×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

ফ্যাট জাতীয় খাবার নিয়ে কেন ফাটাফাটি

অনন্যা মন্ডল (ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট)
2019-02-01 15:24:07

ফ্যাট বা স্নেহপদার্থ নিয়ে অযথা আতষ্কিত হয়ে ‘স্নেহ-হীন’ হওয়ার কোনো অর্থ হয় না। এই খাদ্য উপাদানটিকে প্রায়শই বিনা বিচারে ফাসিকাঠে ঝোলাবার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এই অতিসতেচনতা ও ফ্যাট-আতষ্ক কিন্তু একদমই ভিত্তিহীন। মনে রাখবেন ফ্যাট মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট নয়—এটি একটি ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট। এবং সর্ম্পর্ণভাবে কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন এই দুই অতি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদানের সমগোত্রীয়। শরীর গঠন ও নানাবিধ  শারীরবৃত্তীয় কাজে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে হ্যাঁ, ফ্যাট জাতীয় খাদ্য গ্রহণের সময় একটা বিষয় মাথায় রাখবেন যাতে ফ্যাট গ্রহণ লাগামছাড়া না হয়। সত্যি কথা বলতে গেলে, ফ্যাট সংক্রান্ত সমস্যার জন্য এটাই একমাত্র দায়ী নয়, দায়ী আমাদের অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্যাট গ্রহণ এবং বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের মধ্যে সামঞ্জস্য না রাখা। অতএব ফ্যাট গ্রহণে অতিরিক্ত রাশ টানাও যেমন ঠিক নয়—আবার বল্গাহীন হওয়াও কাম্য নয়—সঠিক পরিমাণে স্বাস্থ্যপোযোগী স্নেহজাতীয় খাদ্যতে অবশ্যই সস্নেহ বরণ করুন।

শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি সুরক্ষিত রাখতে ফ্যাটের ভূমিকা সুবিদিত। ফ্যাট তাপের কুপরিবাহী-তাই মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র, লিভার ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গগুলি ফ্যাটের আস্তরণে মোড়া এবং সুরক্ষিত থাকে। তাছাড়া আমাদের ত্বকের নীচে ফ্যাটের কম-বেশি একটা আস্তরণ থাকে যা দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে আর শরীরকে গরম ও আরামপ্রদ রাখে। এমনকী দেহের স্নায়ুগুলিও ফ্যাটের সুরক্ষাবর্মের মধ্যে থাকে। উপরন্তু ফ্যাট দেহের অস্থিসন্ধিগুলিতে লুব্রিকেন্ট হিসাবে উপস্থিত থাকে। যাতে অনায়াসেই নড়াচড়া করা যায় ও সন্ধিগুলি ঘর্ষণমুক্ত থাকে। ‘এ’, ‘ডি’ এবং ‘ই’ ভিটামিনগুলি ফ্যাটে দ্রাব্য, তাই এই ভিটামিনগুলির দেহে শোষণের ক্ষেত্রেও ফ্যাটের বড় ভূমিকা রয়েছে। তবে দেখুন, কতই না উপযোগিতা ও কার্যকারিতা রয়েছে এই বিশেষ খাদ্য উপাদানটির। এর পরেও এই হিতোপোকারীর সাথে চরম বৈমাত্রেয় সুলভ আচরণ করা কি সাজে?

অধিকাংশ আমিষ বা নিরামিষ খাদ্যেই বিভিন্ন প্রকার ফ্যাটের অস্তিত্ব থাকে। উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে শক্তি সঞ্চয়, বৃদ্ধি, গঠন ও নানাবিধ শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া চালনা করার সহজলভ্য পন্থা হিসাবে ফ্যাটের ব্যবহার হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট কিছু ডায়েটরি ফ্যাট অন্যান্য অত্যাবশ্যক ক্রিয়াগুলিকে সম্পন্ন করে। আবার দেখা যায় যে, শারীরিক গঠন অনুযায়ী কিছু ফ্যাট একজনের দেহের তুলনায় অন্যজনের দেহে বেশি প্রয়োজন। বস্তুত, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার জন্যও কিছু ফ্যাটের আবশ্যকতা রয়েছে। অতএব আপনার খাদ্যতালিকার আসর থেকে ফ্যাট জাতীয় খাদ্যকে পত্রপাঠ বিদায় নিস্প্রয়োজন। তবে খেয়াল রাখুন, যাতে স্বাস্থ্যপোযোগী ডায়েটরি ফ্যাট বাছাই করে খাদ্যতালিকাভুক্ত করতে পারেন। এতে আপনি ফ্যাটের অভিশাপ নয়, শুধু আশীর্বাদটুকুই উপভোগ করতে পারবেন।

এই ফ্যাটগুলির মধ্যে দুই রকমের সম্ভাব্য ক্ষতিকারক ডায়েটরি ফ্যাট রয়েছে। এরা হল স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাট।

  • স্যাচুরেটেড ফ্যাক্ট—এই জাতীয় ক্ষতিকারক ফ্যাট মূলত প্রাণীজ উৎস থেকে পাওয়া যায়। যেমন রেড মিট, পূর্ণমাত্রায় ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি। এই ফ্যাট রক্তে সামগ্রিক কোলেস্টেরলের মাত্রা ও লো-ডেনসিটি লাইপো প্রোটিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলত শরীরে কার্ডিও-ভাসকুলার রোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি সম্ভাবনা ভীষণভাবে বেড়ে যায়।
  • ট্রান্স ফ্যাট-এটি আরেকটি ক্ষতিকারক ফ্যাট যা স্বাভাবিকভাবে আপনাআপনিই কিছু খাদ্যে অল্প পরিমাণে উৎপন্ন হয়। কিন্তু অধিকাংশ ট্রান্স ফ্যাটই খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণের সময়ে (পারসিয়াল হাইড্রোজিনেশন) তেল থেকে উৎপন্ন হয় যেমন-বাটার।

ওমেগা থ্রি ও ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড হল শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ায় অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড। এই জাতীয় ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি আমরা নিজেরা তৈরি করতে পারি না। ফলে খাদ্য থেকেই এগুলি আমাদের লাভ করতে হয়। ওমেগা থ্রি ও ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড উভয়েই পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (PUFA) তবে রাসায়নিক গঠনাবলির দিক দিয়ে এটি অন্যের থেকে আলাদা। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের কয়েকটি উৎকৃষ্ট উৎস হল শীতল জলের মাছ যথা স্যালমন, সার্ডিন, কর্ড, ম্যাকরেল ও হেরিং। ই.পি.এ ও ডি.এইচ.এ (ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড) দেহে ভীষণভাবে প্রয়োজন বিশেষত বাচ্চাদের মস্তিষ্কের উন্নতি সাধনের জন্য। আখরোট ও ফ্ল্যাক্স সীডের মতো উদ্ভিজ উৎস থেকে এ.এল.এ (ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড) পাওয়া যায় দেহে ই.পি.এ ও ডি.এইচ.এ রূপান্তরিত হয়। অপরদিকে ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস হল বীজ, বাদাম ও রিফাইন উদ্ভিজ্জ তেল।

স্বাভাবিকভাবে এই দুই প্রকার অত্যাবশ্যক ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে প্রাপ্ত হরমোনগুলির প্রভাবও ভিন্ন। ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে প্রাপ্ত হরমোনগুলি ইনফ্লামেশন বৃদ্ধি করে এবং রক্ত জমাট বাঁধা, কোষ বিভাজন ও বিস্তার প্রক্রিয়াকে বাড়িয়ে দেয়। আবার ওমেগা থ্রি থেকে প্রাপ্ত হরমোনগুলি উপরিউক্ত প্রক্রিয়াগুলিকে কমিয়ে দেয়। সুতরাং এই উভয় প্রকার বিরুদ্ধাচারী হরমোনগুলির ভারসাম্য বজায় থাকা একান্তই প্রয়োজন সুস্বাস্থ্যের জন্য। দেহে প্রয়োজনীয় উপাদানের ভারসাম্যহীনতার কারণে শ্বাসকষ্ট, করোনারী হৃদরোগ, নানাবিধ ক্যানসার, অটো-ইমিউনিটি ও স্নায়ুবৈকল্য জনিত রোগের হার বৃদ্ধি পায়। এই সকল রোগগুলি শরীরের প্রদাহজাত বলেই ধরা হয়। আবার স্থূলতা, মানসিক অবসাদ, ডিসলেক্সিয়া, হাইপার অ্যাক্টিভিটি ও এমনকী হিংসার প্রবণতা বৃদ্ধির জন্যও দায়ী ওমেগা থ্রি ও ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডের ভারসামাহীনতা।

ডায়েট প্ল্যান এমনভাবে করা উচিত যাতে গৃহীত এনার্জির সর্বোচ্চ ১০% স্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে আসে। চেষ্টা করুন দিনে ৩০০ মিলিগ্রামের কম ডায়েটারি কোলেস্টেরল গ্রহণ করতে। এছাড়া নজর রাখা দরকার যে দিনে অন্তত মোট এনার্জির ৪-১০% যেন ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে গৃহীত হয় এবং ওমেগা থ্রি ও ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডের অনুপাত ৫:১ থেকে ১০:১ এর মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়।

দুই বা ততোধিক উদ্ভিজ্জ তেলের ১:১ অনুপাতে মিশ্রণ ব্যবহার করুন।

অর্থাৎ স্বাভাবিক মাত্রায় LA (ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড) যুক্ত তেল+ স্বাভাবিক মাত্রায় LA (ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড) এবং ALA (ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড) যুক্ত তেল।

  • চীন বাদামের তেল/তিল তেল/রাইস ব্রান তেল/তুলোবীজ তেল+ সরষের তেল/রেপসীড তেল।
  • চীনে বাদামের তেল/তীল তেল/রাইস ব্রান তেল/তুলোবীজ তেল+সাদা সরষের তেল।
  • চীনে বাদামের তেল/তীল তেল/রাইস ব্রান তেল/তুলোবীজ তেল+সয়াবীন তেল।
  • কুসুম তেল/সূর্যমুখী+পাম তেল+সরষের তেল/রেপসীড তেল/ফ্লক্স সীড তেল।

উচ্চ মাত্রায় LA (ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড) যুক্ত তেল+স্বাভাবিক অথবা কম মাত্রায় LA যুক্ত তেল—

  • কুসুম তেল/সূর্যমুখী তেল+চীনে বাদামের তেল/তিল তেল/রাইস ব্রান তেল/তুলোবীজ তেল।

প্রসেসড ফুড ও আগে থেকে মিশ্রণ করা রেডিমেড খাবার বা ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন। কারণ এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ট্রান্স ফ্যাট থাকে যা স্বভাবতই ক্ষতিকারক।

স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবারে রাশ টানুন। লো-ফ্যাট মিল্ক ও ডেয়ারী ও ফুড গ্রহণ করুন। মটন (রেড মিট) সংযত পরিমাণে খান।

বিভিন্ন প্রকার বাদাম খেতে পারেন, বাদাম ফ্যাট ও অন্যান্য খাদ্য উপাদানে পরিপূর্ণ। তাই বিভিন্ন প্রকার বাদামের মিশ্রণ ব্যবহার অধিক কার্যকরী। কারণ এর ফলে একবার খাওয়াতেই বিভিন্ন প্রকার বাদামের পুষ্টি লাভ করা সম্ভব। তবে এ জাতীয় খাদ্যস্থ সামগ্রিক শক্তি, ফ্যাট ও ক্যালোরি যেন কোনোভাবেই নির্দেশিত সীমা অতিক্রিম না করে, সেদিকে যথেষ্ট নজর রাখতে হবে।

পরিশেষে বলি, ফ্যাটের অপকারিতা থেকে রক্ষা পাওয়ার পথ ফ্যাট পরিত্যাগ করা নয়, তাতে উপকারের তুলনায় অপকারেই প্রকট হবে। আপনার পরিমিত এবং সঠিক ভারসাম্যযুক্ত ফ্যাট গ্রহণই এর উপকারী দিকগুলিকে আলোকিত করে তুলবে।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন