×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

(+88) 09666741741

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
(+88) 09666741741
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

কতটা নিরাপদ খাদ্য আমরা খাই

ডাঃ কিংশুক দাস
2019-03-09 14:22:11

এই তো গেল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। ৭ এপ্রিল, প্রত্যেক বছর এই বিশেষ দিনটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশেষ কিছু ব্যাপারে শপথ নেয় আর লোককে শপথ নেওয়ার। এ বছরের লক্ষ্য ‘খাদ্য নিরাপত্তা’। আসলে কথটা হল যেখানে খাদ্য তৈরি হচ্ছে আর যেখানে খাবার খাওয়া হচ্ছে এই পুরো প্রক্রিয়াটাকে নিরাপদে রাখা। এক কথায় ‘টু কিপ ফুড সেফ ফ্রম ফার্ম টু প্লেট’। এই শপথের মধ্যে পাঁচটা প্রধান ব্যাপার আছে—

১. খাবার পরিষ্কার রাখতে  হবে।

২. রান্না করে খাবার রাখতে হবে রান্না না করা খাবারের থেকে দূরে।

৩. রান্না করতে হবে পুরোপুরি। অর্থাৎ অর্দ্ধসিদ্ধ (হাফ বয়েলড) নয়। পোচ বা হাফ বয়েলড ডিম খাবেন না।

৪. খাবার নিরাপদ তাপমাত্রায় রাখুন। পারলে ফ্রিজে রাখুন।

৫. জল ও কাঁচা শাকসবজি যেন পরিস্রুত এবং পরিষ্কার হয়।

ওপরের কথাগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা যত সোজা, ভারতের মতো দেশে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে তা মেনে চলা ততই কঠিন। আপনাদের জেনে রাখা দরকার সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর ২ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় খাদ্য এবং পানীয় জলের সংক্রমণের জন্য। শুধুমাত্র এই কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়েছে পৃথিবীর সাধারণ মানুষেকে খাদ্য সচেতন সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে সচেতন করতে।

প্রথমে শুরু করি শরীরের পক্ষে কোন কোন খাবারগুলো কতটা দরকারি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের খাদ্যের এক-চতুর্থাংশ হতে হবে সবুজ, সতেজ শাকসবজি। আর এক-চতুর্থাংশ হবে ফলমূল। আমরা সত্যিই কি এগুলো জানি, না মানি? বলতে পারেন কিছুটা অর্থনৈতিক কারণও দায়ী নিয়ম করে ফল না খাওয়ার পিছনে। খাদ্যের এক-চতুর্থাংশ হতে হবে প্রোটিন সমৃদ্ধ। নিরামিষাশীরা খাবেন ডাল,সয়াবিন, পনির, মটরশুটি, বিনস, বাদাম.দই ইত্যাদি। আর আমিষাশীরা খাবেন মাছ, মাংস, ডিম, ফ্যাট। এবং তেল খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে শরীরের গঠন এবং কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে। সারাদিনে শরীরকে ঠিক রাখতে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ছয়-সাত চামচ তেল দরকার হয়। এই তেলের এক-তৃতীয়াংশ সরষের তেল হলেই ভালো, আর এক-তৃতীয়াংশ অন্যান্য যেকোনো তেলের মধ্যে থেকে নেওয়া যেতে পারে যা অলিভ অয়েল কিংবা সিসেম অয়েল হতে পারে। কিন্তু সানফ্লাওয়ার অয়েল না খেলেই ভালো। সঠিক পরিমাণে দেশী ঘি কিন্তু উপকারী, কিন্তু ডালডা না খেলেই ভালো। সুপার ফুড যেগুলোকে আমরা ড্রাই ফুডস বলি—অর্থাৎ কাজু, আমন্ড, এভোকেডো, ওয়ালনাট ইত্যাদি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই জরুরি। এর মধ্যে যেকোনো একটা রোজ চার-ছটা খাওয়া যেতে পারে।

বাকী রইল লিকুইড হেলথ ড্রিষ্কস অর্থাৎ দুধ, ফলের রসে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সর্বদা এড়িয়ে চলা ভালো কার্বনযুক্ত চিনি দেওয়া কোল্ড ড্রিস্কস। মিষ্টি ছাড়া গ্রিন বা ব্ল্যাক টি শরীরের পক্ষে উপকারী।

আর শেষে আসি কাবোহাইড্রেটের কথায়। কিছুটা তো শরীরের জন্য প্রয়োজন। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে শরীরের সব ধরনের রোগের মূল কালপ্রিট এই কার্বোহাইড্রেট। তাই ভাত-রুটি বুঝে খান, মিষ্টি না ছুলেই ভালো।

চলুন দেখি এবার খাদ্য কীভাবে পৌঁছয় আমাদের খাবারের প্লেটে। মডার্ণ মেডিসিনের জনক হিপোক্রেটিস বলেছিলেন, খাবারকে হতে হবে ‘মেডিসিন’। অর্থাৎ আমরা যেটা খাব তা যেন শরীরকে ঠিকঠাক পুষ্টির যোগান দেয় আর রোগমুক্ত রাখে –ঠিক যেন ওষুধের মতো। আজকের যুগে এই ব্যাপারটা বোধহয় আর ঠিকঠাক থাকছে  না। ফুড সাপ্লাই চেন-টা এত লম্বা হয়ে গেছে অর্থাৎ যেখানে তৈরি হয় বা শষ্য ফলছে সেখান থেকে আমাদের রান্না ঘর বা খাওয়ার টেবিল পর্যন্ত  পৌঁছতে সময় লেগে যায় ছ-সাত দিন। আমরা এখন তরিতরকারি, সবজি, মাছ, মাংস, ফলমূল কিনি ফুড আউটলেট থেকে। শুধু তাইবা কেন, বেশিরভাগ শহরের বাজারেই প্রাপ্ত শাক-সবজি এখন তিন-চার দিনের বেশি পুরনো। এতে খাবারের পুষ্টিগুণ ভীষণভাবে কমে যায়। সত্যি কথা বলতে কী এই খাবারের প্রসেসিং, সংরক্ষণ এবং রান্নার পদ্ধতিতেও খাবারের গুণাগুণ অনেকটাই কমে যায়। আমরা যদি খাবারকে প্রসেসিংয়ের সময় অনেকক্ষণ গরম করি তাহলে পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, সি, মিনারেল ইত্যাদি বহু পরিমাণে কমে যায়। এদিক থেকে ফ্রিজড ফুড বা ক্যানড ফুড অনেক ভালো। এতে কোনো প্রিজারভেটিভ লাগে না এবং খাদ্যের গুণাগুণ বহাল থাকে। উচ্চ তাপে এবং উচ্চ চাপে প্রসেসিং একইভাবে খাবারের গুণাগুণকে বজায় রাখে। দুধ সরবরাহ করা হয় পাস্ত্তরাইজেশনের পরে, এতে দুধের গুণাগুণের কোনোরকম পরিবর্তন হয় না। এখানে মনে রাখা ভালো, খাবার যে জলে গরম করা হয় সেই জলটা যদি ফেলে দেন তাহলে খাদ্যগুণ ভীষণ কমে যায়।

চলে আসি রান্নার কথায়। সবজির খুব বেশি খোসা ছাড়ালে পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। কারণ ভিটামিনগুলো সবজি বা ফলমূলের স্কিন সারফেসে থাকে। অর্থাৎ খোসা ছাড়ালেই এই ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়। আর আগেই বলেছি, শাকসবজি, ফলমূল জলে সেদ্ধ করে জলটা ফেলে দিলে অর্ধেক পুষ্টি ওই জলেই চলে যায়। সেরকমই খাবার খুব বেশি ফোটালে যেমন ডাল, তরকারি, মাছের ঝোল, তার পুষ্টিগুণ কমে যায়। তবে মাথায় রাখবেন টমেটো এবং গাজর কাঁচা খাওয়ার থেকে একটু সেদ্ধ করে খেলে গুণ একটু বেশি পাওয়া যায়।

এরপর আসি সংরক্ষণের কথায়। আগেই বলেছি, ফল আর শাকসবজি যে জমিতে উৎপাদন হয় সেখান থেকে বাজারে আসতে ছ’ সাতদিন সময় লেগে যায়। এর ফলে ভিটামিন-সি কমে যায়। আর বাড়ির ফ্রিজে শাকসবজি ফলমূল আলাদা আলাদা ছোট ছোট প্যাকেট ভরে রাখবেন। যেটুকু প্রয়োজন ততটুকু বার করবেন। কোনো মতেই রান্না করা খাবার এবং রান্না না করা খাবার ফ্রিজের একই জায়গায় রাখবেন না।

এবার দেখে নিই ওপরে বলা ফুড সাপ্লাই চেনের কোথায় কীভাবে সংক্রমণ ঘটে আর আমরা কীভাবে প্রতিরোধ করব।

সেই পুরনো কথা। রোগ হতে হলে চাই এজেন্ট অর্থাৎ জীবাণু, হোস্ট অর্থাৎ রোগী আর এনভায়রনমেন্ট অর্থাৎ পরিবেশ। ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস, প্রোটোজায়ারা এই গরমে তিতিবিরক্ত হয়ে ওঠে এবং বংশবৃদ্ধি করে তাড়াতাড়ি। আর কালবৈশাখির জল পেলে তো সোনায় সোহাগা। হোস্ট সে বাচ্চা, বয়স্ক, গর্ভবতী মহিলা, দীর্ঘস্থায়ী রোগগ্রস্ত মানুষের কিডনি, লিভার, পেট, লাঙস, যেকোনো অঙ্গই হোক না কেন, খুব তাড়াতাড়ি সংক্রামিত হয়। আর পরিবেশ দূষণ তো হয়েই চলেছেযত্রতত্র, অহরহ এই সময়ে। চারপাশে গরম, ঘাম, জলের অভাব। হাত ধোওয়ার বালাই নেই। আর তার ওপর হঠাৎ হঠাৎ কালবৈশাখির দাপটে পানীয় জল আর পয়ঃপ্রণালীর পাইপের জল মিলেমিশে একাকার। মাঠে চাষির পানীয় জলের অভাব, তাই গরমে হাতের কাছে যে জল পান সে জলই খান। কমে আসা পুকুরের জলে গরু-বাছুরের স্নান, জামা-কাপড় কাচাকুচি, থালাবাসন ধোওয়া এবং নিজেদেরও স্নান। আবার ওই জলেই রান্না হচ্ছে। এই গরমে রাস্তায় বেরিয়ে এমন মানুষ পাওয়া যায় না যিনি রঙিন জলের হাতছানিতে ডিগবাজি খাননি কিংবা কাটা ফলের দিকে তাকিয়ে দেখেননি। আখের রস আর ফুচকার তেঁতুল গোলা জল—এই দুটোর মতো সংক্রমণ ছড়ানোর মাধ্যম বোধহয় খুবই কম আছে। বিয়ে বাড়ির খাবার দাবার যেভাবে রান্না হয়, যেভাবে রাখা হয়, যেভাবে পরিবেশন করা হয় এবং যে প্লেটে খাবার খাওয়া হয় এবং কাঁটা চামচ ব্যবহার করা হয় তা পৃথিবীর আর কোনো দেশে পাওয়া যাবে না। খাবার শেষে হাত ধোওয়ার জল একটা পাত্রের মধ্যে পেলেও পেতে পারেন। কিন্তু খাবার খাওয়ার আগে হাত ধোওয়ার সুযোগ ছিল, নাকি সুযোগ নেননি। ওই স্যালাডটা কখন কাটা, সেটা ভালো করে ধোওয়া হয়েছিল? আর মাংসটা তো রান্না রয়েছে বিকেল তিনটার সময় আর আপনি সেটা খাবেন রাত দশটায়—ওটা ঠিক আছে তো? এই তো গাজনের মেলার জন্য সকাল থেকে উপোষ। শেষে সন্ধেবেলায় খেলেন সকালে তৈরি সিন্নি আর কাটা ফল। ওই খাবার কি নিরাপদ থাকল? এত বাইরে ঘুরবো কেন মশাই—চলুন না বাড়ির ওই বড় ফ্রিজটাকে দেখে নিই। ফ্রিজ খুললাম, ঠাসা জিনিসপত্র। দশদিন আগেরও রান্না যেমন আছে ঠিক তেমনই আছে কালকের আধ খাওয়া খাবার। তাপমাত্রা পরিমাপের মাথামুন্ড নেই। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম কোনও কোনও খাবার ইতিমধ্যেই চার-পাঁচবার বেরিয়েছে আবার ফ্রিজে ঢুকেছে। সত্যি করে বলতে কী ফ্রিজে খাবার দু’তিনের বেশি রাখা উচিত নয়। যেটুকু খাবেন সেটুকু বার করে গরম করে নেওয়া উচিত। সকালে রান্না করা খাবার বিকেলে ফ্রিজে না তুলে আধ ঘন্টার মধ্যে ফ্রিজে রেখে দিন। ভালো করে হাত না ধুয়ে ফ্রিজের ভিতর হাত দেবেন না। আমরা প্রায় দেখি বাড়ির পরিচারিকা ঘর ঝাঁট দিতে দিতে হাত না ধুয়ে কিছু বার করছেন বা গৃহকর্তা কিংবা বাড়ির ছেলেমেয়েরা রোদ থেকে এসে হাত না ধুয়ে ফ্রিজে থেকে কিছু বার করছেন বা গৃহকর্তা কিংবা বাড়ির ছেলেমেয়েরা রোদ থেকে এসে হাত না ধুয়ে ফ্রিজ থেকে জল বার করে খাচ্ছে—এটাও ঠিক নয়।

হয়তো রান্না করছেন বা খাবার জল ফুটিয়ে নিচ্ছেন, কিন্তু যে জল দিয়ে থালাবাসন পরিষ্কার করছেন সেটা পরিস্রুত নয়। থালাবাসনও কিন্তু পরিস্রুত জলে ধুতে হবে। যেমন কিনা স্যালাড, শাকসবজি, ফলমূলও পরিস্রুত জলে ধুয়ে খেতে হবে।

তাহলে কী করে খাবরকে নিরাপদে রাখব যার থেকে কোনো রোগ না হয়!

টিপসগুলো আর একবার দেখে নিই—

  • সতেজ সবুজ দেখেই শাবসবজি কিংবা ফলমূল কেনা উচিত।
  • ঠান্ডা জায়গায় কম সময়ের জন্য সঠিকভাবে খাদ্য সংরক্ষণ করতে হবে।
  • খাদ্য উচ্চ তাপমাত্রায় অনেকক্ষণ ধরে রান্না করা ঠিক নয়। সবচেয়ে ভালো হয় স্টিমড বা গিল্ড ভেজিটেবল খেলে।
  • দিনের রান্না দিনেই খাওয়া দরকার।
  • শাকসবজি ফলমূলের অতিরিক্ত খোসা না ছাড়িয়ে খাওয়াই ভালো।
  • ফ্রুট জুস খেলে ১০০% ফ্রুট জুস খাবেন, প্রিজারভেটিভ বা সুগার অ্যাডেড যেন না থাকে।
  • বেশি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ ভাত, রুটি, মিষ্টি খাওয়া ঠিক নয়।
  • মিলিয়ে মিশিয়ে সব ধরনের শাকসবজি, ফল প্রোটিনযুক্ত খাবার, তেল খেতেই হবে।
  • খাবার আগে ভালো করে হাত ধোওয়া দরকার।
  • ফোটানো জল এবং ফিল্টার ওয়াটার ব্যবহার করা উচিত।
  • খাবার পাত্র ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।
  • সতর্ক থাকা দরকার রাস্তার খাবার, রেস্টুরেন্টের খাবার, বিয়ে বাড়ির খাবার এবং পুজোর প্রসাদ থেকে।
  • পরিষ্কার রাখুন বাড়ির ফ্রিজ, ফিল্টার, ওয়াটার ট্যাষ্ক এবং জল রাখার কলসি বা বালতি এবং বোতল।
  • শৌচালয় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • কারোর সংক্রমণ হয়ে থাকলে তার উপযুক্ত চিকিৎসা করানো দরকার।

চলুন না সবাই মিলে হাতে হাত ধরে স্বচ্ছ ভারতের শপথ নিয়ে এগিয়ে চলি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল মন্ত্র নিরাপদ খাদ্যকে বাস্তবায়িত করতে।

সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন