×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

বুকের দুধ বাড়াতে ভেষজ

ডাঃ বেদীমাধর দাস অধিকারী
2019-02-01 12:42:25

স্তন্যপান শিশুদের পক্ষে অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সন্তান প্রসবের পর অথবা অন্য কোনো সময় প্রয়োজনীয় পরিমাণ স্তন্য নিঃসরণ হয় না। ফলে শিশুকে বাইরের দুধ পান করাতে বাধ্য হতে হয়। বহু মা স্তন্যের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

স্তনের গঠন

প্রতিটি স্তন প্রায় কুড়িটির মতো গ্রন্থির উপখন্ড নিয়ে গঠিত। প্রতিটি উপখন্ড একটি দুগ্ধবাহি নালি বা ল্যাকটিফেরাস ডাক্ট এবং এর শাখা-প্রশাখা নিয়ে গঠিত হয়ে থাকে। প্রতিটি শাখা-প্রশাখার মুক্ত অগ্রপ্রান্তে থলি বা অ্যালভিওলাই থাকে, যা মায়োএপিথেলিয়াল কোষ দ্বারা আবৃত থাকে। স্তনের প্রায় মধ্যবর্তী অঞ্চলে সামান্য উঁচু অংশ থাকে, একে স্তনের বোঁটা বা নিপল বলে। স্তনের বোঁটা ঘিরে বাদামী বা গোলাপি বর্ণের গোলাকার যে অংশ থাকে, একে অ্যারিওলা বলে। স্তন্য বা দুগ্ধবাহি নালিগুলো স্তনের বোঁটা দিয়ে দেহের বাইরে উম্মুক্ত হয়। উম্মুক্ত হওয়ার আগে সামান্য স্ফীত হয়ে অ্যারিওলার অংশে ল্যাকটিফেরাস সাইনাস গঠিত হয়।

শারীরক্রিয়া

গর্ভাবস্থার দ্বাদশ সপ্তাহ থেকে রক্তে প্লাসেন্টাল ল্যাকটোজেন, প্রোল্যাকটিন ও কোরিওনিক গোনাডোট্রফিনের ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য স্তনগ্রন্থির কলাসমূহের অতিবৃদ্ধির ফলে স্তন বৃদ্ধি পায়। চতুর্থমাস থেকে প্লাসেন্টাল (অমরা) ল্যাকটোজেন কোলোস্ট্রাম (মাতৃস্তন্যের প্রথম দিকের হলদে রঙের গাঢ় দুধ) নিঃসণকে উদ্দীপিত করে। প্রসবের পূর্বে প্রোল্যাবটিন নিঃসরণের প্রতিবন্ধক হরমোনের প্রভাব স্তন্য তৈরি হয় না। সন্তান প্রসবের পর এই প্রতিবন্ধকতা থাকে না এবং এর সাথে অগ্র পিটুইটারি থেকে স্তন্য সৃষ্টিকারী হরমোন প্রোল্যাকটিন নিঃসরণের ফলে স্তন্য সৃষ্টি হয়।

প্রোল্যাকটিন নিঃসরণ প্রক্রিয়া

শিশু স্তনে দিয়ে চষলে প্রোল্যাকটিন নিঃসরণে উদ্দীপিত হয় এবং পশ্চাৎ পিটুইটারি (পোস্টেরিয়ার পিটুইটারি) থেকে অক্সিটোসিন নিঃসারিত হয়। এই অক্সিটোসিন স্তনের মায়োএপিথেলিয়াল কোষসমূহকে সংকুচিত করে এবং প্রান্তিক নালিতে স্তন্য বের হয়।

সন্তান প্রসবের পর স্তনের অ্যালভিওলাইতে স্তন্য নিঃসরণের প্রধান হরমোন প্রোল্যাকটিন। এই হরমোন প্লাসেন্টা প্রসবের পর প্লাসেন্টাল ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন, ল্যাকটোজেন যখন প্রত্যাহৃত হ য়, তখন প্রোল্যাকটিন স্তনের অ্যালভিওলার কোষসমূহে ক্রিয়া করে এবং বিন্দু বিন্দু স্তন্য তৈরি করে। অবশ্য কর্টিসল, ইনসুলিন, থাইরয়েডগ্রন্থিও স্তন্য তৈরিতে সাহায্য করে।

স্তন্য তৈরি রক্ষা করা

শুধু স্তন্য সৃষ্টি কথা নয়, স্তন্য তৈরির ধারাবাহিকতাকে বজায় রাখা প্রোল্যাকটিনের কাজ। শিশু যখন স্তনের বোঁটা মুখে নিয়ে চুষতে থাকে, তখন স্নায়ু-অন্তঃপ্রতিবর্তী ক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এর ফলে সংবেদজ স্নায়ুর (সেনসারি নার্ভ)  শেষ প্রান্ত, যা স্তনের বোঁটার ও অ্যারিওলা থেকে সৃষ্ট, এই উদ্দীপনা সুষুম্নাকান্ডের চতুর্থথেকে ষষ্ঠ পশ্চাৎ থোরাসিক স্নায়ুমূলে প্রবাহিত হয়। সেখান থেকে হাইপোথ্যালামাস-এর মিডিয়ান এমিনেন্সে যায়। এর ফলে ডোপামিন নিঃসরণ হ্রাস পায় এবং ফলস্বরূপ প্রোল্যাকটিনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। প্রোল্যাকটিন স্তনকে সক্রিয় করে ও রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি করে।

গর্ভাবস্থায় প্রোল্যাকটিনের যে মাত্রা থাকে, তা সন্তান প্রসবের তিন সপ্তাহের পর হ্রাস পেয়ে স্বাভাবিক মাত্রায় আসে। সন্তান স্তন চুষলে আধ ঘন্টার মধ্যে প্রোল্যাকটিনের উপস্থিতি ত্বরান্বিত হয়ে সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছয়। যত শীঘ্র শিশুকে স্ত্যপান করানো যায়, তত তাড়াতাড়ি এই প্রতিবর্ত স্নায়বিক ক্রিয়ার বিন্যাস হয়। স্তন্যপানের সময়কাল যত বেশি হয়, স্তন চোষার ফলে সৃষ্টি হওয়া প্রোল্যাকটিনের মাত্রা কমতে থাকে। তাছাড়া মানসিক চাপ,ঘুম, স্তন্যপান না করানোর প্রবণতা ও মানসিকতা, ধূমপান প্রভৃতি প্রোল্যাকটিন তৈরির প্রতিবর্তী ক্রিয়াকে মন্দীভূত করে।

গ্যালাকটোকাইনেসিস বা স্তনগ্রন্থি থেকে স্তন্য নিঃসরণ হওয়া

স্তনগ্রন্থি থেকে স্তন্য নিঃসারিত হওয়ার পর শিশু স্তুন চুষলে সংবেদজ উদ্দীপকের নিউরো-এন্ডোক্রিনের প্রতিবর্তী ক্রিয়া সৃষ্টি হয়ে হাইপোথ্যালামাসের প্যারাভেন্ট্রিকুলার নিউক্লিয়াসে পৌঁছয়। এর ফলে পশ্চাৎ পিটুইটারি থেকে অক্সিটোসিন নিঃসৃত হওয়ায় অ্যালভিওলাইয়ের চারদিতে থাকা মায়েএপিথেলিয়াল কোষসমূহ সংকুচিত হয়ে অ্যালভিওলাই থেকে স্তন্য নির্গত হয়ে ল্যাকটিফেরাস সাইনাস আসে এবং সেখান থেকে শিশু স্তন চুষলে বা চাপ দিলে স্তন্য বের হয়। উল্লেখযোগ্য যে স্তন থেকে নিঃসারিত হলে পুনরায় স্তন্য সৃষ্টিতে সাহায্য করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, অবসন্নতা প্রভৃতি অক্সিটোসিনের নিঃসরণ কমায়। সন্তান প্রসবের পর ক্রমে ক্রমে স্তন্যের পরিমাণ বৃদ্ধি হতে থাকে। প্রসবের প্রথম দিন ও দ্বিতীয়দিন কোলোস্ট্রাম যথাক্রমে চল্লিশ একশো আশি কুড়ি মিলিলিটার, তৃতীয়দিন একশো আশি মিলিলিটার, চতুর্থদিন দু’শো চল্লিশ মিলিলিটার নিঃসারিত হয়। দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষে পাঁচশো মিলিলিটার স্তন্য নিঃসারিত হয়ে থাকে। সন্তান প্রসবের তিন-চারদিন পরই কোলোস্ট্রাম স্তন্যে রূপান্তরিত হয়।

কোলোস্ট্রোম ও মাতৃস্তন্যের উপাদান

কোলোস্ট্রাম:

প্রোটিন (%) ২.২৫

ফ্যাট (%) ৩.১৫

কার্বোহাইড্রেট (%) ৪.০০

ক্যালসিয়াম (%) ০.০০।

মাতৃস্তন্য:

প্রোটিন (%) ১.২৫

ফ্যাট (%) ৩.৫

কার্বোহাইড্রেট (%) ৭.২৫

ক্যালসিয়াম (%) ৩৩মিগ্রা।

স্তন্যে সমস্তরকম ইমিউনোগ্লোবিন থাকলেও বিশেষত ইমিউনোগ্লোবিন-এ (আই.জি.এ) বেশি পরিমাণে থাকে। শিশু গর্ভাবস্থায় মায়ের থেকে ইমিউনোগ্লোবিন-ই. কোলাই, রোটা ভাইরাস, পোলিও ভাইরাস এবং অন্যান্য জীবাণুর অ্যান্টিবডি বহন করে। তাছাড়া ল্যাকটোফেরিন ই.কোলাইয়ের বৃদ্ধি প্রতিহত করে এবং মায়ের স্তন্যে ল্যাকটোফেরিনের উপস্থিতি দশ থেকে কুড়িগুণ বেশি। স্তন্যে উপস্থিত উৎসেচক বা এনজাইম শিশুর হজমে সাহায্য করে। প্রতি ২৫ মিলিলিটার মাতৃদুগ্ধে ভিটামিন-এ ৮০ আই.ইউ (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিক) এবং ভিটামিন-ডি ০.১২৫ এবং ভিটামিন-সি ১.২৫ মিলিগ্রাম থাকে।

প্রতি ১০০ মিলিলিটার স্তন্যে এনার্জি ৭০ কিলো ক্যালরি, প্রোটিন ১.৩ গ্রাম, শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট ৭ গ্রাম, ফ্যাট বা চর্বি ৪.২ গ্রাম, সোডিয়াম ০.৬৫ মিলিমোল, ক্যালসিয়াম ০.৮৮ মিলিমোল, ফসফরাস ০.৪৮ মিলিমোল, লোহা বা আয়রন ১.৩৬ মিউমোল।

স্তন্যপানের উপকারিতা

  • মাতৃস্তন্য শিশুর জন্য প্রকৃতির দান।
  • মাতৃস্তন্যর জন্য কোনো মূ্ল্য লাগে না। তাই গরিব শিশুদের পক্ষে উপকারি।
  • সহজপাচ্য।
  • স্তন্য সর্বদা শিশুর পক্ষে উপযুক্ত তথা সঠিক তাপমাত্রায় পাওয়া যায়।
  • স্তন্য সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত হওয়ায় শিশুদের পক্ষে নিরাপদ।
  • এর গঠন এমনই যে শিশুদের পুষ্টি, রোগ প্রতিরোধক প্রভৃতি হিসেবে আদর্শ ও উৎকৃষ্ট।
  • যে সমস্ত শিশুরা নিয়মিতস্তন্যপান করে, তাদের স্থৌল্যরাগ ও শ্বসনতন্ত্রের জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনাও অন্ত্রের রোগের প্রকোপ তুলনামূলক কম হয়।
  • রক্তে কম ফসফরাস থাকার জন্য হাইপোক্যালসেমিক আক্ষেপ বা কনভালশান কম হয়।
  • মাতৃস্তন্যে কোনো শিশুরই প্রায় অ্যালার্জি হয় না।
  • মাতৃস্তন্য পানের ফলে মা ও সন্তানের মধ্যে বন্ধন সুদৃঢ় হয়।
  • সন্তান প্রসবের পর গর্ভাবস্থায় সংকোচন খুব ভালোভাবে হয়।
  • স্তন্যপানকালীন বিশেষত  প্রথম তিনমাস গর্ভধারণের সম্ভাবনা প্রায় থাকেই না।

তাই সমস্ত মায়েদেরই তাদের সন্তানদের স্তন্যপান করানো একান্তই উচিত। কারণ চার থেকে ছ’মাস পর্যন্ত মাতৃস্তন্য পান করানো অন্যান্য প্রাণীদের দুগ্ধ ও বাজারজাত বিভিন্ন ব্যান্ডের দুগ্ধের তুলনায় শ্রেষ্ঠ। তাই বলা হয় ‘ব্রেস্ট ফিডিং ইজ বেস্ট ফর মাদার অ্যান্ড বেবি’। অর্থাৎ স্তন্যপান মা ও শিশু উভয়েরই পক্ষে শ্রেষ্ঠ। কিন্তু সন্তান প্রসবের পর অনেক মায়েদের স্তন্যের পরিমাণ কম হওয়ায় বিভিন্ন সমস্যায়সম্মুখীন হয়ে থাকেন। তাই আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় যে সমস্ত ভেষজ স্তন্যের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে সেগুলোর মধ্যে সহজপ্রাপ্য কয়েকটি ভেষজের ব্যবহার পদ্ধতি উল্লেখ করা হল।

প্রথমত চরম সংহিতায় স্তন্য সৃষ্টিকারী ‍হিসেবে বেণারমূল, শালিধান্য, যষ্টিধান্য, আখঘ, উলুর মূল, কুশ, কাশ হোগলা প্রভৃতির মূল উল্লেখ আছে। আবার স্তন্যশোধক হিসেবে আকনাদি, শুঁঠ, দেবদারু, মুথা, গুলঞ্চ, ইন্দ্রযব (কুড়চির বীজ), চিরতা, কটকী, অনন্তমূল এই দশটি ভেষজের উল্লেখ চরক সংহিতায় পাওয়া যায়।

এছাড়া---

  • কলমী শাক : এর রস তিন-চার চা-চামচ ঘিয়ের দ্বারা সাঁতলে দিনে দু’বার খেলে উপকার হবে।
  • শতমূলীর রস দু’-তিন চামচ, দুধ একশো কুড়ি মিলিলিটার আর চিনি এক চা-চামচ (ডায়াবেটিস মেলাইটাস থাকলে চিনি বাদ) সকালে ও বিকেলে চার-পাঁচদিন খেলেই উপকার পাবেন। এভাবে নিয়মিত খেয়ে যেতে হবে।
  • ভূঁই কুমড়ো (ক্ষীর বিদারী) : সন্তান প্রসবের দু’তিন দিন পর থেকে এর গুঁড়ো এক-দু’ চা-চামচ আধকাপ ঈষদুষ্ণ দুধসহ দিনে দু’বার কয়েকদিন খেলেই উপকার বোঝা যাবে।
  • কালো জিরে : সামান্য ভেজে নিয়ে চূর্ণ করে দুধ মিশিয়ে সকালে ও বিকেলে খেতে হবে। দেশি ধানের ঢেঁকিতে ছাঁটা চালের ভাতের ফ্যানে কালো জিরাচূর্ণ পাঁচশো মিলিগ্রাম মাত্রায় ছড়িয়ে খেলে উপকার হয়ে থাকে।
  • মৌরী : পাঁচ গ্রাম থেঁতো করে, দু-কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে দিনে দু’তিনবার খেলে স্তন্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
  • চালতা : প্রসূতির অম্বল ও অজীর্ণ রোগ না থাকলে পাকা চালতার (মিষ্টি চালতা হলে ভালো হয়) রস দু’-তিন চা-চামচ সামাস্য ড়রম করে সকাল ও বিকেল খেলে উপকার হয়।

এছাড়া শালুকের কন্দ (মূল) গুলফা, কেশুর, অনন্তমূল, ছাতিমছাল, তেলাকুচো ফলের রস প্রভৃতি স্তন্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

সাথে বিভিন্ন ভেষজ সম্বলিত আয়ুর্বেদ ওষুধ বাজারে পাওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ব্যবহার করবেন।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন