নাক বন্ধ অ্যালার্জি নয়তো?
ডাঃ দেবাশীষ মুখার্জি (ই.এন.টি. বিশেষজ্ঞ, বেলভিউ নার্সিংহোম)
2019-02-01 14:27:06
শীতকালে অনেকেরই নাক বন্ধের সমস্যা দেখা যায়। নাক বন্ধ থাকলেও যে কত কষ্ট হয় তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন।
নাক বন্ধের অনেক কারণ আছে তবে শীতকালে যে কারণে নাক বন্ধ হয় তার প্রধান কারণ নাকের অ্যালার্জি। এক্ষেত্রে দেখা যায় রোগীর একসঙ্গে অনেকগুলো করে হাঁচি হয়, নাক ও চোখ দিয়ে জল পড়ে, সর্বোপরি নাক বন্ধ হয়ে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাথায় যন্ত্রণাও হয়, দৈনন্দিন কাজকর্মে যথেষ্ট ব্যাঘাত ঘটে।
অ্যালার্জি কেন হয়
কিছু কিছু মানুষের মধ্যে বংশগত কারণ দেখা যায় পরিবেশের মধ্যে অবস্থিত কিছু জিনিস এবং খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের কারণে। শরীরে তা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে এমন প্রতিক্রিয়া নাকে, গলায় দীর্ঘদিন থাকলে ফুসফুসও আক্রান্ত হতে পারে।
নাক বন্ধের স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে যে কোনো বয়সেই হতে পারে।
এই ধরনের রোগীদের প্রাথমিক পরীক্ষার পরও কতকগুলো বিশেষ পরীক্ষা করা হয়। যেমন সাইনাসের এক্স-রে, রক্তে ইয়োসিনোফিলের আধিক্য আছে কি না, থাইরয়েডের দোষ আছে কি না এবং রক্তে আই.জি.ই-র পরীক্ষাও করে দেখা হয়।
নাক বন্ধ হয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা অর্থাৎ মেডিসিন এবং নেজাল ড্রপে না কমলে সত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। কী থেকে অ্যালার্জি হচ্ছে তা রক্ত পরীক্ষার দ্বারা বোঝা যায়। আগে অনেকবার সুঁচ ফোটাতে হত, এখন আর তার দরকার হয় না।
যে সমস্ত জিনিসে সাধারণভাবে নাকের অ্যালার্জি হয় সেগুলো হল বিছানার ধুলো, রাস্তার ধুলো, সিমেন্ট-বালির কণা, উনুনের ধোঁয়া, সিগারেটের ধোঁয়া, বিভিন্ন ফুলের পরাগ, নানা প্রকার ঘাস, বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক (যে গুলো স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় তৈরি হয়) এবং ড্যাম্প ধরা বাড়িতেই দেখা যায়। তাছাড়া বিভিন্ন গৃহপালিত পশুর লোম থেকেও অ্যালার্জি হয়।
ওষুধপত্র দিয়ে অ্যালার্জির যে চিকিৎসা আছে তা রোগটিকে প্রশমিত করতে পারে, সারাতে পারে না। এক্ষেত্রে কী থেকে অ্যালার্জি তা নির্ণয় করে যতটা সম্ভব সেই সকল দ্রব্য ও খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।
আজকাল বিভিন্ন প্রতিষেধক টিকার ব্যবস্থা হয়েচে। তবেএকটা জিনিস মনে রাখা দরকারম পরীক্ষিত দ্রব্যের বাইরেও এমন অনেক জিনিস থাকে যাতে ব্যক্তিবিশেষের অ্যালার্জি হতে পারে। সুতরাং অ্যালার্জি রোগীর অবশ্যই কর্তব্য প্রাথমিক পর্যায়ে নাকের অ্যালার্জি চিকিৎসা করা। যাতে সংক্রমণ কোনোভাবেই ফুসফুসে না যেতে পারে। ফুসফুসে গেলে তা কিন্তু অ্যাজমার পরিণত হবে।
পরীক্ষা-নিরীকক্ষার পর যে যে দ্রব্য বা জিনিসে অ্যালার্জি হয় সেগুলো যতটা সম্ভব পরিহার করে চলতে হবে। রাস্তার ধুলোবালির কারণে যাদের অ্যালার্জি হয়, তারা নাকে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
বাড়িতে কুকুর-বেড়াল না পোষাই ভালো। যাদের পুরনো বাড়ি তাদের ড্যাম্প ধরা দেওয়াল বা ছাদ সারিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে টিকাও নিতে হবে। নাকের অ্যালার্জি ছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণে নাক বন্ধ হতে পারে। যেমন নাকের মাঝখানে যে দেওয়াল আছে তা বাঁকা থাকতে পারে, নাকের মধ্যে পলিপ থাকতে পারে, নাকের টার্বিনেট বলে একটি অংশ বড় হয়ে যেতে পারে বা নাকে কোনো টিউমার থাকতে পারে। তাই নাক মাঝে মধ্যে বন্ধ হলে একবার ডাক্তার দেখিয়ে নিন। রোগটা ধরা পড়লে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা হবে। মুক্তি পাবেন সমস্যা থেকে।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন