শ্বাসকষ্টের প্রতিরোধে ভ্যাকসিন
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2019-02-01 16:02:42
হাজির নকলের প্রিয় শীতকাল। আর এই প্রিয় শীতেই বাড়ে কিছু অসুখ-বিসুখের সম্ভবনা। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ভোগেন তারা, যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। যেমন শিশু ও বয়স্করা। তবে আগে থেকে কিছু সাবধানতা এড়িয়ে দারুণ উপভোগ করা যায়। বছরের এই সেরা সময়টাকে।
শীতে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?
শীতের সাধারণ সমস্যা মূলক নাক দিয়ে জল পড়া, ঘন ঘন সর্দি-কাশি, হালকা জ্বর ইত্যাদি। এছাড়া এ সময়ে বাড়ে শ্বাসকষ্টের সমস্যা। বয়স্কদের সন্ধিস্থলে ব্যথা এবং হাত-পায়ের পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ার সমস্যাও দেখা দেয়। আর শীতের শুস্ক আবহাওয়ার চর্মরোগের সম্ভবনাও বাড়ে। একজিমার ধাত থাকলে তাও বাড়তে পারে।
এ বছর ভাইরাসঘটিত সংক্রামণ কি একটুবেশি?
প্রতিবারই শীতের শুরুতে নানারকম ভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। যার মধ্যে কিছু জানা, কিছু অজানা। এ বছর মাঝ-নভেম্বরেও শীতের দেখা নেই। সময় মতো ঋতু পরিবর্তন না হলে ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ বাড়ে।
শীতে দূষণঘটিত অসুখ বাড়ে কেন?
শীতের সময় ইনভার্সান হয় অর্থাৎ ঠান্ডা হাওয়া যেহেতু একটু ভারী, ভোরবেলায় তা নীচের দিকে নেমে আসে। তার ফলে বাতাসে সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট ম্যাটার বা এস.পি.এম কণা অর্থাৎ ভাসমান ধূলিকণা নীচে নেমে আসে এবং সেগুলো হাওয়ার সাথে শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে খুব সহজেই শরীরে প্রবেশ করে। এই এস.পি.এম কণাগুলো গরমকালে বাতাসের ওপর দিয়ে ভেসে বেরিয়ে যায়, ফলে শরীরে প্রবেশের সম্ভবনা কম থাকে। এস.পি.এম কণা শরীরের প্রবেশের কারণেই শীতে ফুসফুসের অসুখের সম্ভবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।
সি.ও.পি.ডি ও অ্যাজমা
দুটো ভিন্ন ধরনের অসুখ। দুটো রোগের ধরন আলাদা। এখন সি.ও.পি.ডি এবং অ্যাজমার খুব ভালো চিকিৎসা থাকলেও যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের অসুবিধা এ সময় বাড়তে পারে। কিছু কিছু রোগী দুই ধরনের রোগেই আক্রান্ত পারেন।
সুস্থ থাকতে ইনহেলার ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন
লাং ফাংশন টেস্ট এবং কিছু পরীক্ষা করে ঠিক করা হয় রোগীর কী ধরনের ইনহেলার কতদিন নিতে হবে এবং ডোজের পরিমাণ কী হবে। একবার ইনহেলার নিতে হবে তা শুরু করলে তা যে সারাজীবন নিয়ে যেতে হবে তা কিন্তু নয়। এটা নির্ভর করে কোন অসুখের কোন পর্যায়ে রোগী ইনহেলার নিতে শুরু করেছেন তার ওপর। অ্যাজমার সমস্যা হলে যদি তা একদম প্রথম দিকে ধরা পড়ে এবং ইনহেলার শুরু করা হয় তাহলে ধীরে ধীরে একটা সময়ের পর ইনহেলার বন্ধ করে দেওয়া যায়।
সি.ও.পি.ডি-র ক্ষেত্রে কিন্তু ইনহেলার নেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে ইনহেলারের ডোজটা রোগ কমনো সম্ভব। এর সঙ্গে রোগী যদি নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য কিছু কিছু নিয়ম মেনে চলেন, যেমন নিয়মিত প্রাণায়াম, ব্যায়াম, এসি ঘরে না যাওয়া, ঠান্ডা না খাওয়া এবং তার পাশাপাশি খাওয়া দাওয়ার ক্ষেত্রে মিষ্টি জলের ছোট মাছ, পর্যাপ্ত পরিস্রুত জল, পরিমিত শাকসবজি, ফল ইত্যাদি নিয়মিত খান তাহলে সি.ও.পি.ডি রোগীরা শীতে অনেকটাই সুসাথ থাকতে পারেন। যাদের হার্ট বা কিডনির সমস্যা নেই, তারা ৩ লিটার জল খেতেই পারেন। হার্ট বা কিডনির সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কতটা পরিমাণ জল খাবেন তা জেনে নিন।
শীতের সমস্যা প্রতিরোধের উপায়
- অ্যাজমা রোগীরা শীতের আগেই অ্যালার্জির ভ্যাকসিন নিয়ে নিন।
- বয়স্ক .সি.ও.পি.ডি রোগীরা যদি শীত শুরুর আগে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস নাগাদ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিয়ে নেন, তাহলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- কিছু কিছু রোগীকে নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এটা নিলে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা কিছুটা কমে।
- এর পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার করুন।
- তুলোর লেপ ব্যবহার না করে সিন্থেটিক কম্বল কব্যবহার করুন।
- ঘরে কড়া গন্ধের রুম ফ্রেশনার বা ধূপ না জ্বালানোই ভালো। মশা তাড়ানোর ধূপ ব্যবহার না করে জানালায় নেট লাগাতে পারেন।
- এছাড়া শীতের পোশাক যেহেতু অনেকটা সময় আলমারি বা বাক্সবন্দী থাকে, ফলে অনেক সময় তাতে ছত্রাক হতে পারে। তাই ওগুলো ব্যবহারের আগে ভালো করে রোদে দিন। না হলে এ থেকে সর্দি, কাশিঁ, হাঁচি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
দূষণ থেকে বাঁচতে কী ধরনের মাস্ক ব্যবহার কার উচিত?
দূষণ এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে দিল্লির মানুষ মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোতে পারছেন না। আমাদের শহর কতকাতাতেও বাড়ছে দূষণের মাত্র। যার প্রভাব পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও গিয়ে পড়ছে। এই দূষণ থেকে বাঁচতে এখন আমরা যে কালো, গোলাপি মাস্ক দোকান থেকে কিনে ব্যবহার করছি, সেগুলো কিন্ত্ত দূষণের বিষবাষ্প বা ধূলিকণা আটকাতে অক্ষম। দূষল আটকাতে সবচেয়ে ভালো ‘এন ৯৫ মাস্ক’। যদিও এখনও অনেকেই এই মাস্ক সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। এন ৯৫ মাস্ক দূষণের ক্ষদিকর পদার্থগুলোকে ফুসফুসে প্রবেশ থেকে আটকাতে অনেকটাই কার্যকরী ভূমিকা নেয়। মাস্ক ব্যবহার হয়তো একটু অস্বস্তি হতে পারে। কিন্ত্ত এটা ব্যবহার করলে রোগের হাত থেকে অনেকটাই বাঁচা সম্ভব তাই অসুখ প্রতিরোধে ওষুধের থেকেও মাস্কের ভূমিকা কোনও অংশেই কম নয়।
শুধুই প্যারাসিটামল
জ্বর হলে সবসময় প্যারাসিটামল খেতে পারেন, যদি লিভার ঠিক থাকে। তবে কখনোই অ্যাসপিরিন নয়। ভাইরাসঘটিত জ্বরে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনও ওষুধ খেলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। জ্বরের সঙ্গে যদি গা-হাত ব্যথা, র্যাশ, মাথার পেছনে ব্যথা হয়, তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং যত দ্রুতসম্ভব পরীক্ষা করে খুঁজে বার করতে হবে জ্বরের কারণ।
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াও ওষুধ বন্ধ করবেন ন।
একটু ঠান্ডা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেরই নাক দিয়ে জল পড়তে শুরু করে। তাদের জন্য খুব ভালো কিছু অ্যান্টি অ্যালার্জি ওষুধ রয়েছে। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে খেতে হবে। অনেকে চিকিৎসকের না জানিয়েই, ওষুধের কোর্সটা শেষ না করেই,একটু ভালো থাকলেই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। এটা কখনোই করবেন না ।এতে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন