×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

অল্পবয়সীরাও আজকাল আক্রান্ত হচ্ছেন স্মৃতিভ্রংশ রোগে

বি.কে. রোশনী
2019-02-08 11:47:20

যে কোনো বয়সের গুরতর স্মৃতিভ্রংশকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় আলজাইমার ডিমেনসিয়া বলা হয়ে থাকে। এই অসুখের মূল লক্ষ্য স্মৃতি হারিয়ে যাওয়া হলেও স্মৃতি হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বুদ্ধি, মেধা, আবেগ, বিচার, চিন্তা তথা মানুষ চেনার ক্ষমতা ইত্যাদিও স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। শুধু তাই নয়, এই রোগ এমন কষ্টকর রোগ যে, রোগক্রান্ত ব্যক্তির আচার-আচরণ, ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক দায়-দায়িত্ব, চিন্তা-ভাবনারও অবনতি ঘটে। মানুষের যে স্বাভাবিক বোধশক্তি তা অনেকটাই ধ্বংস হয়ে যায়। যেমন, খেয়ে বলবে খাইনি। দাঁত ব্রাশ করার জায়গায় চুশ ব্রাশ করা শুরু করে দেয়।

এই রোগে চিত্তের অধিকাংশ উৎকর্ষ লোপ পায় বলে একে চিত্তভ্রংশ ‍ডিজিজ বলেও আখ্যায়িত করা হয়। অর্থাৎ মনের সমস্ত উৎকর্ষতা বা কোয়ালিটি লোপ পেয়ে যায়। রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে মনে হয় বুদ্ধিহীন, মনহীন, একটা জড় বস্তু। কখনো হাসে, কখনো কাঁদে, কখনো কী করে বুঝতে পারে না। সব ভুলে যাওয়াই এই রোগর ধর্ম। ১৯০৭ সালে জার্মান ডাক্তার অ্যালোট আলজাইমার প্রথম এই অসুখটির বর্ণণা দেন। তার নামেই নামকরণ করা হয় এই রোগটির।

এই রোগটি দেখা দিলে এর চিকিৎসা বেশ জটিল। শুধু তাই নয় সুস্থতার গ্যারান্টি দেওয়াও কঠিন। এই রোগীকে পরিচর্যা করা কম বড় কথা নয়। একটি অবোধ শিশুর চেয়েও করুণ অবস্থা হয়ে থাকে রোগীর। সেজন্য এই রোগ হওয়ার আগেই সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। এই রোগে পরিবারের সদস্যদেরও যথেষ্ট মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়।

কয়েকটি ঘটনা

  • আমার প্রিয় একজন বিজ্ঞান শিক্ষক, খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আগরতলার বাড়ি বিক্রি করে কলকাতায় ছেলের কাছে থাকতেন। ওনার এই রোগ দেখা দেয়। বহু চিকিৎসা করার পরও সুস্থ হননি। একদিন সবার অলক্ষ্যে ঘর থেকে বের হয়ে যান। তারপর দু’-তিনদিন ওনার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে পুলিশের প্রচেষ্টায় বিষ্ণুপুরে ওনাকে পাওয়অ গেল কিন্তু মৃত অবস্থায়।
  • ভদ্রলোক ভাত খাবার একটু পরেই হৈ-চৈ করতে শুরু করল, কী ব্যাপার, ও নাকি সারাদিন উপোস করে আছে অথচ বাড়ির লোক খেয়াল রাখে না। আবার খাবার দেওয়া হল, একটু মুখে দিয়েই ফেলে দিলেন। বললেনম এইমাত্র খিচুড়ি-ডিমের ওমলেট খেলাম, আবার কী করে খাব ?
  • পাড়ার মাস্টারমহাশয়, রাত্রে ফ্রিজ খুলে জল খেলেন, হাতের চশমটা ফ্রিজে রেখে দিয়ে জলের বোতল টেবিলে রেখে শুয়ে পড়লেন। তারপর সকালে উঠে চশমা কোথায়, চশমা কোথায় করে বাড়ি মাত করে দিলেন। পরে ফ্রিজ খুলতে চশমা পাওয়া গেল।
  • আমার পরিচিত একটি মেয়ে সারাদিন চিৎকার-চেঁচামেচি করে। কখনো বলে চিরুনি কই, কখনো বলে জুতো কই। কখনো বলে বইটা কোথায়। পরীক্ষা করে দেখা গেল মেয়েটি কোথায় কী রাখে মনে করতে পারে না। ভুলে যাওয়ার অভ্যাস নয় বরং স্মৃতিভ্রংশ রোগের লক্ষণ পরিষ্কার।
  • পাশের বাড়ির এক ভদ্রলোক হঠাৎ বিবস্ত্র হয়ে গেলেন। হাসতে হাসতে বলছেন, প্যান্টের ওপর লুঙ্গি পরে বসে আছি, কি ভুলো মন আমার।

তিনি যে বিবস্ত্রএই অনুভবটাও তার নেই। বারবার বলা সত্বেও বুঝতে চাইলেন না। তিনি বিবস্ত্র ও অসুস্থ।

স্মৃতিভ্রংশ কী ধরনের অসুখ

এই রোগটি আসলে এক প্রকার ডিজেনারেটিভ ডিজিজ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সব কিছুর যেমন ক্ষয় হয় তেমনি ব্রেনেরও ক্ষয় হয়। মানুষের শরীরের প্রায় সব কোষ ক্ষয় হলেও আবার নতুন করে তা সৃষ্টি হয়। কিন্তু ব্রেনের পূর্ণাঙ্গ স্নায়ুকোষের ডিজেনারেশন বা ক্ষয় হলে তা বার নতুন তৈরি হয়না। ব্রেনের স্নায়ুকোষ কেন শুকিয়ে যায় তার কারণ আজও ভালো করে জানা যায়নি। যদিও এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা ও গবেষণা চলছে, হয়তো অদূর ভবিষ্যতে সব কিছু জানা ও চিকিৎসা করা সম্ভব হবে। যতদিন তা না হবে ততদিন সতর্ক থাকা জরুরি। প্রিভেনশন বহু সমস্যার মতো স্মৃতিভ্রংশ রোগকে প্রতিরোধ করতে পারে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া।

স্মৃতিভ্রংশ কেন হয়

মানুষের জীবন দীর্ঘায়ু হওয়াতে, গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়াতে হয়তো এর সাথে তাল মিলিয়ে স্মৃতিভ্রংশ রোগও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কিছুই চিনতে পারেন না, মনে রাখতে পারেন না। কী করছেন, কেন করছেন, কী করা উচিত, কী করা উচিত নয় বুঝতে পারেন না। সবসময় ভাবলেশহীন অবস্থাতেই দিন কাটান। এরকম অবস্থাকে ফ্ল্যাট মুড বলা হয়ে থাকে।

বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বারবার মাথায় আঘাত পেলে স্নায়ুকোষের ক্ষয় হয়। আবার হঠাৎ করে কোনো মানসিক আঘাত পেলে ও সহ্য করতে না পারলে বা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চাপ নিতে না পরলে স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

স্মৃতিভ্রংশ বা চিত্তভ্রংশ নানা কারণে হয় এবং তা নানা ধরনের হয়ে থাকে। যেমন ব্রেনে কোনো সংক্রমণ হলে, ধমনীতে চর্বি জমে বা অন্য কোনো কারণে ব্রেনে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হলে, মাথায় রক্তপাত হলে, ব্রেনে টিউমার হলে বা কোনো কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও এই রোগ হতে পারে। ব্রেনের স্নায়ুকোষের ক্ষয় ও সেই সমস্যা থেকে উদ্ভুত ডিমেনসিয়াকে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের ভাষায় আলজাইমার্স বলা হয়ে থাকে। ভাবার কোনো কারণ নেই যে এই রোগ শুধুমাত্র বয়স্ক ব্যক্তিদেরই হয়ে থাকে, আজকাল যে কোনো বয়সের মানুষকে এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে।

আঠেরো থেকে কুড়ি বছর বয়সী একটি মানুষের মস্তিষ্কে থাকে প্রায় এক হাজার কোটি স্নায়ুকোষ। রোজ প্রায় পাঁচ হাজার স্নায়ুকোষের মৃত্যু হয়ে যায় এর ফলে মস্তিষ্কের ওজনও কমে যায়। পরিণত মানব মস্তিষ্কের ওজন এক কেজি তিনশো গ্রাম থেকে সাড়ে তিনশো গ্রাম। আলজাইমার হলে মস্তিষ্কের ওজন শতকরা কুড়ি ভাগ বা তারও বেশি কমে যায়। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলা হয় মস্কিষ্ক ক্ষয় বা সেরিব্রাল অ্যাট্রফি। এইসব রোগীদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের যে অবনতি ঘটে তা সবার ক্ষেত্রে সমান হয় না।

এই স্মৃতিভ্রংশ রোগীরা তাদের মানসিক প্রকাশ অদ্ভুতভাবে করে থাকেন। দুঃখের কথায় হাসছেন বা হাসির কথায় কাঁদছেন। ভালো ভালো মানুষ অথচ খিটখিটে ভাব, সন্দেহ প্রবণ মানসিকতা, ভীত-সম্ত্রস্ত, অবসাদে বিমর্ষ বা দুঃশ্চিন্তায় স্রিয়মান। অনেক সময় উদাস হয়ে বসে থাকে, ভাবলেশহীন অবস্থায় আত্মহত্যা করতে চায়। মস্তিষ্কের সাথে মনও রোগাক্রান্ত হয়ে যায়। ফলে মনের সাথে মস্তিষ্কের চাপ শরীর নিতে পারে না। উদ্দেশ্যহীনভাবে জীবন অতিবাহিত করতে গিয়ে নানারকম দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। এর সাথে যদি পারিবারিক অবহেলা ও ঘৃণা থাকে তাহলে তো কথাই নেই, মৃত্যুর হাতছানিকে আলিঙ্গন করতে বাধ্য হয়।

স্মৃতিভ্রংশ থেকে ভালো থাকার

জন্য কী কী সাবধানতা অবলম্বন

করা দরকার

  • মস্তিষ্কের ব্যায়াম করা দরকার। মস্তিষ্কের সঠিকভাবে ব্যবহার করা দরকার।
  • মনকে শান্ত ও আনন্দময় করে রাখা দরকার। এর জন্য ধ্যান বা মেডিটেশন হল প্রকৃষ্ট চাবিকাঠি।
  • অযথা ব্যর্থ বা নেতিবাচক চিন্তায় জর্জরিত না থেকে সৃষ্টিশীল শক্তি যা প্রত্যেকের মধ্যে আছে তা কাজে লাগানো দরকার। ক্রোধ মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
  • নিছক অবসর জীবন ভালো নয়। যে কোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখা দরকার। সবচেয়ে ভালো হয় যদি সেবামূলক কাজে ব্যস্ত থাকা যায়।
  • বই পড়া, লেখালেখি করা দরকার। মস্তিষ্কের কাজে লাগানো দরকার। পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্রেনকে কাজে লাগাতে না পালে ব্রেনের স্নায়ুকোষের মৃত্যু ঘটে।
  • আত্মবিশ্বাস ব্রেনকে সতেজ রাখে। আত্মবিশ্বাসী হওয়া দরকার। নিজের ওপর নিজে আস্থা রাখা ও দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া মানেই স্মৃতিভ্রংশ থেকে দূরে থাকা।
  • অত্যধিক মদ, নেশার সিরাপ, গাঁজা, ঘুমের ওষুধ, সিগারেট ইত্যাদি শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য ভালো নয়। তাই সব ধরনের নেশা বর্জিত জীবন দরকার।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা অবশ্য দরকার। প্রাণায়াম এই ক্ষেত্রে খুব উপকার করে। বিশেষ করে ভ্রামরী প্রাণায়াম রোহ পনেরো বার অভ্যাস করতে হবে।
  • পরিমিত ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া দরকার। চর্বিজাতীয় খাদ্য, হাই স্যাচুরেটেড ফুড, নুন(কাঁচা) যতটা সম্ভব কম খেতে হবে।
  • মন ও মস্তিষ্ক সতেজ, শান্ত ও কার্যকর রাখতে নিয়মিত ধ্যান বা সহজ রাজযোগ মেডিটেশনের অভ্যাস করতে হবে। প্রতিদিন কুড়িমিনিটের ধ্যান অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকতে সাহায্য করবে। অভ্যাসে কি না হয়, সুস্থতা হাতের মুঠোয় চলে আসে।

কিছু কথা কিছু সাবধানতা

  • পরিবারের কারোর এই স্মৃতিভ্রংশ রোগ থাকলে অন্য সদস্যদের হওয়ার সম্ভাবনা একবারে বাতিল করা যায় না।
  • পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের এই রোগের সম্ভাবনা বেশি (একটু), কারণ গড় আয়ু বেশি হয়ে থাকে।
  • চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে বিশ্বের তিনজন আলজাইমার রোগীর মধ্যে দু’জন হবেন ভারতীয়।
  • অনেক সময় মানসিক অবসাদ.  মানসিক কষ্ট, একাগ্রতার অভাব ইত্যাদির কারণে ভুলে যাওয়া প্রবণতা দেখা যায়। একে ডিমেনসিয়া বললে ভুল করা হয়। আসলে এ হল ফলস ডিমেনসিয়। মানসিক সমস্যা ঠিকে হলে এসব ঠিক হয়ে যাবে।
  • রোনাল্ড রেগন, স্যার উইস্টন চার্চিল, মার্গারেট থ্যাচার, কাজী নজরুল ইসলাম সহ বহু গুণী ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সুতরাং ভয় পাবার কিছু নেই। যে কোনো কারোর যে কোনো সময় হতে পারে। এত অপরাধবোধে ভোগা ঠিক নয়। বরং সুচিকিৎসা, দৃঢ় মানসিকতা সুস্থ হতেই সাহায্য করবে।

রোগীর প্রতি পরিবারের কর্তব্য

রোগীর প্রকৃত যত্ন, সহযোগিতা ও সহমর্মিতার সঙ্গে সেবা করতে হবে। একা ঘরের বাইরে যেতে দেওয়া ঠিক নয়। সম্ভব হলে রোগীর নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর সমেত কার্ড রোগীর সাথে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বদা রোগীর সঙ্গে কেউ থাকলে ভালো হয়। রোগীর ক্ষতি হতে পারে এমন কোনো জিনিস তার কাছে রাখা ঠিক হবে না। শুধু তা নয়, রোগী যেন ‍বুঝতে না পারে তার এই ধরনের রোগ হয়েছে।

অবশেষে

এই রোগ কেউ ইচ্ছে করে নিয়ে আসে না। কিন্তু রোগের কথা জানা থাকলে, সাবধানতা অবলম্বন করতে পারলে, নিয়ম মেনে চললে এই রোগকে পরিহার করা যায়।

আলজাইমার্স রোগীদের এখন ভালো চিকিৎসা হচ্ছে কর্নাটকে (ব্যাঙ্গালোর)। রোগ হবার আগেই ইনফর্মেশন স্টোর করে রাখা দরকার যাতে সময়ে কাজে লাগে।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন