ব্যথা যখন মেরুদন্ডে
হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2019-02-02 12:12:00
মেরুদন্ডের ব্যথা
মেরুদন্ডের ব্যথা একটি বিশেষ পরিচিত উপসর্গ। মূলত কোমড়, ঘাড় ও পিঠের ব্যথাকে মেরুদন্ডের ব্যথা হিসাবে ধরা হয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে,সারজীবনে একবারও এই ব্যথায় ভোগেননি এমন মানুষের সংখ্যা নগণ্য, মাত্র কুড়ি শতাংশ। অনেক ক্ষেত্রে এই ব্যথা সাধারণ চিকিৎসায়, যেমন ব্যথা কমাবার ওষুধ প্রয়োগে বা ফিজিওথেরাপিতে কমে গেলেও প্রায় ষাট শতাংশ ক্ষেত্রে সমস্যাটা বারেবারে ফিরে আসে। বারংবার অসুবিধে হচ্ছে এমন অর্ধেকেরও বেশি রোগীর ক্ষেত্রে মেরুদন্ডের ব্যথা তেমন কষ্টদায়ক নয়। তবে বাকি রোগীদের ২৫ শতাংশ ও ১৪ শতাংশ কিন্তু যথাক্রমে কোমড় ও ঘাড়ে তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করে থাকেন।
ব্যথার সূত্র
মেরুদন্ডের ব্যথার, বিশেষত মেরুদন্ডের পুরনো ব্যথার সমস্যা অত্যন্ত জটিল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর পেছনে একাধিক কারণ থাকে। আশির দশক থেকে এই সমস্যার বিশ্লেষণে বায়ো-সাইকোসোসাল মডেলের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। এই পদ্ধতিতে রোগীর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সূত্র খুঁজে তার কারণ দিয়ে এই ব্যথার ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হত। কিন্তু এই ধরনের মডেল ও প্রচলিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার (যেমন সি.টি.ভি ইত্যাদি) সাহায্য নিয়েও মাত্র পনেরো শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যেত। বাকিদের ক্ষেত্রে ব্যথার সঠিক কারণের অভাবে ফলপ্রসূ চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছিল না।
নব্বইয়ের দশকের শেষ দিক থেকে ব্যথার সূত্র সন্ধানে ডায়াগনস্টিক ইন্টারভেনশনাল পেইন ম্যানেজমেন্টের সাহায্য নেওয়া হলে আশাতীত ফল মিলতে থাকে। এই আধুনিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন নার্ভ আটকে দিয়ে টিস্যু ম্যাপিং করা হয় এবং দেখা হয় কোন নার্ভ দিয়ে ব্যথা প্রবাহিত হচ্ছে। নার্ভ চিহ্নিত হলে ব্যথার উৎস টিস্যুটি খুঁজে বের করা সহজ সাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে, রোগ নির্ণয় ও উপযুক্ত চিকিৎসা দুটোই সম্ভব হয়। সাম্প্রতিক গবেষণালব্ধ দুটি তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে, এই পদ্ধতিতে সিংহভাগ (৯০ শতাংশ) ক্ষেত্রে কোমরের ব্যথার কারণ ও উৎস খুঁজে পাওয়া গেছে।
মেরুদন্ডের গঠন
মানুষের মেরুদন্ডের গঠন বেশ জটিল। মেরুদন্ড কতকগুলো ছোট ছোট হাড় দিয়ে তৈরি। এই হাড়গুলোকে পরস্পর লেগে থাকতে সাহায্য করে ফ্যাসেট জয়েন্ট। এদের অবস্থান একেবারে পিছনের দিকে। একটি করে দু’পাশে দুটি। দুটি হাড়ের মাঝে থাকে একটি চাকতি যা কুশনের মতো কাজ করে। চাকতিটির আকারে চ্যাপ্টা জেলিভর্তি বেলুনের মতো। এই পুরো অংশগুলোকে ধরে রাখে কয়েক ধরনের লিগামেন্ট। আবার লিগামেন্টকে সাহায্য করে বাইরে থাকা কিছু মাংসপেশি। মেরুদন্ডের ঠিক মাঝখান দিয়ে রয়েছে একটি লম্বা নালি যার মধ্যে দিয়ে সুষুম্নাকান্ড প্রবাহিত হয়। সুষুম্নাকান্ডের শাখাগুলো মেরুদন্ডের দু’পাশের ছোট ছিদ্র দিয়ে নির্গত হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। মেরুদন্ডের সমস্ত রকম টিস্যুর মধ্যে দিয়ে নিজস্ব নার্ভ গেছে। এদেরকে আলাদা আলাদা করে আটকে দিয়ে ব্যথা সৃষ্টির জন্য দায়ী অংশটিকে চিহ্নিত করা হয়।
ব্যথার উৎস সন্ধানে
আগেই জানিয়েছি, বর্তমানের ডায়াগনস্টিক ইন্টারভেনশনাল পেইন ম্যানেজমেন্ট প্রয়োগের আগে ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্যথার সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যেত না। কারণ খুঁজে না পাওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে লিগামেন্ট এবং মাংসপেশিকেই ব্যথার উৎস হিসেবে ধরা হত। এই ধারাণাটি যে ভ্রান্ত তা বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে। বছর কয়েক আগে আমেরিকায় ১২০ জন রোগীর ওপর একটি পরীক্ষা করা হয়। প্রচলিত সমস্ত রকম পদ্ধতি অনুসরণ করেও এদের ব্যথার সঠিক কারণ ডায়াগনস্টিক ইন্টারভেনশনাল পেইন ম্যাজেমেন্ট কেন্দ্রে পরীক্ষা করে ১০৬ জনের রোগের সঠিক দিশা পাওয়া যায়। দ্বিতীয় অনুরূপ একটি পরীক্ষায় ১০৪ জনের মধ্যে ৯১ জনের ক্ষেত্রেই রোগের যথাযথ কারণ চিহ্নিত করা গেছে। আশ্চর্যের কথা, এই সব রোগীর কারোরই ব্যথার উৎস লিগামেন্ট বা মাংসপেশি নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যথার উৎস ছিল ডিস্ক, ফ্যাসেট জয়েন্ট ও নার্ভ রুট। এভাবে ব্যথার সঠিক কারণ নির্ধারণ করার পর তার চিরস্থায়ী বা অন্তত দীর্ঘস্থায়ী সমাধান সম্ভব। ডায়াগনস্টিক ইন্টারভেনশনাল পেইন ম্যানেজমেন্ট আজ আমেরিকায় স্বীকৃত। আনন্দের কথা, এখন কলকাতাতেও এই পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের কয়েকটি পদ্ধতির কথা আলোচনা করা হল।
ট্রান্সফোরামিনাল এপিডুরার ব্লক
ফোরামেন হল মেরুদন্ডের সেই ছিদ্র, যে পথে মেরুদন্ডের দু’পাশ দিয়ে সুষুম্নাকান্ড থেকে নার্ভসমূহ বেরিয়ে থাকে। এই অংশটি নার্ভ রুট নামে পরিচিত। কোমর ব্যথার প্রায় কুড়ি শতাংশ ক্ষেত্রে এই নার্ভ রুট দায়ী। নার্ভরুটের ওপর তৈরি হওয়া বিভিন্ন ধরনের চাপ এই ব্যথার ক্ষেত্রে তৈরি করে। এই চাপ তৈরির ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নিয়ে থাকে ডিস্ক থেকে বেরিয়ে আসা জেলি। প্রচলিত চিকিৎসায় অপারেশনের মাধ্যমে এই ছিদ্রটিকে বড় করে দেওয়া হয়, ফলে সৃষ্ট চাপ কমে যায়। বর্তমানে অবশ্য অপারেশন না করেই রোগীকে সুস্থ করে তোলা যাচ্ছে। ট্রান্সফোরামিনাল এপিডুরাল ব্লক পদ্ধতিতে ফোরামেনের মধ্যে ওষুধ ঢুকিয়ে উপকার পাওয়া যাচ্ছে। ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৮০ জনকেই এই পদ্ধতিতে ভালো করা সম্ভব। আমেরিকায় ইউ.এস.এফ.ডি.এ স্বীকৃত এই চিকিৎসায় খরচ হয় গড়ে তিন হাজার ডলার, যেখানে অপারেশন খরচ প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। পদ্ধতিটি সমস্ত আমেরিকান মেডিক্যাল ইনসিওরেন্সের আওতাভুক্ত। এখন পর্যন্ত এই পদ্ধিতির কার্যকারিতা নিয়ে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন নামী মেডিক্যাল জার্নালে পঁয়ত্রিশেরও বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সমস্ত ক্ষেত্রেই ব্যবস্থাটিকে নিরাপদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফ্যাসেট জয়েন্ট ব্লক
মেরুদন্ডের ব্যথার একটি বড় কারণ ফ্যাসেট জয়েন্টের ব্লক। সমীক্ষায় দেখা গেছে, মেরুদন্ডের ব্যথার মধ্যে ফ্যাসেট জয়েন্টের সমস্যা কোমরের ব্যথার ক্ষেত্রে ১৫.৪৫%, পিঠের ব্যথার ক্ষেত্রে ৪২.৪৮%, এবং ঘাড়ের ব্যথার ক্ষেত্রে ৫৪.৬৮%। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সমস্যা সঠিক ভাবে নির্ধারণ করা যায় না কারণ ফ্যাসেট জয়েন্টের আথ্রোপ্যাথি প্রচলিত এক্স-রে, সি.টি.স্ক্যান বা এম.আর.আই-তে তখনই ধরা পড়ে যখন সমস্যা অনেক তীব্র। সে কারণেই বেশির ভাগ সময়ে এই ধরনের সমস্যায় প্রচলিত পরীক্ষার রিপোর্ট স্বাভাবিক মাত্রায় ফলাফল দেয়। ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি অফ পেইন’- নির্দেশিত আধুনিক ডায়াগনস্টিক ফ্যাসেট জয়েন্ট ব্লক পদ্ধতির দ্বারা কিন্তু এই রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব। এই পদ্ধতির সাফল্য আজ প্রমাণিত সত্য।
মূলত দুটো উপায়ে এই সমস্যার সমাধান করা হয়। প্রথম পদ্ধতিতে ফ্যাসেট জয়েন্টের মধ্যে লোকাল অ্যানেস্থেটিক এবং ডিপোস্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। দ্বিতীয় পদ্ধতিতে ফ্যাসেট জয়েন্টে প্রবাহিত মেডিয়াল ব্রাঞ্চ নার্ভ ব্লক বা নিউরোটমির প্রয়োগ করা হয়। প্রথমটিতে সমস্যা কমলেও দীর্ঘস্থায়ী প্রতিকার হয় না। তুলনায় দ্বিতীয় পদ্ধতিটি অধিক কার্যকরী। তবে এতে খরচ বেশি পড়ে কারণ এখানে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি জেনারেটর নামে একটি দামি যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। আমেরিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রোলিয়া-সহ সমস্ত উন্নত দেশ এই দ্বিতীয় পদ্ধতির ব্যবহার বহুল।
প্রোভোকেটিভ ডিসকোগ্রাফি
প্রোভোকেটিভ ডিসকোগ্রাফি একটি রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষার নাম। এই পদ্ধতিতে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে একধরনের ওষুধ ডিস্কের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে ডিস্কের প্রকৃতি পরীক্ষা করা হয় এবং লক্ষ রাখা হয় রোগীর পুরনো ব্যথা ফিরে আসছে কি না। ২৬.৩৯% কোমরের ব্যথার ক্ষেত্রে ডিস্কের সমস্যাই দায়ী থাকে।
ডিস্ক থেকে নানাভাবে ব্যথা হয়। প্রথমত, ক্ষয়প্রাপ্ত ডিস্কের চারপাশে কিছু অভ্যন্ত সংবেদনশীল নতুন নার্ভ তৈরি হয় যা তীব্র যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। মেরুদন্ডের ব্যথার ক্ষেত্রে এই কারণটিই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। দ্বিতীয়ত, ডিস্ক মধ্যস্থ জেলি বেরিয়ে এসে নার্ভরুটের ওপর চাপ দিলেও ব্যথা থৈরি হয়। তৃতীয়ত, এই নির্গত জেলি অনেক সময় প্রদাহের জন্ম দেয় যা থেকে ব্যথা হতে পারে।একমাত্র দ্বিতীয় কারণটিকেই এম.আর.আই দ্বারা নির্ধারণ করা যায়। তবে প্রোভোকেটিভ ডিসকোগ্রাফিতে সব ধরনের সমস্যাই ধরা পড়ে। ট্রান্সফোরামিনাল এপিডুরাল ব্লক পদ্ধতি প্রয়োগ করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ক্ষেত্রে চিকিৎসা করা হয়। প্রথম ক্ষেত্রের চিকিৎসায় অপারেশন ছাড়াও ডিস্ক ডিকমপ্রেশন বা পারকিউটেনিয়াস ডিসকেকটমি এবং নিউক্লিওলাইসিস পদ্ধতিতে রোগীর নিরাময়ের ব্যবস্থা আছে।
ডিস্ক ডিকমপ্রেশন বাপারকিউটেনিয়াস ডিসকেকটমি
ডিস্কোজনিক পেইন অথবা কনটেইনড ডিস্ক হারনিয়েশন বা স্লিপড ডিস্ক থাকলে এই চিকিৎসার সাহায্য নেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে বিশেষ ধরনের সুচের মাধ্যমে একটি যন্ত্র আক্রানাত ডিস্কটিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এর পর যন্ত্র চালিয়ে ডিস্কের মধ্যেকার খানিকটা জেলি বার করে আনলে ডিস্কের ভেতরকার চাপ কমে যায়। ফলে নার্ভের ওপর চাপও কমে যায়। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে অনেক ক্ষেত্রেই অপারেশনের ঝামেলা এড়ানো সম্ভব। দু-এক দিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরে রোগী স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে। এই পদ্ধতিতে খরচ অনেক কম এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই বললেই চলে।
এপিডিউরোগ্রাম/ এপিডিউরোলিসিস
ডায়াগনস্টিক ইন্টারভেনশনাল পেইন ম্যানেজমেন্টের অন্যতম একটি পদ্ধতির নাম এপিডিউরোগ্রাম। এই ব্যবস্থায় এপিডুরাল স্পেসের মধ্যে এক ধরনের ওষুধ ঢুকিয়ে অঞ্চলটির এক্স-রে করা হয়। স্বাভাবিক এপিডিউরোগ্রাম দেখতে উল্টানো ক্রিসমাস ট্রি-র মতো, যেখানে প্রত্যেকটি নার্ভের মধ্যে ডাই ঢুকে থাকে। কিন্তু অন্যরকম ছবি পাওয়া গেলে বোঝা যায় যে এখানে উপস্থিত ফাইব্রোসিস নার্ভের ওপর চাপ তৈরি করছে। ফেইলড ব্যাক সার্জারি সিনড্রোম নামে মেরুদন্ডের অপারেশন-পরবর্তী সমস্যা নির্ধারণ করতে এই পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়। এই সমস্যা কোনো রোগ নয়। মেরুদন্ডের অপারেশনের পরেও যাদের এব্যথা থেকে যায় বা নতুন ধরনের ব্যথা তৈরি হয় তাদের সমস্যাকে ফেইলড ব্যাক সার্জারি (সিনড্রোম বলা হয়।) অন্য দিকে এপিডিউরোলিসিস পদ্ধতিতে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে নতুন করে তৈরি হওয়া ফাইব্রোসিসকে ভেঙে দেওয়া হয়। নানা কারণে ফেইলড ব্যাক সার্জারি সিনড্রোম হেতে পারে। যেমন—
- মেরুদন্ডের অপারেশনের ফলে স্বাভাবিক স্থায়িত্ব নষ্ট হয়ে গেল।
- এপিডুরাল ফাইব্রোসিস তৈরি হয়ে নতুন করে নার্ভগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করলে।
- নতুন করে ফ্যাসেট জয়েন্টের সমস্যা তৈরি হলে।
- অসুস্থ নার্ভকে অপারেশনের মাধ্যমে সুস্থ করা যায় না। সেক্ষেত্রে সমস্যা থেকে যায়।
- আরও কিছু অজ্ঞাত সমস্যা।
নতুন ভাবে তৈরি হওয়া এই সব সমস্যা পরিস্থিতি জটিল করে দিতে পারে। বর্তমানে মেরুদন্ডের অপারেশনের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নতুন নতুন সমস্যা। লিবারম্যোনের মতো প্রথম সারির চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা সবাইবে সতর্ক করে দিয়েছেন এই বেলে যে, অদূর ভবিষ্যতে অপারেশন-পরবর্তী এই ধরনের সমস্যা ক্যানসারের থেকেও ভয়াবহ আকার নিতে পারে।
স্যাক্রো ইলিয়াক জয়েন্ট ইঞ্জেকশন বা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি নিউরোটমি
আমেরিকাতে ১৩.৩০% কোমরের ব্যথার উৎপত্তিস্থল হল স্যাক্রো ইলিয়াক জয়েন্ট। নার্ভ ব্লক করে যেমন এটি নির্ধারণ করা যায়, তেমনি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি নিউরোটমির দ্বারা ব্যথার উপশম ঘটানো সম্ভব।
পারকিউটেনিয়াস ভার্টিব্রোপ্লাস্টি
আমাদের দেশের পঞ্চোশোর্ধ মহিলাদের প্রায় তিরিশ শতাংশ অস্টিওপোরোসিসে ভোগেন। এর ফলে মেরুদন্ডের হাড়ে অসহ্য বেদনা শুরু হয়। এই সমস্যা অবশ্য ক্যানসার বা আরও কতকগুলো পরিস্থিতিতিও হতে পারে। অপারেশন না করে পারকিউটেনিয়াস ভার্টিব্রোপ্লাস্টির মাধ্যমে এই সমস্যার সুরাহা সম্ভব। এখানে বিশেষ পদ্ধতিতে ভাঙা হাড়ের মধ্যে বোন সিমেন্ট ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে মেরুদন্ডের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যথাও চলে যায়।
ওজোন নিউক্লিওলাইসিস
বিভিন্ন স্লিপড্ ডিস্কের রোগীদের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসার প্রয়োগ করা হয়। এখানে বিশেষ পদ্ধতিতে রোগাক্রান্ত ডিস্কের মধ্যে ওজোন গ্যাস ঢুকিয়ে দিলে ওই গ্যাস ডিস্কের মধ্যেকার জেলিটাকে ছোট করে দেয়। ফলে নার্ভের ওপর তৈরি হওয়া চাপ কমে যায়। এই ব্যবস্থায় সাকসেস হয় অপারেশনের সমতুল্য অথচ অপারেশনের ঝুঁকি এখানে নেই। খরচও অনেক কম। আর খুব কম সময়ের জন্যই হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন হয়।
সিমপ্যাথেটিক নার্ভ ব্লক
রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি জেনারেটরের সাহায্য নিয়ে সিমপ্যাথেটিক নার্ভ ব্ল করা হয়। এটি প্রায় অপারেশনের সমতুল্য। এর মাধ্যমে বার্জার ডিজিজ সিমপ্যাথেটিক ডিসট্রোফি ইত্যাদি সমস্যার সমাধান সম্ভব।
ওপরে আলোচিত বিভিন্ন ইন্টারভেনশনাল পেইন ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি মেরুদন্ডের বিভিন্ন সমস্যায় বৈপ্লাবিক পরিবর্তন এনেছে। আগে কোমর, পিঠ ও ঘাড়ের যে সমস্ত ব্যথার সূত্র চিহ্নিত করা যেত না, তা যেমন করা যাচ্ছে সেই সঙ্গে অত্যাধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে মেরুদন্ডের জটিল অপারেশন এড়ানোও সম্ভব হচ্ছে। এতে চিকিৎসা খরচ যেমন কমছে তেমনি দীর্ঘদিন রোগভোগের জ্বালা মুক্ত হয়ে আক্রান্ত নতুন জীবন ফিরে পাচ্ছেন।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন