারণ ক্ষমতা।

আজকাল গোটা ব্যাপারটাই ক্যাটারিং নিয়ে ফেলেছে।শহরেতো আছেই শহরতলী ও গ্রামেও।দেশী-বিদেশী নানান পদ সুখাদ্য সন্দেহ নেই কিন্তু একইধরনের ক্যাটারারের রান্নার স্টাইলও আছে।কোথায় যেন  ‘আহা’ বলার মতোকিছুর অভাব।

খাওয়া-দাওয়া, গয়না গাঁটি, কাপড়-চোপড় ইত্যাদি হরেক কিসিমের জিনিসের মাঝে একটা ভাবনা এসেও আসেনা নবদম্পতির জীবন।তারা হাজারো আশীর্বাদ, শুভকামনা, উপহার পান বিয়ের দিনে এবং বৌভাতে।এই শুভকামনা মুখ্যত একটাই—যেন সুখে-শান্তিতে একটি সুন্দর জীবন একসঙ্গে কাটাতে পারেন।শুধুমাত্র উচ্চরিত ‘যদিদং হৃদয়ং তব, তদিদং হৃদয়ং মম’ নয়।শুধু তোমার সমস্ত সুখ-দুঃখের অংশও আমিতো নয়।নয় এক শুরু, এক শপথ, তার থেকে আরও বোধহয় অনেক বেশি এক আনন্দময় জীবন।এই প্রার্থনাই নবদম্পতির।অগ্নিসাক্ষী করেও তা-ই বলা সাতপাকে বাঁধা পড়ার সময়ও তাই-ই বলা।

এমন এক সুন্দর ক্ষণে, এমন এক আনন্দময় সময়কালে একটি বৈজ্ঞানিক সত্যকে আমরা অজ্ঞাত কারণে উপেক্ষা করি।বিবাহের অভিধানগত অর্থ একটি পুরুষ ও একটি নারীর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে জীবন যাপন করার সামাজিক বিধি। প্রকারান্তরে এই সামাজিক বিধি নারী ও পুরুষের শারীরিক মিলনকে সামাজিক স্বীকৃতি দেয়। সুতরাং আমরা সবাই জানি যে বিবাহের পরে নবদম্পতি শারীরিক ভাবে মিলিত হবেন।যদি কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করা হয়, তাহলে শারীরিক মিলনে গর্ভাবস্থা আসাই স্বাভাবিক।

এই স্বাভাবিকত্ব কে আমরা অদ্ভুত ভাবে কিছুটা সলজ্জ ভাবে, কিছুটা অজ্ঞানতায়, কিছুটা ভাবনাহীন ভাবে নবদম্পতির কাছে এড়িয়ে যাই।যারা নবদম্পতি তারাও এড়িয়ে যান, যারা বয়স্ক তারাও বলতে পারেন না।এর পরিণতি হিসেবে বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই বেশি কিছু নবদম্পতি এক বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হন।এই সমস্যা হল অবাঞ্ছিত গর্ভাবস্থা। ডাক্তারের কাছে পৌঁছান তখন এবং গর্ভাবস্থা নষ্টের জন্য শরণাপন্ন হন।গর্ভাবস্থা নষ্ট করা বা অ্যাবরশণ করা ঝুঁকিমুক্ত কাজ নয়।এখনকার দিনে কিছু ওষুধ পাওয়া যায়। সঠিক জায়গায়, সঠিক পদ্ধতির ঝুঁকি কম থাকলেও, ঝুঁকিমুক্ত কাজ তা নয়।পরবর্তী সময়ে সন্তান আসার সমস্যাও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যেতে পারে এই ‘অ্যাবরশন’ করানোর জন্য।তবু সমস্ত দেশে হাজারো হাজারো গর্ভ নষ্ট করা হয়।বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো গর্ভনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার না করার জন্য।

তাই বিয়ের মরশুমে যদি নবদম্পতি বিয়ের আগে একবার একজন গাইনোকোলজিস্টের সাথে কথা বলেন এবং পরামর্শনেন তাহলে তারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্বন্ধে জানা এবং তার সঠিক ব্যবহার অবাঞ্ছিত গর্ভাবস্থা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। আজকের নবদম্পতিদের জানা উচিত যে একবিংশ শতাব্দীতে গর্ভাবস্থা আসবে স্বেচ্ছায়, হঠাৎ করে নয়।

বিয়ের আগে গর্ভনিরোধক বিষয়ে জানুন।খুশি আর আনন্দের সাথে জীবন ভাসুন।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন