মাঝরাতে হঠাৎ করে প্রচন্ড পায়ের যন্ত্রণা
ডাঃ অমল ভট্টাচার্য
2019-02-01 14:10:08
আমার ক্লিনিকে প্রায়ই মধ্যবয়সী রোগীরা রাত্রিকালীন পায়ের পেশিতে টান ধরে বা ক্র্যাম্প হওয়ার অভিযোগ নিয়ে আসেন। ঘুমের মধ্যে তারা হঠাৎ পায়ে অসাড়তা অনুভব করেন। পায়ের কাফ মাসল যেন রবারের বলের মতো শক্ত মনে হয়, আর পায়ে থাকে অসম্ভব ব্যথার অনুভূতি। যদিও এই ঘটনা কদাচিৎ রাত্রেই ঘটে, তবুও সেই রাত্রিটি সংশ্লিষ্ট রোগীর পক্ষে হয়ে ওঠে একটা বিভীষিকার মতো। যন্ত্রণায় এবং শারীরিক অস্বস্থিতে প্রায় বিনিদ্রই কাটে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই, এই ব্যথার পিছনে কোনো গভীর কারণ থাকে না। সাধারণত স্ট্রোচিং, মালিশ, গরম বা ঠান্ডা সেঁক কিংবা অ্যানালজেসিক মলমেই এই ব্যথার উপশম হয়।
এই জাতীয় পায়ে ব্যথা বা ক্র্যাম্প লেগে যাওয়া কিন্তু হামেশাই বয়ঃসন্ধিতে পা দেওয়া কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে দেখা যায়। ওরা অতিরিক্ত খেলাধুলো করে সন্ধ্যার বাড়ি ফিরে পড়তে বসেই পায়ে ব্যথার কথা বলে। অনেক সময় অভিভাবকেরা ভুল বোঝেন অথবা মনে করেন এটা ওদের বয়ঃসন্ধিজনিত পেশির ব্যথা। কিন্তু এই ব্যথার পিছনে কতগুলো পরিচিত কারণ আছে। প্রথমত, অতিরিক্ত শারীরিক কসরতের ফলে পেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে, কারও বা অনমনীয় হ্যামস্ট্রিং পেশি এবং সমতল পা এই ব্যথার জন্য দায়ী। এছাড়াও থাকে ক্যালসিয়ামের, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স-এর অভাব। পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ এবং জলের অভাবেও কৈশোরে এ জাতীয় পায়ে ব্যথা বা পায়ে টান ধরে দেখা যায়।
যদিও মধ্য বয়সে এ জাতীয় পায়ে ব্যথার জন্য মূলত পেশি সঞ্চালনের অভাব বা অতিরিক্ত ঠান্ডা জলবায়ুকেই দায়ী করা হয়। তবুও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অসুখ হলেও এ ধরনের ক্র্যাম্প হতে দেখা যায়। তাই এই জাতীয় ব্যথা বা টান ধরার শিকার মাঝেমাঝেই হতে হলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। আবার অনেক সময় সঠিক মাপের জুতো না পরলেও এ জাতীয় ব্যথার আক্রমণ ঘটে। আবার ধূমপায়ীরা একটু বেশিক্ষণ হাঁটলেই এ জাতীয় পায়ে ব্যথায় আক্রান্ত হন। সামান্য বিশ্রামেই অবশ্য এই ব্যথার উপশম হয়।
যে কোনো পেশিগত প্রদাহ-বিকৃতি যেমন বাত, ফাইব্রোমায়ালজিয়া (যার ফলে ঘাড়ে বা পিঠে ব্যথা হয়), পায়ে বা ঊরুতে ব্যথা উত্যাদির মূলে থাকে শরীরে জলের অভাব। পেশির ক্লান্তি, অতিরিক্ত পরিশ্রম অথবা শরীরচর্চার অভাব, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বিশেষ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বা ম্যাগনেয়িামের অভাব হলেও এই ব্যথার সৃষ্টি করে। যেমন উচ্চরক্তচাপ, মধুমেহ, উচ্চ কোলেস্টেরল, জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ এমনকী কিডনির ডায়ালিসিস ইত্যাদির কারণেও এ জাতীয় পা ব্যথা বা ক্র্যাম্প দেখা দেয়।
সায়াটিকার ব্যথা, স্পাইনাল স্টেনোসিস অথবা ধমনীতে রক্তপ্রবাহের অভাব, ভেরিকোজ শিরা এবং তারসঙ্গে শিরার গভীর প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদিকেও এই পায়ে ব্যথার জন্য দায়ী হয়।
একই ধরনের উপসর্গ দেখা যায় রেস্ট লেগ সিনড্রোম। এক্ষেত্রে পায়ে ব্যথা বা ক্র্যাম্প হয়। পরিপাকজনিত রোগ যেমন হাইপারপ্যারাথাইরেয়ড, হাইপো অ্যাড্রিনালিন ডায়াবেটিস, পারকিনসন্স ইত্যাদি অসুখের জন্যও এ জাতীয় ব্যথায় আক্রান্ত হয়।
গর্ভাবস্থায় প্রাথমিক বা প্রান্তিক স্তরে মহিলাদের এ জাতীয় পায়ের ব্যথা বা ক্র্যাম্প দেখা যায়। কারণ জরায়ুর প্রসারতা বৃদ্ধির ফলে ঊরুসন্ধির শিরার চাপ পড়ে। ফলে প্রায়শই গর্ভবতী মহিলারা এই সমস্যায় ভোগেন।
রাত্রিকালীন পা ব্যথা ক্র্যাম্প সাধারণত নিরীহ প্রকৃতির হয়। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, সুষম খাদ্যভ্যাস, শরীরে জলীয় পদার্থের ভারসম্য এবং নিয়মিত শরীরচর্চার ফলে এই জাতীয় সমস্যার মোকাবিলা করা যায়। কিন্তু যদি এই ব্যথা বা টান ধরার যদি প্রায়শই হয়ে তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। ব্যথার উৎস, রোগীটির নির্ণয় করা উচিত।
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন