×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

ডায়াবেটিসে কমবেশি ১০ বছর ভুগলে অন্ধ হয়ে যেতে পারেন।

ডাঃ জ্যোতির্ময় দত্ত
2019-02-06 12:43:27

ডায়াবেটিস মেলিটাস বা মধুমেহ রোগে আক্রান্ত হলে চোখের নানান সমস্যা দেখা দেয়। আঞ্জনি, ঘনঘন চোখের পাওয়ার বদল, ছানি পড়া, গ্লুকোমা ইত্যাদি ছাড়াও রেটিনার নানান জটিলতা দেখা দেয়। রেটিনার সমস্যা হলে দৃষ্টিশক্তি কমে গিয়ে অবশেষে নেমে আসতে পারে অন্ধত্ব। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর রেটিনার এই সমস্যাকে বলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি।

বিশেষ করে পাশ্চাত্যে দেশের অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ এই ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার এই সমস্যা আরও বেশি করে দেখা যাচ্ছে। ব্যাপারটা একটু খুলে বলি। ডায়াবেটিসে রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়-রোগী কমবেশি ১০ বছর ধরে এই রোগে আক্রান্ত হলে। আগেকার দিনে রোগ নির্ণয় বা সুচিকিৎসা অভাবে রোগী হয়তো আগেই মারা যেত, তাই রেটিনোপ্যাথিতে আক্রান্ত হবার তখন প্রশ্ন ছিল না। হলেও ধরা পড়ত না। বর্তমানে রোগীরা অনেক বেশি সচেতন ও সেই সঙ্গে রোগ নির্ণয় তথা সুচিকিৎসার অনেক সুযোগ রয়েছে। তাই দেখা যাচ্ছে বর্তমানে অনেক বেশি মানুষ রেটিনোপ্যাথির শিকার।

দেখা গেছে, ১০ বছর যারা এই অসুখে ভুগছেন তাদের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৫০ জন রেটিনোপ্যাথিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। ২০ বছর ধরে যারা ভুগছেন, তাদের শতকরা ৭০ জন এবং ৩০ বছর ধরে যারা ভুগছেন তাদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনই রেটিনোপ্যাথিতে আক্রান্ত হন। অর্থাৎ কমবেশি ১০ বছর ধরে যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের প্রত্যেকেরই রেটিনোপ্যাথি হবে তা কিন্তু নয়। আবার ৩০ বছর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর শতকরা ১০ জনের কিন্তু রেটিনোপ্যাথি নাও হতে পারে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখলে রেটিনার ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়।

মহিলারাই রেটিনোপ্যাথির শিকার হন বেশি করে। প্রতি ৭ জনের মধ্যে ৪ জনই মহিলা। রক্তে শর্করার মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত থাকলে এই রোগে আক্রান্ত হবার আশষ্কা অনকে বেশি থাকে। বংশগত প্রভাব অবশ্যই থাকে। গর্ভবতী মহিলারা আক্রান্ত হন বেশি করে। উচ্চ রক্তচাপও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এর সঙ্গে স্থূলতা, ধুমপান, রক্তে লিপিড কমে যাওয়া ইত্যাদি এই রোগের সহায়ক হয়। ঠিক কী হয় এই ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে ? ডাক্তারি পরিভাষায় বলে মাইক্রোঅ্যাঞ্জিওপ্যাথি। রেটিনার শিরা উপশিরা আক্রান্ত হয় (আর্টারিওল, ক্যাপিলারি এবং ভেনিউলস)।

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে কী কী হয় ?

  • নন প্রলিফারেটিভ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি (NPDR)। অর্থাৎ অল্পস্বল্প রেটিনার সমস্যা, মাঝামাঝি ধরনের রেটিনার সমস্যা, গুরুতর রকমের রেটিনার সমস্যা এবং অত্যন্ত গুরতর রেটিনার সমস্যা।
  • প্রলিফারেটিভ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি (PD)।
  • ডায়াবেটিক ম্যাকুলোপ্যাথি।
  • অ্যাডভান্সড ডায়াবেটিক আই ডিজিজেস (ADED)।

নন প্রলিপারেটিভ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি: এতে যেসব সমস্যা হয় তা হল—মাইক্রোঅ্যানুরিজম, রেটিনাতে রক্তক্ষরণ, শক্ত ধরনের একজুডেট অর্থাৎ মোমবাতি চাক চাক করে কেটে রাখলে যেমন দেখতে লাগে, তেমন। নরম একজুডেট অর্থাৎ পেঁজা তুলোর মতো দেখতে, IRMA (Intraretinal Vascular Abnormalities), রেটিনা বা ম্যাকুলাতে জল জমা, রেটিনাতে থোকা থোকা গোলাকৃতি রক্ত জমা।

প্রলিফারেটিভ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি: অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সে ডায়াবেটিসে আক্রান্তরাই বেশি করে এই ধরনের রেটিনোপ্যাথির শিকার হয়।

অত্যন্ত গুরুতরভাবে আক্রান্ত NPDR-এর রোগীদের রেটিনাতে যখন নতুন শিরা-উপশিরা (রেটিনার ক্যাপিলারি থেকে নতুন শিরা তৈরি হয়) তৈরি হয় সেই নতুন শিরা-উপশিরা চট করে ছিঁড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। সেই সঙ্গে অবশ্যই রক্তক্ষরণ।

অপটিক ডিস্কের (অপটিক নার্ভের মাথা, যা অপথালমোস্কোপ দিয়ে দেখা যায়) ওপর এবং রেটিনার অন্যত্র নতুন শিরা উপশিরা তৈরি হওয়া।

ভিট্রাস হিউমারে (চোখের ভিতরে জেলির মতো স্বচ্ছ) রক্তক্ষরণ।

ফাইব্রোভাসকুলার (ফাইব্রাস টিস্যু ও শিরা দিয়ে তৈরি) পর্দা তৈরি হয়।

রেটিনা ছিঁড়ে যাওয়া (ট্রাকশনাল রেটিনা ডিটাচমেন্ট-TRD)।

নতুন শিরা উপশিরা তৈরি হবার সঙ্গে সঙ্গে এক ধরনের গ্লুকোমা হয় যাকে বলে নিওভাসকুলার গ্লুকোমা।

চিকিৎসা

প্রথমেই বলা দরকার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের (রেটিনোপ্যাথি থাক বা না থাক, অথবা মৃদু ধরনের রেটিনোপ্যাথি থাকলে) প্রতি বছর একবার করে চোখ পরীক্ষা অবশ্যই করা দরকার। যখন মাঝারি ধরনের NPDR থাকে তাদের প্রতি ৬ মাসে অর্থাৎ বছরে অন্তত দু’বার চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। গুরুতর NPDR থাকলে প্রতি তিন মাস অন্তর অর্থাৎ বছরে চারবার চোখ দেখাতে হবে। অত্যন্ত গুরুতর NPDR থাকলে প্রতি দু’মাস বাদে বাদে চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। লিপিডের পরিমাণ কমাতে হবে। রক্তাল্পতা রুখতে হবে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-‘ই’ ইত্যাদি দিতে হবে।

FFA(Fundus Fluorescein Angiogram) বা DFA (Digitakl Fluorescein Angiogram), OCT (Optical Coherence Tomography), USG (Ultrasonogram) এবং অন্যান্য পরীক্ষা করা হয় এবং চিকিৎসার পদ্ধতি নির্ণয় করা হয়। দরকার মতো ভিট্রাসে অ্যান্টি ভি.ই.জি.এফ (ভাসকুলার ইন্ডোথিলিয়াল গ্রোথ ফ্যাক্টর) ইঞ্জেকশন করা হয়। রেটিনার লেজার চিকিৎসা (Photocoagulation) করা হয়। ভিট্রাসে রেক্তক্ষরণ হলে সঠিক সময়ে ভিট্রেক্টমি করতে হবে। রেটিনা ছিঁড়ে গেলে (TRD) শল্য চিকিৎসার সাহায্য নিতে হবে।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের বলি, অযথা আতষ্কিত হবেন না।ডাক্তারবাবুর নির্দেশমতো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখুন। খাদ্যাভ্যাস ঠিকঠাক রাখুন (ডাক্তারবাবুর নির্দেশ মতো ডায়েট চার্ট ফলো করুন)। ডাক্তারবাবুর পরামর্শমতো ওষুধপত্র নিয়শ করে ফলো করুন। নির্দিষ্ট সময় অন্তর চোখের পরীক্ষা করান ও চোখের ডাক্তারবাবুর নির্দেশ মতো চলুন। হঠাৎ করে চোখে কম দেখলে বা দেখতে না পেলে দেরি না করে চোখের ডাক্তার অবশ্যই দেখান। চোখ অমূল্য সম্পদ, অবহেলায় ক্ষতি হতে দেবেন না।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন