×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

পথ দুর্ঘটনায় প্রতি ৩০ সেকেন্ডে মারা যায় একজন

ডাঃ ভবানীপ্রসাদ সাহু
2019-02-06 13:32:57

প্রতি বছর বিশ্ব জুড়ে সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় শনিবারটি প্রাথমিক চিকিৎসা দিবস হিসেবে পালিত হয়। সেই অনুযায়ী এই বছর ১৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ব প্রাথমিক চিকিৎসা দিবস হিসেবে পালন করা হল। ২০০০ সাল তেকে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রশ ও রেড ক্রেসেন্ট সোসাইটি এর মূল উদ্যোক্তা। হাসপাতালে রোগীর মূল চিকিৎসার আগে, রাস্তাঘাটে, ঘরে-বাইরে যত মৃত্যু ঘটে তার শতকরা ৯০ ভাগই দক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসা ঠিক সময়ে প্রয়োগ করার ফলে আটকানো সম্ভব। আর এ কারণেই প্রাথমিক চিকিৎসাকে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়।

প্রাথমিক চিকিৎসার এই গুরুত্ব সম্যক উপলব্ধি করে, তার উপযুক্ত প্রসারের প্রয়োজনীয়তা প্রথম অনুভব করেন জেনেভার এক তরুণ ব্যবসায়ী হেনরি ডোনান্ট। সলফেরিনার যুদ্ধে অজস্র মানুষের ভয়াববহ দুর্গতি দেখে তিনি বুঝতে পারেন, আঘাত পাওয়ার পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে যদি তাৎক্ষণিকভাবে কিছু সাধারণ ব্যবস্থা নেওয়া যেত তবে বহু মৃত্যু আটকানো যেত, অজস্র মানুষের অশেষ দুর্গতি ও কষ্ট অনেক কমানো যেত। তারিখটা ছিল ১৮৫৯ সালের ২৪ জুন, এখন থেকে প্রায় দেড় শো’ বছর আগে। এরপরই তিনি ফার্স্ট এইড বা প্রাথমিক চিকিৎসাকে একটি আন্দোলনের মতো গড়ে তোলেন। সারা বিশ্ব জুড়ে এখন রেড ক্রস-এর বহু শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে নানা চিকিৎসা পরিষেবা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সত্যিকথা বলতে কি বিদ্যালয় স্তর থেকেই ছাত্রছাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসার নানা দিকে ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। এর গুরুত্ব শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে বা রাস্তাঘাটে নয়, বাড়ির মধ্যে যথেষ্টই রয়েছে।

যুদ্ধক্ষেত্রে গুলি লাগলে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে শুধু চিমটে দিয়ে গুলিটি বের করে, ক্ষতের জায়গা ভালো করে বেঁধে হাসপাতালে পাঠালে ভবিষ্যতের বিপদ অনেকটা আটকানো যায়। দুর্ঘটনায় হাত-পায়ের বড় হাড় ভেঙেছে মনে হলে কাঠের বা বাঁশের কিংভা লোহার দন্ড লম্বা হাড় বরাবর বেঁধে তারপর চিকিৎসকের কাছে পাঠালে রোগী অনেক উপকৃত হবেন। বাচ্চাদের ডায়রিয়ায় শুধু বাড়িতে বানানো নুন-চিনির সরবত ক্রমাগত খাইয়ে গেলেই সম্ভাব্য মৃত্যু আটকানো সম্ভব। জলে ডোবা ব্যক্তিকে উপুড় করে শুইয়ে, পেটে চাপ দিলে জল, মুখের কাদা ইত্যাদি তাড়াতাড়ি বের করে দিলেও সে বেঁচে যেতে পারে। শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে দেখলে রোগীর মুখে মুখ দিয়ে বড় করে শ্বাস দিয়ে বারবার তার ফুসফুসে হাওয়া ঢোকাতে পারলে তাকে বাঁচিয়ে দেওয়া যায়। কুকুর কামড়ালে সঙ্গে সঙ্গে কামড়ানো জায়গাটা ভালো করে জল দিয়ে ধোওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক চিকিৎসা। পোড়ার ফোস্কার ঠান্ডা জল দেওয়াটা উপকারি। গায়ে আগুন লাগলে মোটা কাপড় চাপা দিয়ে আগুন নেভানো, ছোটাছুটি না করা, পোড়া জায়গায় টুথপেস্ট জাতীয় কিছু না লাগানো এ সব খেয়াল রাখা দরকার। পোড়া জায়গায় সিলভারেক্স ও জাইলোকেইন মলম মিশিয়ে লাগালে তাৎক্ষণিক আরাম পাওয়া যাবে। নাক থেকে হঠাৎ রক্ত পড়লে, রোগীকে বসিয়ে মাথাটা সামান্য সামনে ঝুঁকিয়ে, নাকে বরঢ-ঠান্ডা জল দিতে পারলে আর সঙ্গে নাকটা চেপে বন্ধ করে রেখে, মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে অল্পক্ষণের মধ্যেই রক্তপাত বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এইভাবে প্রায় সমস্ত ধরনেরই চোটআঘাত দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই প্রাথমিকভাবে কিছু না কিছু করনীয় চিকিৎসা থাকেই। এগুলো উপকারি শুধু নয়, বহু ক্ষেত্রেই জীবনদায়ী। আর এর জন্য একটি দিকেই সতর্ক থাকা দরকার—রোগীর ভালো করতে গিয়ে যেন ক্ষতি না করা হয়। তাই চিকিৎসার এইসব প্রাথমিক দিক সম্পর্কেও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জন করে তবেই তার প্রয়োগ করা উচিত।

এখন পথ দুর্ঘটনার কারণে প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা বিশেষ মাত্রা পেয়েছে। বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সারা বিশ্বে যানবাহনের সংখ্যা বিপজ্জনকভাবে বেড়েছে এবং তা বেড়েই চলেছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে পথদুর্ঘটনার কারণে আহতের সংখ্যা এবং মৃত্যু। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রতি তিরিশ সেকেন্ডে একজন পথ দুর্ঘটনায় মারা যায় এবং হৃদরোগের পরেই পথ দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তাই ২০১৩ সালে বিশ্ব প্রাথমিক চিকিৎসা দিবসের ভাবনা ছিল পথ নিরাপত্তা ও প্রাথমিক চিকিৎসা। বর্তমান বিশ্বে এই ভাবনার গুরুত্ব আপাতত কমার সম্ভাবনা নেই। তাই স্কুল-কলেজ-অফিস থেকে শুরু করে পুরসভা ও পঞ্চায়েত স্তরে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করলে যেখানেই দুর্ঘটনা ঘটুক সেখানেই প্রাথমিক চিকিৎসক পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

প্রাথমিক চিকিৎসা আন্দোলনের লক্ষ্যও তাই, সবার কাছে সর্বত্র প্রাথমিক চিকিৎসাকে পৌঁছে দেওয়া।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন