×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

শীতবস্ত্র বেশি ব্যবহার করলে সর্দি-কাশির সমস্যা বাড়ে

ডাঃ রামকৃষ্ণ ঘোষ মন্ডল
2019-02-08 11:53:47

যেকোনো রোগই সারা বছর কম-বেশি মানুষকে আক্রমণ করতে পারে। বর্তমানে পরিবেশ দূষণ এবং ঋতুচক্রের ও আবহাওয়ার অস্বাভাবিকতার জন্য বিভিন্ন ঋতুতে নানা রোগের প্রকাশ মানুষের মধ্যে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত এই ছ’টি ঋতুতেই কম-বেশি দেখা যাচ্ছে।

বর্ষার সময় অবিরত বর্ষণের ফলে মানুষ বিশেষ বিশেষ কিছু রোগ যেমন আক্রান্ত হয়ে থাকে, তেমনি শীতকালে বিশেষ কিছু রোগে বেশি ভোগেন। রোগগুলোর মধ্যে সর্দি-কাশি, সাইনাসের প্রদাহ, টনসিলের ব্যথা, ব্রষ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, হাঁপানি ইত্যাদির সঙ্গে এসময় সারা বছর কষ্ট পাওয়া বাতের রোগীদের বাতের কষ্ট বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এভাবেই বিভিন্ন ঋতুতে মানুষের ওই ঋতুর রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।

দেখা গেছে একভাবে থাকা প্রচন্ড গরমের তাপপ্রবাহের সময় বহু রোগজীবাণু ও মশা জাতীয় প্রাণীদের সংখ্যা বহু গুণ কমে যায়। যার ফলে সে সময়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হ্রাস পায় কিন্তু রোদের মধ্যে যারা বেশিক্ষণ কাজ করেন অথচছাতা বা টুপি ব্যবহার করেন না এবং গরমের মধ্যে আইসক্রিম বা ঠান্ডা পানীয় পান করেন তারা অনেকে সানস্ট্রোক এবং টনসিলের ব্যথায় আক্রান্ত হতে পারেন। এছাড়া গীষ্মকালে মানুষ অন্যান্য বহু ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারেন। কিন্তু গরমে যারা সঙ্গে বিশুদ্ধ পানীয় জল না রেখে বাড়ির বাইরে যেখানে সেখানে দূষিত জল প্রচন্ড গরম পান করেন তারা জনডিস, কলেরা, আন্ত্রিক, টাইফয়েড ইত্যাদি জলবাহিত রোগ দ্বারা যে কোনো ঋতুতেই আক্রান্ত হতে পারেন।

প্রচন্ড শীতে অর্থাৎ শৈত্য প্রবাহের সময় আমাদের রাজ্যে কিছু মানুস সর্দি-কাশি ও শ্বাসযন্ত্রের অল্প দু’-চারটি রোগ ছাড়া অধিকাংশ মানুষ সুস্থ-সবল ও তুলনামূলকভাবে বেশি কর্মঠ থাকেন। সুস্থ মানুষ বা অসুস্থ রোগীরা সকল খাদ্য অন্যান্য ঋতুর চেয়ে শীতকালে আরও সহজে হজম করতে পারেন। কারণ শীতের রাতে মানুষের বেশি সময় ঘুমোবার সুযোগ হয় এবং হাঁটাহাঁটি ও কায়িক পরিশ্রম বেশি করারও পরিস্থিতি থাকে। যেটা প্রচন্ড গরমে বা বর্ষায় থাকে না। এ সময় সকল সুস্থ মানুষের এ রাজ্যের স্বল্প স্থায়ী তীব্র শীত উপভোগ করা উচিত। শিশুদেরও বেশি উলের বা টুটি-মোজা দিয়ে ঢেকে রাখা ঠিক নয়। যারা বেশি ধোঁয়া ওঠা প্রায় ফুটন্ত জলে স্নান বা শীতবস্ত্র বেশি ব্যবহার করেন তারা বেশি সর্দিকাশিতে ভোগেন। শীতকালে ঘাম কম হওয়ার ফলে মানুষের রক্তের চাপ কিছুটা বেড়ে যায়। সেজন্য খুব শীতে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের মাঝে মাঝে রক্তচাপ পরীক্ষা করা দরকার। শীতের প্রথম দিকে অর্থাৎ হেমন্তের শেষে যখন ঠান্ডা উত্তরের হিমেল হাওয়া বা শিশির পড়ার সময় হয় তখনও খুব গুমোট ভাব দুপুরে ও সন্ধ্যায় থাকাতে কিছু মানুষ ওই ঠান্ডা হাওয়া ও হিম অনেক সময় সহ্য করতে পারে না। বিশেষ করে যাদের সর্দিকাশির প্রবণতা বা বংশে সর্দিকাশি বা হাঁপানি ইত্যাদি থাকে তারাই এর দ্বারা সহজে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের শুরু হয় প্রচুর হাঁচির সঙ্গে নাক দিয়ে জল পড়া এবং কিছু মানুষের বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষ দীর্ঘস্থায়ী সর্দিকাশি কিংভা জ্বর ও ব্রষ্কাইটিসে আক্রান্ত হতে পারে। সেজন্য সময়মতো হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দিয়ে সেই সর্দিকাশি-জ্বর ইত্যাদিকে অনেকটাই এড়িয়ে চলা যায়। ওষুধগুলোর উল্লেখযোগ্য হল অ্যাকোনাইট, বেলেডোনা, ব্রাই ওনিয়া, ইপিকাক, জেলসিমিয়াম, কেলি-সালফ, ফেরাম ফস, অ্যানটিম টার্ট, অ্যান্টিম  আর্স, স্পঞ্জিয়া, জাস্টিশিয়া ইত্যাদি।

এছাড়া শীতকালে যখন প্রচন্ড শীত পড়ে তখন বাতের কষ্ট ও চর্মরোগের বৃদ্ধি অনেকের মধ্যে দেখা যায়। ঠান্ডা জলে কাজকর্ম করে মহিলাদের হাত-পা অসাড় হয়ে যায় এবং পায়ের আঙুলে ভীষণ ব্যথা হয়। আবার অনেকের ঠান্ডায় গালের পাশে প্রচন্ড ঠান্ডা হওয়া লেগে ফেসিয়াল প্যারালিসিসিস প্রায়ই হয়। শীতের এসকল রোগে কষ্টিকাম, পেট্রোলিয়াম, সোরিনাম ইত্যাদি ওষুধ বেশি ব্যবহার করা হয়।

আমি একবার আমার ক্লিনিকে দেখেছিলাম এক অ্যাডভোকেট তার অস্পষ্ট জড়ানো কথার মধ্যে জানান যে এ ধরনের কষ্ট হঠাৎ একদিন দেখা দেয়। তিনি বড়দিনের ছুটিতে ঠান্ডা এলাকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন এবং গত কালই ফিরেছেন।

ওই ভদ্রলোকের সব রোগবিবরণ শুনে কষ্টিকাম ৩০ দু’মাত্রা দেওয়া পরদিন থেকে উন্নতি শুরু হয়ে সাতদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। শীত ঋতুর বিভিন্ন রোগে কষ্টিকাম একটি প্রয়োজনীয় ওষুধ। আঠেরো বছর বয়সের গ্রামের যুবকের গত পাঁচ বছর যাবৎ তার দুটো পায়ের নিচের অংশের হাঁটু পর্যন্ত ফাটার চিকিৎসার জন্য আসে। জানতে পারি ডিসেম্বর থেকে ফেব্রয়ারি পর্যণ্ত এই রোগে কষ্ট পায় এবং রোগটি ক্রমে ক্রমে বেড়ে যাচ্ছে। আরও জানা যায়, দশ বছরের আগে পায়ের চর্মরোগ অ্যালোপ্যাথিক মলম লাগিয়ে এক বছর আরোগ্য হয়ে যায়। এ সকল লক্ষণ ছাড়াও আরও কিছু সোরিনামের লক্ষণ থাকায় ওই ওষুধ দিয়েই সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যায়। বেশ কয়েক বছর ওই যুবক চর্মরোগ ছাড়াও পূর্বের অন্যান্য বিভিন্ন রোগের ব্যাপারে সুস্থ আছে। এছাড়া বিভিন্ন শীতকালের বা হঠাৎ ঠান্ডা পরিবেশে প্রকাশ পাওয়া রোগে ব্যারাইটা কার্ব, ম্যাগ ফস, ক্যামোমিলা, ডালকামারা , হিপার সালফ, কেলি কার্ব, ম্যাগ ফস, নাক্স ভুম, সাইলিসিয়া ইত্যাদি ওষুধগুলো ব্যবহার করা হয়।

এক সোরিয়াসিসে আক্রান্ত প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর বয়স্কা মহিলা আমার কাছে রোগটির চিকিৎসার সময় জানিয়েছিলেন যে তার চর্মরোগ প্রায় পনেরো বছর যাবৎ ভোগাচ্ছে। সারা বছরই থাকে। অ্যালোপ্যাথিক বিশেষজ্ঞরা কেবল চামড়ায় লাগাবার ওষুধ দিচ্ছেন। আমি মহিলাটিকে বলেছিলাম ওই মলম লাগানো বন্ধ করে ধৈর্য নিয়ে নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, পেট্রোলিয়াম জেলি ইত্যাদি লাগানো যাবে। প্রথমে কেলি-আর্স আট মাত্রা দিয়ে প্লেসিবো তিনমাস খেয়ে যেতে বলি। তখন বর্ষাকাল, রোগটি খুব বেড়ে যাওয়ার মহিলা এক মাস পরেই রিপোর্ট দিতে আসেন। এই বৃদ্ধি হোমিওপ্যাথিক ওষুধের জন্য ছিল না। অ্যালোপ্যাথিক মলম বন্ধ করার জন্যই বেড়েছিল। এই বাড়াটা ভালো লক্ষণ হলেও মহিলা তার গালের চর্মরোগের বৃদ্ধির জন্য বাইরে বা আত্মীয়দের কাছে যেতে লজ্জা বোধ করায় এবং রোগীর অধৈর্য ভাবে দেখে কেবল মুখের, গালের চর্মরোগ অ্যালোপ্যাথিক মলম লাগাবার উপদেশ দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। মহিলা আমার উপদেশ মতো গায়ে ঢাকা চামড়ার আক্রান্ত অংশে মলম লাগাননি। ক্রমে দেখেছিলাম যে শীত ঋতুতে রোগটির দারুণ ভাবে বাড়ার লক্ষণ। আমি মহিলাকে অন্যান্য আরও বহু লক্ষণ মিলিয়ে সোরিনাম ২০০ একমাত্র দিয়ে প্রতি পনেরো দিন অন্তর রিপোর্ট দিয়ে প্লাসিবো খাইয়ে পুনরায় রিপোর্ট দিতে বলেছিলাম। এভাবে শীত কাটার পর রোগটি কমতে কমতে সম্পূর্ণ এক বছরের মধ্যেই আরোগ্য হয়ে যায়। কেবল ওষুধ ছাড়া জেলি লাগিয়ে যেতে বলি। ভদ্রমহিলার মুখের চর্মরোগও কমে যায়। আরও একমাত্র সোরিনাম ২০০ দিয়েও আর রোগটির বৃদ্ধি ঘটেনি। তিন বছর ওষুধ অর্থাৎ প্লাসিবো খাইয়ে রোগটি যে সম্পণূ আরোগ্য হয়েছে সেটা বোঝা গিয়েছিল।

সোরিনাম ওষুধটি চর্মরোগ ছাড়াও লক্ষণ পাওয়া গেলে এই ওষুধ আরও বহু রোগে ব্যবহার করা যায়।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন