কোমরে ব্যথার সাতকাহন
ডাঃ রাজীব হালদার
2019-02-01 12:58:24
কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ হল ডিস্কের সমস্যা। মেরুদন্ডের দু’টো কমেরুকার মধ্যে যে ডিস্ক থাকে সেটা কোনো কারণে সরে গিয়ে স্নায়ুকে আঘাত করে ব্যথার সৃষ্টি করে।
কোমরের ব্যথা শুধুমাত্র কোমরেই সীমাবদ্ধ না থেকে কোমর থেকে পা পর্যন্ত নেমে আসে। ব্যথার সাথে অবশ ভাব এবং পা দিয়ে ঝিন ঝিন করা একটা অনুভূতি নামা-ওঠা করে। অনেক সময় যন্ত্রণা হয়। হাঁটাচলার ক্ষেত্রে অসুবিধে সৃষ্টি হয়। এ সব কিছু হয় আসলে নার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টির ফলে। দীর্ঘস্থায়ী কোমর ব্যথা তাকে বলা হবে, যে ব্যথা তিন থেকে ছ’মাস পর্যন্ত থাকে।
ব্যথা কী কী কারণে হতে পারে
- ক্রমাগত ঝুঁকে-বসে কাজ করা। বিশেষ করে অফিসের টেবিল-চেয়ারে বসে একটানা কাজ করা।
- শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে ঘন্টার পর ঘন্টা কম্পিউটার কাজ করলে কোমরে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা হতে পারে।
- স্লিপড ডিস্ক ও কোমরের লিগামেন্টে টান ধরেও কোমরে ব্যথা হতে পারে।
- কোমরের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে গেলে মেরুদন্ডের শক্তি কমে যায়, যার ফলেও ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে।
- কোনো প্রদাহজনিত রোগ বিশেষ করে টিউবারকুলোসিস, স্পন্ডিলোসিস, রিউম্যাটরয়েড স্পন্ডেলাইসিস থেকে কোমরে ব্যথা হতে পারে।
- পড়ে গিয়ে চোট পেলে এবং পরবর্তীকালে বসার পশ্চার সঠিক না হলে কোমরে ব্যথা শুরু হতে পারে।
- ভারী জিনিস তুলবার কারণেও অনেক সময় কোমরে ব্যথা হতে পারে।
কোমরে ব্যথাকে আধুনিক মহামারি বলা চলে। শতকরা ৮০% মানুষ এতে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ৭৮%, মহিলা ৮৯%।
স্পান্ডিলাইটিস থেকে কি কোমরে
ব্যথা হতে পারে
হ্যাঁ, ব্যথা হবে। এবং অসহ্য ব্যথার ফলে চলাফেরা, কাজকর্মে অসুবিধে দেখা দেবে। সামনে ঝুঁকি অথবা ভারী কাজ করলে কোমরের ব্যথা বাড়তে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে কোমরের ব্যথা পা পর্যন্ত নেমে আসে। এমনকী কোমরে বিকৃতি আসা এবং টেবিল-চেয়ারে বসে কাজ করতে অসুবিধে হতে পারে।
অস্টিওপোরেসিসে কি কোমরে
ব্যথা হয়
অস্থিক্ষয়ের জন্য কোমরে ব্যথা হতে পারে। কারণ অস্থিক্ষয় হতে থাকলে তার জোর কমে যায় এবং কোমরে চাপ পড়ে তার ফলে কোমরে ব্যথা শুরু হয়। গাড়ি বিশেষ করে রিক্সা, সাইকেল, মোটর সাইকেল ইত্যাদি কোনো খানাখন্দে বা গর্তে পড়লে কোমরে চাপ পড়ে এবং ব্যথা শুরু হয়।
কোমরে ব্যথার নানান কারণের মধ্যে আরো একটি কারণকে গুরুত্ব দিতে হবে। সেটা হল ওভার ওয়েট। শরীরের অত্যধিক ওজনের কারণে কোমরে চাপ পড়ে ব্যথা আসতে পারে। লিগামেন্ট এবং মাসলস-এর অত্যধিক ব্যবহার, ক্র্যাম্প ধরা, নার্ভ রুটে ইরিটেশন ইত্যাদি সব কিছুর জন্য কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে।
হঠাৎ করে যদি কোমরে ব্যথা শুরু হয় কী করা দরকার
ভারী কোনো কাজ না করাই ভালো। নীচু হয়ে কোনো জিনিস তোলা কিংবা মাটিতে ধপ করে বসে পড়ার দরকার নেই।
কিন্তু যদি কোমর ব্যথার সাথে সাথে পা শিরশির করা, পা অবশ হয়ে দুর্বল হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব ও মলত্যাগে সমস্যা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কোমরে ব্যথা শুরু হলে একটা এক্স-রে করিয়ে নিন। যদি দেখা যায় বিশেষ কোনো সমস্যা নেই তাহলে ব্যথার ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু যদি ব্যথা না কমে তাহলে চিকিৎসকের নির্দেশ মতো এম.আর.আই করতে হতে পারে।
শিরদাঁড়াকে সুস্থ রাখতে কতকগুলো জিনিসি মেনে চলতে হবে। কারণ শিরদাঁড়া ঠিক না থাকলে কোমরের ব্যথা শুরু হতে পারে।
- জেনেটিক্স।
- মাসল স্ট্রেংথ এবং ব্যালেন্স ঠিক রাখতে হবে।
- নমনীয়তা বা ফ্লেক্সিব্লিটিবজায় রাখতে হবে।
- পশ্চার ঠিক রাখতে হবে।
- বডিওয়েট বা শরীরের ওজন কমাতে হবে।
- স্ট্রেস কমিয়ে ফেলতে হবে।
চিকিৎসা
- বেড রেস্ট।
- ট্রাকশন।
- বেল্ট।
- ফিজিওথেরাপি।
কোমরে ব্যথা শুরু হলে বিশ্রামে প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে ব্যথা কমাবার ওষুধ দিয়ে রোগীকে শুয়ে থাকতে বলা হয়। হাঁটাচলা বন্ধ করতেও বলা হয়। গরম সেঁক চলতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো কোমরে ট্রাকশন নিতে হবে, সহ্যমতো ওজন সহযোগে। বেল্ট বাঁধতে হবে দরকার মনে হলে।
আর একটি প্রয়োজনীয় কথা, নরম বিছানায় না শোওয়াই ভালো। ম্যাট্রেসের ওপর তোষক পেতে শুতে হবে।
কোমরে ব্যথার জন্যে ফিজিওথেরাপির সাহায্য নিতে হবে। এক্স-রে করে দেখে ঠিক কী ধরনের ফিজিওথেরাপি করা হবে সেটা ঠিক করা হয়। দেখা হয় ইলেকট্রোথেরাপি, আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, আই.এফ.টি., এস.ডব্লিই.ডি, ফ্লেক্সশন নাকি এক্সটেনশন ব্যায়াম, কোনটি বেশি কার্যকরী হবে।
ব্যথা যাতে না হয় তার জন্য কী করা উচিত
কোমরের এক্সারসাইজ। ঠিকমতো পশ্চার অভ্যাস করা। সামনে ঝুঁকে কাজ করা কিংবা ভারী জিনিস তুলতে না যাওয়া। বেশি সিঁড়ি না ভাঙা। ঝুঁকে-বসে লেখা বা কম্পিউটারে কাজ খুব বেশি না করাই উচিত। পিঠের এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম করা দরকার, নিয়মিত শারীরি ব্যায়াম এবং নিয়ম করে হাঁটা দরকার। জীবনশৈলীর পরিবর্তনও দরকার। নিকোটিন বা ধূমপানকে প্রশ্রয় দেবেন না।
শেষে একটা কথা বলা দরকার দীর্ঘদিন কোমরে ব্যথা অথচ এক্স-রে’তে কোনো সমস্যা নেই। এইসব ক্ষেত্রে কোমরে ব্যথার কারণ হিসেবে দেখা গেছে কোষ্ঠকাঠিন্য। সেইজন্য বেশি পরিমাণে শাকসবজি, ফলমুল গ্রহণ করা উচিত। রাতে ইসবগুলোর ভূষিও গ্রহণ করা যেত পারে। অর্থাৎ পেট যাতে পরিষ্কার থাকে সেটাও দেখা উচিত।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন