×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

সুগারের হাত থেকে কি নিস্তার নেই?

ডাঃ প্রদীপ মুখোপাধ্যায় ও ডাঃ সুজয় ঘোষ
2019-02-06 11:42:12

ডায়াবেটিস বা মধুমেহ বর্তমান বিশ্বের এক ক্রমবর্ধমান জ্বলন্ত স্বাস্থ্য সমস্যা। পরিসংখ্যানের জটিলতায় না গেলেও এটা বাস্তব যে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার নিরিখে ভারতবর্ষের স্থান সারা বিশ্বে দ্বিতীয়। এদেশে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি লোক এই রোগে আক্রান্ত। সংক্রামক নয়, অথচ গাণিতিক হারে বেড়ে যাচ্ছে এমন রোগগুলি নিয়ে আমাদের সচেতনতা বেড়েছে বিগত কয়েক দশকে। এই ধরনের রোগগুলির পোশাকি নাম ‘নন কমিউনিকেবল ডিজিজ’। প্রধানত ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, করোনারি হার্ট ডিজিজ এবং ক্যানসার এই ধরনের রোগ। এর মধ্যে করোনারি হার্ট ডিজিজ থেকে মৃত্যুর হারই সারা বিশ্বে সব থেকে বেশি। আবার ডায়াবেটিস বা মধুমেহ হল এই করোনারি হার্ট ডিজিজের অন্যতম প্রধান কারণ। কিন্তু সত্যি কি এই রোগের হাত থেকে নিস্তার নেই? আসুন এ ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য।

কীভাবে বা কী কী লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে? সংজ্ঞা অনুযায়ী রক্তে সুগার বা শর্করার পরিমাণ খালিপেটে বা ফাস্টিং অবস্থায় একাধিকবার প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ১২৬ মিলিগ্রাম বা তার বেশি অথবা খাবার দু’ঘন্টা পর বা পিপি একাধিকবার ২০০ মিলিগ্রাম বা তার বেশি অথবা HbA1C (গ্লাইকেটেড হিমোগ্লোবিন) ৬.৫% বা তার বেশি হলে ডায়াবেটিস হয়েছে ধরে নেওয়া হয়। তবে আজকাল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে লক্ষণ ছাড়াই রোগটি ধরা পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোনো বেসরকারি সংস্থার কোনো কর্মী তার মাস্টার হেলথ চেক আপের সময় জানতে পারলেন তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। অথচ তার কোনোরকম শারীরিক সমস্যা নেই। আবার অনেক হয়তো বা তার চোখ বা অন্য কোনো অপারেশনের সময়কার রুটিন পরীক্ষায় তার ডায়াবেটিসের কথা প্রথম জানতে পারলেন। কখনো কখনো দেখা যায়, একজন মানুষ যক্ষ্মা বা অন্য কোনো ক্রনিক রোগে আক্রান্ত হয়ে বা হার্ট অ্যাটাকের পর প্রথম জানলেন। আবার যাদের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলি থাকে তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়—অতিরিক্ত খিদে অথচ ওজন কমে যাওয়া, বারবার প্রস্রাব বিশেষত রাত্রে ঘুমোবার সময়, অতিরিক্ত পিপাসা, কোনো ক্ষতস্থান শুকোতে দেরি হওয়া ইত্যাদি। কাজেই যাদের ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা বেশি তাদের নিজে থেকেই পরীক্ষা করে এটি জেনে নেওয়া উচিত।

স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে কাদের মধ্যে ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। বাড়িতে প্রথম বর্গের কোনো নিকট আত্মীয়ের ডায়াবেটিস থাকলে ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা বহুলাংশে বেড়ে যায়। প্রথম বর্গের নিকট আত্মীয় বলতে মা, বাবা, ভাই, বোন, ছেলে, মেয়ে এই ছয় ধরনের আত্মীয় কথা বলা হয়। যেমন উদাহরণস্বরূপ বলা যায় মা বা বাবা এদের কোনো একজনের ডায়াবেটিস থাকলে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে প্রায় ১৫% এর মধ্যে ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা থাকে। আবার মা এবং বাবা এদের দু’জনের ডায়াবেটিস থাকলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রায় ৭৫%-এর মধ্যে ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এখানে বলা রাখা ভালো যে বাবা বা মায়ের আগে ছেলে বা মেয়ের ডায়াবিটস হলেও অবাক হবার কিছু নেই। আবার যাদের শরীরে মেদ বা ওজন খুব বেশি, যারা খুব অলস জীবনযাপন করেন এবং শারীরিক পরিশ্রম করেন না বা করতে চান না তাদের মধ্যে ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা খুব বেশি। তাছাড়াও যাদের রক্তচাপ ১৪০/৯০ বা তার বেশি, যাদের রক্তে কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা খুব বেশি, যাদের মধ্যে হার্টের রক্ত চলাচল জাতীয় সমস্যা বা ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ আছে, যে সমস্ত মহিলার গর্ভাবস্থায় রক্তে সুগারের মাত্রা সীমার অতিরিক্ত বেড়েছিল বা যে সমস্ত মহিলার সদ্যোজাত শিশুর ওজন খুব বেশি ছিল (৯ পাউন্ড বা তার বেশি), যে সমস্ত মহিলার পলিসিস্টিক ওভারি জাতীয় রোগ আছে তাদের মধ্যেও এই রোগ হবার সম্ভাবনা খুব বেশি।  আবার এশিয়া মহাদেশের সকল মানুষের মধ্যেই এই রোগের সম্ভাবনা এমনিতেই খুব বেশি।

উপরোক্ত কারণগুলি ছাড়াও আরও এক ধরনের মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা খুবই বেশি। এদের বলা হয় প্রিডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিসের অতিরিক্ত সম্ভাবনাযুক্ত মানুষ। এই ব্যাপারটি বুঝতে হলে প্রথমেই জেনে নিতে হবে রক্তে সুগার বা শর্করার স্বাভাবিক পরিমাণ কত? খালিপেটে বা ফাস্টিং অবস্থায় এটি প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ১০০ মিলিগ্রামের কম  এবং খাবার দু’ঘন্টা পর বা পিপি অবস্থায় ১৪০ মিলিগ্রামের কম এবং HbA1C (গ্লাইকেটেড হিমোগ্লোবিন) ৫.৭% এর কম হওয়া উচিত। আবার আগেই বলা হয়েছে রক্তে সুগার বা শর্করার পরিমাণ খালিপেটে বা ফাস্টিং অবস্থায় একাধিকবার প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ১২৬ মিলিগ্রাম বা তার বেশি অথবা খাবার দু’ঘন্টা পর বা পিপি একাধিকবার ২০০ মিলিগ্রাম বা তার বেশি অথবা HbA1C (গ্লাইকেটেড হিমোগ্লোবিন) ৬.৫% বা তার বেশি হলে ডায়াবেটিস হয়েছে ধরে নেওয়া হয়। কাজেই যাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ এই দুইয়ের মাঝামাঝি অর্থাৎ খালিপেটে বা ফাস্টিং অবস্থায় প্রদি ১০০ মিলিলিটারে ১০০ থেকে ১২৫ মিলিগ্রামের মধ্যে অথবা খাবার দু’ঘন্টা পর বা পিপি একাধিকবার ১৪০ থেকে ১৯৯ মিলিগ্রামের মধ্যে বা HbA1C (গ্লাইকেটেড হিমোগ্লোবিন) ৫.৭% থেকে ৬.৫%-এর মধ্যে, তাদের বলা হয় প্রিডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিসের অতিরিক্ত সম্ভাবনাযুক্ত মানুষ। যাদের মধ্যে এই রিস্ক ফ্যাক্টর বা ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা সূচক গুলি বর্তমান তাদের যত শীঘ্র  সম্ভব রক্তে সুগারের মাত্রা পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নেওয়া উচিত এবং তার আপাতত স্বাভাবিক সীমায় থাকলেও বছরে অন্তত একবার পরীক্ষা করে দেখা উচিত। উপরোক্ত রিস্ক ফ্যাক্টরগুলি না থাকলেও বয়স ৪৫-এর বেশি হবার পর রক্তে সুগারের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা ‍উচিত এবং আপাতত স্বাভাবিক সীমায় থাকলেও তিন বছরে অন্তত একবার পরীক্ষা করে দেখা উচিত। ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগটির বিশেষত্ব হল নানারকম দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা। রক্তে শর্করার পরিমাণ সঠিক সীমায় না থাকলে যেমন চোখ, কিডনি, স্নায়ুতন্ত্র, হৃৎপিন্ডের কর্মক্ষমতা অকালে নষ্ট হয়ে যায়, তেমনি পায়ের ক্ষতজনিত জটিলতাও এই রোগের একটি বিশেষ সমস্যা। এই সমস্যাগুলির মধ্যে সবচেয়ে ভয়ষ্কর এবং জটিল আকার নিতে পারে হৃৎপিন্ডের রক্ত চলাচল জাতীয় সমস্যা। পরিভাষায় এর নাম ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ। যে ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা হল ডায়াবেটিস রোগে এই ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজে স্বল্প পরিশ্রমে বুকে ব্যথা জাতীয় লক্ষণ একদম নাও থাকতে পারে। এমনকী হার্ট অ্যাটাকেও বুকে ব্যথা না থাকতে পারে। পরিভাষায় এর নাম সাইলেন্ট ইস্কিমিয়া। আবার গবেষণায় দেখা গেছে যে দুর্ঘটনাজনিত কারণ বাদ দিলে সবচেয়ে বেশি যে কারণে পা কেটে বাদ দিতে হয় তার অন্যতম হল ডায়াবেটিস।

কিন্তু কেন ডায়াবেটিসে অধিকমাত্রায় হয় এই পায়ের সংক্রমণ ? সহজ ভাষায় বলা চলে এর কারণ হল বহুমাত্রিক। প্রথমত, এই রোগে শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলির মতোই পায়ের রক্তবাহী নালীগুলিও বন্ধ হয়ে গিয়ে রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে। দ্বিতীয়ত, স্নায়ু ক্ষয় হবার ফলে অনুভূতি কমে যায়, যার ফলে চোট বা অনুভূতি কমে যায়, যার ফলে চোট বা আঘাতের প্রারম্ভিক অনুভূতি হয় না। ব্যথার অনুভূতি কম হওয়ার রোগী একে প্রাথমিক অবস্থায় তেমন গুরুত্ব দেন না, যার ফলে ক্ষত খুব মারাত্মক আকার ধারণ করে। তৃতীয়ত, রক্তে শর্করার পরিমাণ সঠিক সীমায় না থাকলে নানান ধরনের জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা বহু গুণ বেড়ে যায়। চতুর্থত, স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা অকালে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পায়ের ক্ষুদ্র পেশিগুলি দুর্বল হয়ে শরীরের ভারসাম্য রাখতে সমস্যা হয় এবং পায়ের ঘর্মগ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার পা খুব শুকনো হয়ে গিয়ে ফেটে যায় এবং নানা ধরনের জীবাণুর প্রবেশের পথ সহজ করে দেয়। শরীরের ভারসাম্য না রাখতে পারার ফলে পায়ের কোনো বিশেষ অংশে অতিরিক্ত চাপ পড়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়ে যায়। সামান্য কিছু সতর্কতা মেনে চললে এই ক্ষতজনিত জটিলতা বহুলাংশে রোধ করা যায়। তাই এগুলি মেনে চলা খুবই জরুরি। যেমন খালি পায়ে না হাঁটা, চারিদিকে ঢাকা ঠিকঠাক ফিটিংস-এর নরম জুতো পরা, খোলা জুতো বা হাওয়াই চটি পড়ে বাইরে না বের হওয়া, বাইরে বের হবার আগে এবং বাড়ি ফিরে ভালো করে জুতোর ভিতর পরীক্ষা করে নেওয়া ভিতরে কিছু (যেমন পেরেক, কাঁকর, শুকনো শক্ত কাঠি ইত্যাদি) আছে কি না। বাড়ি ফিরে ভালোভাবে পা বিশেষ করে পায়ের আঙুলের ভিতরের অংশ আলাদা ভাবে পরিষ্কার করা (পায়ের আঙুলের ভিতরের এই অংশে হাজা বা ছত্রাক জাতীয় রোগ খুবই জটিল আকার নিতে পারে), রোজ পায়ের সবদিক পরীক্ষা করা, দরকার হলে আয়না ব্যবহার করা। নতুন জুতো কেনবার পর প্রথম বেশি সময়ের জন্য পরে না থাকা, হালকা স্বাস্থ্যসম্মত সুতির মোজা পরা, অত্যন্ত সাবধানে সামান্য বড় রেখে নখ কাটা, পায়ের কড়া বা ফোস্কা বা ক্ষতে চিকিৎসায় অবহেলা না করা। পা শুকনো ধরনের হলে কোনো ময়েশ্চারাইজার বা ক্রিম ব্যবহার করা, পা ভেজা ধরনের হলে কোনো পাউডার ব্যবহার করে তা শুকনো রাখার চেষ্ট করা এবং পায়ের যেকোনো সমস্যার জন্য নিকটবর্তী ডাক্তারবাবুর সঙ্গে সত্বর যোগাযোগ করে নেওয়া ইত্যাদি।

চিকিৎসার প্রারম্ভিক কথা হল খ্যাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ। এ ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আপনার ওজন এবং আপনার দৈনন্দিন কায়িক পরিশ্রমের মাত্রা। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের একটি বড় উদ্দেশ্য হল ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। কাজেই জেনে রাখতে হবে আপনার স্বাভাবিক ওজন কত থাকা উচিত? আপনার উচ্চতাকে সেন্টিমিটারে প্রকাশ করে তার থেকে ১০০ বাদ দিলে যে সংখ্যা পাওয়া যায় সেটি কিলোগ্রামে প্রকাশ করলে সেটিকে আপনার স্বাভাবিক ওজন বলে ধরে নেওয়া হয়। যেমন আপনার উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি বা ১৬৭.৫ সেন্টিমিটার হলে আপনার স্বাভাবিক ওজন মোটামুটি ৬৭.৫ কিলোগ্রাম হওয়া উচিত। আবার উচ্চতাকে মিটারে প্রকাশ করে তার বর্গ বা স্কোয়ার করে নিয়ে সেই সংখ্যা দিয়ে কিলোগ্রামে প্রকাশিত আপনার ওজনকে ভাগ করলে যে সংখ্যা পাওয়া যায় তার নাম ‘বডি মাস ইনডেক্স’ বা বি.এম.আই। সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের এই বি.এম.আই থাকা উচিত ২১ থেকে ২৩-এর মধ্যে।

ডায়াবেটিস রোগটি ধরা পড়বার পরপর কিছু লোক প্রায় সবরকম খাওয়া বন্ধ করে দেন এবং মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম বা ব্যায়াম শুরু করে দেন। যা একদমই ঠিক নয়। আপনার স্বাভাবিক ওজন ও আপনার কায়িক পরিশ্রমের সাপেক্ষা কিলোগ্রাম প্রতি ২৫-৩০ কিলো-ক্যালোরির খাবার সারাদিনে ৫-৬ বারে খাওয়া উচিত। ওজন খুব বেশি থাকলে এই পরিমাণ আরও কম হওয়া উচিত। সরল শর্করা যেমন চিনি, মিষ্টি, রসগোল্লা ইত্যাদি খাবার থেকে সুগার খুব তাড়াতাড়ি শোষিত হয়ে রক্তে তাৎক্ষণিক ভাবে সুগারের মাত্রা খুব বেড়ে যায় বলে এই জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। তবে পরিমাণ মতো দু’ বেলা ভাত বা দু’-এক পিস আলু খেতে কোনো আপত্তি নেই। রোজ কোনো একটি টাটকা ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ভালো। আবার অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই খারাপ এবং বিপজ্জনকও হতে পারে। সেই সঙ্গে ধূমপান ও সকল রকমের তামাক সেবন এবং মদ্যপান সম্পূর্ণ বর্জন করা উচিত। অতিরিক্ত লবণ জাতীয় খাবার ডায়াবেটিস রোগে পরিহার করা অত্যন্ত বাঞ্ছনীয়। আবার আপনার ডায়াবেটিস থেকে কোনো জটিলতা হয়ে থাকলে সেক্ষেত্রে বিশেষভাবে আপনার জন্য খাদ্যতালিকা প্র্রস্তুতের প্রয়োজন হতে পারে।

পরিমিত খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম খুবই জরুরি। নতুবা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় না। দিনের যেকোন সময় অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট ঘাম ঝরানো হাঁটা অত্যন্ত আবশ্যক। হাঁটবার মাধ্যমে আপনার শরীরে ইনসুলিন তার কাজ করবার ক্ষমতা কিছুটা ফিরে পায় বলে অল্প ওষুধ বা ইনসুলিনের সাহায্যে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতে পারে। এছাড়াও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে, পরিশ্রমের সহনশীলতা বাড়িয়ে এবং পেশিতে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে এই জাতীয় ব্যায়াম সুগার নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা কমায় এবং রোগীকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। তবে হার্টের রোগ বা পায়ের রক্ত চলাচল জনিত রোগ অথবা চোখের বিশেষ কিছু রোগ থাকলে হাঁটবার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। খালিপেটে ঘাম ঝড়ানো হাঁটা উচিত নয়। সকালে হাঁটবার অভ্যাস থাকলে অবশ্যই হাল্কা কিছু খেয়ে হাঁটাই ভালো।

চিকিৎসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ওষুধের ব্যবহার।এখানে বলে রাখা ভালো যেহেতু এই রোগটি সম্পূর্ণ নির্মূল করা যায় না, তাই এই রোগ চিকিৎসার প্রধান ব্যাপারটি অনেকেই সহজে মেনে নিতে পারেন না। ওষুধ প্রয়োগের প্রয়োজন হলে একজন চিকিৎসক রোগীর ওজন, রক্তের বিভিন্ন সময়ের সুগারের মাত্রা, সুগার সংক্রান্ত জটিলকার উপস্থিতি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে ওষুধ ও তার মাত্রা বা ডোজ ঠিক করে থাকেন। কিছুদিন পরপর রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজনমতো ওষুধের মাত্রা বাড়িয়ে বা কমিয়ে রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক সীমায় রাখার চেষ্টা করেন। একবার রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক সীমায় এলে সেই মাত্রায় ওষুধ চালিয়ে যাওয়া উচিত। অনেকে এই অবস্থায় ভেবে নেন যে তার সমস্যাটি সেরে গেছে এবং ওষুধ বন্ধ করে দেন। চিকিৎসক দু’মাস পর আসতে বললে অনেকে ধরে নেন তাকে মাত্র দু’মাসের ওষুধ খেতে বলা হয়েছে। এগুলো মারাত্মক ভুল। ওষুধ খেয়ে সুগার ও ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক সীমায় এলও নিজের সিদ্ধান্তে ওষুধ বন্ধ করা যায় না বরং তা একইভাবে চালিয়ে যাওয়া উচিত। সুগার এবং প্রেসার নিয়ন্ত্রণের জন্য যেমন একাধিক ওষুধ প্রয়োগের প্রয়োজন হতে পারে, তেমনই সুগার এবং প্রেসার ছাড়াও আরও কিছু ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। যেমন কোলেস্টেরলের ওষুধ, হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের জন্য রক্ত তরল রাখার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ। বলা বাহুল্য যে, এই ওষুধগুলি যেহেতু সার জীবনব্যাপী হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যবহার হয়ে থাকে তাই এগুলি কখনোই হঠাৎ বন্ধ হেয়ে থাকে তাই এগুলি কখনোই হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া যায় না। আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবার জন্য ইনসুলিন নেবার প্রয়োজন হলে, তা নিতে বিলম্ব করলে অঙ্গহানির সম্ভাবনা বাড়বে। ইনসুলিন নেবার পদ্ধতি বর্তমানে অত্যন্ত সরল। এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাই বাঞ্ছনীয়।

আগেই বলা হয়েছে রক্তে সুগার জনিত রোগ থেকে চোখ, কিডনি, স্নায়ুতন্ত্র, হৃৎপিন্ডের কর্মক্ষমতা অকালে নষ্ট হয়ে যায়। তাই রক্তে সুগার যেমন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি, তেমনই ওপরের অঙ্গগুলির সুরক্ষার জন্য প্রতি দেড়-দু’মাস অন্তর রক্তে সুগার পরীক্ষা ছাড়াও কিছু পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। যেমন, ক্রিয়েটিনিন (৬-১২ মাস অন্তর), ই.সি.জি (৬-১২ মাস অন্তর), প্রস্রাবে অ্যালবুমিনের উপস্থিতি ও পরিমাণ (বছরে ১ বার), চেস্ট এক্স-রে (পিএ), কোলেস্টেরল ইত্যাদি(বছরে ১ বার), HbA1C(৩-৬ মাস অন্তর), বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবুর দ্বারা চোখ পরীক্ষা (বছরে অন্তত ১ বার) ইত্যাদি। সুচিকিৎসার মাপকাঠি বা টার্গেট ভ্যালুগুলি অবশ্যই জেনে নেওয়া। চিকিৎসার মাধ্যমে ফাস্টিং এবং পিপি সুগার থাকা উচিত যথাক্রমে ১১০ এবং ১৪০ এর নীচে। রক্তচাপ অবশ্যই নামাতে হবে ১৩০/৮০ মিমি পারদের চাপ বা তার নীচে। এল.ডি.এল কোলেস্টেরল থাকবে ১০০ বা তার নীচে। ), HbA1C থাকবে ৬.৫% বা তার নীচে। ওষুধ খেয়ে উপরোক্ত সীমায় পৌঁছবার পরও ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া উচিত নয়, বরং তা একইভাবে খেয়ে যাওয়া উচিত।

যারা  ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তাদের আরও কিছু জেনে রাখা ও মেনে চলা অত্যাবশ্যক। যেমন—

১. যেদিন রক্ত পরীক্ষা করবেন, সেদিন স্বাভাবিক খাবার ও নির্দিষ্ঠ ওষুধ খেতে বা ইনসুলিন নিতে ভুলবেন না। একবার ডায়াবেটিস ধরা পড়বার পর কোনো অবস্থাতেই গ্লুকোজ খেয়ে রক্ত পরীক্ষা করবেন না। অন্যান্য দিনগুলোতে ওষুধ খাবার পর বা ইনসুলিন নেবার পর সঠিক পরিমাণ খাবার সঠিক সময়ে খেতে ভুলবেন না।

২. আপনার ডায়াবেটিস নিয়েন্ত্রণে রাখবার জন্য খালিপেটে বা ফাস্টিং (খাবার এবং ওষুধ না খেয়ে) ও খাবার দু’ ঘন্টা পর বা পিপি (খাবার ও ওষুধ অন্যদিনের মতো সঠিকভাবে খেয়ে), দুটি পরীক্ষাই জরুরি। এটি সকাল বা দুপুর অথবা রাত্রিকালীন ওষুধের মাত্রা ঠিক করবার জন্য জরুরি। ভর্তি পেটে রক্ত পরীক্ষার সময় খাওয়া শুরু করবার সময় থেকে দু’ঘন্টর হিসাব শুরু হয়, খাবার শেষ হবার সময় থেকে নয়। ওষুধ কখন খাবেন, খাবার আগে না পরে, কতক্ষণ আগে বা পরে তা জেনে নিতে ভুলবেন না।

৩.চিকিৎসা চলাকালীন যেকোনো সময় হঠাৎ আপনার রক্তে সুগার কমে গিয়ে অসুবিধা হতে পারে। যার নাম হাইপোগ্লাইসেমিয়া। এর লক্ষণগুলি জেরে রাখুন। গরম লাগা, বুক ধড়ফড় করা, হঠাৎ ঘেমে যাওয়া, খিদে পাওয়া, অস্বাভাবিক ভামে ঘুম পাওয়া, দুর্বল বোধ করা ইত্যাদি। লক্ষণগুলির প্রাথমিক অবস্থাতেই ২-৩ চামচ চিনি বা গ্লুকোজ জলে গুলে খেয়ে নিন। তারপর পরিমিত খাওয়া দাওয়া করুন। পরের দিন, যে সময় এই ঘটনা ঘটেছিল ঠিক তার আগের ডোজ কমিয়ে দিন নিজে নিজেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওষুধের মাত্রা ঠিক করবার জন্য ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন।

৪.বছরে অন্তত ১ বার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবুর দ্বারা দাঁত পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি।

৫. যত শীঘ্র সম্ভব চোখ পরীক্ষা করান। আপাতত সমস্যা ধরা না পড়লেও ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি আছে কি না জানার জন্য বছরে একবার চোখ পরীক্ষা করান।

আলোচনার বিষয়ের নামকরণের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বলা চলে যে যেহেতু এখনো পর্যন্ত এই রোগ নির্মূল করবার কোনো পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি, তাই এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা এবং তাৎক্ষণিক জটিলতা প্রতিরোধ করার মাধ্যমে অঙ্গহানি রোধ করাই হল এই রোগ থেকে নিস্তার পাবার একমাত্র উপায়। বিজ্ঞানের নিরলস গবেষণায় উপরোক্ত নিয়মগুলি মেনে চললে অঙ্গহানি রোধ করে সুস্থ থাকা এবং দীর্ঘজীবন লাভ করা অসম্ভব নয়।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন