×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

বাঙালিরা কি এখন গণ-হিস্টিরিয়ার শিকার

ডাঃ অমরনাথ মল্লিক
2019-02-01 14:32:00

আমরা, পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশে মানুষ কি ক্রমেই গণ-হিস্টিরিয়াতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছি? মাঝে মাঝে চারপাশের ঘটনাপ্রবাহ দেখে সে কথাই মনে আসছে।

রাস্তায় একদল লোক একজনকে গালিগালাজ ও মারধোর করছে। আপনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন-কিছু জানা-বোঝার আগেই লোকটিকে মেরে দিলেন। একবারও ভাবলেন না কেন মানুষটিকে লাঞ্ছনা করলেন! ও কি দোষী না নির্দোষ?

ভেবে দেখুন এই ‘গণ-হিস্টিরিয়াতে’ কি নৃশংসতা পর্যায়ে আমাদের নিয়ে গেছে। হোস্টেলে মোবাইল, ল্যাপটপ চুরি হচ্ছে। কে চোর জানা-বোঝা যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষেরও কোনো হেলদোল নেই, উদ্বাসীন! অথচ একটি অপকৃতিস্থ মানুষকে শুধুমাত্র সন্দেহ করে দু’একজন হয় তো জিঞ্জাসাবাদ বা মারধোর করছে, তার দেখে অনেকে মিলে গণপিটুনি শুরু করে দিল। মানুষটিকে বেঁধে রেখে চলল অমানবিক অত্যাচার ও প্রহার। পরিণতি মৃত্যু! হাড় হিম করে দেওয়া এই ধরনের নৃশংস অত্যাচার করার মানসিকতা কি হতাশা, আক্রোশ, কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বা স্যাডিজমের প্রকাশ? হয়তো দু’চারজন রাগের বশে মারধোর শুরু করেছে—কিন্তু বাকিরা বাধা না দিয়ে, সুস্থ চিন্তাভাবনা দিয়ে এই অপরাধকে নিয়ন্ত্রণ না করে আবেগ ও অনিয়ন্ত্রিত উত্তেজনার শিকার হয়ে অত্যাচার শুরু করে দিল! রাস্তায় মিছিল যাচ্ছে, কেন মিছিল, কার মিছিল, কী বক্তব্য কিছু না জেনেই অনেকে মিছিলে হাঁটতে শুরু করে দেয়! কীসের প্রতিবিাদ, কেন প্রতিবাদ কিছুই জানে না!

মানুষ নিজেকে অন্যান্য জীবজন্তুর থেকে বেশি বুদ্ধিমান বলে মনে করে। মানুষেরেই ভালো-মন্দ বোধ ও বিচার করার ক্ষমতা বেশি। ন্যায়-অন্যায় বোধ, বিবেক সব কিছুই তাকে জীবজগতে শ্রেষ্ঠত্ব তিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি মানুষই এমন অনেক কিছু করে থাকে যা দেখে হয়তো জীবজন্তুরাও লজ্জা পাবে। দু’চারজন হয়তো অন্যায় বা অপরাধ করছে, তা দেখে নিজের বিচার-বুদ্ধি বা বিবেচনা প্রয়োগ না করে অনেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। কেন করছে, কী যুক্তি, কোনো কিছুই বিবেচনা করে না। আসলে আমাদের অনেকেই হতাশা, হীনস্মন্যতা ও উৎকন্ঠায় ভুগে থাকে। আর তা কমানোর কোনো চেষ্টা নেই বা অল্প থাকার জন্যে চিকিৎসা হয় না। আমরা বুঝতেই পারি না। এই অনিয়ন্ত্রিত আবেগ, উৎকণ্ঠ, হতাশা, হীনস্মন্যতা বা আক্রোশ অনেক সময় গণ-হিস্টিরিয়ার মতো মানসিক অবস্থায় পরিণত হয় ও আমরা নিজের অজান্তেই ‘গণ-হিস্টিরিয়া’র শিকার হই।

ভয় ও অসত্য রটনার মধ্যে দিয়েই সাধারণত গণ-হিস্টিরিয়ার প্রকাশ দেখা যায়। ১৫১৮ সালে রোমান অধীকৃত ষ্ট্রাসবুর্গ শহরে এক মাস ধরে দলে দলে মানুষ উদ্দাম নৃত্য শুরু করেছিল। ১৯৬২ সালে তানজানিয়ার এক মেয়েদের বোডিং স্কুলে প্রায় শতাধিক ছাত্রী একনাগাড়ে হাসতে শুরু করে। তারা প্রায় সারাদিন হাসতে থাকে। এইরকম ‘কালেকটিভ’ বা ‘মাস’ হিস্টিরিয়ার ঘটনা ১৯৮৩ সালে ইজরায়েলের ওয়েস্টব্যাষ্কে একদল স্কুলের মেয়েদের মধ্যেও দেখা গিয়েছিল। এরপর তারা জনে জনে অজ্ঞান হয়ে যেতে থাকে। অনেক পালেস্তেনীয় মেয়েদের একসঙ্গে জ্ঞান হারানোর এই ঘটনার আপাতদৃষ্টিতে কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এই ঘটনাগুলো ‘সম্মিলিত হিস্টিরিয়া’ বা ‘গণ-হিস্টিরিয়া’ বলে মনে করা হয়।

গণ-হিস্টিরিয়ার ঘটনা একজন থেকে অন্যজনকে প্রভাবিত করে থাকে। সাধারণত সমবয়ষ্ক বা সমভাবাপন্ন মানুষদের মধ্যে গণ-হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত হবার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। সংস্কার, কুসংস্কার, অশিক্ষিত প্রভৃতি গণ-হিস্টিরিয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।

গণ-হিস্টিরিয়া ক্ষেত্রে একদল মানুষের মধ্যে ভুল ধারণার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এদের মানসিক দৃঢ়তা ও সংকল্প কম হয়। সহজেই অন্যের দ্বারা বশীভূত বা প্রভাবিত হয়ে থাকে। বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আবেগ ও প্রক্ষোভ (ইমোশন) তাদের ভুল পথে পরিচালিত করে।

গণ-হিস্টিরিয়া কি প্রতিরোধ করা যায়

গণ-হিস্টিরিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেভাবে মানুষকে সচেতন ও শিক্ষিত করে শিশুমৃত্যুর হার কমানো গেছে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য যেমন উপযুক্ত পরিচর্যা ও গর্ভাকালীন পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয় তেমনি উপযুক্ত শিক্ষার প্রসার ও প্রচারের মাধ্যমে গণ-হিস্টিরিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কুসংস্কার ও ভুল ভাবনা, ধারণার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। স্কুলে সমাজশিক্ষা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক বাইতে মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশ, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কথা লিখতে হবে। কৈশোর বয়স থেকেই যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা গণ-হিস্টিরিয়ার প্রকোপ সম্বন্ধে সচেতন হতে পারে। বাবা-মা, অভিভাবক ও সমাজসচেতন মানুষ প্রত্যেকেরেই কিছু না কিছু দায়িত্ব থাকে। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে গণ-হিস্টিরিয়ার মতো সামাজিক ব্যাধিকে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন