শিশুদের চাপমুক্তির উপায়
ডাঃ তিন্নি দত্ত
2019-02-06 16:05:04
‘আর নাই রে বেলা, নামল ছায়া ধরণীতে।’ সত্যিই সমাজের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখতে পাই হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব, আজকের শিশুরা চাপের ভারে আক্রান্ত কী এই চাপ? কেন এই চাপ ? প্রশ্ন, কীভাবে এই চাপ রেহাই পাওয়া যাবে ?
প্রথমেই বলি গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক সত্ত্বা শিশুমনের ওপরে প্রভাব ফেলে। মা যদি হাসিখুশি, প্রাণোচ্ছল থাকেন সেই সময়ে, তবে শিশুর মধ্যে অনুরূপ সত্ত্বা দেখা দেয়, অন্তত জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং সেই কথাই বলে। তাই শিশুর মানসিক সত্ত্বা সুস্থভাবে বিকাশ করতে হলে। গর্ভাবস্থা থেকেই মাকে সাবধান থাকতে হবে।
আজকের এই পৃথিবীতে শিশু জন্মের পর প্রাচুর্য, ঐশ্বর্য দেখে। কিন্তু সবচেয়ে দুর্লভ মাতৃসঙ্গ থেকে অনেকেই বঞ্চিত হয়। আজকাল অনেক মা কর্মরত। তাই শিশরু নিরাপত্তাবোধের অভাবে ভোগে। জন্ম নেয় হীনম্মন্যতা। শৈশবের এই নিরাপত্তাবোধের অভাব তার ব্যক্তিত্বের প্রভাব ফেলে। যে শিশু এই গভীর নিরাপত্তাবোধের অভাবে ভুগছে, তার কাছে যে কোনো ব্যর্থতাই দ্বিগুণ হয়ে দেখা দেয়। কীভাবে দূরীভূত হবে নিরাপত্তাবোধের অভাব ? শিশুকে মা এবং বাবা দু’জনকেই সময় দিতে হবে কিছুটা। শিশুর মধ্যে যে আচরণ সঙ্গত ও সুন্দর তাকে বারবার বাহলা জানাতে হবে। যে আচরণ বাঞ্ছনীয় নয়, তাকে এড়িয়ে যেতে হবে। প্রয়োজন প্রশংসা ও সমালোচনা দুই-ই সমভাবে করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বাবা-মায়ের ব্যবহার থেকে শিশু যেন নির্দেশ পায় তার কী করণীয়, কী করণীয় নয়।
শিশু যখন আরও বড় হবে, বাবামায়ের একান্তভাবে মনে রাখার দরকার সহপাঠীদের সঙ্গে তুলনা কাম্য নয়। বাবামায়ের ব্যক্তিগত জীবনের ব্যর্থতা, অতৃপ্তি কোনোভাবে যেন বর্ষিত না হয় শিশুর ওপর। তা নিরাপত্তাবোধের চাপ, পারিবার্শ্বিকভাবে চাপ শিশুকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এরপর এর সঙ্গে যুক্ত হয় বিদ্যালয়ে পঠন-পাঠনের চাপ। পাঠ্যসূচির বিষয়ে অভিভাবক এবং শিক্ষক সকলকেই অবহিত হতে হবে। শিশুর কাছে পাঠ্যসূচি যদি খেলার মাধ্যমে বা আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা যায়, তবে সুকঠিন বিষয়ও অর্থবহ ও সহজবোধ্য হবে। পঠন পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন হতে পারলে ভালো। অভিভাবকরা যেন শিশুকে বিশ্রামের সুযোগ দেন। খানিকটা সময় শিশুদের বিনোদনমূলক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে দিতে হবে ও উৎসাহ প্রদান করতে হবে। এছাড়াও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি যেমন, অনুষঙ্গের মাধ্যমে পঠন, লিখেলিখে পঠন ইত্যাদি উপায় অনুসরণ করা শ্রেয়।
সর্বোপরি শিশুদের মনকে চাপমুক্ত রাখতে তাদের কল্পনার যাতে বিকাশ হয় সেদিক নজর দিতে হবে। রূপকথার সম্ভার, রাজপ্রত্র-রাজকন্যা, ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমীর গল্প আজ কোথায়! শিশুদের মনের অবরুদ্ধ আবেগ নিঃসৃত হয় এইসব গল্প পাঠ করলে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, যদি গান, নাচ, অঙ্কন, আবৃত্তিকে শৈশব থেকেই শেখানো যায়, তবে শিশুরা ভালো শখের সন্ধান পাবে। প্রতিকূলতার মধ্যে জীবন হয়ে উঠবে আনন্দমুখর। শৈশব থেকেই পরাজয়কে মেনে নিতে শেখা, পরবর্তী জীবনে চাপমুক্ত থাকার আর একটি গ্রহণীয় পদক্ষেপ।
অভিভাবক এবং শিক্ষকদের মিলিত প্রচেষ্টায় শিশুর জীবন হয়ে উঠতে পারে সুন্দর এবং সুফল। কবির সঙ্গে ছন্দি মিলিয়ে শিশুরা যেন বলে উঠতে শেখে ‘আর কিছু না চাই/ যেন আকাশখানা পাই/আর পালিয়ে যাওয়ার মাঠ’।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন