শ্বাস-প্রশ্বাস কখন হয়ে ওঠে কষ্টকর
ডাঃ পূর্ণেন্দু শেখর বিশ্বাস
2019-02-08 12:09:05
নানা কারণে শ্বাসকষ্ট হয়। কিন্তু যখন ফুসফুসের অসুস্থতার কারণে হয় তখন মূলত দেখা যায় দিব্যি ভালো, পড়াশোনা, খেলাধুলো, অথবা অফিস সবই স্বাভাবিক। হঠাৎ মাঝ রাতে বা ভোররাতে দম আটকে যাওয়ার জন্য তড়াক করে উঠে বসল। শ্বাস গ্রহণের জন্য আঁকু-পাঁকু, কিছুতেই সহজ শ্বাস নেওয়া হচ্ছে না। ঘরে যেন বাতাস নেই। অস্থিরতা, উৎকন্ঠ—হাওয়া চাই। ঘাম হচ্ছে। বুক-পেট ওঠা-নামা করছে। জানালা-দরজা খুলে সংকট মোচনের চেষ্টা। এমনকী কড়া শীতের রাতেও। খুক খুক করা কাশি। সেটি ঘড়-ঘড়, ঘঙ-ঘঙ, কুঁই-কুঁই, সাঁ-সাঁ হতে পারে। রোগ যত পুরনো হয়, ঘড়-ঘড় অবস্থা তত কমে যায়। একটা সময় আসে কোনো শব্দ আর হয় না। শুধু শ্বাসকষ্ট। স্বর পর্যন্ত বদলে যায়।
নিদান তত্ত্ব
ফুসফুসের বায়ুকোষগুলি ক্রমশ পরিসরে ছোট হয়ে আসে। অর্থাৎ কোষগুলি ফুলে যায়। কারও কারও শুকিয়ে গুটিয়ে আসে। ফুসফুসের আকার সংকুচিত হয়ে আসে। কারো কারো এ দুয়ের বদলে নিঃসরণ ক্ষমতা কমে। কফ জমে বায়ুকোষগুলি বন্ধ হয়ে আসে। এরা একটু কফ বার করতে পারলেই রিলিফ পায়।
ডাঃ হ্যানিম্যান নিদান অবস্থাকে পরিষ্কারভাবে তিনটি অংশে ভাগ করেছেন। তা হল—
১. ক্রিয়াগত দুর্বলতা বা বিশৃঙ্খলা.
২. কোষকলার ক্ষীণতা বা বৃদ্ধি এবং
৩. কোষ-কলার ক্ষয় বা ধ্বংস।
চর্মরোগ—চুলকানি, ঘা-প্যাঁচড়া, দাদ সহ একজিমা, সোরিয়াসিস সঠিকভাবে আরোগ্য না হলে বা উচ্চ জ্বর দ্রুত নামিয়ে দিলে ফুসফুসের ক্রিয়াগত দুর্বলতা তৈরি হতে পারে। কিন্তু তাতেই শ্বাসকষ্ট হয় না। অন্য কারণেদের আগমন অপেক্ষায় থাকে। প্রাথমিকভাবে সে জীবাণু।
অন্য কোনো রোগের কারণে থেকে ফুসফুসের কোষ কলার সংকোচন বা বৃদ্ধির ঘটনা ঘটলে ফুসফুস সেই অবস্থায় স্থিত থাকে। এ ক্ষেত্রেও অন্যান্য রোগ-ভোগ ও অন্যান্য ওষুধের কুফলে রোগ-কলার ক্ষীণতা বা বৃদ্ধি ঘটে। লেপ্রসি, টিবি, গনোরিয়া বা অনুরূপ চরিত্রের রোগ জীবাণু এই পরিবর্তন বেশি সহায়ক। আর কোষ-কলার ক্ষয় বা ধ্বংস সেখানেই আসে যেখানে ক্ষয় বা ধ্বাংস ধর্মী আক্রমণ শরীরে প্রবেশ করে। যেমন, সিফিলিস, এইডস, টিবি, ক্যানসার ইত্যাদি।
কপাল ভালো, আমাদের দেশে বিশেষত নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে ক্রিয়াগত বৈকল্যই বেশি, যা মূলত কক্কাস গ্রুপের জীবাণু সংক্রমণ থেকে সৃষ্ট। যে পথ দিয়ে এরা আসে এবং আক্রমণ শানায়, তা হল ব্রষ্কাস, ব্রষ্কিয়োলাস। আর এই জন্য বেশিরভাগ শ্বাসকষ্ট তথা হাঁপানি রোগীকে বলা হয় ‘সাফারিং ফ্রম ব্রষ্কিয়েল-অ্যাজমা।
তাহলে কি আরও কোনো রোগে বা কোনোভাবে শ্বাসকষ্ট অর্থাৎ হাঁপানি হতে পারে ? হ্যাঁ, পারে। আর সে জন্যই ডাক্তারবাবুরা ডি.ডি অর্থাৎ ডিফারেন্সিয়াল ডায়াগনোসিস মানে রোগের পৃথকীকরণ করে নেন। তার মধ্যেপথমেই ভাগ করেন আসল শ্বাসকষ্ট আর নকল অর্থাৎ কৃত্রিম শ্বাসকষ্ট। ভাবছেন, সে আবার কি! হ্যাঁ, সত্যিই হয়। আপনারা ব্রাজিলের যুদ্ধ দেখেছেন তো। এক একজন ফুটবলার বল নিয়ে ছুটে ছুটে শেষে হাঁপায়। নাকে আর কুলোয় না, মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়। একটু রেস্ট নিয়েই ঠিক। আবার দৌড়াচ্ছে। এটি কৃত্রিম। বদ্ধ ঘরে অনেক শিশুদেরও হয়। বয়স্কদেরও। হাওয়া চলাচল হলেই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি রোগে হয় ? বিশ্রামে পুরো স্বাভাবিক হয় না। যদি হৃদযন্ত্রের রোগ থাকে, তাহলে কিন্তু তারও শ্বাসকষ্ট হয়। চলতে, বেশি কথা বলতেও। যারা বড় রকমের রক্তশূণ্যতায় ভোগে, বেশি শ্রমে তাদেও হয়। যারা কিডনির খারাপ অবস্থায় পৌঁছে গেছে, তাদেরও হয়। যেসব শিশুদের থাইমাস বৃদ্ধি হয়, তাদেরও হয়। আর এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক।
এইসব তফাত-করণের জন্য অবশ্যই ক্লিনিক্যাল সিম্পটম্স আছে। কিন্তু সবসময় তাতে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে একটিতে স্থির, নিশ্চয় হওয়া দুঃসাধ্য। সেই জন্য বিজ্ঞানীরা পথের সন্ধান দিয়েছেন। আর ওই জন্য ডাক্তারবাবুরা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠান। হ্যাঁ, ল্যাবরেটরি অবশ্যই খরচসাপেক্ষ। তবুও পথ কি! সর্বজনীন চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তাদের রাশ কারা টেনে ধরবেন, তা আপনারা জানেন।
ফুসফুসের হাঁপানিতে সাধারণথ কী কী দেখে নেওয়ার দরকার হয় ? যেমন ধরুন, ফুসফুস দুটির আকার ঠিক আছে কি না, অবস্থান ঠিক আছে কি না। বুকের ডিজিটাল এক্স-রে-তে এগুলি ভালোই ধরা পড়ে। বায়ু গ্রহণ-বর্জনের স্বাভাবিক পরিমাণ বজায় আছে কি না তা দেখে নেওয়া জরুরি। যেমন মাঝারি রকমের বুকে ১৮০ কিউবিক ইঞ্চি হওয়া ধরে। তা মানুষ সাধারণত এর ৬ ভাগের ১ ভাগ অর্থাৎ ৩০ কিউবিক ইঞ্চি শ্বাস নেয়। সত্য, দাপরে হয়তো অনুরূপ থেকে থাকবে। মানুষের শারীরিক গঠন, গ্রহণ-বর্জন ক্ষমতা দিনকে দিন পাতালমুখী। অথচ পাচ্ছে বেশি, খাচ্ছে, পান করছেও বেশি। শোওয়া অবস্থায় আমরা যদি প্রতি মিনিটে ১৬ বার শ্বাস গ্রহণ করি, তাহলে ১ মিনিটে পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ৪৮০ কিউবিক ইঞ্চি। পরিশ্রমের সময় ৮৬০ আর দৌড়-ঝাঁপের সময় ৩০০০ কিউবিক ইঞ্চি বায়ু গ্রহণ করা হয়। রেচক, পূরক, কুম্ভক বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, আসন দ্বারা এই নিয়মের কম-বেশি করা যায়। বায়ু গ্রহণ-বর্জনকে বিজ্ঞানের কয়েকটি পরিভাষায় সাজনো হয়েছে। যেমন---
টাইডাল এয়ার: সহজ শ্বাসে ৩৫০-৫০০ সিসি হাওয়া নেওয়া হয়।
কমপ্লিমেন্টারি এয়ার: বড় করে শ্বাস গ্রহণে যতটা নেওয়া যায়। পুলিশ-মিলিটারি বা খেলার পরীক্ষার গেলে দিব্যি ধরা হয়। পরিমাণ ২০০০ থেকে ৩৫০০ সিসি।
রিজার্ভ এয়ার: ফুসফুসে মজুত থাকে, ১৫০০ সিসি, যা ইচ্ছে করলে বের করেও দেওয়া যায়।
ভাইটাল ক্যাপাসিটি: ৩৫০০-৫০০০ সিসি গ্রহণ করে ফুসফুস ভরা যায়। এই শক্তিটা দরকার। অভ্যাসে অবশ্যই সম্ভব।
রেসিডুয়াল এয়ার: স্বাভাবিক দীর্ঘ প্রশ্বাসে যে বায়ু বের না হয়ে থেকে যায়। তা ১৫০০ সিসি প্রায়।
অ্যালভিওলার এয়ার: বায়ুকোষে যা ধরে অর্থাৎ রিজার্ভ+ রেসিডুয়াল এয়ার=৩০০০ সিসি।
ডেড স্পেস এয়ার: নাক, গলা, ট্রাকিয়া, ব্রষ্কাইতে কিছু বাতাস থাকে, যা রক্তে পৌঁছয় না। গড় পরিমাণ ধরা হয় ১৫০ সিসি।
মোট লাঙ ভলিউম: সবরকম মিলিয়ে দাঁড়ায় ৫৫০০ সিসি।
এই যে বাতাস গ্রহণ-বর্জনের কর্মকান্ড, এটি কোথায় বিঘ্নিত হচ্ছে, কী পরিমাণে, তা জরিপ করার প্রয়োজন কখনো কখনো হয়ে ওঠে। চিকিৎসক প্রয়োজন তা করবেন।
এছাড়া কোষ-কলার হ্রাস-বৃদ্ধি তথা টিউমার, বা ক্ষয় দেখে নেওয়া জন্য এম.আর.আই স্ক্যান প্রয়োজন করানো হয়। অর্থাৎ আভ্যন্তরীণ অবস্থা জানা বোঝার জন্য এইসব পরীক্ষা।
ফুলের রেণু, ধুলো, পেট্রোল-ডিজেল ইত্যাদির গন্ধ অনেকেরই সহ্য হয় না। এক কথায় বলে দেওয়া হয় অ্যালার্জি। ইডিওসিনক্রোমি। যেমন ধরুন, কোনো কোনো মানুষ আছেন যিনি বা যারা বিশেষ বিশেষ কোনো আত্মীয়, বন্ধু শ্রেণীর মানুষ দেখলেই কেমন করে ওঠেন। তাকে সহ্য হয় না। রাগ, বিরক্তি, ক্ষোভ, ঘেন্না---কিন্তু প্রকাশ করেন না। ঘটনা কি ? কারণ অবশ্যই কিছু থাকে। অন্যদের তা অজানা থেকে যায়। ইডিওসিনক্রোমিও অসুস্থার ক্ষেত্রে তেমন ধরনের। এর সাবাহার জন্য রক্তের নমুনা নিয়ে ল্যাবে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া দেখা হয় রক্তের আর কোনও বড়সড় কিছু আছে কি না, যার ফলস্বরূপ শ্বসকষ্ট মানুষটির। ল্যাব রোগের আভ্যন্তরীণ অবস্থা জানতে সহায়ক। ক্লিনিকে বা হাসপাতালে চিকিৎসকের ধরা রোগ ল্যাব কনর্ফাম করে। এবং আভ্যন্তরীণ দুরবস্থাটি চিকিৎসার সাথে সাথে কত স্বাভাবিকের দিকে এগোচ্ছে পরবর্তীতে তা ধরা সহজ হয়। রোগীর চলাচলের ছাড়পত্র বাড়ানো সম্ভব হয়।
চিকিৎসা
মানুষ প্রকৃতির জীব। প্রতি জীবের মতো রয়েছে তার জন্ম-বৃদ্ধি-অন্তিম পরিণতি। প্রকৃতিতে যেমন জীবন ও মৃত্যুর ব্যবস্থা হয়েছে, তেমনি জীবাণুজাত রোগ থেকে বাঁচার পথ ও সন্ধান প্রকৃতিই রেখেছে। এই আরোগ্য নীতি হল-কোনো রোগ শক্তি তার সদৃশ (সিমিলার) বৃহত্তর রোগ শক্তি দ্বারা চিরতরে নির্মূল হয়।
চিকিৎসা শেষে আর রোগ না থাকলে আক্রান্ত মানুষটি তার (প্রাকৃতিক) রোগ-পূর্ব স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ও সুস্থ সবল জীবনছন্দই লাভ করে। ফলে ওষুধ থেকে আরও আরও নতুন নতুন রোগ তৈরি হয়ে চলে না। আর বিসদৃশ চিকিৎসাজত যত রোগই লাভ হয়, তার প্রত্যেকটিউ ডিজিজ ইনডিভিজুয়াল। অর্থাৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জীবাণু মেলে না। হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এই প্রাকৃতিক দৃষ্টান্ত মানব সমাজে চাক্ষুষ করেছিলেন। অদৃশ্য জীবনীশক্তিকে সহায়ক ভেষজকে পৌঁছে দিতে তিনি তার অসাধারণ উদ্ভাবনী মেধা দিয়ে আবিষ্কার করেন ভেষজ শক্তি প্রকরণ পদ্ধতি। যার ফলে প্রাপ্তি অপূর্ব, অদ্ভুত। এটি ধরার যন্ত্র এখনও বেরোয়নি। তাই কেউ কেউ তাচ্ছিল্য করেন। আমরা দেখি কাজ—তাই গ্রহণ।
এত কথা না বলে শুধু শ্বাসকষ্টের জন্য গুটিকয়েক ওষুধের নাম করলেই মিটে যেত। মিটে হয়তো যেত, কিন্তু কাজের কাজ হত না। আর এটি আদৌ বাঞ্ছনীয় নয়। রোগের নামেপ্রকৃতি তো ওষুধ দেখায়নি। তার ভেষজের গুণাগুণ ক্ষেত্রে একই হয় না। তাই আগাম ওষুধ বলেও দেওয়া যায় না। প্রতি ক্ষেত্রে অসুস্থতাটির হ্রাস-বৃদ্ধি অর্থাৎ কষ্ট কীসে বাড়ে-কমে, কখনোই বা বাড়ে-কমে, হঠাৎ এটি হওয়ার (জীবনযাপন বা আবহাওয়া, মানসিক বৈপররীত্য) কারণ, এগুলি দিয়েই পরীক্ষা করে রাখা ভেষজের সঙ্গে মেলাতে হয়।
এইরকম রোগী আরোগ্য করে হ্যানিম্যান জনশ্রুতিতে উঠেছিলেন। কখনো কখনো আটকেও যাচ্ছিলেন।
মানুষ জন্মের সাথে পিতৃ-মাতৃকুলের ভালোটাই শুধু পায় না, মন্দটাও পায়। বিষয়টি আজকের বিজ্ঞান করেছে। তা হল জিন। হ্যানিম্যান এটি ধরেছিলেন, তা হল অতীতে ভোগা রোগ আর বংশগত রোগ অর্থাৎ কোষ-কলায় পরিবর্তন যা জমির মতো কাজ করে। সব জমিতে সব শস্য হয় না। হ্যানিম্যান একে বলেছেন হেরিডিটি। রোগের অ্যাকিউট কন্ডিশন দ্রুত সারে। তবুও কিছু কিছু রোগ রয়ে যায়। তখন, বিশেষ করে. ডিজিজ ইনডিভিজুয়াল জাতীয় রোগে অতীত ও বংশগত অসুস্থ কোষ-কলার পরিবর্তন সন্ধান যোগ করে ওষুধ নির্দিষ্ট করা হয়। তবেই জট ছাড়াতে থাকে।
চিকিৎসার প্রথম কথা
শ্বসন যন্ত্রদ্বয়ের প্রথম অসুস্থতা হোমিও চিকিৎসায় আরোগ্য হলে সেই শিশু বা ব্যক্তির হাঁপানি হয় না। যদি কারো প্রায়ই বা অনেক দিন বাদে বাদে অনুরূপ হতে থাকে তখন চিকিৎসক অ্যাকিউট অবস্থা চলে যাওয়ার পর অতীত ও বংশগত রোগ সন্ধান করে ওষুধ ব্যবহার করেন। ওই অবস্থাও আর আসে না। তবে হ্যাঁ, প্রত্যেকের উচিত নিজেকে ভালোবাসা। যে যে জিনিস, আবহাওয়া, আহার্য-পানীয়, নেশার দ্রব্য ক্ষতি করে, তা বর্জন করা। জীবনকে শৃঙ্খলায় রাখা। অভিভাবক থেকে বাড়ির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য—সকলেই।
হাঁপারি রোগীদের আরোগ্য স্তরকে তিনটি ভাগে ভগ করতে হয়েছে।
১. শুরু থেকে যারা নানাবিধ ওষুধ, খাননি, অবস্থাটা সহজ আছে, অর্থাৎ আরোগ্য হওয়ার মতো অবস্থা আছে।
২. নানবিধ ওষুধ খেয়েও বারে বারে ভোগেন।
৩. এমন যে, ওষুধ সেবন ও শ্বাসপথে গ্রহণ ছাড়া চলে না।
এছাড়া কোনো জীবন-শৃঙ্খলা নেই যাদের, অন্তত রোগ বাড়ে এমন কাজকর্ম, নেশা-ভাঙ থেকে যে বা যারা মুক্ত হতে চান না, এমন রোগীরা।
প্রথম শ্রেণীর রোগী হোমিও চিকিৎসায় সহযোগিতা করলে, আরোগ্য সম্ভব। দ্বিতীয় শ্রেণীর রোগীরা উপশম পাবেন, ধৈর্য দিলে জীবন-শৃঙ্খলা মানলে একটা সময় আসবে বেশ এবং বেশিদিন ভালো থাকেন। আর তৃতীয় শ্রেণীর আরোগ্য অবস্থার বাইরে। তবুও দেখেছি, সহযোগিতা যারা করেন, তারা ক্রমে ক্রমে ইনহেলার ছাড়তে পারেন। আক্রমণও যা আসে, তাও সহ্য করে নিতে পারেন। কারো কারো আবার ইনহেলার প্রয়োজন এসে যায়। তৃতীয় শ্রেণীর রোগীদের চটজলদি বন্ধ করা হয় না। বন্ধ করলে রোগী বিজ্ঞানী নিউটনের তৃতীয় সূত্র ভুক্ত হয়ে পড়েন। এদের জন্য উপায় হ্যানিম্যানই করেছেন। অর্গানন অব মেডিসিন ৯১ ও ৯২ সূত্র, ৫ম ও ৬ষ্ঠ সংস্করণে বলা হয়েছে, রোগ ও ওষুধের রোগ সম্মিলিতভাবে গ্রহণ করে ওষুধ নির্বাচন করতে ---উপকার হয়।
ওষুধের সাথে সাথে রোজ ব্যায়াম, আসন, মেডিটেশন অবশ্যই করা দরকার। সম্ভব হলে দূরে-কাছে মাঝে মাঝে হাওয়া বদল, যে যে স্থানে শরীর-মন ভালো থাকে। সূর্যাস্তের পরে আহার নয়। তবুও হাসপাতালের মতো সন্ধ্যা ৭টা-৭-৩০ মিনিটের মধ্যে এটি সারতে হবে। আহার্য হবে সহজে হজম হয় এমন খাদ্য বা পানীয়। কোল্ড ড্রিষ্কস, ফাস্ট ফুড ভুল করেও নয়। ফ্রিজে রাখা ঠান্ডা খাবার নয়। বেশি গরম বা শীত অথবা বৃষ্টি থেকে সাবধানে থাকতে হবে। মনে সাহস রাখা দরকার। আরোগ্য পজেটিভ থুকুন। যখন যেমন অসুস্থতা হবে (শ্বাসকষ্ট ছাড়াও) আপনার চিকিৎসককে জানান। তার নির্দেশ মতো কিছু জরুরিভিত্তিক ওষুধ ঘরে রাখুন। তিনি আপনাকে দেখেছেন, বুঝছেন, তিনিই ওষুধ বলতে পারবেন। প্রয়োজনে ডাক্তারকে ফোন করুন।
শেষ পাতে দই দেওয়ার মতো গুটিকয়েক ওষুধ রেখে যাই।
অ্যাকিউট অবস্থায়: অ্যাকোনাইট ন্যাপ, র্যাডিক্স, বেলেডোনা, সিনা অফি, ইপিকাক, সালফার, রমেক্স, স্পঞ্জিয়া, কাজি মুর, অ্যান্টিম টার্ট ইত্যাদি।
ক্রনিক অবস্থায়: (যদিও রোগটির চরিত্রই ক্রনিক): থুজা, ন্যাট সালফ, মেডো, নাইট্রিক অ্যাসিড, অরাম মেট, ব্যাসিলিনাম, সিফিলিনাম, ন্যাট মিউর, মরবিলিনাম, কারসিনোসিন, পারটুসিন ইত্যাদি।
প্রত্যেক ওষুধ ৫ গ্রাম করে ২০ নং গ্লোবিউলে নিন। প্রয়োজন পড়লে আপনার চিকিৎসককে ফোন করে জেনে নিন ভালো করে যখন তিনি ক্লিনিকে থাকছেন না বা রাত-বিরেতে। পরে পরেই তার ক্লিনিক গিয়ে যোগাযোগ করুন। ওষুধ শক্তি ৩০, ২০০ বা ০/১, ০/২, ০/৩ তখন গ্লোবিউল হবে ১০ নং।
প্রত্যেক রোগই যন্ত্রণাদায়ক। শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি তার মধ্যে চরমতম। জন্ম, বেঁচে থাকা এবং মৃত্যৃক্ষণ পর্যন্ত শ্বাস-প্রশ্বাসই মূল। জীবন ভরে আর জীবন শেষ দিয়েই তো তা বোঝা। সুতরাং শুরতেই সাবধান হলে জীবনভর নিশ্চিন্ত থাকা যায়। অন্তত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায়।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন