×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

শতকরা ৮০ জনের মৃত্যু হার্টের রোগে

ডাঃ সৌমিত্র রায় (বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট, আমরি হসপিটাল)
2019-02-06 12:10:38

ভারতবর্ষকে বলা হয় ডায়াবেটিসের আঁতুড়ঘর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী ২০২৫-২০৩০ সালের মধ্যে সারা পৃথিবীতে প্রায় ছত্রিশ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবে, যার মধ্যে প্রায় ছ’কোটি রোগী শুধু ভারতবর্ষের।

ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে হার্টের অসুখের প্রবণতা খুবই বেশি। ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্যে শতকরা পঞ্চাশজনেরই মৃত্যু হয় হার্ট অ্যাটাক হয়ে; আর স্ট্রোক বা হার্ট ফেলিওর যোগ করলে ডায়াবেটিক মানুষদের শতকরা আশিজনই মারা যান কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে। ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে এই কার্ডিওভাসকুলার হবার সম্ভাবনা দু্ই থেকে চারগুণ বেশি থাকে।

ডায়াবেটিসে ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ (আই.এইচ.ডি) বা হার্টের শিরা সরু হয়ে যাওয়া এবং তার থেকে হার্ট অ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনর্ফাকশন (এম.আই) হবার সম্ভাবনা খুবই বেশি থাকে। ডায়াবেটিসে যে আই.এইচ.ডি হয় তার কতকগুলো বৈশিষ্ট্য আছে। প্রথমত, ডায়াবেটিসে এই অসুখ হয় অপেক্ষাকৃত কম বয়সে। অর্থাৎ সাধারণভাবে যদি এম.আই. ষাট-সত্তর বছরে হয় তবে ডায়াবেটিকদের মধ্যে তা হয় চল্লিশ-পঞ্চাশে।

দ্বিতীয়ত, ডায়াবেটিসে হার্টের শিরাগুলো অনেক জায়গায় একসঙ্গে সরু হয় এবং তাতে অনেক ক্যালসিয়াম জমে থাকে। ফলে চিকিৎসা অনেক সময়ই বেশ জটিল হয় এবং পুরোপুরি সুফল পাওয়া যায় না।

তৃতীয়ত, ডায়াবেটিসে অনেক সময় হার্টের নার্ভগুলো শুকিয়ে যাওয়ার জন্য বুকে ব্যথার অনুভূতি হয় না। ফলে অসুখ বুঝতে অনেক দেরি হয় এবং হার্ট অ্যাটাকের পরেও চিকিৎসা শুরু হতে অনেক বিলম্ব ঘটে যায়।

চতুর্থত, ডায়াবেটিসের কুফল মহিলাদের ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় বেশি হয়। মহিলাদের ডায়াবেটিস এবং আই.এইচ.ডি বেশ দুঃসংবাদ।

ডায়াবেটিসে কেন এই হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বেশি হয়।

খুব সুনির্দিষ্ঠ কারণ জানা না থাকলেও অনেকগুলো ব্যাপার এর পেছনে কাজ করে। প্রথমত রক্তে অতিরিক্ত শর্করা প্রবাহিত হলে তা সরাসরি শিরা এবং হার্টের ক্ষতি করতে পারে। কম বয়সে এবং ডায়াবেটিস সদ্য ধরা পড়লে খুব শক্ত হাতে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করলে হার্টের সমস্যা অনেক কমানো যায়। কিন্তু বেশি বয়সে এবং অনেকদিনের পুরনো ডায়াবেটিসে খুব কড়া নিয়ন্ত্রণ করে হার্টের সমস্যা ঠেকানো যায় না, বরং ক্ষতি হবারই সম্ভাবনা থাকে।

দ্বিতীয়ত, ডায়াবেটিসের অন্যতম জটিলতা হচ্ছে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। এই অবস্থাটিও হার্টের এবং শিরার অসুখ হবার অন্যতম কারণ।

তৃতীয়ত, ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এমন অনেক অন্যান্য জিনিস জড়িত থাকে যেগুলো হার্টের অসুখ বাড়াবার জন্য কুখ্যাত। যেমন উচ্চ রক্তচাপ। দুই তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক ডায়াবেটিক রোগী উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। এবং সকলেরই জানা যে উচ্চরক্তচাপ ব্রেন স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এছাড়া আছে রক্তে চর্বির আধিক্য। ডায়াবেটিসে একি বিশেষ ধরনের চর্বির গন্ডগোল দেখা যায়, যাকে বলা হয় ডায়াবেটিক অ্যাথেরোজেনিক ডিসলিপিডেমিয়া। এতে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা খুব বেড়ে যায়। এছাড়াও ডায়াবেটিকদের মধ্যে মেদবাহুল্য খুব বেশি দেখা যায় এবং তাও হার্টের অসুখ বাড়িয়ে তোলে।

দেখা গেছে ডায়াবেটিক রোগীদের উচ্চরক্তচাপ এবং রক্তে চর্বির অস্বাভাবিকতার চিকিৎসার করলে হার্টের অসুখ অনেক কমিয়ে ফেলা যায়। সাম্প্রতিককালে এপিজেনেটিক্স শব্দটি ডাক্তারি শাস্ত্রে প্রায়শই ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মানে মানুষের বংশগত বা জিন সংক্রান্ত অস্বাভাবকতাগুলো পরিবেশের সঙ্গে মিলিতভাবে অসুখের সৃষ্টি করে। ডায়াবেটিস এবং হার্টের অসুখ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

এই আই.এইচ.ডি ছাড়া ডায়াবেটিসে হার্টের আরও কিছু বিশেষ অসুখ হয়। যেমন অটোমেটিক নিউরোপ্যাথি। এতে হার্টের নার্ভগুলো শুকিয়ে যায়। ফলে অনেক সময় হার্টের ছন্দপতন জাতীয় অসুখ হয় এবং এতে হঠাৎ মৃত্যুরও সম্ভাবনা থাকে।

ডায়াবেটিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি এক বিশেষ হার্টের অসুখ যাতে হার্টের মাংসপেশি দৃর্বল হয়ে পড়ে এবং হার্ট ফেলিওর হয়, অর্থাৎ শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতা, সারা শরীর ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।

ডায়াবেটিক রোগীদের এবং চিকিৎসকদের দায়িত্ব এই হার্টের অসুখ যথাসম্ভব কমানো।

প্রথমত নিয়মিত রক্তে সুগার পরীক্ষা করে দেখা যে কারোর ডায়াবেটিক হয়েছে কি না। কারণ যত তাড়াতাড়ি অসুখ ধরা পড়বে এবং চিকিৎসা শুরু হবে ততই ভবিষ্যতে সুফল পাওয়া যাবে। বিশেষত যাদের পরিবারে ডায়াবেটিস আছে, যার মেদবহুল বা যে মহিলার খুব ভারি বাচ্চা প্রসব হয়েছে, তাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।

ডায়াবেটিস ধরা পড়লে তার যথাযথ চিকিৎসা করাতে হবে। মনে রাখতে হবে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা মানে শুধু রক্তে সুগার পরীক্ষা করে সেটাকে ঠিকঠাক রাখা নয়। নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করতে হবে কোনো অঙ্গে ডায়াবেটিসের ক্ষতি শুরু হয়েছে কি না, যেমন হার্ট, ব্রেন, চোখ, কিডনি, নার্ভ, ত্বক। এখন তার অবিলম্বে চিকিৎসা শুরু করা দরকার।

দ্বিতীয়ত, অন্যান্য অসুখ যেমন রক্তে চর্বি বা রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। চল্লিশের ওপর বয়ষ হলে স্ট্যাটিন জাতীয় চর্বি কমানোর ওষুধ শুরু করা উচিত। তেমনি ষাট বছর বয়সের পর অ্যাসপিরিন শুরু করা যেতে পারে।

তৃতীয়ত, মনে রাখা যে ডায়াবেটিসে হার্ট অ্যাটাকে হলে বুকে ব্যথা নাও হতে পারে। শুধু দুর্বলতা, ঘাম হওয়া বা পেটে অস্বস্তি হলেও সতর্ক হতে হবে।

শেষ কথা, ধূমপান সর্বতোভাবে পরিত্যাগ করতে হবে। ডায়াবেটিক রোগী যদি ধূমপান চালু রাখেন তবে তার চিকিৎসা করা না-করা সমান।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন