আদর করুন, সুস্থ থাকুন
ডাঃ হেমন্ত কুমার পন্ডিত
2019-02-01 15:41:40
বিজ্ঞান জোরালোভাবে বলছে ‘সেক্স ফর হেলথ’। গবেষণা বলছে, সেক্সের ফলে সন্তান উৎপাদন মূল লক্ষ্য হলেও তা কিন্তু মানুষের যৌন জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। শরীর ও মনে তরতাজা থাকতে হলে, জীবনে বেশি সাফল্য পেতে গেলে, বেশিদিন বাঁচতে হলে অবশ্যই চাই সুস্থ যৌনমিলন। শুধু প্রেম হলেই চলবে না, মনের আদর হলেই চলবে না, চাই দেহের আদরও। ওহিওর ইউনিভার্সিটি অফ বিহেভিয়ারাল মেডিসিন রিসার্চ-এরে গবেষকরা যে কথাগুলো সম্প্রতি উল্লেখ করেছেন, এর অনেকটাই আমরা একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লক্ষ্য করি বাৎস্যায়নের কামশাস্ত্রে। কিনসে সাহেব-ও এই বিষয়ে দুটো বই লিখেছেন—‘সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার ইন হিউম্যান মেল’ এবং ‘সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার ইন হিউম্যান ফিমেল’ পরবর্তী সময়ে মাস্টার্স অ্যান্ড জনসন প্রকাশ করেছিলেন, হিউম্যান সেক্সুয়াল রেসপন্স’। বইগুলোতে যৌনজীবনের জানা-অজানা বহু কথা ছিল।
বর্তমানে বলা হচ্ছে, প্রেম ও যৌনতার মধ্যে সুচারু মেলবন্ধন হলে, অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি নীরোগ জীবন পাওয়া সম্ভব। কিন্তু তার জন্য মিলিত হতে চাওয়া নারী-পুরুষকে হতে হবে সক্ষম। যৌন উত্তেজনার আগে শরীরে আনতে হবে সেক্সুয়াল ডিজায়ার বা যৌনবাসনা। কারণ বাসনা, উত্তেজনা, অর্গাজম প্রভৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে হরমোন, নিউরোট্রান্সমিটার এবং অন্যান্য রাসায়নিকের।
মিলনের পূর্ব
যৌন মিলনের আগে যেসব জিনিসগুলো অবশ্যই দেখা দরকার সেগুলো হল নারী-পুরুষ মানসিকভাবে মিলনের জন্য তৈরি কি না। একজন তৈরি না থাকলে দ্বিতীয়জনকে স্পর্শ সংযোগ তৈরি করে নেওয়া। যৌনাঙ্গ দীর্ঘক্ষণ সহবাসে সক্ষম কি না, উপযুক্তভাবে পরিষ্কার কি না, কেউ শারীরিকভাবে দুর্বল কি না ইত্যাদি অবশ্যই দেখা দরকার।
সমস্যাময় জীবন
বহু নারী-পুরুষের শুধুমাত্র শারীরিক অসঙ্গতি থাকার কারণে জীবন সুখকর হয় না। বিশেষ করে পুরুষদের লিঙ্গ বা পেনিস দৃঢ় না হওয়া, অতি দ্রুত বীর্যস্খলন যাকে চলতি ভাষায় বলা হয় ধ্বজভঙ্গ কিংবা অতিরিক্ত নেশার ফলে যৌন ক্ষমতা হ্রাস এবং একই সঙ্গে বয়ষজনিত কারণে যৌন অভিশাপ দেখা দেয়। এছাড়া অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপান করলে দ্রুত যৌনক্ষমতা হ্রাস পায়। এছাড়া যৌন জীবনের যে স্বাভাবিক বয়স আছে, সেই বয়স পেরিয়ে গেলেও যৌনক্ষমতা কমে যায়।
মুশকিল আসানে আয়ুর্বেদ
সত্যি কথা বলতে কি, যৌনরোগে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার কোনো বিকল্প নেই। মকরধ্বজ, শিলাজিৎ,পূর্ণচন্দ্ররস, বঙ্গেশ্বর, কামেশ্বর মোদক, মধুগন্ধা, চন্দ্রপ্রভাবটি, আরোগ্য বর্ধনী বটি এবং জটিল সমস্যার ক্ষেত্রে হীরকভস্ম খুবই কার্যকর। বিখ্যাত কিছু আয়ুর্বেদ কোম্পানির ওষুধও বেশ ভালো কাজ দেয়। মালিশের জন্য বাজীকরণ তেল, শ্রীগোপাল তেল, তৈল্যসুলতানি প্রভৃতি ব্যবহার ভালো উপকার মেলে। তবে একটাই উপদেশ, যৌন সমস্যায় অভিজ্ঞ ও শিক্ষিত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সস্তায় সুস্থ হতে গিয়ে হাতুড়ে ডাক্তারের হাতে নিজের জীবনকে তুলে দেবেন না। আর অহেতুক লজ্জার কারণে যৌনরোগ লুকিয়ে রাখবেন না। তাহলে বিয়ের পর আরও বেশি লজ্জায় পড়তে হবে।
কেন চাই সুস্থ যৌনতা
- তিরিশ থেকে চল্লিশ বছর বয়সে যারা সপ্তাহে কমপক্ষে তিন-চারদিন মিলিত হন,তাদের অন্যান্য সহবাস বিমুখ দম্পতির থেকে বেশি তরতাজাও ও কমবয়সি দেখায়।
- যৌনমিলনে অ্যারোবিক এক্সারসাইজের সমান, যা শরীরের রক্ত সঞ্চালন ও হার্টের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে হার্ট অ্যাটাকের ভয় কমে।
- কর্মক্ষমতা বাড়ে, বাড়ে সহ্যক্ষমতা। কারণ স্বাভাবিক অবস্থায় একজন মানুষের হার্টবিট থাকে প্রতি মিনিটে সত্তর থেকে আশি। সঙ্গমকালে তা বৃদ্ধি পায়, প্রতি মিনিটে হয় একশো থেকে একশো পঁচাত্তর-এ। চুড়ান্ত পর্যায়ে একশো দশ থেকে একশো আশিতে।
- যৌনমিলনের সময় কমবেশি দু’শো পঞ্চাশ থেকে তিনশো পঞ্চাশ ক্যালোরি শক্তি খরচ হয়, যা কুড়ি মিনিট জগিং-এর সমান।
- মিলনকালে এন্ডোমর্ফিনস নির্গত হয়, যা আর্থ্রাইটিস এবং পিঠের ক্রনিক ব্যথা ও মাইগ্রেনের যন্ত্রণা কমায়।
- সামান্য স্পর্শ কিংভা ছোট্ট চুমু মানুষের আত্মহত্যার প্রবণতা কমিয়ে আনে। কেটে যায় বিষণ্নতা।
- অ্যারাউজাল-এর সময় নির্গত হওয়া হরমোন টেনশন ও আতষ্ক কাটাতে বিশেষ সাহায্য করে।
- শরীরের ভেতরের ইমিউনিটি অথাৎ অনাক্রম্যতার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ঠিত এই কারণে সর্দি-কাশি ও অন্যান্য রোগ শরীরে কম দেখা যায়।
- গবেষকদের মতে, অর্গাজমের সময় নিঃসৃত অক্সিটোসিন হরমোন এবং ডি.এইচ.এ ব্রেস্ট ক্যানসার ও টিউমার প্রতিরোধ সাহায্য করে।
- তিরিশ থেকে চল্লিশ বছর বয়সে সপ্তাহে কমপক্ষে দু’-তিনদিন মিলিত হোন, চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছরে সপ্তাহে কম পক্ষে একদিন মিলিত হোন এবং পঞ্চাশের পর থেকে যেকোনো দিন মিলিত হওয়ার চেষ্টা করুন, তাতে শরীর-মন দুই-ই চাঙ্গা থাকবে।
-
সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন