×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

অজানা জ্বর ও অযথা আতঙ্ক

হ্যালো ডাক্তার ব্লগ টিম
2019-02-02 12:27:44

কোনো রোগ সম্বন্ধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রশংনীয়, সন্দেহ নেই। কিন্তু সচেতনতার নামে বিভিন্ন রোগীর মৃত্যুর কথা লাগাতার পরিবেশন করে মানুষকে আতঙ্কিত করা বাঞ্ছনীয় নয়। সাম্প্রতিককালে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া ও তথাকথিত ‘অজানা’ জ্বরে মৃত্যু নিয়ে যেভাবে প্রচার চলছে তাতে মানুষের মনে অযথা একটা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে, যা কাম্য নয়। দিনরাত বাড়িতে জ্বলছে মশা তাড়ানোর কয়েল। চব্বিশ ঘন্টা গায়ে ওডোমস। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিনের বেলা পচা গরমেও মানুষ খোলামেলা কিছু পরার কথা ভাবতে পারছে  না। জনরোষ থেকে বাঁচতে পুরসভা থেকে মশা মারার জন্য ব্লিচিং পাউডার ছড়োনো হচ্ছে। অজানা জ্বরের মোকাবিলায় এটাও এক অজানা বৈজ্ঞানিক (?) উপায়। হাসপাতাল বা পড়ার কোথাও আগাছা-জঙ্গল সাফ  না হলে মানুষ হাসপাতালের সুপর ও পঞ্চায়েত প্রধানের ওপর চড়াও হচ্ছে। যেন আগাছা ও নোংরা জলেই ডেঙ্গুর মশা ডিম পাড়ে। অথচ জমিয়ে রাখা পরিষ্কার বালতির জল, বদ্ধ সুইমিং পুর পরিশোধনের দিকে কারোর নজর নেই।

ঘটনা হল, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, রেসপিরেটরি ইনফেকশন বর্ষা থেকে শীতের শুরুর আগে অবধি প্রতি বছরই হয়। এই জ্বর- জ্বালা-সর্দি-কাশির পর্বে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা শীতকালে জুড়ে আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। আমাদের ছোটবেলাতেও জ্বর হলে সঙ্গে সঙ্গে কোনো টেস্ট করানো তো দূরে থাক, প্রথম তিন-চারদিন দুধ-সাবু-বার্লি-শরবতই ছিল পথ্য। এখন জ্বর হলেই সঙ্গে সঙ্গে ইনভেস্টিগেশনের প্রবণতা বাড়ার ফলে অজানা জ্বরটি কী প্রকৃতির তা চিহ্নিত হওয়ার সম্ভবনা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে বিভিন্ন মৃত্যু নিয়ে মিডিয়ার পরিবেশন করা ‘গল্পের’ বর, কারণ এগুলোই পাবলিক ‘খায়’। অথচ সেইকবে শরৎ পন্ডি লিখে গেছেন ‘রাতে মশা’ দিনে মাছি—এই নিয়েই কলকেতায় আছি।’ এইসব রোগের মূল চিকিৎসা কিন্তু বিশ বছর আগে যা ছিল, এখনও তাই-ই আছে। সম্ভবত প্রতিটি প্যাথিতেই। তাই অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে ও আতঙ্ক না ছড়িয়ে একটু জেনে নিই এই রোগগুলো কী প্রকৃতির ও আমাদের কী করণীয়।

অজানা জ্বরগুলোর বিভিন্ন কারণ ও লক্ষণ

‘অজানা’ কথাটি এই অর্থে যে সঠিক ইনভেস্টিগেশন না হওয়ার জন্য জ্বরের কারণটি এখনও ধরা পড়েনি। কিংবা যে জ্বরের কারণ বিজ্ঞানীরা আজও খুঁজে বের করতে পারেননি। কিন্তু তাদের প্রকৃতি ও লক্ষণ মোটামুটি এক---

  • হঠাৎ জ্বর, ১০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।
  • গায়ে র‌্যাশ বেরোনো।
  • মাথা ভার ও যন্ত্রণা।
  • অরুচি, পেট ব্যথা ও বমি।
  • প্রচন্ড দুর্বলতা, চোখে কমার পরও দীর্ঘস্থায়ী (কয়েক মাস পর্যন্ত) গাঁটে ব্যথা—রিঅ্যাক্টিভ আর্থ্রাইটিস।

সাধারণ যে রোগগুলো এই ধরনের জ্বরের পিছনে থাকে, সেগুলো হল—

  • ডেঙ্গু:

হঠাৎ উচ্চ তাপমাত্রার সাথে গাযে-হাতে অসহ্য ব্যথা, কিছু ক্ষেত্রে রক্তের প্লেটলেটের মাত্রা বিপজ্জনভাবে কমে গিয়ে চামড়াসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তপাত এবং রক্তচাপ নেমে গিয়ে শক এই রোগের লক্ষণ। প্রচারের দৌলতে সবাই জানেন যে ডেঙ্গু হল এডিস ইজিপ্টাই মশাবাহিত একটি ভাইরাসঘটিত রোগ। চাররকম ডেঙ্গু ভাইরাস দেখা যায়---ডেঙ্গু ১,২,৩,৪। বিভিন্ন কারণে এই ভাইরাসগুলোর মধ্যে জেনেটিক মিউটেশন ঘটে নতুন প্রজাতির ভাইরাস সৃষ্টি হয়। তখন তাদের ভাইরাস আকারে ধরা কঠিন হয়ে পড়ে। তা আরও বিপজ্জনকও বটে। অনেক সময়ই এগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে (পশ্চিমবঙ্গ একা নয়!) মহামারিরও  বিজ্ঞানীদের মাধাব্যথা। এতে চিকিৎসার কোনো পরিবর্তন হবে না। তাই সাধারণ মানুষ খবরের কাগজ দেখে ভাইরাসের স্বাস্থ্যবিধিগুলো বছরভর মেনে চললেই ডেঙ্গুসহ মশকবাহিত যেকোনো রোগের প্রকোপই অনেক কমিয়ে আনা যাবে।

  • চিকুনগুনিয়া:

ডেঙ্গুর মতোই মশাবাহিত ও ভাইরাসঘটিত রোগ। উপসর্গ ডেঙ্গুরই মতো, কিন্তু হেমারেজিক ডেঙ্গুর মতো প্রাণঘাতী নয়। তবে এই রোগ হলে জ্বর কমে যাওয়ার পরও গাঁটে গাঁটে প্রবল ব্যথা তিন মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

  • স্ত্রাব টাইফাস:

এতেও ডেঙ্গুর মতো জ্বরের সঙ্গে প্লেটলেট কমে যায়, সঙ্গে ব্যথা। এটি মশাবাহিত রোগ নয়। ইঁদুর-ছুঁচোর গায়ে থাকা মাইট নামক একপ্রকার পোকার কামড়ে এই রোগ হয়। কামড়ের জায়গায় কালো ক্ষত, রক্তের পরীক্ষায় সি.আর.পি বেড়ে যাওয়া দেখে এই রোগ সনাক্ত করা হয়। পি.সি.আর পরীক্ষায় রোগ নিশ্চিতভাবে ধরা পড়ে। গ্রামাঞ্চলে এই রোগের প্রকোপ বেশি।

অজানা জ্বরে আতঙ্ক কতটা যুক্তিযুক্ত

অজানা জ্বর নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক, তা মূলত ডেঙ্গুকে ঘিরে। অবস্থা এমন হয়েছে যে মনে হচ্ছে যেন ডেঙ্গু মানেই মৃত্যু। কিন্তু ঘটনা হল প্রতি এক হাজার জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে মাত্র একজনের ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়। আর সেই মৃত্যুর শতকরা নিরানব্বই ভাগ হয় ডেঙ্গু শক সিনড্রোম থেকে। বাকি শতকরা এক ভাগের মৃত্যু হয় রক্তক্ষরণ হয়ে। অর্থাৎ হিসেবটা দাঁড়াল প্রতি একলাখ ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে একজনের রক্তক্ষরণে মৃত্যু ও নিরানব্বই জনের ডেঙ্গু শক সিনড্রোম মৃত্যু! সচেতনতা যে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমাতে পারে।

অজানা জ্বরের উপসর্গ থাকলে প্রথমেই এন.এস-১ অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। ডেঙ্গুতে এন.এস-১ অ্যান্টিজেন প্রথম দিন থেকেই পজিটিভ থাকে। ষষ্ঠদিন থেকে ডেঙ্গু সেরোলজি আই.জি.এম অ্যালাইজা পজিটিভ হওয়ার অর্থ তার আগে ডেঙ্গু হয়েছিল।

ডেঙ্গুর রক্তক্ষরণ কি এড়াতে যায়

সত্যি কথা বলতে ডেঙ্গু হলে কার রক্তক্ষরণ হবে, কার হবে না তা আগে থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই। তবে রক্তক্ষরণের চিহ্ন দেখে বা এন.এস.-১ পজিটিভ হলে প্রতিদিন রক্তের প্রথম ছ’দিনের মধ্যে করতে হবে। কারণ ডেঙ্গু জ্বর ছ’দিনের বেশি স্থায়ী হয় না। প্লেটলেটের মাত্রা ৩০,০০০-এর নীচে নেমে গেলে (স্বাভাবিক মাত্রা ১.৫ থেকে ৪ লক্ষ প্রতি মিলি.) প্লেটলেট দিলে যে রক্তক্ষরণ বন্ধ হবেই, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ রক্তক্ষরণ থেকে যে মৃত্যুগুলো হয়, তাদের অনেককেই প্লেটলেট দেওয়া হয়েছিল।

ডেঙ্গু শক সিনড্রোম এড়াতে করণীয়

ডেঙ্গু শুরু হওয়ার চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ দিনের ভেতর ডেঙ্গু শক সিনড্রোম শুরু হয়। এক্ষেত্রে রক্তবাহক নালীগুলোর দেওয়ালের পারমিয়াবিলিটি বেড়ে গিয়ে জল বেরিয়ে রক্তচাপ কমে যায়, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে শক হয়। যেহেতু এতে রক্তের জল বেরিয়ে যায়, তাই রক্তের ঘনত্বও কমে। তাই প্রতিদিন প্লেটলেটের সঙ্গে রক্তের পি.সি.ভি বা হিমাটোক্রিট পরীক্ষা করা দরকার। এই পরীক্ষায় ঘনত্ব বোঝা যায়। যদি ঘনত্ব বাড়ে, তাহলে বেশি করে জল, স্যুপ, ও.আর.এস খেতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্যালাইন চলবে। আর নিয়মিত ব্লাডপ্রেসার মাপতে হবে। যদি চার থেকে ছ’দিনের  ভেতর রক্তক্ষরণ হয়, বা প্লেটলেট কমতে থাকে বা প্রেসার ক্রমশ নেমে যায় তবেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন। নতুবা ঘরে রেখেও চিকিৎসা করা যায়।

চিকিৎসা

চিকিৎসার প্রাথমিক লক্ষ্য হল জ্বর কমানো এবং শরীরে তরলের পরিমাণ ঠিক রাখা। আবার ডেঙ্গুতে জ্বর কমে যাওয়ার পরও অন্তত দশ থেকে পনেরোদিন ঘরে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকা উচিত। নতুবা নতুন করে রক্তক্ষরণ, বমি ইত্যাদি শুরু হয়ে অবস্থা জটিল হতে পারে।

হোমিওপ্যাথি লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা। অজানা জ্বরে যে লক্ষণগুলো থাকে তাতে ইউপেটোবিয়াম পার্ফ ও পলিপোরাস অফিসিনালিস ওষুধ দুটো সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় আর্সেনিক, বেলাডোনা, রাসটক্স, কর্বো ভেজ, ফসফরাস, ক্রোটেলাস হরিডাস ইত্যাদি ওষুধও লক্ষণ অনুযায়ী ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যায়। জ্বরের পর আর্থ্রাইটিসে সোলানাম লাইকোটোনাম এবং জ্বর পরবর্তী দুর্বলৈতা কাটাতে অ্যালেসটোনিয়া স্কোলারিস, ন্যাট্রাম স্যালিসাইলিকাম চমৎকার ফলদায়ক। অজানা জ্বরের প্রতিষেধক শাস্ত্রে ‘জেনাস এপিডেমিকাস’ নামে পরিচিত। এটা কোনো ওষুধের নাম নয়, প্রতিষেধক ওষুধ নির্বাচনের একটি ব্যবস্থা, যা অভিঙ্গ হোমিওপ্যাথের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে।

তাই অজানা জ্বর নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে উপরোক্ত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করান। নিজের একটু সচেতন হলে মশার সাধ্যি কি যে ভাইরাসের মাধ্যমে আমাদের পৃথিবীছাড়া করে।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন