×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

ঘরে ঘরে কেন কিডনির অসুখ

ডাঃ অরুণাংশু ব্যানার্জি (অ্যাসেসিয়েট, নিউরোলজি বিভাগ, এস.এস.কে.এম হাসপাতাল ন্যাশনাল কিডনি কেয়ার ইনস্টিটিউট)
2019-03-07 16:20:33

আমাদের শরীরে দুটি কিডনি থাকে। বেঁচে থাকার জন্য যা খুবই জরুরি। অনেক নেফ্রন নিয়ে সেই কিডনি তৈরি। নেফ্রনের প্রথম অংশ গ্লোমেরুলাস। গ্লোমেরুলাসে রক্ত পরিস্রুত হয়ে দ্বিতীয় অংশে জমা হয়। দ্বিতীয় অংশটি নলের মতো। এর অনেকগুলি ভাগ—প্রক্সিমাল কনভোলুটেড টিবিউল, লুপ অফ হেনলি, ডিস্টাল কনভোলুটেড টিবিউল , কালেক্টিং ডাক্ট। পরিস্রুত রক্ত রসের মধ্যে থাকে জল, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, গ্লুকোজ, ফসফস প্রভৃতি অতি প্রয়োজনীয় পদার্থ এবং শরীরে বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন নানারকম বিষাক্ত পদার্থ যেমন ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন। শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী জল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদার্থ নালিকার মাধ্যমে শোষিত হয় এবং বিষাক্ত ও অশোধিত জল মূত্রের মাধ্যমে শরীরের বাইরে নির্গত হয়।

কিডনির কাজ

  • কিডনি আমাদের শরীরের বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ যেমন ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিনকে মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়।
  • কিডনি আমাদের শরীরে থেকে অতিরিক্ত জল বের করে দেয়।
  • কিডনি শরীরের অম্ল ও ক্ষারের সমতা রক্ষা করতে সাহায্য করে।
  • শরীরের মধ্যে বিভিন্ন লবণজাতীয় পদার্থ যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম, ফসফেট, ম্যাগনেশিয়াম ঠিকঠাক পরিমাণে রাখে।
  • কিডনি থেকে এরিথ্রো পোটিন (Erythro Poetin) হরমোন নির্গত হয়, যা অস্থিমজ্জা অর্থাৎ বোনম্যারো থেকে রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন-ডি কিডনিতে ১, ২৫ ডাইহাইড্রো কোলিক্যালসিফেরল-এ রূপান্তরিত হয়, যা আমাদের হাড়কে ঠিক রাখে।

কিডনির অসুখ

  • কিডনির অসুখ দু’ ধরনের হয়। অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি এবং ক্রনিক কিডনি ডিজিজ। অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি একদিন থেকে তিন মাসের মধ্যে হয়। তিন মাসের বেশি দিনের হলে তাকে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বলে। অ্যাকিউট নানা কারণে হয়। যেমন শরীর থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে জল বেরিয়ে গেল (পাতলা পায়খানা, বমি), কোনো কারণে রক্তক্ষরণ হলে, পুড়ে যাওয়া রোগীদের, সাপে কাটা রোগীদের, ম্যালোরিয়া, জনডিস, পথ দুর্ঘটনার পরে, বিষাক্ত জীবাণুর সংক্রমণে, অপারেশনের পরে, গর্ভাবস্থায়, বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে অথবা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে। সিটি স্ক্যান এবং আই.ভি.ইউ-এর জন্য যে ওষুধ দেওয়া হয় তা থেকেও অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি হতে পারে। শরীরের মধ্যে নানারকম অ্যান্টিজেন, অ্যান্টিবডির রিঅ্যাকশনের ফলে আমাদের গ্লোমেরুলাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার ফলে অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি হয়। অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি শিশুদের, বৃদ্ধদের,গর্ভাবথী মহিলাদের এবং অসুস্থ রোগীদের বেশি হয়। এর ফলে রোগী ফুলে যায়। প্রস্রাবের পরিমাণে কমে যায়। রক্তচাপে বেড়ে যায়, শ্বাসকষ্ট হয়, বমি হয়, খিঁচুনি হয়, এমনকী অজ্ঞান পর্যন্ত হতে পারে। মাকড়সা, বোলতার কামড়েও অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি হতে পারে। ‘প্যারাকিউভাট’ বিষের প্রভাবে খুব মারাত্মক ধরনের অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি হয়। কিছু কুসংস্কারের জন্য যারা মাছের পিত্ত খায়, তাদের অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি হতে পারে।
  • সময়মতো চিকিৎসা করলে অনেক রোগী সেরে যায়। কিছু সংখ্যক রোগী মারা যায়। অল্প কিছু ক্ষেত্রে ক্রনিক কিডনি ডিজিজে পরিবর্তিত হয়। ক্রনিক কিডনি ডিজিজে রোগীদের স্থায়ী ক্ষতি হয়। এটা নিরাময়যোগ্য নয়। ধীরে ধীরে দুটি কিডনিই পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। একে এন্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ বলে। ক্রনিক কিডনি ডিজিজের কারণ অনেক। ডায়াবেটিস মেলাইটাস রোগীদের প্রথমে স্বাভাবিকের থেকে বেশি পরিমাণে প্রোটিন নির্গত হয়। পরে ধীরে ধীরে দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন), জন্মগত কিছু রোগ কিডনি নষ্টের কারণ।
  • কিডনিতে পাথর, কিডনিতে আঘাত, প্রস্টেটের অসুখের জন্যও ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হয়। শরীরে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিজেন অ্যান্টিবডি রিঅ্যাকশনের জন্য যাদের কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, পরবর্তীকালে এরা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ রোগীতে রূপান্তরিত হয়। অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি রোগীদেরও একটা অংশ ক্রনিক রোগীর পর্যায়ে পৌঁছয়। ক্রনিক রোগীদের শরীর ফুলে যায়, রাত্রিতে প্রস্রাব বেশি হয়, শ্বাসকষ্ট হয়, বমি হয়, হেঁচকি ওঠে, খিঁচুনি হয় এমনকী রোগী অজ্ঞান হয়েও যেতে পারে।
  • এক রকমের কিডনির অসুখ হয় বাচ্চাদের গলা ব্যথা বা চামড়ায় ঘা হওয়ার সাধারণত দু’ থেকে তিন সপ্তাহ পরে। বাচ্চা ফুলে ওঠে, প্রস্রাবের পরিমাণ কম হয়, রক্তচাপ বেড়ে যায়, প্রস্রাবের রঙ কোকোকোলার মতো হয়। এক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করা একান্ত জরুরি। একে বলে ‘পোস্ট স্ট্রেপটোকক্কাল গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিস’। চিকিৎসায় বেশিরভাগ রোগী অবশ্য সেরে যায়।
  • আর এক প্রকার কিডনির অসুখের নাম নেফ্রোটিক সিনড্রোম। এটি সাধারণত বাচ্চাদের হয়। তবে বড়দেরও হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রস্রাবের সাথে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন প্রধানত অ্যালবুমিন নির্গত হয়। রোগী ফুলে যায়। শরীরে প্রোটিনের পরিমাণও যায় খুব বেড়ে। কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়, মিনিমাল চেঞ্জ ডিজিজ, মেমব্রেনাস জি.এন, এম.পি.জি.এল প্রভৃতি কারণে নেফ্রোটিক সিনড্রোম দেখা যায়।
  • Iga নেফ্রোপ্যাথি : এ রোগ অল্পবয়সী ছেলেদের হয়। প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বের হয়। গ্লোমেরুলাসের মধ্যে Iga অ্যান্টিবডি জমা হয়। অনেক ক্ষেত্রে দুটো কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।
  • SLE-Nephropathy :  অল্পবয়সী মেয়েদের হয়। গাঁটে ব্যথা, চামড়ায় নানারকম দাগ, মুখে ঘা, রক্তাল্পতা এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে প্রোটিন ও রক্ত নির্গত হয়। এই রোগের ঠিকমতো চিকিৎসা না হলে দুটো কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

পোস্ট স্ট্রেপটোকক্কাল গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিস, নেফ্রোটিক সিনড্রোম, আই.জি.এ নেফ্রোপ্যাথি, এস.এল.ই নেফ্রোপ্যাথি এই রোগগুলি অ্যান্টিজেন, অ্যান্টিবডি রিঅ্যাকশনের জন্য হয়।

  • অ্যামাইলোআইডোসিস : এই রোগে কিডনিতে অ্যামাইলোইড প্রোটিন জমা হয়। মূত্রের সঙ্গে প্রচুর প্রোটিন বেরিয়ে যায়। সাধারণত মাল্টিপল মায়েলোমা নামে একরকমের ক্যানসার থেকে এই রোগ হয়।

এছাড়া আরও অনেক কারণে কিডনির অসুখ হয়। হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, এইচ.আই.ভি সংক্রমণ, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, স্কেরোডার্মা প্রভৃতি অসুখে কিডনির রোগ হয়। কিডনিতে পাথর, ক্যানসার প্রভৃতি রোগ হয়।

কিডনির রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা

কিডনির রোগ নির্ণয় করতে হলে প্রথমে মূত্র পরীক্ষা করা প্রয়োজন। প্রস্রাবে রক্ত, প্রোটিন, পাসসেল, নানারকম কাস্ট এবং ক্রিস্টাল পাওয়া যায়।

রক্ত পরীক্ষা করে বিভিন্ন পদার্থের (ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম) পরিমাণ মাপা হয়।

কিডনি বায়োপসি খুবই জরুরি। এর মাধ্যমে সঠিক কিডনির রোগ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়।

এছাড়া এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাফি, সিটি স্ক্যান, এম.আর.আই., নিউক্লিয়ার ইমেজিং-এর সাহায্যে কিডনির বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়। এ.এন.এ, কমপ্লিমেন্ট ফ্যাক্টর সি৩, সি৪, পি-এ.এন.সি.এ, সি-এ.এন.সি.এ, রিউম্যাটয়েড ফ্যাক্টর প্রভৃতি রক্ত পরীক্ষা কিডনির রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে।

চিকিৎসা

কিডনির অসুখের চিকিৎসা করতে গিয়ে প্রথমেই মনে রাখতে হবে, শরীরে জলের পরিমাণ যেন স্বাভাবিক থাকে। রোগী ফুলে থাকলে খাবার জলের পরিমাণ খুব কম করতে হবে। নতুবা ফুসফুসে জল জমে গিয়ে শ্বাসকষ্ট হবে। অবস্থা বুঝে সারাদিন জলের পরিমাণ ৫০০ মিলি থেকে ১৫০০ মিলিলিটার রাখতে হবে। রক্তচাপের মাত্রা বেশি থাকলে লবণ কম পরিমাণে খাওয়া প্রয়োজন। ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম কম বা বেশি থাকলে তার চিকিৎসা প্রয়োজন। রক্তে ফসফেটের পরিমাণ অনেক সময় বেশি থাকে। ক্যালসিয়াম অ্যাসিটেট, ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, সেডেলেমার জাতীয় ওষুধ রক্তের অতিরিক্ত ফসফেটকে কমাতে সাহায্য করে।

রক্তে আয়রনের পরিমাণ কম থাকলে আয়রন ক্যাপসুল বা ইঞ্জেকশন দিতে হয়। কিডনি থেকে একরকম হরমোন নির্গত হয়। তার নাম ‘এরিথ্রোপোটিন’। রোগী রক্তাল্পতায় ভুগলে এরিথ্রোপোটিন ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ১০-এর কম হলে এই ইঞ্জেকশন দেওয়া জরুরি।

নানারকম অ্যাসিড জাতীয় পদার্থ আমাদের মূত্র দিয়ে নির্গত হয়। যখন কিডনি কাজ করতে পারে না তখন আমাদের শরীরে অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। সেজন্য কিডনি রোগীর চিকিৎসার জন্য সোডিয়াম-বাই কার্বোনেট ট্যাবলেট দেওয়া জরুরি।

কিডনির রোগে শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা অনেক সময় বেড়ে যায়। সেজন্য পাতিলেবু, কমলালেবু, মোসাম্বি লেবু, আম, ডাবের জল খাওয়া চলবে না।

কিডনি রোগীদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন। ভাত, রুটি, মাছ, মাংস, সবজি, ডিম সাধারণ মানুষের মত খেতে হবে। ডিমের কুসুম, খাসির মাংস,  দুধের সর চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া চলবে না। দুধ ও ডাল কম খেতে হবে। ডায়ালিসিস রোগীদের ক্ষেত্রে প্রোটিন খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। কারণ ডায়ালিসিসের সময় শরীর থেকে প্রচুর প্রোটিন বেরিয়ে যায়।

নেফ্রোটিক সিনড্রোম শরীর থেকে প্রচুর প্রোটিন বেরিয়ে যায়। এক্ষেত্রেও প্রোটিন জাতীয় খাবার খুব বেশি পরিমাণে খেতে হবে।

তেল, মশলা জাতীয় পদার্থ কম খাওয়া দরকার। আপেল, পেয়ারা, শশা, পাকা পেপেঁ অল্প পরিমাণে খাওয়া যাবে।

ক্রনিক কিডনি ডিজিজের রোগীদের হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন দেওয়া খুব দরকার।

শরীরে রক্তের পরিমাণ খুব কমে গেলে রক্ত দেওয়া প্রয়োজন। রক্তে অ্যালবুমিন কম হলে অ্যালবুমিন দেওয়া দরকার।

যে সমস্ত কিডনির অসুখ অ্যান্টিজেন অ্যান্টিবডি রিঅ্যাকশনের জন্য হয় সেক্ষেত্রে প্রেডনিসোলোন, সাইক্লোফসফামাইড, সাইক্লোস্পোরিন, ট্রাকলোলিমাস, এম.এম.এফ প্রভৃতি ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। অনেক সময় প্লাজমাফোরেসিস করে শরীর থেকে অ্যান্টিজেন, অ্যান্টিবডি ও নানারকম পদার্থ বের করা হয়।

কিডনি যখন বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়ার ফলে উদ্ভুত বিষাক্ত পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বার করে দিতে ব্যর্থ হয়, তখন ডায়ালিসিসের প্রয়োজন হয়।

ডায়ালিসিসের প্রকার ভেদ

ডায়ালিসিস তিন রকমের—হিমোডায়ালিসিস, পেরিটোনাল ডায়ালিসিস এবং সি.আর.আর.টি।

  • হিমোডায়ালিসিস: ডায়ালাইজার রক্ত ও জল একটি পদার্থ সাহায্যে আলাদা থাকে। রক্ত থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ জলে চলে যায়। নলের মাধ্যমে এই জল বাইরে বেরিয়ে যায়। রক্ত ডায়ালিসিস মেশিনের মাধ্যমে ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন এবং অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ মুক্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে ডায়ালিসিস নেওয়ার পরে রোগী রোগমুক্ত হয়। যাদের দুটো কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে তাদের সারাজীবন ডায়ালিসিস নিতে হয়। এক্ষেত্রে এ.ভি ফিসচুলা করা খুবই জরুরি। ক্রনিক কিডনি ডিজিজে আক্রান্ত রোগীদের ডায়ালিসিস শুরুর দু’তিন মাস আগেই এ.ভি ফিসচুলা করে রাখতে হবে।
  • পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস: এক্ষেত্রে ডায়ালিসিস ফ্লুইড পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ পেটের  জলে এস জমা হয়। নলের মাধ্যমে এই জল পেট থেকে বের করা হয়। পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিসের জন্য কোনো মেশিনের প্রয়োজন হয় না। অ্যাকিউট রোগীদের ক্ষেত্রে এক বা দু’ দিন পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস করলেই অনেক রোগী সেরে যায়। যাদের দুটো কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের সারাজীবন পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস নিতে হয়। একে বলে ‘কনটিনিউয়াস অ্যাম্বুলেটরি পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস (সি.এ.পি.ডি)।

যে সমস্ত রোগী সারাজীবন হিমোডায়ালিসিস বা সি.এ.পি.ডি নিচ্ছেন, তারা সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। স্বাভাবিক মানুষের মতো কাজকর্ম করতে পারেন। এখন সরকারি হাসপাতালে অনেক কম খরচে হিমোডায়ালিসিস করা হয়।

  • সি.আর.আর.টি : যে সমস্ত রোগীর শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ থাকার জন্য আই.টি.ইউ বা সি.সি.ইউ- তে ভর্তি থাকে, তাদের ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন দিন একটানা ডায়ালিসিস দেওয়া হয়। একে কনটিনিউয়াস রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বলে। এই চিকিৎসার ফলেও অনেক রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়।

কিডনি প্রতিস্থাপন

যে সমস্ত রোগীদের দুটো কিডনি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে তাদের কিডনি প্রতিস্থাপন করেই পুরো সুস্থ করে তোলা সম্ভব। সাধারণত বাবা, মা, ভা-বোন. স্ত্রী, স্বামী ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে একটি কিডনি নেওয়া হয়। অনাত্মীয়রাও কিডনি দান করতে পারে। অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময়ে বা প্রাণের ভয়ে কিডনি দান দন্ডনীয় অপরাধ। রক্তের গ্রুপ এক হলে বা `O’  গ্রুপ হলে কিডনি দান সম্ভব। Rh Group (পজেটিভ বা নেগেটিভ) এর সঙ্গে কিডনি প্রতিস্থাপনের সম্পর্ক নেই। কিডনি দাতার বয়স ১৮ থেকে ৬৫ হতে হবে। ব্লাড সুগার, ব্লাড প্রেসার বেশি থাকলে বা কিডনিতে রোগ হলে সাধারণ কিডনি দান সম্ভব নয়। কিডনি দাতা সারজীবন সুস্থ থাকে। তার কোনোরকম চিকিৎসার দরকার হয় না। দৈনিক ক্ষমতাও ঠিক থাকে। কিডনি গ্রহিতাকে সারাজীবন ওষুধ খেতে হয়। নইলে শরীর প্রতিস্থাপিত কিডনিকে গ্রহণ করে না। একে ‘গ্রাফট রিজেকশন’ বলে। কিডনি গ্রহীতার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন। যে সমস্ত আই.টি.ইউ  বা সি.সি.ইউ-এর রোগীদের ব্রেন ডেথ হয়ে গেছে, তাদের ক্ষেত্রেও কিডনি দান সম্ভব। আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে একেবারে প্রথম অবস্থায় কিডনি রোগেরে ডায়ালিসিস করা সম্ভব। উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক রোগীতে পুরোপুরি সুস্থ করা যায়।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন