আকুপাংচার কোমর ব্যথায় সম্পূর্ণ নিরাময়
ডাঃ সন্দীপ সেন গুপ্ত
2019-02-01 14:05:38
জীবনের কোনো না কোনো সময় প্রত্যেকেই কোমরের ব্যথায় ভুগে থাকেন। এবং এর ফলে দৈনন্দিন কাজকর্ম যেমন ব্যাহত হয়, তেমনই শারীরিক ও মানসিক ও ক্লেশও বেড়ে যায় অনেকগুণ।
মেরুদন্ডের নীচের দিকের অংশের ভার্টিব্রাগুলি—মূলত লাম্বার এবং সাক্রাল ভার্টিব্রা দ্বারা কোমরের কাঠামো নির্মিত হয়। ভার্টিব্রাগুলি দেখতে চাকতির মতো। এই ভার্টিব্রাগুলির মাঝখানে থাকে ‘ডিস্ক’ নামক বস্তু, যা দুটি ভার্টিব্রার মধ্যে সংঘর্ষ হওয়ার থেকে রক্ষা করে। ভার্টিব্রাগুলি পরস্পর লিগামেন্ট দ্বার যুক্ত থাকে এবং সন্ধি বা জয়েন্ট তৈরি করে। এছাড়া থাকে অনেকগুলি পেশি। এগুলির জন্য কোমরকে বিভিন্নভাবে নাড়ানো, বাঁকানো এবং ঘোরানো সম্ভব হয়।
কোমরের ব্যথার কারণ
কোমরের ব্যথা কোনো রোগ নয়, উপসর্গ মাত্র। যেসব কারণে কোমরে ব্যথা হয় সেগুলি হল—
- লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস।
- কোমরের পেশিতে আঘাত।
- ভুল ভাবে শোওয়া বসার দারুন হওয়া ব্যথা।
- লাম্বার ভার্টিব্রা, ব্লাডার বা প্রস্টেট ক্যানসারের কারণেও হতে পারে ব্যথা।
- এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণেও কোমরে ব্যথা হতে পারে।
- বেশি কিছু ক্ষেত্রে মহিলাদের অনিয়মিত মাসিকের (ডিসমেনোরিয়া) দরুনও কোমরে ব্যথা হতে পারে।
কোমরে ব্যথার লক্ষণ
কোমরে ব্যথার লক্ষণগুলি নির্ভর করে আভ্যন্তরীণ রোগটির ওপর। যেমন স্পন্ডাইলোসিসের ক্ষেত্রে কোমরে চাপা ব্যথা থাকে। অনেক সময় ওই ব্যথা এক বা দু’দিকের পায়ে ছড়িয়ে যায়—যাকে সায়টিকা বলে।
এক্ষেত্রে আক্রান্ত পায়ে দুর্বলতাও দেখা দিতে পারে। কাজ করলে, ওজন বইলে ব্যথা বাড়ে। বিশ্রাম নিলে কমে যায়। আবার কোমরের পেশিতে আঘাত লেগে ব্যথা হলে আক্রান্ত স্থানে চাপ দিলে ব্যথার অনুভূতি হয়। রোগী কোমর ঘোরাতে গেলে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে।
প্রস্টেট বা ব্লাডারের রোগেও (মূলত ক্যানসার) কোমরে ব্যথা হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে কোমরের সমস্যার চেয়েও বেশি প্রকট হয় প্রস্রাবের সমস্যা। প্রস্রাব পরিমাণে কম হয়। কখনও ফোঁটা ফোঁটা ভাবে পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে রক্তমিশ্রিত প্রস্রাব হয়।
একইভাবে মাসিকের সমস্যা বা কোষ্ঠকাঠিন্যেও নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা যায়।
রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা
কী কারণে কোমরে ব্যথা হচ্ছে তা নির্ণয় করতে এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এম.আর.আই স্ক্যান প্রভৃতিই মূলত করা হয়। এর দ্বার কোমরের ভার্টিব্রাগুলির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না এবং হলে কতটা তা নির্ণয় করা যায়। কিছু ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষাও করা হয়।
কোমরে ব্যথার আকুপাংচার চিকিৎসা
ওপরে উল্লেখ করা সবকটি কারণেই আকুপাংচার চিকিৎসা সম্ভব। কিন্তু এটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে প্রস্টেট ও ব্লাডারের ক্যানসার বা ডিসমেনোরিয়ার ক্ষেত্রে আকুপাংচারের ভূমিকা শুধু ব্যথা কমানোতেই সীমাবদ্ধ।
এবার দেখা যাক আকুপাংচারে কীভাবে চিকিৎসা করা হয়। প্রথমে চুলের মতো ৫-৬ টি সূচ উপযুক্তভাবে পরিশোধিত করে কোমরে ও পায়ে অবস্থিত নির্দিষ্ট কিছু বিন্দুতে ফোটানো হয়। দক্ষ হাতে সূচ ফোটালে কোনো ব্যথাই অনুভূত হয় না। সূচগুলি ১৫-২০ মিনিট ফোটানো অবস্থায় থাকে। এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী ইলেকট্রো স্টিমুলেটর যন্ত্র থেকে মৃদু বৈদ্যুতিক উত্তেজনা বা তরঙ্গ যোগ করা হয়। ব্যথার প্রকৃতি অনুসারে নির্দিষ্ট দু’ একটি বিন্দুতে মক্সা নামক ভেষজের থেকে তৈরি চুরটের সাহায্যে তাপ প্রয়োগ করা হয়। অনেক সময় বাঁশ বা কাঁচের তৈরি বিশেষ কাপের সাহায্যে চাপ প্রয়োগও করা হয়। এছাড়া সেভেন স্টার হ্যামারের সাহায্যে কোমরের আক্রান্ত অংশে মৃদুভাবে আঘাত করা হয়। যা ওই অংশের রক্ত সঞ্চাশন বৃদ্ধি করে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
সতর্কতা
কোমরের ব্যথার ক্ষেত্রে চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু সতর্কতা মেনে চলা দরকার। যেমন—
- নরম বিছানার বদলে শক্ত বিছানায় শোওয়া উচিত।
- শোওয়ার সময় হাঁটুর নীচে বালিশ রাখা যেতে পারে।
- বিছানা থেকে ওঠার সময় কাত হয়ে উঠতে হবে, চিত হয়ে নয়।
- খুব উঁচু চেয়ার, যাতে বসলে পা মাটি স্পর্শ করে না, তা কোমরের ব্যথা বাড়িয়ে দেয়।
- হাই হিল জুতো কোমরের ব্যথার বড় কারণ। এটি পরিত্যাগ করতে হবে।
- ভারী জিনিস তোলার সময় কোমর ঝুঁকিয়ে তোলা উচিত নয়। এক্ষেত্রে হাঁটু ভেঙে জিনিস তুলতে হবে।
আকুপাংচার চিকিৎসার পাশাপাশি এই সব সতর্কতা মেনে চললে কোমরে ব্যথা সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন