×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

একটু আধটু অনিয়ম করতেই পারেন

ডা: অভিজিৎচন্দ (বিশিষ্ট এন্ডোক্রিনোলজিস্ট)
2019-02-06 11:50:31

এ কথা অনস্বীকার্য যে ডায়াবেটিসের প্রকোপ বর্তমান দিনে যেভাবে বেড়েছে, তাতে চিকিৎসা জগৎ তথা সমগ্র পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ডায়াবেটিস মানে তো শুধু রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়া নয়, ডায়াবেটিস সঙ্গে নিয়ে আসে চোখ, কিডনি, হার্ট, স্নায়ু ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নানাবিধ সমস্যা। এইসব সমস্যা মানুষের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে যেমন ব্যাহত করতে পারে, তেমনই অনকে সময় ডেকে আনে মৃত্যু। এই কারণেই ‘ডায়াবেটিস’ শব্দটা ভীতিপ্রদ। ডায়াবেটিস হয়েছে শুনলেই মানুষের মনে হতাশা ও অজানা আশষ্কা দানা বাঁধে। মনে হয় এখানেই জীবন শেষ। আর কিডনি বা চোখের সমস্যা অবশ্যম্ভাবী।

কিন্তু শুধু এটাই কি বাস্তব ? আসুন না সমস্যাটিকে একটু অন্যভাবে দেখা যাক। এক রোগী আমাকে বলেছিলেন, ‘ডাক্তারবাবু, সত্যি বলতে কি, ডায়াবেটিস আমার জীবৎকাল বাড়িয়ে দিয়েছে, কেন না, ডায়াবেটিস না হলে তো এত নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতাম না।

কথাটা সরলভাবে বলা হলেও তাৎপর্যপূর্ণ ও অনুধাবনযোগ্য। প্রকৃতপক্ষে একটা বয়সের পর জীবন যাপনে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আসাটাই কাম্য। এমনকী অপরিমিত, অপরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস এবং বেপরোয়া জীবনযাত্রা বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও ক্ষতি করতে পারে। কাজেই কিছুটা নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার মধ্যে বাঁধা পড়তে হবে ভেবে মুষড়ে পড়ার কিছু নেই।

এবার আসুন দেখি, ডায়াবেটিস হলে কী কী করতে হবে, যেটা ভেবে আপনি হতাশ হয়ে পড়ছেন। আজকের যুগে ‘ডায়াবেটিস ডায়েট’ কথাটা প্রায় উঠেই গিয়েছে। এমন শুধু দেখা হয় কত ক্যালোরি আপনি খাচ্ছেন এবং তার মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট ও প্রোটিন থাকছে কি না। অর্থাৎ আপনার খাদ্য সুষম কি না। ডায়াবেটিক খাদ্য সুস্বাদু করবারও হরেক রকম রেসিপি এখন পাওয়া যায়। ননস্টিক পাত্রে কম তেলে রান্না তো আছেই। ডায়াবেটিকদের উপযোগী মিষ্টি, হরেক রকমের ফুড সাপ্লিমেন্ট সবই আমাদের দেশে ন্যায্য মূলেই পাওয়া যায়।

আর, ডায়াবেটিস হলে এমন তো কোনো কথা নেই যে কখনোই ভালো কিছু খাওয়া যাবে না, রেস্টুরেন্ট, নিমন্ত্রণবাড়িতে খাওয়া যাবে না। মোটের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে, কখনো সখনো একটু আধটু অনিয়ম করতেই পারেন। এবার আসি শরীরচর্চার কথায়। দেখা যাক একজন ডায়াবেটিক মানুষকে সাধারণের থেকে কী বেশি করতে হয়। আমরা বলি প্রতিদিন সময় করে আধঘন্টা হাঁটুন। এমনটা সপ্তাহে পাঁচদিন করার চেষ্টা করুন।ভেবে দেখুন তো এটা কি সত্যিই খুব শক্ত ব্যাপার। সকালে উঠতে না পারেন তো বিকেলে যান হাঁটতে। তাও সময় নেই? বেশ তো, অফিস ফেরত পথে বাড়ির কিছু আগে বাস বা গাড়ি থেকে নেমে পড়ুন। বাকিটা পথ হেঁটে যান। এটা কি খুব শক্ত কাজ ? অফিসে, বাড়িতে চেষ্টা করুন না লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করতে। জানেন তো সিঁড়ি দিয়ে নামলেও কিছুটা শক্তিক্ষয় হয়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুটা দূরে যেতে হবে ? অটো, রিক্সা না ধরে হেঁটে যাবার চেষ্টা করুন না, নিদেন পক্ষে সকালবেলা উঠে অফিস বেরোনোর জন্য তৈরি হবার পনেরো মিনিট আগে কিছু ফ্লোর এক্সারসাইজ করে গা ঘামিয়ে নিন না। এগুলো তো যার ডায়াবেটিস নেই তারও করা উচিত। শরীরে মেদ কম থাকলে অনেক অসুখ থেকেই নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। আর মেদ কমানোর প্রকৃষ্ট উপায় হল নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শরীরচর্চা।

এবার আসি ওষুধের কথায়। ডায়াবেটিসের চিকিৎসাক্ষেত্রে গবেষণার অগ্রগতি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এত ভালো ভালো ওষুধ আজ আমাদের রয়েছে যেগুলোতে সুগার সুনিয়ন্ত্রিত রাখাটা অনেকাংশেই সহজ হয়ে গিয়েছে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম। এমনকী হাইপোগ্লাইসিমিয়া বা রক্তে সুগার মারাত্মকভাবে হ্রাস পাওয়ার ব্যাপারটাও আজকাল অনেক ওষুধেই প্রায় নেই বললেই চলে। ইনসুলিন ইঞ্জেকশন দেবার ক্ষেত্রে এত ভালো ভালো ডিভাইস এসে গিয়েছে যে তাতে ব্যথা প্রায় লাগে না বললেই চলে।

‘ইনহেলড ইনসুলিন’ও বিদেশের বাজারে এসে গিয়েছে। ঠিক যেমন অ্যাজমাতে ইনহেলার ব্যবহার করা হয়, এও তেমনই। আশা করা যায় আমাদের দেশেও আসতে দেরি হবে না। এছাড়া রয়েছে ইনসুলিন পাম্প যা কিনা নিরবচ্ছিন্নভাবে শরীরে পরিমিত ও সূক্ষ্মমাত্রায় ইনসুলিন সরবরাহ করতে থাকে এবং যেখানে সেখানে বারবার সুঁচ ফোটানোর প্রয়োজন থাকে না।

ঘন ঘন রক্ত পরীক্ষার জন্য এখন গ্লুকোমিটার আছে। রক্ত নেওয়াটা যেখানে খুব একটা ব্যথার ব্যাপার নয়, সুঁচ এখানে চুলের মতো সূক্ষ্ম। চেষ্টা চলছে এমনকিছু পদ্ধতি নিয়ে আসবার যেখানে রক্তে সুগার মাপার জন্য আর সুঁচিই ফোটাতে হবে না।

ডায়াবেটিস নিয়ে নারা বিশ্বে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অন্ত নেই। এর চিকিৎসা রোগীর কাছে কতটা সহজতর ও গ্রাহ্য করা যায় তার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন পৃথিবীব্যাপী বিজ্ঞানীমহল। তারা আজ অনেকাংশই সফল। তাই ডায়াবেটিস হলে ভয় পাবেন না, হতাশ হবেন না। একটু নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করুন। সুশৃঙ্খল নিয়মনিষ্ঠ জীবনযাত্রার উপযোগিতা তো সবার জন্যই প্রযোজ্য। একটু চেষ্টা করুন না, ভালোই থাকবেন।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন