×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

প্রসবের পর মায়ের পরিচর্যায় এতটুকু অবহেলা নয় কিন্তু

ডাঃ মল্লিনাথ মুখার্জি (স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, আমরি হাসপাতাল)
2019-02-01 14:17:51

গর্ভাবস্থায় একজন নারীর খাওয়া-দাওয়া, ওষুধপত্র, বিশ্রাম, যত্ন যতটা ভালোভাবে রুটিন মাফিক হয়, সন্তান জন্মের পর কিন্তু সেই রুটিন কিছুটা এলোমেলো হয়ে যায়।

সন্তান জন্মের পর স্বাভাবিকভাবে কিছু দায়িত্ব এসে পড়ে নতুন ‘মা’-এর ওপর। যে সব জিনিসে আগে তিনি অভ্যস্ত ছিলেন না। অর্থাৎ বাচ্চার খাওয়া, ঘুম, স্নানের দিকে নজর দিতে গিয়ে নিজের যত্ন আর রুটিন মাফিক হয় না। আর সদ্য মা হওয়া প্রসূতির সন্তান জন্মের কিছুটা ধকল থাকেই, ফলে বেশির ভাগ মা-ই নিজের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়েন। কিন্তু না, নতুন মায়ের এইসময় আরো বেশি যত্নের প্রয়োজন তার শিশুটিকে সুস্থ রাখার জন্যই। মা ঠিক থাককে শিশুটিও সুন্দরভাবে বেড়ে উঠবে।

প্রসূতি মায়ের জন্য বিশেষ কিছু কথা

প্রসবের পর ছ’সপ্তাহ পর্যন্ত মায়ের স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখা দরকার। এই ছ’সপ্তাহ সময়ের মধ্যে প্রজনন অঙ্গ, স্ফীত জরুয়ু তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এছাড়া প্রসবের সময় মায়ের শরীর থেকে যে রক্ত ও অন্যান্য পদার্থ বেরিয়ে যায় তার জন্যও একটু বেশি যত্নের প্রয়োজন যাতে মা-ও শারীরিকভাবে নিজের শরীরকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে পারেন। এ ছাড়া সন্তান জন্মের সাথে সাথে মায়ের বুকের দুধ খেতে শুরু করে। তাই মায়ের খাবার অন্তত পাঁচশো ক্যালোরি অতিরিক্ত দরকার হয়, রোজকার খাবার মা যাতে সেটা গ্রহণ করেন সেদিকেও নজর দিতে হবে।

বাচ্চা প্রসবের পরে মায়ের শরীরে

কী কী জটিলতা দেখা দিতে পারে

প্রসবের অঙ্গে সংক্রমণ হতে পারে যদি না ঠিকমতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকেন। বাচ্চা হবার তিন সপ্তাহের মধ্যে যদি জ্বর, তলপেটে ব্যথা এবং রক্তস্রাবে কোনো দুর্গন্ধ থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারো কারো শিরা ফুলে গিয়ে পায়ে ব্যথা হতে পারে। খুব বেশি রকম রজঃস্রাব হলেও চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। কোনো কারণে প্লাসেন্টা বা ফুলের অংশ ভেতরে থাকলে অতিরিক্ত রজঃস্রাব হয়। এছাড়া ইউরিনারি ট্র্যাক্টের সংক্রমণ বা স্তনের সংক্রমণও এই সময় হতে পারে। স্বাভাবিক প্রসবের পর কারো কারো শরীরে কাঁপুনির ভাব থাকে ও ক্লান্তিবোধ করে মা।

যে সব ক্ষেত্রে সন্তান প্রসবের পর প্রসবদ্বার ছিঁড়ে যায় যা বা কাটতে হয় প্রসবের সুবিধার জন্য সেক্ষেত্রে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক নিতে হয়, সেলাইয়ের জায়গায় নিয়মিত পরিষ্কার করে মলম লাগাতে হয়।

সিজার হলে মাঝে মাঝে পেটের ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে অ্যান্টিসেপটিক মলম লাগাতে হয়। এই সময় সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করা, ভারি জিনিস তোলা এসব করা উচিত নয়। স্বাভাবিক প্রসব ও ফরসেপ হলে ডেলিভারির দু’তিন দিন পর থেকে হালকা কাজকর্ম করতেই পারেন না মা। তবে সিজার হলে দশদিন পর থেকে হালকা কাজে কোনো অসুবিধা নেই। বাচ্চার কাপড় কাচার জন্য বা তেল মাখিয়ে স্নান করানোর জন্য ঠাকুমা-দিদিমা বা আয়ার সাহায্য নিলে মা একটু রিলিফ পাবেন। প্রসব-পরবর্তী যে সব ওষুধ চিকিৎসক প্রেসক্রাইব করেন সেগুলো ঠিকমতো খাওয়া দরকার। সঙ্গে আয়রন ক্যাপসুল, ভিটামিন-এ, সি। এবং পায়খানা পরিষ্কার যাতে হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। দরকার ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। পেটে স্ট্রেচ মার্কের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কোনো ক্রিম ব্যবহার করা যেতেই পারে। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর কারণে স্তনবৃন্ত সব সময় ভেজা তুলো দিয়ে মুছে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। অজ্ঞতা, ক্লান্তি ও টেনশনের কারণে মায়ের বুকের দুধ কমে যেতে পারে। এই কারণে প্রসূাতির খাওয়া-দাওয়া, মন-মেজাজ সব সময় ঠিক থাকা উচিত। বেশ কিছু আধুনিক মহিলা ফিগার নষ্ট হয়ে যাবার আশষ্কায় বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে অনীহা প্রকাশ করেন। এই ধারণা ভুল। বরং দুধ জমে গিয়ে উল্টো বিপত্তির কারণ হতে পারে। সর্বোপরি মনে রাখা দরকার, বাচ্চাকে স্তনদান স্তন ক্যানসার থেকে দূরে রাখে।

ঘুম

সন্তান জন্মের পরে মেয়েদের প্রধান সমস্যা হয় ঘুমের। এই সময় শরীর দুর্বল ও ক্লান্তিতে ভরা থাকে। তাই শিশুর ঘুমের সাথে সাথে মায়ের ঘুমিয়ে নেওয়া উচিত। অনেক সময় শিশুরা রাতে ঘুমোতে চায় না, রাতেই তাদের নানা বায়নাক্কা, খেলা শুরু হয়ে যায়। তাই দিনেরবেলা মা’কে সময়-সুযোগ পেলে ঘুমোতে দিতে হবে। ঘুম এবং পুষ্টিকর খাবার ও বিশ্রাম প্রসূতিকে দ্রুত স্বাভাবিক সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করে।

অবসাদ

প্রসবের পর অধিকাংশ মায়ের মধ্যে একটা অবসাদ লক্ষ্য করা যায়। খাবারে অনীহা, যৌনমিলনে অনাগ্রহ ফুটে ওঠে। এর প্রধান কারণ হল শরীরে হরমোনের স্বাভাবিক ক্ষরণে তারতম্য। এই সময় একটু বেশি কাছে কাছে থাকা, ভালোবাস যত্নের প্রয়োজন যাতে সে অবসাদ কাটিয়ে উঠতে পারে। এই ব্যাপারে পরিবারের মানুষরা যদি একটু বেশি বন্ধু ভাবাপন্ন হয়ে ওঠেন প্রসূতি মায়ের, তাহলে সহজেই নতুন মা তার অবসাদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন।

ডায়েট

শিশুর জন্মের পর মায়ের ডায়েট সম্বন্ধে সজাগ হতে হবে। স্বাভাবিক অবস্থায় যে পরিমাণ ক্যালোরির প্রয়োজন পড়ে তার থেকে অন্তত পাঁচশো ক্যালোরি বেশি খাবার খাওয়া দরকার।

চাল, মুড়ি, দানা জাতীয় শস্য, গাজর, টম্যাটো খাওয়া জরুরি। সবুজ শাকসবজি এবং ফল খাওয়া দরকার। যারা নিরমিষাশী তাদের খাবারে দই, ছানা, চিজের পরিমাণ বাড়াতে হবে। বেশি করে জল খাওয়ার পাশাপাশি রান্নায় পর্যপ্ত পরিমাণ তেল-ঘি থাকা দরকার।

বেশি ভাজাভুজি খাওয়া চলবে না। বাদ দিতে হবে স্মোকিং ও অ্যালকোহল। রং করা খাবার বা সুগন্ধি খাবার খাওয়া উচিত নয়। একটু কম মশলুযুক্ত খাবার খাওয়াই ভালো।

এই সময় সব সময় শুয়ে-বসে না থেকে হাঁটাচলা, স্বাভাবিক কাজকর্মের মধ্যে থাকা উচিত।

স্তন্যদায়ী মায়ের খাদ্য তালিকা

  • ভাত/মুড়ি/চিড়ে/রুটি/সুজি/নুডুলস/দালিয়া/আটা/ময়দা ৩০০ গ্রাম।
  • ডাল এবং ডালের তৈরি খাবার ৩০০ গ্রাম।
  • শাকসবজি একটা বড় বাটি ভর্তি।
  • আলু ১০০ গ্রাম।
  • ফল ২০০ গ্রাম।
  • মাছ/মাংস ১০০ গ্রাম।
  • দুধ ১ লিটার।
  • তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার ৬ চা-চামচ।
  • মধু এবং চিনি ৩ চামচ।

বাচ্চার জন্মের পর শারীরিক ছোটখাটো অসুবিধে, রজঃস্রাব ও পরিশ্রমের ফলে মানসিক অবসাদ আসে তাই খুব তাড়াতাড়ি একা-একা সব কাজ করতে যাওয়া ঠিক নয়। সর্বদা বাচ্চার চিন্তা করলেও অনেক সময় অবসাদ আসে। তাই সবকিছুই করুন, তার সাথে নিজের বিশ্রামের দিকে নজর দিন।

যে সব মা কর্মরতা তাদের গর্ভাবস্থায় কোনো জটিলতা দেখা না দিলে বাচ্চার জন্মের পর এক বা দেড় মাস ছুটি নিলেই চলে। কিন্তু বাচ্চার জন্মের পর একটু বেশি ছুটির প্রয়োজন। কারণ এই সময় সন্তানকে ব্রেস্ট ফিড করানো জরুরি। অন্তত তিন মাস ছুটি নিলে ভালো হয়। এতে মায়ের সাথে বাচ্চার সম্পর্ক সুন্দরভাবে গড়ে ওঠে আর মায়েরও শরীর ভালো থাকে।

শরীরের যত্ন

স্ট্রেচ মার্ক। গর্ভাবস্থায় ওজন বেড়ে যায়, ঊরু ও পেটের আকার বেড়ে যাওয়ার কারণে ত্বকে টান ধরে। ঘরোয়া টোটকা হিসেবে ডাবের জল ও নারকেল তেল মিশিয়ে ম্যাসাজ করলে দাগ ফিকে হয়ে যায়। এছাড়া আজকাল স্ট্রেচ মার্ক দূর করার জন্য ভালো ক্রিম পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।

মুখের কালো দাগ

প্রসবের পর অনেক সময় মুখে কালো ছোপ পড়ে ক্যালসিয়াম ও আয়রন যুক্ত উপাদান কমে যাওয়ার ফলে। এই কারণে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও আয়রন যুক্ত খাবার খাওয়া দরকার। প্রচুর পরিমাণে স্যুপ খেতে হবে বিশেষ করে গাজরের স্যুপ, মুরগির স্যুপ, টম্যাটো স্যুপ খেতে হবে। দুধের সরের সাথে দুধ মিশিয়ে স্নানের আগে ম্যাসাজ করে নিলে স্কিন পরিষ্কার দেখাবে।

চুল

প্রসবের পর হরমোন ক্ষরণের ফলে চুল পড়ে। তবে এতো চিন্তার কিছু নেই। মাথায় ভালো করে তেল ম্যাসাজ করে কোনো ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। এছাড়া নিমপাতা ফোটানো জলেও মাথা পরিষ্কার করে নেওয়া যায়।

হাত-পা সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। হাতের নখ এই সময় ছোট করে নেওয়া উচিত যাতে বাচ্চার নরম স্কিনে কোনো দাগ না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

ব্যায়াম

সন্তান প্রসবের পর অনেক সময় শরীরের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয়ে যায়, শরীরের নানা স্থানে মেদ জন্মাতে শুরু করে। একটু সচেতন হলেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। সারাদিনের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট সময়ে কোনো যোগবিশেষজ্ঞর পরামর্শ মেনে ব্যায়াম ও যোগাসন করতে পারেন প্রসূতি মা। এতে শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরে গিয়ে শরীরকে তার পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

এইভাবে সমস্ত রকম নিয়মনীতি অনুসরণ করে প্রসূতি মায়ের যত্ন নিতে হবে।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন