আমাশা কি সত্যিই ভালো হয় না
ডাঃ গৌতম দাস (গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট, আমরি হাসপাতাল)
2019-02-06 13:07:57
পেট রোগা বাঙালি সারা বছর পেটের অসুখ নিয়েই ঘর করে। পেটের নানান রকম অসুখের মধ্যে আমাশা অন্যতম। আমাশার জন্য দায়ী থাকে অ্যান্টিমিবা হিস্টোলাইটিকা নামে এক ধরনের পরজীবী। এই পরজীবী যখন পেটে বাসা বাঁধে তখন বৃহদন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
লক্ষণ
আমাশার প্রধান লক্ষণ পেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা, বার বার পায়খানা যাবার ইচ্ছ, মলত্যাগের পরেও মনে হয় আরো কিছু মল পেটে থেকে গেল অর্থাৎ পুরোপুরি পেট পরিষ্কার না হওয়া। মলের সাথে মিউকাস, দুর্গন্ধ ও গ্যাস হয়। মলদ্বারে জ্বালা ও ব্যথা হয়।
আমাশা নানা কারণে হতে পারে। সাধারণত রোগী আসে অ্যাকিউট আমাশা নিয়ে। আগে পায়খানা ঠিকঠাক হত কিন্তু হঠাৎ তার পায়খানায় পরিবর্তন অর্থাৎ অল্প অল্প করে বারবার পায়খানা, সাথে মিউকাস। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো ইনফেকশন বা ভেতরে কোনো টিউমার আকার কারণ হিসেবে দেখা যায়।
যদি পায়খানার সাথে রক্ত আসে সেক্ষেত্রে রোগীকে আলাদা ভাবে সাবধান হতে হবে। রোগীর কোলনোস্কোপি করে দেখতে হবে কেন রক্ত আসছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাশা যদি দীর্ঘদিন ধরে হয় বা চলতে থাকে সেক্ষেত্রে আমাশার কারণ ভিন্ন। এসব ক্ষেত্রে দেখা গেছে রোগীদের মধ্যে এক ধরনের প্রবণতা থাকে পায়খানা পরিষ্কার না হবার কারণে আঙুল দিয়ে পায়খানা পরিষ্কার করেন। ফলস্বরূপ পায়খানার দ্বারে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং সেখান থেকে পায়খানার সাথে মিউকাস আসতে থাকে।
তবে যেটা খুব প্রচলিত কারণ, সেটা হল মিউকাস যুক্ত পায়খানা হয় সাধারণত ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম থেকে (আই.বি.এস)।
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম কী কারণে হয় সেটা স্পষ্ট না হলেও এটুকু জানা গেছে যে কোলনের মুভমেন্ট জনিত সমস্যা এবং কোলনের অতিরিক্ত সেন্সিটিভিটি হয়ে যাওয়ার কারণে এই ধরনের ঘটনা ঘটে।
আমাশা এমন একটি অসুখ যা বিভিন্ন কারণে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জলবাহিত ও খাদ্যবাহিত হয়ে পেটের মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়। এই সংক্রমণ সাধারণত অ্যামিবা (অ্যামিবায়োসিস) বা ব্যাক্টেরিয়ার কারণে হতে পারে। যে সব কারণে আমাশা হয় সেগুলো হল ইনফেকশন, টিউমার, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, সলিটারি রেক্টাল আলসার সিনড্রোম।
চিকিৎসা
কী কারণে আমাশা হয়েছে তার ওপরেই নির্ভর করে চিকিৎসা হয়। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের কারণে যে আমাশা হয় তা পুরোপুরি সারানো যায় না। আমাশার সঠিকি চিকিৎসা ঠিকমতো হয় না বলে রোগটা বারে বারে ফিরে আসে এবং ক্রনিক আকারে দাঁড়িয়ে যায়, যাকে অ্যামিবিক কোলাইটিস বলে।
পরজীবীগুলো লিভারে বাসা বাঁধলে লিভার অ্যাবসেস হতে পারে। মস্তিষ্কে ছড়ালে এনকেফেলাইটিস হয়। শুধুমাত্র ওষুধ খেলে আমাশা কমে যায় তা নয়। পান করতে হবে পরিস্রুত জীবাণুমুক্ত জল, ভালো করে ধোওয়া শাক-সবজি ও ফল। খাওয়ার আগে সবসময় হাত পরিষ্কার করে ধুতে হবে। নখ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে এবং নিয়মিত নখ কাটতে হবে। রাস্তার কাটা ফল, খোলা আ-ঢাকা খাবার কখনোই খাওয়া উচিত নয়।
আমাশার সাথে যদি রক্ত পড়ে এবং খিদে কমে যায় তার সাথেও ওজনও যদি কমতে থাকে তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এসব ক্ষেত্রে ক্যানসারের সম্ভাবনা দেখা যায়।
যেক্ষেত্রে অ্যাকিউট আমাশা দেখা যায় সেখানে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে আমাশা চললে ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমকেই দায়ী করা হয়। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের কারণ যে আমাশা হয় তাকে সারানো সম্ভব হয় না।
যদি ইনফেকশন, অ্যামিবা বা টিউমার অথবা ব্যাসিলারি ডিসেনট্রি হয় তাহলে মেডিসিন দিয়েচিকিৎসা করে সারিয়ে তোলা সম্ভব।
আমাশা থেকে ক্যানসার
আমাশাকে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা করলে অর্থাৎ রক্ত পড়ছে অনেকদিন ধরে কিন্তু রোগী বা বাড়ির লোক ভাবছে আমাশার কারণে হচ্ছে, সেরে যাবে, তাতে ভবিষ্যতে রোগীর জীবন সংশয় হতে পারে। কারণ রক্ত আমাশা ও অ্যামিবার কারণে ক্যানসার হওয়ার লক্ষণগুলো এক হওয়ায় ধরতে দেরি হয়ে যায়। তাই কোলোনোস্কোপি জরুরি। কোলন ক্যানসারের চিকিৎসা আছে এবং খুব ভালো ফলাফল এতে মেলে। ইরিটেবল বাওয়েল সিড্রোম কোনোদিন রক্ত আসবে না। তাই রক্তে এলেই সতর্ক হোন। পেটের ভেতরটা দেখা দরকার।
প্রশ্ন হল, আমাশা কি সারে না ? যথাযথ চিকিৎসায় আমাশা সেরে যায় একমাত্র ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম ছাড়া। প্রত্যেকটি কারণ ধরে ধরে চিকিৎসা এবং হাইজিন সম্বন্ধে সাবধানতা নিলে আমাশা থেকে দূরে অবশ্যই থাকা সম্ভব।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন